Tuesday, May 19, 2020


কলিযুগ
🌻🌺🌺🙏🙏🌺🌺🌻
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I
''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

গুরবে গৌরচন্দ্রায় রাধিকায়ৈ তদালয়ে।
কৃষ্ণায় কৃষ্ণভক্তায় তদ্ভক্তায় নমো নমঃ।।

''সৃনত শ্রদ্ধয়া নিত্যম দৃঢতশ্চ প্রতিষ্টিতম।
নাতি দীর্ঘেন কালেন ভগবান বৃষতে হৃদি।।''

পৃথিবীতে কলির আগমন বর্ণন, কলির অবস্থানের স্থান সমূহ এবং পরীক্ষিত মহারাজের প্রতি ব্রহ্মশাপ 👉

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন দেহত্যাগ করেন তখন পঞ্চপাণ্ডব সকলে শোকাহত হয়ে পড়ে  ছিলেন। রাজ্যভার অভিমন্যু পুত্র পরিক্ষিতকে প্রদান করে যুধিষ্ঠির সহ পঞ্চ ভ্রাতা রাজ্য ত্যাগ করে বনে প্রস্থান করেন। পরীক্ষিত ব্রাহ্মণের উপদেশ অনুসারে রাজ্যভার পরিচালনা করেন।

পরীক্ষিতের স্ত্রী ইরাবতী এবং তার চার পুত্র। জ্যেষ্ঠপুত্রজন্মেজয়’ যিনি পরবর্তী সিংহাসনে আরোহন করেন। পরীক্ষিত অশ্বমেধ যজ্ঞ করেন, যজ্ঞের পরে রাজা পরীক্ষিত রাজ্যজয়ের জন্য বের হন। অনেক রাজ্য জয় করেন, অনেক বন্দী প্রজাগণকে মুক্ত করেন। বন্দিদেরকে ধন বিতরন করেন চারদিকে রাজার জয় জয় কার ধ্বনি শোনা যাচ্ছিল। নিজ রাজ্যে যাত্রাকালে পথের মধ্যে এক দৃশ্য দেখে দূর থেকে আশ্চর্য্য হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। তিনি দেখেন মা বসুমতী কান্না করতেছেন ,তখন ধর্মরাজ পৃথিবীতে এসে ধেনুরূপ ধারণ করেন। বসুমতীকে কান্নারত অবস্থায় দেখে জিজ্ঞাসা করেন আপনি কেন কান্না কাটি করছেন, উত্তরে বসুমতি বললেন পৃথিবীতে কলি আগমন করেছে। পাপের ভার বৃদ্ধি পাবে, যাগযজ্ঞ হবে না, কলিযুগের ব্রাহ্মণ সন্ধা গায়ত্রী করবে না, কলির জীব সর্বদা কামবশত হয়ে থাকবে। পুত্র পিতা মাতার সেবা করবে না,অবলা যথেচ্ছাচার করিবে, পাপের ভার দিন দিন বাড়বে। এই কথা শুনে পরীক্ষিত মহারাজ  নিজের শিবিরে চলে যান।

পরদিন  নিজ রাজ্যে যাত্রাকালে পথের মধ্যে দেখেন এক নৃপতি গোমাতাকে পদাঘাত করছে। তখন পরীক্ষিত তার কাছে গিয়ে বলেন তুমি কে? কেন আমার রাজ্যে এসে গোমাতার উপর নির্মম ব্যবহার করছেন। পরীক্ষিত এই বলে খড়গ নীয়ে সেই নৃপতির মাথা কাটতে উদ্ধত হন, তখন সেই নৃপতি নিজের পরিচয় 'কলি যুগ' বলে, পরীক্ষিত মহারাজের চরণে পড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। মহারাজ কলি যুগকে তার রাজ্যের সীমা থেকে  বাইরে চলে যেতে বলেন, নতুবা তিনি কলিযুগকে সমূলে বিনাশ করবে বলে ঘোষণা করেন। কিন্তু কলিযুগ বলিলেন তিনি কালের আজ্ঞায় আসছেন এবং সেই রাজ্যে থাকবে বলে বিনীত প্রার্থনা করেন।

কপটতার  সহিত কলিযুগ বার বার পরীক্ষিত মহারাজের চরণে শরণাগত বলে পরীক্ষিত মহারাজের জীবনকাল পর্য্যন্ত অল্প কিছু সীমার মধ্যে থাকবে বলে প্রার্থনা করেন। তখন পরীক্ষিত মহারাজ বলেন, তুমি পাণ্ডববংশী রাজার কাছে শরণ চাইছ,তাই তুমি নিশ্চিত থাকার স্থান পাবে, কিন্তু তুমি অধর্ম্মের সহায়ক তাই কেবল চার জায়গায় তোমাকে থাকার অনুমতি দেব। এই কথা শুনে কলি কোথায় থাকবে সে কথা জানতে চাইলে  রাজা পরীক্ষিত তখন বলেন চার স্থানে তুমি বাস করবে :-১। যেখানে পরস্ত্রী সঙ্গ সেখানে তুমি সতত থাকিবে ২। দ্যূতক্রীড়া স্থানে থাকবে। ৩। যেখানে হিংসা কর্মকাণ্ড হবে আর ।৪।যেখানে মদ্যপান হবে সেখান ক্রমশ অসত্য, মদ, কাম নির্দয়তা এই  চার অধর্ম সতত বাস করেন, তাই তুমি সেখানেই বাস কর। কলিযুগ বলেন, প্রভু! এই চারি জায়গা আমার জন্য অতি সীমিত, আপনি কৃপা করে আর অন্য কোন স্থান থাকার জন্য আমাকে অনুমতি দিন। পরীক্ষিত মহারাজ বলিলেন কাঞ্চনে রজগুণের বাস থাকে তাই তুমি কাঞ্চনেও বসবাস কর।

