Saturday, May 23, 2020


''!! ভক্তশ্রেষ্ঠা শ্রীগোপীগণ !!"
💐💞🌿💞💐💐💞🌿💞💐
''বন্দে নন্দব্রজস্ত্রীণাং পাদরেণুমভীক্ষ্ণশঃ।
যাসাং  হরিকথোদগীতং পুনাতি ভুবনএয়ম।।''

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I
‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

আজানুলম্বিত - ভুজৌ কনকাবদাতৌ,
সংকীর্ত্তনৈকপিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ।
বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম্মপালৌ,
বন্দে জগৎপ্রিয়করৌ করুণাবতারৌ।

গোপীগণ কোন জাতিত্ব বা কোন নারীত্ব নয় I
জগতে ভগবান আবির্ভূত হয়েছেন। সাধক ভক্ত, সিদ্ধ ভক্ত, রসিক ভক্ত, নিত্য পার্ষদীয় প্রভৃতি অসংখ্য ভক্ত অবতরণ করেছেন শ্রীভগবানের সঙ্গে। এঁরা সকলেই বিশ্বের গৌরব বর্ধন করতঃ বিদ্যমান আছেন স্বমহিমায়।

ভগবান গীতায় বলেছেন যে ভক্তদের মধ্যে তাঁর কাছে উদ্ধব শ্রেষ্ঠ। সেই মহাভক্ত উদ্ধব গোপীকাদের মাধুর্যপ্রেম দর্শন করে এতোটাই বিমোহিত হয়ে পড়েছিলেন যে, ঞ্জানশ্রেষ্ঠ ভক্তশ্রেষ্ঠ শ্রীমান উদ্ধব নিজেই স্বীকার করেছেন যে গোপীদের প্রেমভক্তির নিকট তাঁর ভক্তি অতি তুচ্ছ। তার কারণ তিনি নিজেই ব্যাক্ত করেছেন,যাঁহাদের পরমাত্মা স্বরুপ শ্রীগোবিন্দে এতাদৃশ গাঢ় ভাব, সেই গোপীগণের জন্মই জগতে সর্বশ্রেষ্ঠ। কেননা মোক্ষাকাঙ্ক্ষী মুনীগণ এবং শ্রীচরণ সেবাকারী ভক্তগণ সর্বদাই এই ভাব তথা চিত্রজল্পের লক্ষণাশ্রিত ভাব প্রার্থনা করে থাকেন। কিন্ত কাঁরো ভাগ্যে এই ভাব প্রাপ্তি সম্ভব হয় না। রুঢ়ভাব হলো মহাভাবের একটি বিশেষ অবস্থা।

একমাত্র গোপীদেহ ভিন্ন মহাভাবের আধেয় হওয়ার সামর্থ্য আর কোন দেহেরই নেই। একমাত্র গঙ্গাধরই গঙ্গা ধারণ করতে পারেন। ব্রজগোপীগণই মহাভাববতী হতে পারেন। মহাভাব ধারণ করতে বিশুদ্ধ চিদ্দেহের প্রয়োজন। একমাত্র গোপীগণেরই এই অবস্থা বিদ্যমান। দ্বারকাবাসী মহিষীগণের পক্ষেও এটা সম্ভব নয় যা সুদুর্লভ। মোক্ষাকাঙ্ক্ষী মুনিগণ বা সেবাকাঙ্ক্ষী ভক্তগণের তো কথাই নেই, বৈকুন্ঠের লক্ষ্মীগণের পর্যন্ত মহাভাবটি দুর্লভ সামগ্রী।

ব্রজাঙ্গনাগণের চিন্ময় দেহই মহাভাবের একমাত্র আধার। চিন্ময় দেহ সর্বদা প্রেমপূর্ণ। ভোগময় জড়দেহ কামপূর্ণ। কামের দেহ ত্যাজ্য। প্রেমের দেহ পূজ্য, অন্য সকল জড়ীয় দেহ ত্যাজ্য। প্রেমের ঘনীভূত বিগ্রহ গোপীদেহ। সুতরাং বিশ্বের দেহধারী জীবের মধ্যে গোপীগণই সর্বশ্রেষ্ঠা। অতএব গোপীদের সম্বন্ধে তাঁদের গোপ জাতিত্ব বা তাঁদের নারী জাতিত্ব বা নারীদেহত্ব ভাবনা নিতান্ত অপরাধজনক।

