Tuesday, May 12, 2020


কৃষ্ণভাবনাময় জীবন
বিশেষ পোষ্ট
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I
''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

গুরবে গৌরচন্দ্রায় রাধিকায়ৈ তদালয়ে।
কৃষ্ণায় কৃষ্ণভক্তায় তদ্ভক্তায় নমো নমঃ।।

গীতায় ভগবান বলেছেন, "যার ভগবৎ জ্ঞান নেই, সে জীবনের উদ্দেশ্য কি তা জানে না। তার হৃদয়-মন সর্বদা বিষয় চিন্তায় চঞ্চল, অশান্ত বিভ্রান্ত।"

জড়-জাগতিক দিক থেকে অনেক জ্ঞানী, বিদ্বান হলেও ভগবৎ ভক্তি বিহীন মানুষ কেবল ইন্দ্রিয়ভোগের চেষ্টা করেন, ইন্দ্রিয়ের দাসত্ব করেন। কৃত্রিমভাবে ইন্দ্রিয় দমন করা যায় না। একটা নিয়ন্ত্রণ করলে আরেকটি মাথাচারা দিয়ে উঠে, তাই যে কোন একটি মাত্র ইন্দ্রিয় দ্বারা যে কেউ মুহুর্তে বিক্ষিপ্ত হইতে পারে।

একমাত্র উপায় হল মন-বুদ্ধি-ইন্দ্রিয়গণকে ইন্দ্রিয়ের অধীশ্বর শ্রীভগবানের সেবায় নিয়োজিত করা। যারা জীবনের উদ্দেশ্য জানে তারা ভগবৎ সেবায় ব্রতী হয়। মন-বুদ্ধি-অহংকারের পর আত্মার স্বভাবও বাসনা করা। বাসনাকে বন্ধ করা বা মুছে ফেলা যায় না। আমাদের নিত্য বাসনা হল শ্রীকৃষ্ণের আনন্দবিধান করা। কিন্তু আমরা এই জড়জগতে অধঃপতিত হয়েছি, আর এই জড় পরিবেশে পতিত হয়ে সেই নিত্য ভগবৎ-বাসনা নিজের ইন্দ্রিয়ভোগ বাসনায় রুপান্তরিত হয়েছে।

ভক্তিযোগ হচ্ছে ইন্দ্রিয়ভোগ বাসনাকে পরিবর্তন করে ভগবানের সন্তুষ্টি বিধানের বাসনায় রুপান্তরিত করার পন্থা। এইভাবে এই জড়জগতে মানুষ ভক্তিযোগ দ্বারা কৃষ্ণভাবনাময় হয়ে উঠে। তখন আর তাকে মায়া জড় বন্ধনে আবদ্ধ রাখতে পারে না।
'কাম' কৃষ্ণ - কর্ম্মাপণে , 'ক্রোধ' ভক্তদ্বেষি-জনে,
'লোভ' ইষ্টলাভ বিনে, 'মদ' কৃষ্ণগুণগানে,
নিযুক্ত করিব যথা তথা ।।
(নরোত্তম দাস ঠাকুর, অন্য অভিলাষ ছাড়ি)
অর্থাৎ,- আমার কর্মফল কৃষ্ণকে নিবেদন করার মাধ্যমে আমি কামকে নিযুক্ত করব। ভক্তবিদ্বেষীদের প্রতি আমার ক্রোধ প্রদর্শন করব। সাধুসঙ্গে হরিকথা শ্রবণ করার জন্য আমি আমার লোভকে নিযুক্ত করব। এই মুহূর্তে আমি আমার আরাধ্য ভগবানকে লাভ করতে পারলাম না- এই চিন্তায় আমি মোহগ্রস্ত হব শ্রীকৃষ্ণের গুণকীর্তনের মধ্যেই আমার মত্ততা প্রকাশিত হবে। এভাবেই এদের আমি কৃষ্ণসেবায় নিযুক্ত করব।

