Sunday, April 12, 2020


নিত্যলীলা প্রবিষ্ট ওঁ বিষ্ণুপাদ পরিব্রাজকাচার্য্য ত্রিদন্ডী স্বামী ১০৮ শ্রী - শ্রীমদ্ভক্তিকুমুদ সন্ত গোস্বামী মহারাজ
(আবির্ভাব)
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রাচীন ঐতিহাসিক মেদিনীপুর জেলায় নারায়ণ গড় থানার অন্তর্গত নারমা গ্রামে  শ্রীযুক্ত বৈকুন্ঠনাথ রায় তৎপত্নী  শ্রীমতি রত্নময়ী দেবীকে জগৎ সম্বন্ধে পিতা - মাতা রূপে অবলম্বন করিয়া ''নিত্যধাম গোলক - বৃন্দাবন চন্দ্র স্বয়ং ভগবান - লীলা পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণ গৌরসুন্দরের বার্ত্তা - বাহক নিত্য পরিকর বিশেষ, বৃন্দাবনেশ্বরী - শ্রীমতি রাধারাণীর নিত্যলীলা সহচরী - বৃন্দাবনীয় - নিভৃত - নিকুঞ্জ লীলায় নিত্যসেবা পরায়ণা ''নয়নমণি মঞ্জরী'' - যূথেশ্বরীর প্রিয় - সহচরী ''রাগকুমুদ - মঞ্জরী'' তাঁহাদের তৃতীয় পুত্র তথা কনিষ্ঠ পুত্র রূপে দিব্যজ্যোতি সম্পন্ন এক অলৌকিক লক্ষণ যুক্ত হইয়া ১৩২১ বঙ্গাব্দ,২রা বৈশাখ,(ইং ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দ ) পরম মঙ্গলময়ী শ্রীকৃষ্ণাষষ্ঠী তিথিবরায় ব্রহ্ম মূহুর্ত্ত শ্রীবৈকুন্ঠভবন আলো করিয়া জন্মগ্রহন করিলেন I পিতা মাতা নাম রাখিলেন ''শ্রীরাধারমন রায়'' I

শৈশবকাল হইতেই ছোট্ট রাধারমনের এক অসাধারণ আচরণ চরিত্র দেখা যায় I গৃহের ছোট্ট ভাই - বোন অন্যান্য শিশুবন্ধুদের লইয়া নিজে - নিজেই কাদা - মাটির গোপাল ঠাকুর গড়িতেন, আর বনের পত্র - পুষ্প - ফলাদি লইয়া চোখ মুদিয়া কি সব বিড়বিড় করিয়া বলিয়া খুব ভক্তি করিয়া ঠাকুরকে ভোগ নিবেদন করিতেন I শৈশবাবস্থা অতিক্রম পরে পিতা রাধারমনের বিদ্যাভ্যাসের নিমিত্ত গৃহ শিক্ষক ব্যবস্থা করিলেন I শিশুশিক্ষা সমাপ্ত পরে পিতৃদেব রাধারমনের উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য দুই সহোদর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতাদের সঙ্গে পিংলা উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্ত্তি করিয়া দেন I শিক্ষার উন্নতি না হইতে দেখিয়া পিতৃদেব প্রথমে হরিসভা বিদ্যায়তনে পরে কাঁথি 'মডেল স্কুলে' ভর্ত্তি করিয়া দেন I এতসব পরেও বিদ্যা শিক্ষার উন্নতি না দেখিয়া পিতা - মাতা চিন্তিত হন I রাধারমনের অলৌকিক আধ্যাত্ম চেতনা আত্ম প্রবণতা শিশুকাল হইতে পূর্বাকাশে দিবাকরের ন্যায় স্বতঃস্ফূর্ত্ত স্বাভাবিক রূপে প্রকাশিত হইতে থাকিল I তাঁহার ভগবৎ অন্বেষণের এক অব্যক্ত তৃষা এমন কি ক্রীড়াছলেও ভগবৎ লীলা স্মরণের যে উন্মেষনা ক্রমে ক্রমে সর্বজন সমক্ষে প্রকাশ পাইতেছে তাহা কেহ বুঝিতেছে না I তিনি আসিয়াছেন  জগৎ ''শ্রীজগন্নাথকে'' খুঁজিতে এবং সমস্ত জগৎ জীবকে সেই পরম প্রিয়তমজন শ্রীজগন্নাথকে খুঁজিয়া পাইবার মুখ্য পথের সন্ধান দিতে I

