শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য পরতত্ত্ব
শ্রী শ্রী গুরু
গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব
ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার দণ্ডবৎ প্রণাম I
''হরি - গুরু -
বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে
বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ
বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’
শ্রীচৈতন্যপ্রভুং বন্দে বালোহপি যদনুগ্রহাৎ।
তরেন্নানামতগ্রাহ- ব্যাপ্তং সিদ্ধান্তসাগরম্।।
তরেন্নানামতগ্রাহ- ব্যাপ্তং সিদ্ধান্তসাগরম্।।
অর্থাৎ,- শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে বন্দনা করি, যাঁর অনুগ্রহে বালকও জলজন্তুসঙ্কুল সমুদ্রের মত কুতর্কসঙ্কুল শাস্ত্রসিদ্ধান্ত পার হ’তে পারে।
কৃষ্ণোৎকীর্ত্তনগাননর্ত্তনকলাপাধোজনিভ্রাজিতা,
সদ্ভক্তাবলিহংসচক্রমধুপ শ্রেণীবিলাসাস্পদম্।
কর্ণানন্দিকলধ্বনির্ব্বহতু মে জিহ্বামরু-প্রাঙ্গণে,
শ্রীচৈতন্য দয়ানিধে তব লসল্লীলাসুধাস্বর্ধু নী।।
সদ্ভক্তাবলিহংসচক্রমধুপ শ্রেণীবিলাসাস্পদম্।
কর্ণানন্দিকলধ্বনির্ব্বহতু মে জিহ্বামরু-প্রাঙ্গণে,
শ্রীচৈতন্য দয়ানিধে তব লসল্লীলাসুধাস্বর্ধু নী।।
অর্থাৎ,- হে চৈতন্য, দয়ানিধি! তোমার উজ্জল
লীলামৃত স্বর্গের মন্দাকিনীর সঙ্গে তুলনীয়। স্বর্গের মন্দাকিনী কমলশোভিত, তোমার লীলা কৃষ্ণের কীর্ত্তন গানে ও নর্ত্তনে শোভিত। স্বর্গের মন্দাকিনী হংস, চক্রবাক ও মধুকর-শ্রেণীর বিলাসস্থল, তোমার লীলাও সজ্জন ও ভক্তদের বিলাসস্থল। স্বর্গের মন্দাকিনীর কলধ্বনি শ্রুতিসুখকর, তোমার লীলার সংকীর্ত্তনধ্বনিও শ্রুতিসুখকর। কৃষ্ণনামগুণকীর্ত্তনহীন আমার রসনা মরুর সঙ্গে তুলনীয়, মন্দাকিনীর মত তোমার লীলারস
স্রোতস্বিনী আমার জিহ্বামরুতে প্রবাহিত হোক।
জয় জয় শ্রীচৈতন্য জয় নিত্যানন্দ।
জয়াদ্বৈতচন্দ্র জয় গৌর ভক্তবৃন্দ।।
তৃতীয় শ্লোকের অর্থ করি বিবরণ।
বস্তু-নির্দ্দেশরূপ মঙ্গলাচরণ।।
জয়াদ্বৈতচন্দ্র জয় গৌর ভক্তবৃন্দ।।
তৃতীয় শ্লোকের অর্থ করি বিবরণ।
বস্তু-নির্দ্দেশরূপ মঙ্গলাচরণ।।
তথাহি গ্রন্থকারস্য
যদদ্বৈতং ব্রহ্মোপনিষদি তদপ্যস্য তনুভা
য আত্মান্তর্য্যামী পুরুষ ইতি সোহস্যাংশবিভবঃ।
ষড়ৈশ্বর্য্যৈঃ পূর্ণো য হই ভগবান্ স স্বয়ময়ং