কৃষ্ণভাবনাময় দিব্য জীবন যিনি লাভ করেন, তিনি সমস্ত জড় বাসনা থেকে মুক্ত হয়ে ভগবৎ সেবার অপ্রাকৃত আনন্দে মগ্ন হন এবং তার জড়দেহের অবসানে তিনি ভগবৎ-ধাম বৈকুন্ঠলোক প্রাপ্ত হন, যেখানে কেউ কোন সম্পত্তিকে নিজের ইন্দ্রিয়তৃপ্তির উদ্দেশ্যে আত্মসাৎ করতে অভিলাষী নয়, বরং সব কিছুকেই পরম প্রীতিতে ভগবানের সেবায় নিযুক্ত করে তারা দিব্য আনন্দ লাভ করেন।

তাই সমাজের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিগণের কর্তব্য হচ্ছে ভগবৎ- সেবামূলক কর্ম্ম করার মাধ্যমে জনসাধারণকে শিক্ষা দান করা। সমাজের প্রত্যেকের কর্তব্য পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রীতির জন্য নিজ নিজ স্বধর্ম পালন করা।

জীবনের প্রকৃত সমস্যা কি???

একসময় যমরাজ, যুধিষ্ঠিরকে জিজ্ঞাসা করেন - পৃথিবীতে সবচেয়ে আশ্চর্যকর জিনিষ কি? উত্তরে তিনি বলেন,- মানুষ দেখছে তার পিতামাতা, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, সবার মৃত্যু হচ্ছে, তবুও সে ভাবে - সে বেঁচে থাকবে! ঠিক একটা ছাগলকে বলি দেওয়া দেখেও, অপর ছাগল সন্তুষ্ট মনে ঘাস খেতে থাকে, শুধু ইন্দ্রিয় সুখভোগ নিয়েই তৃপ্ত। আবার যদি কারও মৃত্যুর জ্ঞান আছে, তাহলে এটা জানেনা মৃত্যুর পরে কি হবে? জিজ্ঞাসা করে দেখুন, বলবে - আমার জানা নেই! এটাই প্রকৃত সমস্যা।

আমাদের প্রধান চারটি সমস্যা - জন্ম,মৃত্যু,জরা ব্যাধি। আমরা মরতে চাইনা, তবুও মৃত্যু আসে। রোগাক্রান্ত হতে কেউ চায় না। কিন্তু যখন রোগে ধরে, তখন ভাবে - ডাক্তারের কাছে যাব, কতকগুলি ওষুধ দেবেন, সেগুলি সেবন করলে আমি ভাল হয়ে যাব। আর বৃদ্ধ হইতে তো কেউই চায় না, সারাজীবন যৌবন ধরে রাখতে চায়। তা কি হয়? এগুলোই সমস্যা। মহাভারতে দেখাযায় শ্রীকৃষ্ণ  ১২৫ বছর বয়সেও ২৫ বছরের যুবক মনে হতো। কারন সেটা চিন্ময় শরীর। আমাদেরও ভগবান সেই দেহ দিতে উৎসুক, তবে তার জন্য চেষ্টাতো করতে হবে।

কিভাবে চেষ্টা করবো???

দেখুন ছোটবেলায় থেকে এবং যথাযথ শিখে নিয়ে, আজ সমস্ত গণিতশাস্ত্র জানা হয়ে গেছে। ঠিক তেমন, কেউ যখন কৃষ্ণকে জানতে পারে, তার সমস্ত জানা হয়ে যায়। তবে কৃষ্ণকে জানবো কিভাবে? যেখানে ব্রহ্মা হাজার বছর চেষ্টা করেও কৃষ্ণকে জানতে পারেনি!