মাত্র ১১ বৎসর বয়সে পবিত্র মধুমাস বৈশাখ মাসের শুভদিনে রাধারমণ চিরকালের পরম আত্মীয়,পরম বান্ধব,পরম প্রিয়তম জন, পরম ইষ্ট আরাধ্য শ্রীশ্রীলগুরুদেব শ্রীলপ্রভুপাদের শ্রীচরণে  নিজেকে আত্মসমর্পন করে সারাটি জীবন ধরিয়া প্রাচ্য পাশ্চাত্ত  সমস্ত পৃথিবীতে শ্রীমন্মহাপ্রভুর বাণী - শ্রীকৃষ্ণ ভজন  শিক্ষা,আদর্শ শুদ্ধ বৈরাগ্যের কথা প্রচারের দ্বারা জগদ্গুরু শ্রীশ্রীল প্রভুপাদ ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুরের মনোহভিষ্ট পূরণ করিয়াছিলেন  I মঠে আসার পরে শ্রীল প্রভুপাদ রাধারমণকে তাঁহার নিত্য প্রিয়জন সেবক রূপে জানিয়া পরম পবিত্র অন্তর হইতে প্রচুর কৃপাশীর্বাদ করতঃ কলিকাতা ডালহৌসিতে স্কটিশচার্জ স্কুলের নিকট 'দ্য নিউ হাইস্কুলে' ভর্ত্তি করিয়া দেন I যেই রাধারমণ বাল্যকালে লেখাপড়ায় একেবারেই উন্নতি করিতে পারে নাই,সকলের পিছনে পড়িয়া থাকিত 'মুকং করোতি বাচালং' তাঁহার সাধু - গুরু -বৈষ্ণব শ্রীল প্রভুপাদের কৃপা সান্নিধ্যে থাকিয়া স্পর্শমণি হইয়াছিলেন I

 ইং ১৯৩১ সালে ২০শে মার্চ্চ,ঢাকা যাত্রার পূর্বে মঠবাস,সেবা নিষ্ঠা এবং অন্যান্য পারমার্থিক যোগ্যতা দেখিয়া শ্রীল প্রভুপাদ রাধারমনকে তাঁহার পারমার্থিক ভাবী জীবনের কথা চিন্তা করিয়া গৈরিকবসনে ভূষিত করিলেন I ১৯৩২ সাল ৩১শে ডিসেম্বর ঢাকায় পৌঁছিলেন  I ১৯৩৩ সালে ৬ই জানুয়ারী,ঢাকা পুরানো পল্টনের মাঠে বিরাট সৎশিক্ষা প্রদর্শনী আয়োজিত হয় I উক্ত প্রদর্শনীতে শ্রীরাধারমন ব্রহ্মচারী সহ আরও দুইজন মঠবাসীকে প্রদর্শনীর বিষয় বস্তু দর্শকদের বোঝাইবার ভার অর্পণ করেন I এই প্রদর্শনীতে শ্রীরাধারমন ব্রহ্মচারী মানুষকে বোঝাইবার সময়ে শাস্ত্র যুক্তি প্রমাণ,জ্ঞানগর্ভতা,ভাষার লালিত্য বোঝাইবার কৌশল জ্ঞান  দ্বারা শ্রীল প্রভুপাদের  পরম প্রিয় হইয়াছিলেন I ঢাকা প্রদর্শনী পরে ১৯৩৪ সালে,পাঞ্চরাত্রিক বৈদিক শাস্ত্র  বিধানে বাগবাজার গৌড়ীয়মঠে উপনয়ন দীক্ষা লাভ করেন  I সর্ব্বস্ব সমর্পণ করিয়া শ্রীল প্রভুপাদের শ্রীচরণ সেবায় দীক্ষিত হইলেন I

