Saturday, April 18, 2020


ভক্তবৎসল ভগবান
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার দণ্ডবৎ প্রণাম I
‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

আজানুলম্বিত - ভুজৌ কনকাবদাতৌ,
সংকীর্ত্তনৈকপিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ।
বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম্মপালৌ,
বন্দে জগৎপ্রিয়করৌ করুণাবতারৌ।
ভগবান নিজের ভক্তকে স্বয়ং রক্ষা করেন...
‘’ত্যক্ত্বা স্বধর্মং চরণাম্বুজং হরে - র্ভজন্নপক্বোঽথ পতেওতো যদি।
যত্র ক্ব বাভদ্রমভূদমুষ্য কিং কো বার্থ আপ্তোঽভজতাং স্বধর্মতঃ॥‘’
(ভাগবত  //১৭)

অর্থাৎ,- ভগবানের প্রেমময়ী সেবায় যুক্ত হওয়ার জন্য যিনি জাগতিক কর্ত্তব্য পরিত্যাগ করেছেন, অপক্ক অবস্থায় যদি কোন কারণে তাঁর পতনও হয়, তবুও তাঁর বিফল হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না। পক্ষান্তরে, অভক্ত যদি সর্বতোভাবে নৈমিত্তিক ধর্ম - অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়, তবুও তাতে তার কোন লাভ হয় না। অর্থাৎ মানুষের অসংখ্য কর্ত্তব্য রয়েছে। মানুষ তার পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন, সমাজ, দেশ বিভিন্ন জীব বা দেবতাদের প্রতিই কেবল নয়, মহান দার্শনিক, কবি, বৈজ্ঞানিক প্রভৃতিদের প্রতিও কর্তব্যের বন্ধনে আবদ্ধ।

শাস্ত্রে নির্দ্দেশ দেওয়া হয়েছে, কেউ যখন ভগবানের সেবায় যুক্ত হন, তখন তিনি এই সমস্ত কর্ত্তব্য  থেকে মুক্ত হন। তাই কেউ যদি তা করেন এবং ভগবদ্ভক্তির অনুশীলনে সফল হন, তা হলে খুবই ভাল হয়। কিন্তু কখনো কখনো এমনও হতে পারে যে সাময়িক ভাব প্রবণতার বশবর্ত্তি হয়ে কেউ ভগবানের সেবায় যুক্ত হয়ে ভগবানের শরণাগত হল এবং তারপর অসৎ সঙ্গের প্রভাবে সে ভক্তিমার্গ থেকে অধঃপতিত হল। ইতিহাসে সে রকম কত দৃষ্টান্ত রয়েছে।

দেবাদিদেব মহাদেবের চরণে অপরাধ করার ফলে মহারাজ চিত্রকেতু অধঃপতিত হয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও এখানে অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা  করা হয়েছে যে ভগবানের চরণারবিন্দে শরণাগত হওয়ার পর যদি কারো পতনও হয়, তবুও তিনি কখনই পরমেশ্বর ভগবানের শ্রীপাদপদ্মের কথা বিস্মৃত হবেন না। একবার ভগবানের সেবায় যুক্ত হলে সর্ব অবস্থাতেই সেই সেবা চলতে থাকে। ভগবদগীতায় বলা হয়েছে, যে স্বল্প ভগবদ্ভক্তির অনুশীলনও অত্যন্ত ভয়ংকর অবস্থা থেকে জীবকে উদ্ধার করতে পারে। ইতিহাসে তার বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। একটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে অজামিল। অজামিল তাঁর প্রথম জীবনে ভক্ত ছিলেন, কিন্তু যৌবনে তাঁর পতন হয়, তবুও অন্তিম সময়ে ভগবান তাঁকে রক্ষা করেন।

ভরত মহারাজ ছিলেন একজন মহান ভক্ত কিন্তু তার এক জন্মে সাফল্য লাভ হয়নি। ভগবদগীতায় বলা হয়েছে যে, ভক্ত যদি তার ভক্তি কার্য্যে এক জন্মে সিদ্ধিলাভ না করতে পারেন, তাহলে তার যোগ্য ব্ৰাহ্মণকুলে অথবা ধনী ক্ষত্ৰিয় বা বৈশ্যকুলে জন্মগ্রহণ হয়।

‘’প্রাপ্য পুণ্যকৃতাং লোকানুষিত্বা শাশ্বতীঃ সমাঃ।
শুচীনাং শ্রীমতাং গেহে যোগভ্রষ্টোহভিজায়তে।।‘’  (গীতা /৪১)

অর্থাৎ,- যোগভ্রষ্ট ব্যক্তি পুণ্যবানদের প্রাপ্য স্বর্গাদি লোকসমূহে বহুকাল বাস করে সদাচারী ব্রাহ্মণদের গৃহে অথবা ধনী বণিকদের গৃহে জন্মগ্রহণ করেন।