কৃষ্ণের মতো কৃপালু আর নেই। শ্রীমন্মহাপ্রভু শিক্ষাষ্টকে বলেছেন,- 
''চেতোদর্পণমার্জনং ভবমহাদাবাগ্নি-নির্বাপণং,
শ্রেয়ঃকৈরবচন্দ্রিকাবিতরণং বিদ্যাবধূজীবনম্।
আনন্দাম্বুধিবর্ধনং প্রতিপদং পূর্ণামৃতাস্বাদনং,
সর্বাত্মস্নপনং পরং বিজয়তে শ্রীকৃষ্ণসংকীর্ত্তনম্।।১।।''

অর্থাৎ,- চিত্তরূপ দর্পণের মার্জনকারী, ভবরূপ মহাদাবাগ্নি নির্বাপণকারী, জীবের মঙ্গলরূপ কৈরবচন্দ্রিকা বিতরণকারী, বিদ্যাবধূর জীবনস্বরূপ, আনন্দ-সমুদ্রের বর্ধনকারী, পদে পদে পূর্ণামৃতাস্বাদনস্বরূপ এবং সর্বস্বরূপে শীতলকারী শ্রীকৃষ্ণ-সংকীর্ত্তন বিশেষরূপে জয়যুক্ত হোন।


জগাই-মাধাই এই নামে উদ্ধার পেল। হরিদাস ঠাকুরকে বিচলিত করতে গিয়ে, এক বেশ্যা শুধু এই মহামন্ত্রের বলে ভক্তে পরিণত হলো। অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি তর্কে আসেন - নাকি বেদান্ত পড়তেই হবে। অবশ্যই বেদান্ত = বেদ+অন্ত, অর্থাৎ শিক্ষার যেখানে শেষ। ভক্ত ধ্রুব  প্রহ্লাদ ওইটুকু বয়সেই কি বেদান্ত পড়েছিল? আর কোনো অশিক্ষিত ব্যক্তি যদি বেদান্ত না পড়তে পারে, ভগবান কি তাকে স্বীকার করবেন না? কলিযুগে বেদান্ত নয়, তবে ভগবতগীতা শ্রীমদ্ভাগবত পড়তেই হবে। শ্রীকৃষ্ণ যেমন- সর্বকারনকারনম তেমনই মহামন্ত্র - সর্বদুঃখহরণম।

‘’কলের্দোষনিধেরাজন্ অস্তি হ্যেকো মহানগুণঃ I
কীর্ত্তনাদেব কৃষ্ণস্য মুক্তসঙ্গঃ পরং ব্রজেৎ I I‘’ (শ্রীমদ্ভাগবত)
কলি সমস্ত দোষের বটে, তথাপি হে রাজন ! কলির একটি মহানগুণ এই যে, কৃষ্ণকীর্ত্তনে জীব মায়াবদ্ধ হইতে মুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণরূপ পরতত্ত্ব লাভ করেন।
‘’নাম - সংকীর্ত্তন যস্য সর্বপাপ প্রণাশনম্।
প্রণামো দুঃখশমনস্তং নমামি শ্রীহরিং পরম্।।‘’
অর্থাৎ,- যে হরিনাম সংকীর্ত্তন করিলে ইহকাল ও পরকালের পাপরাশি নিঃশেষে দগ্ধ হয়,আমি সেই নামরূপী পরমাত্মা স্বরূপ শ্রীহরিকে প্রণাম করি।

পরমকরুণাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী এবং সকল বৈষ্ণব ভক্ত - পার্ষদদের শ্রীচরণকমলে নিরন্তর প্রার্থনা করি, সকলের জীবন যেনো রাধা - কৃষ্ণময়তায় পূর্ণ হয়ে, মঙ্গলময়, কল্যাণময়, ভক্তিময়, সুন্দরময় আর আনন্দময় হয়ে উঠুক।
"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে!!"
!! জয় শ্রীরাধাকৃষ্ণের জয় !! !! জয় সকল ভক্তবৃন্দের জয় !!

No comments:

Post a Comment

💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐 🌷বৈষ্ণবের ব্যাস পূজা🌷 💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐 শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দ...