ন চৈতন্যাৎ কৃষ্ণাজ্জগতি পরতত্ত্বং পরমিহ।।
য আত্মান্তর্য্যামী পুরুষ ইতি সোহস্যাংশবিভবঃ।
ষড়ৈশ্বর্য্যৈঃ পূর্ণো য হই ভগবান্ স স্বয়ময়ং
ন চৈতন্যাৎ কৃষ্ণাজ্জগতি পরতত্ত্বং পরমিহ।।
ব্রহ্ম আত্মা ভগবান্ অনুবাদ তিন।
অঙ্গপ্রভা অংশ স্বরূপ তিন বিধেয় চিহ্ন (১)।।
অনুবাদ আগে, পাছে বিধেয় স্থাপন।
সেই অর্থ কহি শুন শাস্ত্র বিবরণ।।
অঙ্গপ্রভা অংশ স্বরূপ তিন বিধেয় চিহ্ন (১)।।
অনুবাদ আগে, পাছে বিধেয় স্থাপন।
সেই অর্থ কহি শুন শাস্ত্র বিবরণ।।
ব্রহ্ম, আত্মা, ভগবান্ এই তিনটি অনুবাদ এবং অঙ্গপ্রভা, অংশ ও স্বরূপ এই তিনটি বিধেয়। “বিধেয় কহিয়ে তারে যে বস্তু অজ্ঞাত। অনুবাদ কহি তারে যেই হয় জ্ঞাত।” অর্থাৎ যথাক্রমে ব্রহ্ম শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যের অঙ্গকান্তি, পরমাত্মা অংশ ও ভগবান স্বরূপ।
স্বয়ং ভগবান্ কৃষ্ণ, কৃষ্ণ পরতত্ত্ব।
পূর্ণজ্ঞান পূর্ণানন্দ পরম মহত্ত্ব।।
নন্দসুত বলি যাঁরে ভাগবতে গাই।
সেই কৃষ্ণ অবতীর্ণ চৈতন্য গোসাঞি।।
প্রকাশবিশেষে তেঁহো (১) ধরে তিন নাম।
ব্রহ্ম পরমাত্মা আর পূর্ণ ভগবান্।।
তাহার অঙ্গের শুদ্ধ কিরণ (২) মণ্ডল।
উপনিষদ্ (৩) কহে তারে ব্রহ্ম সুনির্ম্মল (৪)।।
চর্ম্মচক্ষে দেখে যৈছে সূর্য্য নির্ব্বিশেষ।
জ্ঞানমার্গে লৈতে নারে কৃষ্ণের বিশেষ (৫)।।
পূর্ণজ্ঞান পূর্ণানন্দ পরম মহত্ত্ব।।
নন্দসুত বলি যাঁরে ভাগবতে গাই।
সেই কৃষ্ণ অবতীর্ণ চৈতন্য গোসাঞি।।
প্রকাশবিশেষে তেঁহো (১) ধরে তিন নাম।
ব্রহ্ম পরমাত্মা আর পূর্ণ ভগবান্।।
তাহার অঙ্গের শুদ্ধ কিরণ (২) মণ্ডল।
উপনিষদ্ (৩) কহে তারে ব্রহ্ম সুনির্ম্মল (৪)।।
চর্ম্মচক্ষে দেখে যৈছে সূর্য্য নির্ব্বিশেষ।
জ্ঞানমার্গে লৈতে নারে কৃষ্ণের বিশেষ (৫)।।
(১) তেঁহো – তিনি অর্থাৎ শ্রীনন্দ-নন্দন।
(২) শুদ্ধকিরণ – অপ্রাকৃত জ্যোতিঃ বা জ্যোতির্মাত্র।
(৩) উপনিষদ্ – বেদের জ্ঞানকাণ্ড।
(৪) সুনির্ম্মল – মায়াস্পর্শশূন্য।
(৫) মানব দিব্য দৃষ্টি লাভ না করিলে সাধারণ দৃষ্টিতে সূর্য্যদেবের চতুর্ভুজ মূর্ত্তি দেখিতে পায় না, তাঁহাকে আলোকপিণ্ড বলিয়াই জানে। সেইরূপ ভক্তি না থাকিলে শুধু জ্ঞান দ্বারা মানব শ্রীভগবানের শ্যামসুন্দর মূর্ত্তি দেখিতে পায় না, তাঁহাকে নিরাকার কিরণ-মাত্র ভাবিয়া নিরাকার ব্রহ্ম বলিয়া আখ্যাত করে।