মহারাজ পরীক্ষিত  কাঞ্চনের মুকুট পরে ছিলেন,তাই কলিযুগ সর্বপ্রথম সেই মুকুটের মধ্যে প্রবেশ করে হাঁসতে লাগল। রাজা পরীক্ষিত মৃগয়া করার কারণে অরণ্যে গমন করেন। অরণ্যে খিদে পিপাসাযুক্ত হয়ে জলের খোঁজে ভ্রমণ করেন। কোথাও জল পায়নি। সন্ধ্যার সময় অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে তিনি শমীক মুনির আশ্রমে যান। শমীক মুনি সে সময় সমাধিস্থ ছিলেন। পরীক্ষিত মহারাজ পিপাসায় কাতর হয়ে অনেকবার জল প্রার্থনা করেন কিন্তু কোন উত্তর পায়নি। রাজমুকুটে বসে থাকা কলির প্রেরণাতে রাজার সাত্বিক বুদ্ধি ভ্রষ্ট হয়ে যায়।কলিযুগ বলেন,- ইনি একজন কপটি, পাখণ্ডি মুনি, ব্যর্থ সমাধির নাটক করে নিজের প্রভাব বাড়াতে চান। রাজাকে স্বাগত করেনি,আসন দেন নি,এমনকি খাবার জন্য জল জিজ্ঞাসা করেনি। এমন কপটি মুনিকে সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া সর্বথা উচিত, কিন্তু রাজার গুঢ সংস্কারের কারণ রাজা নিজেকে এই ব্রহ্মহত্যা থেকে নিজেকে বাঁচান। রাজা পরীক্ষিত পাশে এক মৃত সর্প দেখতে পান। ক্রোধের জন্য সেই সর্পটি শমীক মুনির গলায় জড়িয়ে দিয়ে রাজা চলে যান।

মুনি শমীকের পুত্র শৃঙ্গ অত্যন্ত তেজস্বী ছিলেন। সেই সময় তিনি নদীতে স্নান করছিলেন,তাঁহার সাথীগণ তার কাছে গিয়ে সমস্ত বৃত্তান্ত বলেন কিভাবে একজন রাজা তাঁহার পিতাকে তিরস্কার করেছেন I  এই কথা শুনার পরে শৃঙ্গ ঋষি ক্রোধে পাগল হয়ে,তৎক্ষণাৎ নদীর জল হাতে নীয়ে রাজাকে অভিশাপ দেন, যে অভিমানী মূঢ়রাজা আমার মহান পিতাকে ঘোর অপমানিত করেছেন সেই মহাপাপী, আজ থেকে সপ্ত দিবস ব্যতীত পরে তক্ষক নাগের দংশনে তার উগ্র বিষাগ্নিতে ভস্মহয়ে যাবে। আমার এই অভিশাপ, এই পৃথিবীতে কেউ চাইলেও কাটতে পারবেনা।

ঠিক সপ্তদিনে তক্ষক নাগ পরীক্ষিতকে দংশন করে এবং রাজার মৃত্যু হয়। পরীক্ষিত মহারাজার  সময় কাল থেকে কলিযুগের সূচনা হয়।  (শ্রীমদ্ভাগবত)
🌻🌺🌺🙏🙏🌺🌺🌻
‘’কলের্দোষনিধেরাজন্ অস্তি হ্যেকো মহানগুণঃ I
কীর্ত্তনাদেব কৃষ্ণস্য মুক্তসঙ্গঃ পরং ব্রজেৎ I I‘’ (শ্রীমদ্ভাগবত)
কলি সমস্ত দোষের বটে, তথাপি হে রাজন ! কলির একটি মহানগুণ এই যে, কৃষ্ণকীর্ত্তনে জীব মায়াবদ্ধ হইতে মুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণরূপ পরতত্ত্ব লাভ করেন।
‘’নাম - সংকীর্ত্তন যস্য সর্বপাপ প্রণাশনম্।
প্রণামো দুঃখশমনস্তং নমামি শ্রীহরিং পরম্।।‘’
যে হরিনাম সংকীর্ত্তন করিলে ইহকাল ও পরকালের পাপরাশি নিঃশেষে দগ্ধ হয়,আমি সেই নামরূপী পরমাত্মা স্বরূপ শ্রীহরিকে প্রণাম করি।

পরমকরুণাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী এবং সকল বৈষ্ণব ভক্ত - পার্ষদদের শ্রীচরণকমলে নিরন্তর প্রার্থনা করি, সকলের জীবন যেনো রাধা-কৃষ্ণময়তায় পূর্ণ হয়ে, মঙ্গলময়, কল্যাণময়, ভক্তিময়, সুন্দরময় আর আনন্দময় হয়ে উঠুক।
"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে!!"
💐জয় শ্রীপরীক্ষিত মহারাজের জয়💐💐জয় সকল ভক্তবৃন্দের জয়💐

No comments:

Post a Comment

💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐 🌷বৈষ্ণবের ব্যাস পূজা🌷 💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐 শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দ...