Saturday, May 2, 2020


ভগবানের শ্রীচরণেই সকলের মুক্তির পথ
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I
''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

গুরবে গৌরচন্দ্রায় রাধিকায়ৈ তদালয়ে।
কৃষ্ণায় কৃষ্ণভক্তায় তদ্ভক্তায় নমো নমঃ।।

‘’দিন যায় মিছা কাজে    নিশা নিদ্রাবশে।
নাহি ভাবি মরণ   নিকটে আছে বসে।।
সংসার সংসার রে    মিছে গেল কাল।
লাভ না হইল কিছু    ঘটিল জঞ্জাল।।
কিসের সংসার এই,   ছায়াবাজী প্রায়।
ইহাতে মমতা করিবৃথা দিন যায়।।‘’  (শ্রীলভক্তিবিনোদ ঠাকুর)

দিন তো চলে যাবে। সময় ফুরিয়ে আসবে, তখন চলে যেতে হবে কিন্তু কতটা ভগবানের সেবা করতে পারলাম ? কতটা গুরু-বৈষ্ণবের সেবা করতে পারব আর পারলাম ? কতটা ভগবানের সেবার দিকে নিজেকে নিযুক্ত করতে পারলাম। সেইটা সবসময় চিন্তা করতে হবে।

‘’জীবে দয়া, নামে রুচি, বৈষ্ণব সেবা।
ইহা বহি সনাতন নাহি আর ধর্ম্ম।।‘’

কৃষ্ণ-বহির্মুখ জীবকে এই পথে কি করে আনতে হয় ? কৃষ্ণ-বহির্মুখ জীবের জন্য ভক্তগণ চেষ্টা করেন যেন লোক এই পথে এসে হরি-গুরু-বৈষ্ণবের সেবা করতে পারেন। সবাইয়ের মুখে কৃষ্ণনাম আসতে পারেনা,-
‘’কৃষ্ণনাম করে অপরাধের বিচার।
কৃষ্ণ বলিলে অপরাধীর না হয় বিকার।‘’ (শ্রীচৈতন্য-চরিতামৃত, //২৪)
অপরাধীরা (যারা নাম-অপরাধ করে) হরিনাম শুনলে, তাদের চিত্তে কখনও বিকার আসে না। এইজন্য সেবা-অপরাধ, বৈষ্ণব-অপরাধ, নাম-অপরাধ দূরে বিসর্জন করতে হয়।
‘’ভক্তি-অনুকূল মাত্র কার্য্যের স্বীকার।
ভক্তি-প্রতিকূল ভাব-বর্জ্জনাঙ্গীকার।।‘’

ভক্তি-অনুকূল, ভক্তি-প্রতিকূল মানে কী ? অত্যাহার, প্রয়াসশ্চ, প্রজল্প, নিয়মাগ্রহ, লৌল্যঞ্চ, জনসঙ্গঞ্চ। অত্যাহার মানে বেশি খাওয়া; প্রয়াসশ্চ - বেশি সঞ্চয় করা; প্রজল্প মানে কৃষ্ণকথা বাদ দিয়ে অন্য কিছু চিন্তা, অন্য ভাবনা করা, অন্য লোকর সঙ্গে প্রজল্প করা; নিয়মাগ্রহ মানে যেটা ভক্তির অনুকূল সেইটা করা, ভক্তির প্রতিকূলটা বিসর্জন না করা। আর জনসঙ্গঞ্চ মানে কৃষ্ণবহির্মুখ লোকের সঙ্গ করা। কৃষ্ণবহির্মুখ লোকের সঙ্গ করতে নেই। এইগুলোষড়ভির ভক্তির বিনশ্যতিএই ছয়টা ভক্তির বাধা দিয়ে দেয়। যেটা ভক্তির প্রতিকূল লোকের সঙ্গে কথাবার্তা বলা, তাদের সঙ্গ করা আপনাকে বিসর্জন করতে হবে, বর্জ্জন করতে হবে। না করলে ভক্তি আস্তে আস্তে বিনষ্ট হয়ে যাবে।