গোপীগণের অপরিসীম প্রীতির পাত্র যিনি, তিনি নিখিল আত্মার আত্মা। তিনি বিশ্বের সকলের নিরুপাধি প্রেমের পাত্র। অন্য সকল ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি প্রীতির কারণ আছে, আত্মার প্রতি প্রীতির কোনো হেতু নাই। আত্মা নিরুপাধি প্রেমের পাত্র। শ্রীকৃষ্ণ নিখিল আত্মার আত্মা। এই হেতু তিনিই নিরুপাধি প্রেমের পাত্র। এই প্রীতির বস্তুর শ্রেষ্ঠত্ব হতেও গোপীগণের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপন্ন হয়। গোপীগণ কেবল পরমাত্মাকেই ভালবাসেন না, পরমাত্মার শ্রীগোবিন্দ মূর্তিই তাঁদের প্রেমের প্রকৃষ্ট বিষয়। পরমাত্মার রসঘন মূর্তিই শ্রীগোবিন্দ। বেদশাস্ত্র সর্বরস, সর্বগন্ধ, সর্বস্পর্শ, সর্বশব্দ, সর্বরুপ বলে যে অখণ্ড তত্ত্বের সন্ধান দিয়েছেন, তিনিই শ্রীগোবিন্দ।

রুপমাধুর্য, বেণুমাধুর্য, প্রেমমাধুর্য লীলামাধুর্য এই চার মাধুর্যে যিনি অনন্যসাধারণ, তিনিই শ্রীগোবিন্দ। সেই অখিলাত্মা স্বরুপ গোবিন্দে গোপীগণের অধিরূঢ় মহাভাব। প্রেমের প্রগাঢ়তম অবস্থা রূঢ়ভাব। শ্রীকৃষ্ণ সম্বন্ধে যাঁরা সেই ভাব গ্রহণ বহন করেন তাঁদের ভাবের স্বরুপের অনুভব করবার মতো ক্ষমতাও অন্য কারো নেই। কেবল মাত্র এই ভাবের মহিমাংশ অন্য মনের গোচর হতে পারে। মুমুক্ষু এবং মুক্ত মহাপুরুষগণ এবং শ্রীকৃষ্ণের নিত্যসঙ্গী দাসভক্তগণও এই অধিরুঢ় মহাভাবের মহিমা বুঝতে পারেনা। এই পরম বস্তু আমরা প্রার্থনা করি কিন্ত পাই না।

আমাদের অন্তরে সাধ জাগে, ব্রজগোপীদের যাদৃশ ভগবদ্-প্রেমাবেশ, তার কিঞ্চিন্মাত্র লাভ করে ধণ্য হই। জলমগ্ন মানুষ যেমন চারিদিকে জলই দেখে, আর কিছুই দেখেনা, শ্রীকৃষ্ণপ্রেমমগ্ন ব্রজবালাগণ কার্যে, বাক্যে, মনে প্রাণবল্লভ ছাড়া আর কিছুই জানেন না। এঁদের দেহেন্দ্রিয়, বাক্য, চিন্তা সবই শ্রীকৃষ্ণময়। সাধারণ ভক্ত দুরের কথা, অতি অসাধারণ ভক্তরাও এঁদের অবস্থা কামনা করেন, কিন্ত এর কিয়দংশও কেউ লাভ করতে পারে না। কারণটি হলো শ্রীকৃষ্ণের মাধুর্যবিশেষের অনুভব। শ্রীকৃষ্ণের মধ্যে এমন একটি অনন্যসাধারণ মাধুর্য আছে, যার আস্বাদনে মানুষ সবকিছুই ভুলে উন্মাদ হয়ে যায়।

ব্রজগোপীরা যে উন্মাদিনী হয়েছেন তার একমাত্র কারণ শ্যামসুন্দরের মোহন মাধুর্যে তাঁদের নিবিড় আবেশ। এই মাধুর্য আস্বাদনে এইরূপ ক্ষমতা আর কারও নেই। সেই ব্রজবনবাসিনী কৃষ্ণপ্রিয়াগণ নিশ্চয়ই সংসারের দেব, মনুষ্য, ঋষি, মুনী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠা। এঁরা সকলের উর্ধ্বে বিরাজমানা। ঞ্জানযোগাদি সাধনে পুরুষের কিছু উৎকর্ষ থাকতে পারে, কারণ ওই সকল সাধনপথ কঠোর এবং ক্লেশকর। প্রীতিজগতে নারীজাতিরই সর্বাধিক অধিকার। শ্রীমদ্ভগবদ ভাগবতের প্রকৃষ্ট বার্তাই হলো এই যে, শ্রীভগবানকে শুদ্ধ প্রীতিরসে লাভ করা যায়। নারীর প্রাণে ওই প্রীতিরসের আধিক্য। সুতরাং ভাগবতশাস্ত্র মতে ব্রজনারীরা সর্বাধিক অধিকার সম্পন্না।

পরম করুণাময় শ্রীভগবান সকল ভক্তবৃন্দের মনোভিষ্ট পূরণ করুন, সবার মঙ্গল আর কল্যাণ করুন।

"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।''

💐জয় ভক্তবৎসল শ্রীভগবানের জয়💐💐জয় শ্রীরাধা💐

No comments:

Post a Comment

💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐 🌷বৈষ্ণবের ব্যাস পূজা🌷 💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐 শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দ...