Sunday, May 3, 2020


পবিত্র জীবন
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I
‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

আজানুলম্বিত - ভুজৌ কনকাবদাতৌ,
সংকীর্ত্তনৈকপিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ।
বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম্মপালৌ,
বন্দে জগৎপ্রিয়করৌ করুণাবতারৌ।

আজ আমার শুভ জন্মদিন। আপনারা সবাই মিলে আমাকে কৃপা আশীর্বাদ দেবেন আমি যেন হরি - গুরু - বৈষ্ণবগণের সেবা করে এই দেব দুর্ল্লভ মানব জীবন সফল করতে পারি।

নবদ্বীপ ধাম পরিক্রমায় প্রত্যেক বৎসর আপনারা অনেকেই যান, সেখানে গিয়ে যদি বৈষ্ণব আচার আচরণ করেন, নিজে নিয়মকানুন পালন করেন, কিছুই ক্ষতি হবে না। আপনারা ভাবেন যে, “মঠে  যাব !” আশ্রমে গিয়ে সেখান থেকে দীক্ষা নিয়ে বাড়িতে এসে নিরামিষ খেতে হবে, একাদশী করতে হবে, হরিনাম করতে হবে এটাই তো জীবন !

চারটা জায়গায় কলি অবস্থান করে,- দ্যূত, সূরাপান, স্ত্রীয়, সূনা।
() দ্যূত মানে জুয়া খেলা, তাস খেলা, পাশা খেলা। এইটা আমরা বারণ করি। তা আপনারা নিজেরাই বোঝেন। যাঁরা দীক্ষা নেননি, যাঁরা সংসারের মধ্যে আবদ্ধই আছেন, তাঁরা বোঝেন না। যদি বাড়ির কর্ত্তা জুয়া খেলে আর ছেলে জুয়া খেলে, তাহলে এই বাড়ির অবস্থা কি ভাল থাকবে, বলুন ?
() সূরাপান বলতে আপনার বাড়িতে সুখ সারাক্ষণ বসে আছেন, পরিশ্রম করছেন, রান্না করছেন, আর আপনার স্বামী বাড়িতে মদ খেয়ে ঢুকছে, ছেলে মদ খেয়ে ঢুকছে। মদ খেয়ে এসে মাতলামো করছে, বউকে পেটাচ্ছেতাহলে এই বাড়ির অবস্থা কি ভাল থাকবে, বলুন ? পান হচ্ছে পান, মদ, গাঁজা, ভাং, বিড়ি, সিগারেট, এগুলো শরীরের ক্ষতি করে, পয়সাও নষ্ট হয় আর সংসারের মধ্যে ঘোর অশান্তি দারিদ্রতা দেখা দেয়।
() স্ত্রীয় বলতে অবৈধ স্ত্রী-সঙ্গ। আপনি বাহিরে কাজ করতে গিয়ে স্ত্রীকে বাড়িতে রেখে গেলেন আর ইতিমধ্যে আপনার স্ত্রী আপনাকে না পেয়ে পর পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে; সে সংসার ভাল থাকবে ? আর আপনিও বাহিরে গিয়ে পরস্ত্রীর সঙ্গ করছেন, তাহলে এই বাড়ির অবস্থা কি ভাল থাকবে, বলুন ? এটা হচ্ছে অবৈধ স্ত্রী-সঙ্গ।
() সূনা বলতে জীব হিংসা, মানে কোন জীবকে হত্যা করা চলবে না।সর্ব্ব জীবে কৃষ্ণ-অধিষ্ঠান’’: সর্ব্ব জীবের মধ্যে ভগবান আছে, একটা পিপীলিকার মধ্যে যেটা আছে আমার মধ্যে একই জিনিস আছে, হাতির মধ্যে একই জিনিস আছে, জিনিসহচ্ছে আত্মা প্রশ্নটা আমি কে ? আমি অমুক রায়, অমুক চৌধুরী, অমুক মুখার্জী, অমুক ব্রাহ্মণ, অমুক রাজা, অমুক মহারাজ সব পরিচয় নয় !
জীবেরস্বরূপ হয়’ - কৃষ্ণেরনিত্যদাস
কৃষ্ণেরতটস্থা-শক্তি’, ‘ভেদাভেদ-প্রকাশ।।
কৃষ্ণ-নিত্যদাস’ - জীব তাহা ভুলিগেল।

এই দোষে মায়া তার গলায় বান্ধিল।।  (শ্রীচৈতন্য-চরিতামৃত, /২০/১০৮ , /২২/২৪)
আমরা ভুলে গিয়েছি যে, আমরা কৃষ্ণের নিত্য দাস, আর এই জন্য আমরা মায়ার মধ্যে পড়ে আছি; মায়ার মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছি জীব নিত্য কৃষ্ণদাসএটা হচ্ছে আমার পরিচয়।কৃষ্ণের তটস্থা-শক্তি, ভেদাভেদ-প্রকাশ”; ভেদ যোগ অভেদ। ভেদ মানে জীব ভগবান নয়। কিন্তু বিভিন্ন জাগায়  অনেক লোকেরা বলে, “আমি তোমাকে রক্ষা করব !” তুমি রক্ষা করবার কে ? আবার বড় বড় সাইনবোর্ড লাগায়,- “জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’’ !

