Wednesday, April 1, 2020


শ্রীরাম নবমী
♥♥শুভ শ্রীরাম নবমী♥♥ ♥♥শুভ শ্রীরাম নবমী♥♥
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু, গুরু,বৈষ্ণব ভক্তবৃন্দের শ্রী চরণে আমার দণ্ডবৎ প্রণাম
শ্রীরামচন্দ্র প্রভুর শুভ আবির্ভাব তিথি 'শ্রীরাম নবমী' পর্বের অগ্রীম প্রীতিশুভেচ্ছা অভিনন্দন।

হরে কৃষ্ণ, আগামী ০২/০৪/২০২০ ইং রোজ - বৃহস্পতিবার শ্রীরাম নবমী I
(পারণ - পরদিন পূর্ব্বাহ্ন ০৯।৩৭ মিঃ মধ্যে শ্রীরাম নবমী ব্রতের পারণ)

আপনি নিজে শ্রীরাম নবমী ব্রত পালন করুন অন্যকে পালনে উৎসাহিত করুন।

"ততশ্চ দ্বাদশে মাসে চৈত্রে নাবমিকে তিথৌ।।নক্ষত্রেহদিতিদৈবত্যে স্বোচ্চসংস্থেষু পঞ্চসু।গ্রহেষু কর্কটে লগ্নে বাক্ পতাবিন্দুনা সহ।।প্রোদ্যমানে জগন্নাথং সর্বলোক নমস্কৃম্।কৌসল্যাজনয়দ্রামং দিব্য লক্ষণ সংযুতম্।।" রামায়ণ (/১৮/-১০)
অর্থাৎ,- চৈত্র মাসে নবমী তিথিতে, পুনর্বসু নক্ষত্রে,কর্কট লগ্নে, কৌশল্যাদেবী দিব্য লক্ষণ সম্পন্ন লোহিত নয়ন রামচন্দ্রকে প্রসব করিলেন। তিথিটা হল রাম নবমী।

শাস্ত্রে রাম নবমী উপবাস সম্পর্কে বলা হয়েছে -
"মুমুক্ষবোহপি হি সদা শ্রীরামনবমী ব্রতম্।
ত্যজন্তি সুরশ্রষ্ঠা দেবেন্দ্রোহপি বিশেষতঃ।।"

অর্থাৎ,- মুমুক্ষুগণ,বিশেষত দেবশ্রেষ্ঠ ইন্দ্রও সর্বদা শ্রীরাম নবমীব্রত ত্যাগ করেন না।( হঃ ভঃ বিঃ১৪/৮৯) ঋষি অগস্ত্য আরো বলছেন-
"তস্মিন্ দিনে তু কর্তব্যম্ উপবাসব্রতাদিকম্।"
সুতরাং উক্তদিনে উপবাস করা সকলের কর্তব্য।(হঃ ভঃ বিঃ ১৪/৮৮) তিথিতে উপবাস না করলে কি হয় ? উত্তরে ঋষি অগস্ত্য বলছেন,-
"প্রাপ্তে শ্রী রামনবমীদিনে মর্ত্ত্যো বিমূঢ়ধীঃ।
উপোষণং কুরুতে কুম্ভীপাকেষু পচ্যতে।।"

অর্থাৎ,- যে মূঢ়মতি রামনবমী সমাগত দেখিয়াও উপবাস থাকেনা,কুম্ভীপাক নরকে তাকে পঁচতে হয়।" ( হঃ ভঃ বিঃ ১৪/৮৯ অগস্ত্য বচন) তাই ভগবান রামচন্দ্রের আবির্ভাব তিথিতে ভগবানের গুণগান করে উপবাস থেকে শ্রীরামচন্দ্রের কৃপা প্রার্থনা করা উচিৎ।

পবিত্র চৈত্র মাস। নবমী তিথি।শুক্লপক্ষ শ্রীভগবানের অতি প্রিয় অভিজিৎ মুহূর্ত উপস্থিত হল, দ্বিপ্রহর কাল। শীততাপ সুখানুভুতি। সেই পবিত্রকাল সর্বলোকের জন্য শান্তিদায়ক ছিল। শীতল মৃদুমন্দ, সুগন্ধিত বায়ুপ্রবাহ, আকাশ - বাতাস মনোরম করে রেখেছিল। দেবগণ প্রসন্নচিত্ত ছিলেন আর সাধুসন্তদের মনে ছিল আনন্দ। অরণ্য,উদ্যানসকল পুষ্পসম্ভারে সুসজ্জিত হয়ে উঠেছিল। সকল নদনদীতে অমৃত প্রবাহিত। শ্রীভগবান আসছেন, তাই ব্রহ্মা দেবতা সকলকে নিয়ে সুসজ্জিত বিমানে আরোহণ করে যাত্রা করলেন। গন্ধর্বগণ হরিনাম ভজন - কীর্ত্তনে মত্ত হলেন। তাঁরা পুষ্পাঞ্জলি বর্ষণ করতে থাকলেন। নাগ মুনিগন স্তবস্তুতি করতে থাকলেন। দেবতাগণ প্রণাম নিবেদন করলেন, অখিলাত্মা, সর্বশান্তিদাতা,জগন্নিবাসের শুভ আর্বিভাব হল।