বদন্তি তত্তত্ত্ববিদ স্তত্ত্বং যজ্জ্ঞানমদ্বয়ম্।
ব্রহ্মেতি পরমাত্মেতি ভগবানিতি শব্দ্যতে।। শ্রীমদ্ভাগবতে (১।২।১১)
ব্রহ্মেতি পরমাত্মেতি ভগবানিতি শব্দ্যতে।। শ্রীমদ্ভাগবতে (১।২।১১)
অর্থাৎ,- তত্ত্বজ্ঞেরা যে অদ্বয়জ্ঞানকে তত্ত্ব বলে থাকেন, সেই অখণ্ড তত্ত্বই কখনো ব্রহ্ম রূপে, কখনো পরমাত্মা রূপে, কখনো বা ভগবান্ রূপে কথিত হ’য়ে থাকেন।
যস্য প্রভা প্রভবতো জগদণ্ডকোটি-
কোটিষ্বশেষবসুধাদিবিভূতিভিন্নম্।
তদ্ব্রহ্ম নিষ্কলমনন্তমশেষভূতং
গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি।। (ব্রহ্মসংহিতা ৫ / ৪০)
কোটিষ্বশেষবসুধাদিবিভূতিভিন্নম্।
তদ্ব্রহ্ম নিষ্কলমনন্তমশেষভূতং
গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি।। (ব্রহ্মসংহিতা ৫ / ৪০)
অর্থাৎ,- আদি আদিপুরুষ গোবিন্দকে ভজনা করি। প্রভাবশালী এঁরই প্রভা ব্রহ্ম-কোটি কোটি ব্রহ্মাণ্ডে যাঁর ক্ষিতি অপ্ প্রভৃতি বিভূতি পরিব্যাপ্ত এবং যিনি নিষ্কল অর্থাৎ অখণ্ড, অনন্ত ও অশেষভূত।
কোটি কোটি ব্রহ্মাণ্ডে যে ব্রহ্মের বিভূতি।
সেই ব্রহ্ম গোবিন্দের হয় অঙ্গ-কান্তি।।
সে গোবিন্দ ভজি আমি তেঁহো মোর পতি।
তাঁহার প্রসাদে মোর হয় সৃষ্টিশক্তি।।
সেই ব্রহ্ম গোবিন্দের হয় অঙ্গ-কান্তি।।
সে গোবিন্দ ভজি আমি তেঁহো মোর পতি।
তাঁহার প্রসাদে মোর হয় সৃষ্টিশক্তি।।
মুনয়ো বাতবসনাঃ শ্রমণা ঊর্দ্ধমন্থিনঃ।
ব্রহ্মাখ্যং ধাম তে যান্তি শান্তাঃ সন্ন্যাসিনোহমলাঃ।। শ্রীমদ্ভাগবত (১১।৬।৪৭)
ব্রহ্মাখ্যং ধাম তে যান্তি শান্তাঃ সন্ন্যাসিনোহমলাঃ।। শ্রীমদ্ভাগবত (১১।৬।৪৭)
অর্থাৎ,- দিগম্বর মুনিগণ, জিতেন্দ্রিয় সাধুগণ এবং নির্ম্মলচরিত্র শান্ত সন্ন্যাসীগণ
তোমার ব্রহ্মরূপ ধামে গমন করেন।
আত্মা-অন্তর্য্যামী যারে যোগশাস্ত্রে কয়।
সেহ গোবিন্দের অংশবিভূতি যে হয়।।
অনন্ত স্ফটিকে যৈছে এক সূর্য্য ভাসে (১)।
তৈছে জীবে গোবিন্দের অংশ পরকাশে।।
সেহ গোবিন্দের অংশবিভূতি যে হয়।।
অনন্ত স্ফটিকে যৈছে এক সূর্য্য ভাসে (১)।
তৈছে জীবে গোবিন্দের অংশ পরকাশে।।
অথবা বহুনৈতেন কিং জ্ঞাতেন তবার্জ্জুন।
বিষ্টভ্যাহমিদং কৃৎস্নমেকাংশেন স্থিতো জগৎ।। (গীতা ১০।৪২)
বিষ্টভ্যাহমিদং কৃৎস্নমেকাংশেন স্থিতো জগৎ।। (গীতা ১০।৪২)
অর্থাৎ,- হে অর্জ্জুন! একটি একটি করে জানার কি প্রয়োজন? আমার একাংশ দিয়ে আমি সারা জগৎ ব্যাপ্ত করে রেখেছি।
