Wednesday, April 8, 2020


শ্রীল শ্যামানন্দ প্রভু
আবির্ভাব
শ্রীশ্যামানন্দ প্রভু শ্রীকৃষ্ণলীলায় দ্বাদশ গোপালের অন্যতম সুবল সখার অনুগতের অনুগত পার্ষদ ছিলেন।শ্রীগৌরীদাস পণ্ডিতের কৃষ্ণলীলার পূর্ব্ব পরিচয় সুবল সখা। গৌরীদাস পণ্ডিতের শিষ্য হৃদয়ানন্দ (হৃদয় চৈতন্য),হৃদয়ানন্দের শিষ্য শ্যামানন্দ। যাঁহাকে ইহ সংসারে লোকে শ্রীমদ হৃদয়ানন্দের প্রিয় শিষ্য বলিয়া কীর্ত্তন করে,যিনি সুবলসখার অনুগত বলিয়া স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণচন্দ্রের প্রিয়তম জনের অনুশিষ্য,সেই রসিকেন্দ্র মুকুটমণি শ্রীযুক্ত শ্যামানন্দ প্রভু শ্রীরাধামাধবের প্রিয় অন্তরঙ্গ - লীলাবিলাস সেবায় আমার অনুরাগ উৎপত্তি করিয়া আমার চিত্তে অহর্নিশ বিরাজিত থাকুন।      

শ্রীশ্যামানন্দ প্রভু ১৪৫৬ শকে মধুপূর্ণিমা তিথিবাসরে (চৈত্রপূর্ণিমা) মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত খড়্গপুর রেলস্টেশনের নিকটবর্ত্তী ধারেন্দা বাহাদুরপুর গ্রামে পিতা শ্রীকৃষ্ণ মণ্ডল ও মাতা শ্রীদুরিকাকে অবলম্বন করিয়া আবির্ভূত হইয়াছিলেন। শ্যামানন্দ প্রভুর পিতা শ্রীকৃষ্ণ মণ্ডলের সুবর্ণরেখা নদীর তীরে দণ্ডেশ্বর গ্রামে নিবাসস্থান ছিল।ধারেন্দা,বাহাদুরপুর,রায়নী বা রোহিণী,গোপীবল্লভপুর ও নৃসিংহপুর এই পাঁচটি শ্রীপাট শ্যামানন্দ প্রভুর শিষ্যগণের প্রিয় স্থান। শ্রীশ্যামানন্দ প্রভু সদগোপ (কেবট জাতি) কুলে আবির্ভূত হইয়াছিলেন।বৈষ্ণব স্বরূপতঃ নির্গুণ।তিনি যে কোন কুলে আবির্ভূত হইতে পারেন।নিম্নকুলে আবির্ভাবলীলা দেখিয়া বৈষ্ণবকে জাতিবুদ্ধি করিলে নরকপ্রাপ্তি ঘটে।

''অর্চ্চ্যে বিষ্ণৌ শিলাধীঃ গুরুষু নরমতি বৈষ্ণবে জাতিবুদ্ধির্বিষ্ণোবা,
বৈষ্ণবানাং কলিমলমথনে পাদতীর্থে হম্বুবুদ্ধিঃ।
শ্রীবিষ্ণোর্নাম্নি মন্ত্রে সকলকলুষহে শব্দসামান্য বুদ্ধিবিষ্ণৌ,
সর্ব্বেশ্বরেশে তদিতরস মধীর্যস্য  বা নারকী সঃ।।''  

''নীচ - জাতি নহে কৃষ্ণভজনে অযোগ্য।
সৎকুল - বিপ্র নহে ভজনের যোগ্য।।
যেই ভজে,সেই বড়,অভক্ত - হীন, ছার।
কৃষ্ণভজনে নাহি জাতি - কুলাদি বিচার।।''
                         (---চৈ: চ: অন্ত ৪/৬৬)
শ্যামানন্দ প্রভুর আবির্ভাবের পূর্ব্বে পুত্রকন্যা গত হইলে পিতামাতা সংকল্প করিলেন এইবার যে পুত্রসন্তান হইবে তাহাকে বিষ্ণুপাদপদ্মে সমর্পণ করিবেন। পিতামাতা দুঃখ পাওয়ার পর শ্যামানন্দকে পুত্ররূপে পাইয়া দুঃখের সহিত পালন করিয়াছিলেন বলিয়া প্রথমে তাঁহার নাম 'দুঃখী' রাখিয়াছিলেন।   