মুখে বলেজীবে প্রেম’’ আর খেতে গেলে মুরগির মাংস আর ছাগলের মাংস। তারা বলে যে, “তারা জীব নয়, সুতরাং সে জীব হত্যা করা হয় আর আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, “মহারাজ, আপনারা কি জীবকে হত্যা করেন না ? আমরা ছাগল কেটে জীবকে হত্যা করি কিন্তু আপনিও জীব হত্যা করেন। আপনারা বলেন নিরামিষ খান, নিরামিষ প্রসাদ পান কিন্তু বাগান থেকে ওই কচু শাকগুলো কেটে নিয়ে আসেন, লাউয়ের ডগা, ডাটাগুলো কেটে নিয়ে আসেন; সেগুলোও জীব হত্যা হয় !”  বারবার লোকেরা আমাকে এই প্রশ্ন করেছে আমিই প্রশ্ন করচ্ছি, তাহলে উত্তরটাও পেয়ে যাবেন। প্রশ্নটা এইভাবেই : আমরা শাক-সবজি কেটে নিয়ে আসি কিন্তু সেটা তো আমরা নিজের খাবার জন্য নিয়ে আসি না। আমরা এগুলো নিয়ে আসি ভগবানের সেবার জন্য ; সব ভগবানের জন্যই সৃষ্টি হচ্ছে তাই আমরা এসব শাক - সব্জি রান্না করে ভগবানকে প্রথমে ভোগ লাগিয়ে পরে প্রাসাদ সেবন করি। গীতায় বলাহয়েছে যে, “আমাকে না দিয়ে খেলে চুরি করে খাওয়া হয়, পাপ ভক্ষণ করা হয়।এই জগতে যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে গোবিন্দের সেবার জন্য, আমাদের ভোগের জন্য নয় আমরা সব গোবিন্দের সেবায় লাগিয়ে দেই I

বাইরের লোক বাজার থেকে ছাগল কিনে যদি কালির কাছে বা কোন অন্য দেবতার কাছে (যারা সেইভাবে পছন্দ করে) বলি দেন, তাহলে ওই ছাগলটার কিছু মঙ্গল, কিছু সদ্গতি হয়। দেবতার সেবা করেছে  বলে অনেক জন্ম ছাগলটা পেরিয়ে যাবে। কিন্তু যদি আপনি বাড়িতে গরু পোষেন, সে গরু দুধ দেয়, আর আপনি ওই দুধ থেকে পায়েস করেন, তাহলে ওই গরুটা সুকৃতি পায় কিংবা বাজারে তো অনেক কিছু বিক্রি হয়, কেউ দুধও বিক্রি করে, সে দুধ যদি কিনে নিয়ে আসেন  আপনি বাড়িতে পায়েস করে ভগবানের সেবায় দেন, কার গরু দুধ আপনি তা বুঝতে পারলেন না কিন্তু মাঝখান দিয়ে ওই গরুরটার  সুকৃতি হয়ে গেল।

সেইভাবে, সূনা মানে জীব হিংসা, কোনো  জীবকে হত্যা করা চলবে না। আপনার যা কিছু আছে গোবিন্দের সেবার জন্য ব্যবহার করেন, গোবিন্দকে ভোগ লাগিয়ে দেন। আপনার তো ভালো জিনিস খেতে ইচ্ছা করছে, তথা বাজারে গেলেন সিঙ্গারা খেতে ইচ্ছা করছে কিংবা কলা বা মিষ্টি খেতে ইচ্ছা করছে; আপনাকে খেতে কেউ বারণ করেনি কিন্তু প্রথমই আপনি নিয়ে আসবেন, বাড়িতে ঠাকুর আছে, তুলসী পাতা দিয়ে ঠাকুরকে ভোগ লাগাবেন আর ভোগ দিয়ে তাঁর প্রসাদ পাবেন।

‘’প্রসাদ-সেবা করিতে হয় সকল প্রপঞ্চ জয়‘’
মনের মধ্যে অনেক বাসনা আছে: “বাচো-বেগং, মনস-বেগং, ক্রোধ-বেগং, জিহ্বা-বেগং, উদরোপস্থ-বেগং…” বাক্য-বেগ, মানস-বেগ, ক্রোধ-বেগ, জিহ্বা-বেগ, উদর- উপস্থ-বেগ। মনের মধ্যে অনেক খুব খারাপ চিন্তা থাকতে পারে প্রভৃতি সব প্রপঞ্চ আছে এগুলো আপনার সব জয় হয়ে যায় যদি প্রসাদ গ্রহণ করেন। এইজন্য প্রসাদ পাওয়ার সময় কীর্ত্তনে প্রসাদের গুণ গাইতে হয় ---