তমিমমহমজং শরীরভাজাং
হৃদি হৃদি ধিষ্ঠিতমাত্মকল্পিতানাম্।
প্রতিদৃশমিব নৈকধার্কমেকং
সমধিগতোহস্মি বিধূতভেদমোহঃ।।
হৃদি হৃদি ধিষ্ঠিতমাত্মকল্পিতানাম্।
প্রতিদৃশমিব নৈকধার্কমেকং
সমধিগতোহস্মি বিধূতভেদমোহঃ।।
অর্থাৎ,- আমার ভেদমোহ আর নেই, কারণ আমি জেনেছি, বিভিন্ন লোকের দৃষ্টিতে নানাভাবে প্রকাশিত হ’লেও সূর্য্য যেমন এক, তেমনি নিজসৃষ্ট প্রাণীদের হৃদয়ে হৃদয়ে বিভিন্ন ভাবে প্রকাশিত সেই শ্রীকৃষ্ণও প্রকৃতপক্ষে জন্মরহিত অর্থাৎ এক।
যেমন গগনস্থ এক সূর্য্য অনন্ত স্ফটিকে প্রতিবিম্বিত হইয়া অনন্তরূপ প্রকাশ পান, সেইরূপে নিত্যধামস্থ শ্রীকৃষ্ণ অনন্তজীবে পরমাত্মরূপে অনন্ত প্রতীয়মান হন।
সেইত গোবিন্দ সাক্ষাৎ চৈতন্য গোসাঞি।
জীব নিস্তারিতে ঐছে দয়ালু আর নাঞি।।
পরব্যোমেতে বৈসে নারায়ণ নাম।
ষড়ৈশ্বর্য্যপূর্ণ লক্ষ্মীকান্ত ভগবান্।।
বেদ ভাগবত উপনিষদ্ আগম।
‘পূর্ণতত্ত্ব’ যাঁরে কহে-নাহি যাঁর সম।।
ভক্তিযোগে ভক্ত পায় যাঁর দরশন।
সূর্য্য যেন সবিগ্রহ দেখে দেবগণ।।
জ্ঞানযোগ মার্গে তাঁরে ভজে যেই সব।
ব্রহ্ম আত্মারূপে তাঁরে করে অনুভব।।
উপাসনা ভেদে জানি ঈশ্বর মহিমা।
অতএব সূর্য্য তাঁর দিয়েত উপমা।।
সেই নারায়ণ-কৃষ্ণের স্বরূপ অভেদ।
একই বিগ্রহ কিন্তু আকারে বিভেদ।।
ইহোঁত দ্বিভুজ তিহোঁ ধরে চারি হাত।
ইহোঁ বেণু ধরে, তিঁহো চক্রাদিক সাথ।।
জীব নিস্তারিতে ঐছে দয়ালু আর নাঞি।।
পরব্যোমেতে বৈসে নারায়ণ নাম।
ষড়ৈশ্বর্য্যপূর্ণ লক্ষ্মীকান্ত ভগবান্।।
বেদ ভাগবত উপনিষদ্ আগম।
‘পূর্ণতত্ত্ব’ যাঁরে কহে-নাহি যাঁর সম।।
ভক্তিযোগে ভক্ত পায় যাঁর দরশন।
সূর্য্য যেন সবিগ্রহ দেখে দেবগণ।।
জ্ঞানযোগ মার্গে তাঁরে ভজে যেই সব।
ব্রহ্ম আত্মারূপে তাঁরে করে অনুভব।।
উপাসনা ভেদে জানি ঈশ্বর মহিমা।
অতএব সূর্য্য তাঁর দিয়েত উপমা।।
সেই নারায়ণ-কৃষ্ণের স্বরূপ অভেদ।
একই বিগ্রহ কিন্তু আকারে বিভেদ।।
ইহোঁত দ্বিভুজ তিহোঁ ধরে চারি হাত।
ইহোঁ বেণু ধরে, তিঁহো চক্রাদিক সাথ।।
হে আমার প্রাণোধন কৃষ্ণ তুমি আমাদের হৃদয়ে ভক্তির ভাব জাগিয়ে দাও। সবাই একমনে তন্ময় হয়ে শ্রীহরিনাম জপ করুন,-
''হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।''
🌺🌹জয় নিতাই জয় গৌরসুন্দর 🌹🌺🌹 জয় নিতাই জয় গৌরসুন্দর 🌹🌺
No comments:
Post a Comment