শ্রী শ্যামানন্দ প্রভু শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য - নিত্যানন্দের প্রিয় গৌরীদাস পণ্ডিতের শিষ্য হৃদয়চৈতন্যর নিকট অম্বিকা কালনা যাইয়া দীক্ষা গ্রহণ করিয়াছিলেন।  তাহার দীক্ষা নাম হইল 'দুঃখী কৃষ্ণ দাস'। হৃদয় চৈতন্য প্রভু দুঃখী কৃষ্ণদাসকে বৃন্দাবনে যাইয়া ভজন করিতে আদেশ করিলে দুঃখী কৃষ্ণদাস গুরুদেবের বিরহে ব্যাকুল হইলেও গুরুদেবের আজ্ঞা পালনের জন্য নবদ্বীপ, গৌড় মণ্ডল দর্শন করতঃ বৈষ্ণবগণের কৃপা প্রার্থনা করিয়া নানা তীর্থ ভ্রমণান্তে বৃন্দাবন পৌঁছিলেন। তথায় রাধা - শ্যামসুন্দরের আরাধনায় নিমগ্ন হইলেন।বৈষ্ণব জগতের শ্রেষ্ঠ পাত্ররাজ ষড়গোস্বামীর অন্যতম শ্রীজীব গোস্বামীর আনুগত্যে দুঃখী কৃষ্ণদাস ভক্তিশাস্ত্র অধ্যয়ন করিতে লাগিলেন। শ্রীনিবাস, নরোত্তম  ও দুঃখী কৃষ্ণদাস বৃন্দাবনে শ্রীজীব গোস্বামীর নিকট শাস্ত্র অধ্যয়ন করিয়াছিলেন।শ্রীজীব গোস্বামী শ্রীনিবাস, নরোত্তম ও দুঃখী কৃষ্ণদাসকে যথাক্রমে আচার্য্য, ঠাকুর ও শ্যামানন্দ নাম প্রদান করিয়াছিলেন।

শ্রীল নরোত্তম ঠাকুর উত্তরবঙ্গে এবং শ্রীল শ্যামানন্দ প্রভু ওড়িষ্যায় গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম্ম প্রচার করিয়াছিলেন।পূর্ব্বে মেদিনীপুর জেলা ওড়িষ্যা সাম্রাজ্যের অন্তর্গত ছিল।এইহেতু মেদিনীপুর শহরে শ্যামানন্দ প্রভুর পুতস্মৃতি সংরক্ষণ কল্পে তথায় সংস্থাপিত মঠের নাম রাখা হইয়াছে 'শ্রীশ্যামানন্দ গৌড়ীয় মঠ।‘  

শ্যামানন্দ প্রভু রাধারাণীর কত প্রিয় ছিলেন বৃন্দাবনে একটি অলৌকিক ঘটনা দ্বারা তাহা সুনিশ্চিত রূপে প্রমাণিত হয়। শ্রীজীব গোস্বামীর আদেশে গৌড়মণ্ডলে যাওয়ার পূর্ব্বে বৃন্দাবনে এই অদ্ভুতলীলা সংঘটিত হয়।একদিন শ্রীশ্যামানন্দ প্রভু বৃন্দাবনে প্রেমাবিষ্ট হইয়া রাসমণ্ডলে মার্জ্জন করিতেছেন, এমন সময় শ্রীরাধারাণীর কি অলৌকিক কৃপা তিনি রাধারাণীর শ্রীচরণের নূপুর তথায় প্রাপ্ত হইলেন। অত্যন্ত উল্লাসভরে শ্যামানন্দ প্রভু নূপুরটিকে ললাটে স্পর্শ করাইলেন,তাহাতে ললাটে নূপুরাকৃতি তিলকের প্রাকট্য হইল। শ্যামানন্দ পরিবারে নূপুরতিলক প্রবর্ত্তিত হইয়াছে।
 
শ্রীনরোত্তম ঠাকুর ও শ্রীশ্যামানন্দ প্রভু মুখ্যতঃ কীর্ত্তনের দ্বারাই প্রচার করিয়াছিলেন।উৎকলদেশে   শ্যামানন্দ প্রভুর প্রচার ফলে বহু যবনও তাঁহার শিষ্য হইয়াছিলেন। শ্যামানন্দ প্রভুর অসংখ্য শিষ্যের মধ্যে শ্রীরসিক - মুরারি প্রধান ছিলেন। শ্রীশ্যামানন্দ প্রভু শ্রীদামোদর নামক একজন যোগীকে কৃপা করিয়া ভক্তিরসে প্রবর্ত্তিত করিয়াছিলেন। শ্রীরসিক - মুরারি ও শ্রীদামোদর আদি ভক্তগণকে লইয়া শ্যামানন্দ প্রভু ধারেন্দা গ্রামেতে যে মহামহোৎসব করিয়াছিলেন,তাঁহার মহিমা আজও শ্রীশ্যামানন্দ পরিবারে ভক্তগণ কীর্ত্তন করিয়া থাকেন।শ্রীশ্যামানন্দ প্রভু তাঁহার প্রধান শিষ্য শ্রীরসিকানন্দদেব গোস্বামীকে গোপীবল্লভ পুরে তাঁহার সেবিত শ্রীগোবিন্দের সেবা সমর্পণ করিয়াছিলেন। বৃন্দাবনে শ্যামানন্দ প্রভুর সেবিত বিগ্রহ রাধাশ্যামসুন্দর তাঁহার অধস্তন কতৃক অধুনা রাধাশ্যামসুন্দর মন্দিরে সেবিত হইতেছেন। বৃন্দাবনে গৌড়ীয় বৈষ্ণবগণের উক্ত মন্দির অন্যতম দর্শনীয়।

শ্রীশ্যামানন্দ প্রভু শেষ জীবনে উৎকলে নৃসিংহপুর গ্রামে থাকিয়া বৈষ্ণব - ধর্ম্ম প্রচার করিয়াছিলেন। ১৫৫২ শকে আষাঢ়ী কৃষ্ণ - প্রতিপদ তিথিতে শ্রীল শ্যামানন্দ প্রভু এই নৃসিংহপুর গ্রামেই তিরোধান লীলা করেন।                                                  

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...