দীনবন্ধু, পরমকরুণা ময়, কল্যাণমূর্তি ভগবান কৌশল্যেয় ধরাধামে অবতরণ করলেন। মুনিমন হরণকারী শ্রীপ্রভু জ্যোর্তিময় বিগ্রহ সাম্নে দেখে মাতা কৌশল্যা আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে গেলেন। মা দেখছেন নয়নাভিরাম ঘনশ্যাম নবনীরদকান্তি চতুর্ভূজ, অঙ্গে দিব্য আভরণের দুত্যিতে সুশোভিত। কন্ঠে সুচারু বনমালা।তাঁর দীর্ঘায়তলোচন অতিশয় সুন্দর। মাতা স্তুতি করতে লাগলেন, হে অনন্তবীর্য, আপনার স্তুতি করবার ভাষা আমার জানা নেই। বেদ পুরাণ মতে আপনি অক্ষর ব্রহ্ম স্বয়ং। আপনি মায়াতীত,গুনাতীত জ্ঞানাতীত। সন্তরা তোমার  কত মহিমা সংকীর্ত্তন গান করে। সেই ভক্তবৎসল লক্ষীকান্ত আমার কল্যাণের নিমিত্ত সাকার রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। বেদ আপনার প্রতি রোমকূপে মায়া বিরচিত অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডের অধিষ্ঠান।

তুলসীদাস বাবা বলছেন,-
‘’ভএ প্রগট কৃপালা দীনদয়ালা কৌশল্যা হিতকারী।
হরষিত মহতকারী মুনি মন হারী অদ্ভুত রূপ বিচারী।।
লোচন অভিরামা তনু ঘনশ্যামা নিজ আয়ুধ ভূজ চারী।
ভূষণ বনমালা নয়ন বিসালা সোভাসিন্ধু খরারী।।
কহ দুই কর জোরী অস্তুতি তোরী কেহি বিধি করৌ অনন্তা।
মায়া গুণ জ্ঞানাতীত অমানা বেদ পুরান ভনন্তা।।
করুনা সুখ সাগর সব গুণ আগর জেহি গাবহি শ্রুতি সন্তা।
সো মম হিত লাগী জন অনুরাগী ভয়উ প্রকট  শ্রীকন্তা।।‘’

প্রভুর মার ভিতরে বাৎসল্য ভাব উৎপন্ন হল। মা বললেন এই রূপ পরিহার করে অতিপ্রিয় বাল্যলীলাভিনয় করুন। তাতে পরম সুখ আছে। মার কথায় প্রভু শিশুরূপ ধারণ করে রোদন করতে লাগলেন। পুত্রের কান্নাই রাণীরা আনন্দিত, আনন্দিত দাসীরা ছুটে আসলেন, রাজা দশরথ ব্রহ্মানন্দ অনুভব করলেন।  রাণী কৈকেয়ীও সুমিত্রা দুইজন পুত্র জন্ম দিলেন। এত সুন্দর রাজকুমারদের পেয়ে সারা অয্যোধ্যা নগরী ধ্বজ, পতাকা, তোরণে ছেয়ে গেল। আকাশ হইতে  পুষ্পবৃষ্টি হতে লাগল। রাজা দশরথ মুক্তহস্তে দান করতে লাগলেন। গৃহে গৃহে পুত্রজন্ম হেতু আনন্দোৎসব হতে লাগল। নরনারীরা আজ আনন্দিত। ধূপধুণার ধোঁয়ার অন্ধকার, তাঁর মাঝে আবির উড়ছে। রাজপ্রাসাদে বেদবাণী পাঠ হচ্ছে এই ভাবে এক মাস আনন্দোৎসব হল অয্যোধ্যায়।

কিছুদিন পর মহর্ষি বশিষ্ট চার পুত্রের সুন্দর নাম রাখলেন। তিনি রাজাকে বললেন, এদের অনেক অনুপম নাম আছে। আপনার পুত্রগণ সুখরাশিসম্পন্ন আনন্দসাগর। আপনার জেষ্ঠ্য পুত্রের নাম হল রাম। জগৎ ভরপোষণকারী আপনার দ্বিতীয় পুত্র ভরত। আর যাঁকে স্মরণ করলেই শত্রুর বিনাশ হয় তিনি বেদ সমর্থিত শত্রুঘ্ন সর্বসুলক্ষণযুক্ত শ্রীরামচন্দ্রের অতি প্রিয় জগতের আধারস্বরূপ পুত্রের উৎকৃষ্ট নামকরণ করলেন লক্ষণ।
  জয় শ্রীরাম  ☘ রাম লক্ষ্মণ জানকি জয় বল হনুমান কি☘

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...