ভরত মহারাজ ছিলেন সমৃদ্ধশালী ক্ষত্ৰিয় পরিবারের মহারাজ ঋষভদেবের জ্যেষ্ঠপুত্ৰ I পারমাৰ্থিক কৰ্ত্তব্যের অবহেলা করার ফলে এবং একটি নগণ্য হরিণের প্রতি অত্যন্ত আসক্ত হওয়ার ফলে, তাকে হরিণ শরীরে জন্মগ্রহণ করতে হয়। ভক্ত হওয়ার ফলে তিনি জাতিস্মর বা পূর্বজন্মের কথা জানতেন,নিজের ভুলের জন্য তিনি অনুতপ্ত হন, তিনি সর্বদা শ্ৰীকৃষ্ণের চিন্তায় মগ্ন থেকে নির্জ্জন বনে কালাতিপাত করছিলেন। তারপর তিনি এক অতি উত্তম ব্ৰাহ্মণকুলে জন্মগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। হরিণের দেহ ত্যাগ করার পর তিনি এক ব্ৰাহ্মণের কনিষ্ঠা পত্নীর গৰ্ভে জন্মগ্রহণ করেন। সেই জন্মেও তিনি জাতিস্মর ছিলেন এবং সঙ্গদোষে পাছে আবার পতন হবে, এই ভয়ে তিনি অভক্তদের সঙ্গ করতেন না এবং মূক বধিরের মতো থাকতেন।

শ্ৰীচৈতন্য মহাপ্ৰভু বলেছেন, ''অসৎসঙ্গত্যাগ, এই বৈষ্ণব-আচার।''

অভক্ত সঙ্গ সর্বতোভাবে ত্যাগ করা উচিত, এমনকি তারা যদি আত্মীয় - স্বজনও হয়। মহারাজ ভরত যখন এইভাবে ব্ৰাহ্মণ শরীরে ছিলেন, তখন তার প্রতিবেশীরা তাকে উন্মাদ এবং জড় বলে মনে করতেন। কিন্তু তিনি অন্তরে নিরন্তর পরমেশ্বর ভগবান বাসুদেবের মহিমা স্মরণ এবং কীর্ত্তন  করে কালাতিপাত করতেন। যদিও তার পিতা তাকে উপনয়ন সংস্কার করে, স্বধৰ্মোচিত শৌচাচার শিক্ষা এবং বেদ আদি পাঠ করাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি এমনভাবে আচরণ করতেন যে, তার পিতা - মাতা তাকে উন্মাদ এবং সংস্কারের অযোগ্য বলে মনে করেছিলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তার সংস্কার না হলেও ভরত মহারাজ কিন্তু পূৰ্ণরুপে কৃষ্ণভাবনাময় ছিলেন। তার নীরবতার জন্য পশুবৎ মানুষেরা তাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করত, কিন্তু তিনি তা সহ্য করতেন।

ভরত মহারাজের পিতা - মাতার মৃত্যুর পর, তার বিমাতা এবং বৈমাত্ৰেয় ভায়েরা তার প্রতি অত্যন্ত কদৰ্য ব্যবহার করতে শুরু করেন। তারা তাকে কদৰ্য আহার দিতেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি কখনও কিছু মনে করতেন না। তিনি সম্পূৰ্ণরুপে কৃষ্ণভাবনায় মগ্ন ছিলেন। তাদের দ্বারা নিযুক্ত হয়ে তিনি এক সময় গভীর রাত্ৰে শস্যক্ষেত্র রক্ষা করছিলেন, এমন সময় এক দস্যুদের সর্দার তাকে ভদ্রকালীর পূজায় বলি দেওয়ার জন্য ধরে নিয়ে যায়।

দস্যুরা যখন ভরত মহারাজকে কালীর সম্মুখে খড়গের দ্বারা বলি দিতে উদ্যত হল দেবী ভদ্রকালী তখন ভগবদ্ভক্তের প্রতি এই আসুরিক অত্যাচারে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে, প্ৰতিমা থেকে ভীষণ মূৰ্তিতে বেরিয়ে এলেন এবং তাদের খড়গের দ্বারা তাদেরই সংহার করে ভক্তকে  রক্ষা করলেন। এইভাবে শুদ্ধ ভক্ত অভক্তদের অত্যাচার সত্ত্বেও নীরব থাকেন। যে সমস্ত বর্বর এবং দস্যু, ভক্তদের প্রতি দুর্ব্যবহার করে, ভগবানের শক্তি সমূহও তাদের দণ্ড দেন।

হে আমার প্রাণধন কৃষ্ণ তুমি আমাদের হৃদয়ে ভক্তির ভাব জাগিয়ে দাও। সবাই একমনে তন্ময় হয়ে শ্রীহরিনাম জপ করুন,-
''হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।‘’

জয় শ্রীরাধেকৃষ্ণর জয়। জয় শচীনন্দন গৌরহরির জয়।।

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...