💞💐 শ্রীভগবান সাধনার পথ 💐💞

🍁💐🍁 💞💐💞 🍁💐🍁 💞💐💞 🍁💐🍁

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

পরমকরুণাময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সর্বজীবে অধিষ্ঠিত আছেন, তাঁর আপন মহিমায়। তিনি স্বয়ং পরমব্রহ্ম, পরমাত্মা, জীবের মধ্যে তিনি জীবাত্মা। এই জীবাত্মা অদর্শিত ও অঞ্জাত। এর শক্তি বিশাল, যা' জীবদেহে সুপ্তভাবে থাকে। এই শক্তিকে জাগাতে হলে আমাদের চাই সাধনা, অভ্যাস বা যোগ। তাই শ্রীমদ্ভগবদ গীতার আঠারোটি অধ্যায়ের নামের সাথে 'যোগ' শব্দ যুক্ত করে, ভক্তদের আহ্বান করেছেন স্বয়ং শ্রীভগবান।

শ্রীমন্মহাপ্রভু বলেছেন ‘সাধন বিনা সাধ্য বস্তু কভু নাই পায়’। শ্রীভগবানকে পাঁচটি ধারা বা রসের মাধ্যমে ভজন করা যায়। যাহলো শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য ও মাধুর্য্য। এই রসগুলো কেমন।

শান্তঃ আমরা জানি, ভগবান আমাদের বারবার এই পৃথিবীতে পাঠান বিভিন্ন জীবরুপে, আমাদের কর্মফল অনুসারে। তাই তিনি স্রষ্টা আর আমরা সৃষ্টি। তাই আমাদের কর্তব্য তাঁর সাধণ ভজন করা। এমন ঞ্জানে শ্রীভগবানের ভজনের নাম হলো শান্তরস। শান্ত রসের ভক্ত গাছ পাতা, বন পর্বত।

দাস্যঃ যেহেতু ভগবান আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তাই আমরা তাঁর অনুগত ভৃত্য মাত্র। 'জীবের স্বরূপ হয় নিত্য কৃষ্ণদাস।' তাঁর নির্দেশ আমরা পালন করবো, এটাই আমাদের ধর্ম কারণ তিনি প্রভু। এমন ধারণায় শ্রীভগবানের ভজনের নাম হলো দাস্যরস। দাস্য রসের ভক্ত হলেন শ্রী হনুমান।

সখ্যঃ শ্রীভগবান বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছেন। তিনি সবকিছুরই নিয়ন্তা। তাঁর শক্তি আমার মধ্যেও বিরাজমান। তফাৎ শুধু আমি জীব আর তিনি পরমব্রহ্ম। তাঁকে যদি সখা ভেবে, বন্ধু ভেবে তাঁর নৈকট্য লাভ করতে পারি, তবেই  আমার পরম শান্তি। এমন চিন্তা চেতনা থেকে শ্রীভগবানের ভজনের নাম হলো সখ্য রস। সখ্য রসের ভক্ত হলেন গোপ বালক আর অর্জুন।

বাৎসল্যঃ শ্রীভগবান তো নওলকিশোর। তাই তাঁর সেবা পরিচর্যা করা আমার পরম কর্তব্য। আবার তিনি সকল কিছুরই স্রষ্টা। তাই তিনি অভিভাবকও বটে। এভাবে তিনি সন্তান, ভাই, বোন, মাতা, পিতা ইত্যাদি সম্বন্ধেও সম্বোধিত হইতে পারেন। এমন চিন্তায় শ্রীভগবানের ভজনের নাম হলো বাৎসল্যরস। বাৎসল্য রসের ভক্ত হলেন নন্দ বাবা ও যশোদা মায়া।

মাধুর্য্যঃ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন প্রেমাবতার আর প্রেমের কাঙাল। তাঁকে বাদ দিয়ে কোনো প্রেমই পূর্ণ হতে পারেনা। সে তো প্রেমের আধার। তাঁর হ্লাদিনী শক্তি রাধা, যাঁর প্রেমে তিনি পূর্ণতর। আবার গোপীগণের প্রেমে তিনি পূর্ণতম। তিনি পুরুষাকার হলেও, তাঁর লিঙ্গভেদ নেই। তাঁকে বিশুদ্ধ প্রেমে আপন প্রাণবল্লভ রুপে নিশ্চয়ই তাকে তুষ্ট করতে পারব, তাঁকে আপন করতে পাবো। এমন চেতনায় শ্রীভগবানের ভজনের নাম মাধুর্য্যরস। মধুর রসের ভক্ত হলেন গোপীগণ।

এছাড়া শ্রীবিষ্ণুর নববিধা ভক্তি সকল মতাবলম্বীদের স্বীকার্য্য।

শ্রবণং কীর্ত্তনং বিষ্ণোঃ, স্মরণং পাদসেবনং।

অর্চ্চনং বন্দনং দাস্যং সখ্যং আত্মনিবেদনম্।।

ইতি পুংসার্পিতা বিষ্ণুর্ভক্তিচেৎ নবলক্ষণা।

ক্রিয়েত ভগবতীহদ্ধা যন্মন্যেহধীতুত্তমম্।।(শ্রীমদ্ভাগবত)

নববিধা ভক্তি হলো, শ্রীহরির নাম, রুপ, গুণ, লীলা মাহাত্মাদি স্মরণ, পাদসেবন, অর্চন, বন্দন, দাস্য, সখ্যভাব এবং শ্রীভগবানে আত্মনিবেদন। এই নবলক্ষণাত্মিকা ভগবদ্বিষয়িনী চেষ্টার নামই ভক্তি। পঞ্চরসের শান্ত ও দাস্য ভাবে  শ্রীভগবানে আত্মিকতার টান কম হয়। তাই সখ্য, বাৎসল্য ও মাধুর্য্য ভাব উত্তম। এর মধ্যে আবার মাধুর্য্য বা মধুর ভাব অতি উত্তম।

মধুর ভাব দুই রকম। স্বকীয়া মধুর এবং পরকীয়া মধুর। শ্রীভগবানের অষ্টম মহিষীর প্রেম ছিলো স্বকীয়া, আর গোপীগণের প্রেম ছিলো পরকীয়া। এই পরকীয়া প্রেমেই সচ্চিদানন্দঘন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পূর্ণতম। তাঁর শ্রীচরণে সকলের কল্যাণ ও সকাতর মঙ্গল প্রার্থনা করি, সবার হৃদয়ে ভগবদ্ প্রেমের জোয়ার, অমৃত ধারার মতো প্রবাহিত হোক অমিত প্লাবনে।

শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর উপদেশ

আপনে সবারে প্রভু করে উপদেশে।

কৃষ্ণ-নাম মহা-মন্ত্র শুনহ হরিষে।।

‘হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।

প্রভু বলে, - কহিলাম এই ‘মহামন্ত্র’।

ইহা ‘জপ’ গিয়া সবে করিয়া নির্বন্ধ।।

ইহা হইতে সর্ব-সিদ্ধি হইবে সবার।

সর্বক্ষণ বল ইথে বিধি নাহি আর।।

কি ভোজনে, কি শয়নে, কিবা জাগরণে।

অহর্নিশি চিন্ত কৃষ্ণ বলহ বদনে।।

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।

💐💞জয় শ্রীরাধা💞💐 💐💞জয় শ্রীরাধা💞💐 💐💞জয় শ্রীরাধা💞💐