এক সময় কলিকাতা বাগবাজার গৌড়ীয়মঠে পূজ্যপাদ শ্রৌতি মহারাজ,বনদেব মহারাজ,প্রণবানন্দ ব্রহ্মচারী,হয়গ্রীব ব্রহ্মচারী ইত্যাদি সকলে মিলিয়া 'শ্লোক টুন্নামেন্ট ' খেলিতে পূজ্যপাদ অনন্তবাসুদেব প্রভু শ্রীল শ্রীধরমহারাজের কাছে নিবেদন রাখিলেন I তাঁহাদের সম্মতিতে সকল গুরুভ্রাতাগণ রাধারমণ প্রভুকে সঙ্গে লইয়া খেলা আরম্ভ হয় I খেলাটির নিয়ম প্রতি শ্লোকের শেষ অক্ষর লইয়া পুনরায় একটি  শ্লোক তৈরী করিতে হইবে I উক্ত খেলায় রাধারমণ ব্রহ্মচারীর সঙ্গে কেহই পারিয়া উঠিলেন না I তিনি জয়লাভ করিয়া সকলকে অবাক করিয়া দিলেন I তিনি ভিক্ষা সংগ্রহ,পাঠ - কীর্ত্তন,নৃত্য,অর্চ্চনাদি বিভিন্ন সেবা এবং সুন্দর ছবি আঁকা,বোর্ড লেখা, শৃঙ্গার করা অপূর্ব নাট্য কৌশলেও বিশেষ পারদর্শী ছিলেন I তিনি এক মহান জ্যোতিষ শাস্ত্র বিদও ছিলেন I

২৪শে চৈত্র,বাংলা ১৩৩৫ সনে,ইং-৭ই এপ্রিল,১৯২৯ সালে,রবিবার শ্রীলপ্রভুপাদ সেবকগণের সহিত হাওড়া জেলা অন্তর্গত মুন্সীরহাট থানার ব্রাহ্মণপাড়ায় স্থাপিত প্রপন্ন আশ্রমে শুভ বিজয় করিয়া উক্ত আশ্রমের সেবা ভার গ্রহণ করিলেন I  শ্রীপাদ রাধারমণ প্রভুর সেবানিষ্ঠা,পাঠ - কীর্ত্তন আদি সুন্দর যোগ্যতা দেখিয়া শ্রীলপ্রভুপাদ প্রথমেই এই ব্রাহ্মণ পাড়ায় শ্রীষড়ভূজ মহাপ্রভুর সেবার দায়িত্ব প্রদান করেন I

১১ই গোবিন্দ,৪৫৫ গৌরাব্দ,২৮ শে মাঘ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ,১২ ফেব্রুযারী,১৯৪২ খ্র্রীঃ,বৃহস্পতিবার প্রাতঃকাল শ্রীলশ্রৌতিগোস্বামী মহারাজ শ্রীলবৈখানাসগোস্বামী মহারাজের পৌরহিত্যে শ্রীপাদ রাধারমণ ব্রহ্মচারী রেমুনা শ্রীক্ষীরচোরাগোপীনাথ শ্রীমন্দিরে শ্রীল প্রভুপাদের কৃপানির্দ্দেশ মত শ্রীমদ ভক্তিবিচার যাযাবরগোস্বামী মহারাজ থেকে দিব্যা সন্ন্যাস মন্ত্র গ্রহণ করে ''ত্রিদণ্ডিস্বামী শ্রীশ্রীমদ ভক্তিকুমুদ সন্তগোস্বামী মহারাজ '' শুভ নামে পরিচিত হন I

শ্রীলমহারাজ মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত কেশিয়াড়ি নিবাসী শ্রীশ্রীল প্রভুপাদের শ্রীচরণাশ্রিত গুরুভ্রাতা জমিদার শ্রীযুক্ত শ্যামসুন্দর মহাপাত্র এবং তাঁহার কনিষ্ঠ দুই ভাই শ্রীযুক্ত গোবিন্দদাস মহাপাত্র,শ্রীযুক্ত ভাগবতদাস মহাপাত্র তিন ভাইয়ের নিস্কপট প্রবল ইচ্ছাক্রমে এবং শ্রীমন্মহাপ্রভুর প্রিয়তমপার্ষদ শ্রীমৎ শ্যামানন্দ প্রভু শ্রীমৎ রসিকানন্দ প্রভুর কৃপাশীর্বাদে কেশিয়াড়িতেই জীবনের প্রথম মঠ আবিষ্কার করিলেন I বাংলা ১৩৫২ সনে,১০ই বৈশাখ শ্রীল মহারাজের আন্তরিক প্রীত্যস্পদ আহ্বান নিমন্ত্রণে পরম পূজ্যপাদ শ্রীমদ ভক্তিগৌরব বৈখানাস মহারাজ,শ্রীমদ ভক্তিভূদেব শ্রৌতিমহারাজ,শ্রীমদ ভক্তিসর্বস্ব গিরিমহারাজ,শ্রীমদ ভক্তিবিচার যাযাবরমহারাজ,শ্রীমদ ভক্তিদয়িত মাধবমহারাজ সহ বহু ব্রহ্মচারী,ভক্ত - বৈষ্ণব এবং অগণিত নর - নারীর শুভাগমনে উপস্থিতিতে কেশিয়াড়িতে ''শ্রীগৌরাঙ্গ মঠ’’ নামে মঠ স্থাপন এবং শ্রীশ্রীরাধাগোপীনাথ জীউর পরম অনন্ত সৌন্দর্য্যময় শ্রীবিগ্রহ প্রতিষ্ঠা - হোম - যজ্ঞ - পূজার্চ্চন - ভোগরাগ - আরত্রিক,পাঠ - কীর্ত্তন - হরিকথা মাধ্যমে এক বিরাট মহা - মহোৎসব অনুষ্ঠিত হইল I   