(জয়) মহাপ্রসাদে গোবিন্দে নামব্রহ্মণী বৈষ্ণবে,
স্বল্পপুণ্যবতাং রাজন বিশ্বাসো নৈব জায়তে।
শরীর অবিদ্যা-জাল জড়েন্দ্রিয় তাহে কাল,
জীবে ফেলে বিষয় সাগরে।।
তার মধ্যে জিহ্বা অতি লোভময় সুদুর্ম্মতি,
তাকে জেতা কঠিন সংসারে।
কৃষ্ণ বড় দয়াময় করিবারে জিহ্বা জয়
স্বপ্রসাদ অন্ন দিল ভাই।।
সেই অন্নামৃত পাও রাধাকৃষ্ণ গুণ গাও,
প্রেমে ডাক চৈতন্য নিতাই।
''জীবে ফেলে বিষয় সাগরে”—ওই জিহ্বা আপনাকে বিষয়-সাগরের মধ্যে ফেলে দিল তার মধ্যে জিহ্বা অতি লোভময় সুদুর্ম্মতি”—ওই জিহ্বা শুধু দুর্ম্মতি নয়, সুদুর্ম্মতি, আরও খারাপএই জিহ্বাকে কন্ট্রোল (দমন, নিয়ন্ত্রণ) যদি করতে না পারেন, তাহলে আপনার অন্য কিছু কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রিত) হবে না

‘’জিহ্বার লালসে যেই ইতি-উতি ধায়
শিশ্নোদরপরায়ণ সে কৃষ্ণ নাহি পায় I I‘’
(শ্রীচৈতন্য-চরিতামৃত, //২২৭)
যে জিহ্বায় নিয়ন্ত্রিত হয়, সে শিশ্নোদরপরায়ণ হয়ে যায় আর যে শিশ্নে উদরে পরায়ণ হয় সে কৃষ্ণকে পায় না  সেইভাবে, লোক সাইনবোর্ড লিখে দেয়জীবে প্রেম’’ আর ঘরের মধ্যে ছাগল খাচ্ছে, মুরগি খাচ্ছেএটা জীবে প্রেম ? যেমন আপনি লিখে দেনঅমুখ গ্লাস ফ্যাক্টরীআর বলেন এখানে গ্লাস (কাচ) তৈরি হয় আমি সেখানে গিয়ে কিন্তু এক টুকরো গ্লাস খুঁজে পাই না ওইরকমই আমাদের দেশে বড় বড় সাইনবোর্ড লাগায় অনেকেই কিন্তু বুঝতে পারে না I 

মানুষকেই জীব বুঝায় আর পশু-প্রাণী জীব নয়, গরু, ছাগল, ভেড়া, বেড়াল জীব নয়, ওগুলোকে তুমি যা খুশি করতে পারো এটা ভুল ধারণা হয় সর্ব্ব জীবে কৃষ্ণ-অধিষ্ঠান,” সেটা বুঝতে হবে এক বৃক্ষের মধ্যেও জীব আছে আচ্ছাদিত-চেতন, সঙ্কুচিত-চেতন, মুকুলিত-চেতন, বিকসিত-চেতন, পূর্ণ-বিকসিত-চেতন, এই ভাবে চেতন শক্তি জাগরণ হয় আপনার চামড়াটা যদি এখানে কেউ টান দিয়ে খোলে আপনি তখন চিৎকার করে বলবেন, “বাবা-মা গো !” তাই না, বলুন ? চিৎকার করে বলবেন। কিন্তু আপনি যদি গাছের ছাল ছাড়িয়ে আপনার হার্টের জন্য তার রস খান, সে গাছটাও চিৎকার করে কিন্তু আপনি সেটা বুঝতে পারছেন না আমাদের এই সিদ্ধান্তগুলো শুনে চলতে হবে।

‘’কলের্দোষনিধেরাজন্ অস্তি হ্যেকো মহানগুণঃ I
কীর্ত্তনাদেব কৃষ্ণস্য মুক্তসঙ্গঃ পরং ব্রজেৎ I I‘’ (শ্রীমদ্ভাগবত)
কলি সমস্ত দোষের বটে, তথাপি হে রাজন ! কলির একটি মহাগুণ এই যে, কৃষ্ণকীর্ত্তনে জীব মায়াবদ্ধ হতে মুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণরূপ পরতত্ত্ব লাভ করে।

‘’নাম-সংকীর্তন যস্য সর্বপাপ প্রণাশনম্।
প্রণামো দুঃখশমনস্তং নমামি শ্রীহরিং পরম্।।‘’
যে হরিনাম সংকীর্ত্তন করিলে ইহকাল পরকালের পাপরাশি নিঃশেষে দগ্ধ হয়,আমি সেই নামরূপী পরমাত্মা স্বরূপ শ্রীহরিকে প্রণাম করি।
♥জয় শ্রীকৃষ্ণের জয়♥জয় শ্রীএকাদশী মহাব্রতের জয়♥

No comments:

Post a Comment

💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐 🌷বৈষ্ণবের ব্যাস পূজা🌷 💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐 শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দ...