১৩৫৭ সনে ১০ই বৈশাখ শ্রীগৌরাঙ্গমঠের নব নির্মিত শ্রীমন্দিরে শ্রীশ্রীলপ্রভুপাদ - মহাপ্রভু - রাধাগোপীনাথ জীউর শুভ প্রবেশ মহা - মহোৎসব অনুষ্ঠিত হল I শ্রীলমহারাজ খড়গপুর আই.আই .টি ক্যাম্পাসের নিকটে হিজলী রেল গেটের বর্ত্তমান চাঁদমারি সরকারি হাসপাতালের পাশে ছোট ট্যাংরা নামক স্থানে শ্রীযুক্ত নির্ম্মল চন্দ্র নিয়োগী মহাশয়ের প্রদত্ত জমির উপরে 'শ্রীচৈতন্য আশ্রম' নামে মঠ প্রতিষ্ঠা করে প্রাণের আরাধ্যদেব শ্রীশ্রীরাধাগোবিন্দ জীউকে শ্রীমন্দিরে প্রতিষ্ঠিত করিয়া তাঁহার নিত্য সেবা প্রকাশ করিলেন I শ্রীলমহারাজের মহতী ইচ্ছায় এবং শ্রদ্ধালু ভক্তগণের একান্ত আগ্রহে ১৩৭৪ সনে,১৯শে আষাড়,ইং -১৯৬৭ সাল,৪ঠা জুলাই,শ্রীক্ষেত্র পুরীধামে শ্রীটোটাগোপীনাথ জীউর মন্দিরের ঠিক পশ্চাদ ভাগে ''শ্রীচৈতন্য আশ্রম'' নামে একটি প্রচার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করিলেন I সন১৩৯৭,৭ই আষাড়,ইং ১৯৯০ সালে ২৪শে জুন,শুক্রবার পরম পূজ্যপাদ শ্রীল ভক্তিপ্রমোদ পুরীগোস্বামী মহারাজের পৌরহিত্যে শ্রীশ্রীগুরু - গৌরাঙ্গ - রাধা - রাধারমণ জীউ,শ্রীশ্রীজগন্নাথ - বলরাম - সুভদ্রা জীউর শ্রীবিগ্রহ শ্রীমন্দিরাভ্যন্তরে প্রতিষ্ঠিত হন I

পতিতপাবন শ্রীশ্রীমদ ভক্তিকুমুদ সন্তগোস্বামী মহারাজ ১১ বৎসর বয়স হইতে সারাটি জীবন ধরিয়া প্রাচ্য পাশ্চাত্য সমস্ত পৃথিবীতে শ্রীমন্মহাপ্রভুর বাণী - শ্রীকৃষ্ণ ভজন  শিক্ষা,আদর্শ শুদ্ধ বৈরাগ্যের কথা প্রচারের দ্বারা জগদ্গুরু শ্রীশ্রীল প্রভুপাদ ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুরের মনোহভিষ্ট পূরণ করিয়া ২৭শে,নারায়ণ,৫২৫ গৌরাব্দ,২১শে পৌষ,১৪১৮ সন,৬ই জানুয়ারী ২০১২ খ্র্রীঃ রাত্রি - ০৬ মিঃ সময়ে শ্রীগৌর ত্রয়োদশী তিথি রোহিনী নক্ষত্র যোগে শ্রীশ্রীরাধাগোপীনাথের বৃন্দাবনীয় মহারাসস্থলীর নিভৃত নিকুঞ্জে নিত্য নৈশলীলায় প্রবিষ্ট হইলেন I   

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...