ভগবানকে পেতে হলে, ভগবানকে জানতে হলে ভক্তের সেবা করতে হবে। যদি কৃষ্ণকে পেতে হয়, যশোদা মা, নন্দ মহারাজের সেবা করতে হবে,-তাঁদের সেবা করলেই, কৃষ্ণকে পাওয়া যাবে আপনি কৃষ্ণকে নিমন্ত্রণ করলে, কৃষ্ণ চলে আসবেন না কিন্তু যশোদা মাকে নিমন্ত্রণ করলে, তিনি কৃষ্ণকে কোলে তুলে নিয়ে চলে আসবেন সেইরকম ভগবানের ভক্তকে সেবা করলে ভগবানকে পাওয়া যায় ভগবান নিজে বলেছেন,- “যদি কেউ বলে আমি কৃষ্ণভক্ত, সে আমার ভক্ত নয় কিন্তু যদি কেউ বলে আমি কৃষ্ণভক্তের ভক্তের ভক্তের ভক্ত, সেই আমার ভক্ত   ছাড়িয়া বৈষ্ণব সেবা নিস্তার পায়েছে কেবা” - বৈষ্ণবসেবা ছেড়ে দিয়ে কেউ নিস্তার পেতে পারে না

চৌষট্টির প্রকার ভক্ত্যঙ্গ আছে, তার মধ্যে নবধাভক্তি  হচ্ছে শ্রেষ্ঠ, নবধাভক্তির মধ্যে মুখ্য আরও পঞ্চবিধা ভক্তি (সাধু-সঙ্গ, নাম-সঙ্কীর্ত্তন, ভাগবত-শ্রবণ, মথুরা-বাস, শ্রদ্ধায় শ্রীমূর্ত্তির সেবন), আর তার মধ্যে মূল শ্রেষ্ঠ হচ্ছে নাম-সঙ্কীর্ত্তন।নিরপরাধে নাম লইলে পায় কৃষ্ণপ্রেমধন”—নিরপরাধে নাম নিলে তবে কৃষ্ণ-প্রেম-ধন লাভ করতে পারব কিন্তু নিরপরাধে নাম নিতে হবে, অপরাধ যুক্ত হয়ে হরিনাম করলে কাজ হবে না।

‘’অসাধুসঙ্গে ভাই কৃষ্ণনাম নাহি হয়।
নামাক্ষর বাহিরায় বটে তবু নাম কভু নয়।।‘’  (শ্রীশ্রীপ্রেমবিবর্ত্ত, /)

দুধ খেলে পুষ্টি হয় কিন্তু দুধের মধ্যে সাপ যদি মুখ দেয়, সে দুধ খেলে লোক মৃত্যুমুখে পতিত হয়। হরিনাম শুনলে লোকের মঙ্গল হয় কিন্তু অবৈষ্ণবের মুখে হরিনাম, হরিকথা শুনলে, আমাদের পরম ক্ষতি হয়ে যাবে। এইজন্যে সাধু-সঙ্গে কৃষ্ণনাম করতে হয়। আপনি সেই হরিনাম মহামন্ত্র নিয়েছেন কিন্তু সেই মন্ত্রে ক্রীড়া করবেন না। হরি-গুরু-বৈষ্ণবের চরণে শরণাপন্ন হলে (হরি-গুরু-বৈষ্ণবের চরণে শরণ নিলে) তবে সংসারের মধ্যে আবদ্ধই থাকে না।

সংসারে বসবাস করতে হবে অতিথি হয়ে, গৃহে আসক্তি-চিত্ত নয়। বাড়িটা আমি তৈরি করতে পারি কিন্তু আমি চির জীবন সেখানে থাকব না। যদি আমার নিজের ঘর, বাড়িতে আসক্তি-চিত্ত আছে, তাহলে অন্ধতমঃ তামসীক যোনিতে প্রবেশ করতে হবে। গৃহ তৈরি করে লোক ভাবনা করছে, “হায়, আমার বৃদ্ধ পিতা-মাতা, শিশু-সন্তান, ভার্যা, আমার বিনা সব অনাথ দুঃখিত হয়ে যাবে ! জীবনযাপন কি ভাবে করবে ?” এই প্রকার গৃহ অভিলাষে অতৃপ্তচিত্ত, অসন্তুষ্ট মন্দ বুদ্ধি ব্যক্তি পুত্র-কন্যা সর্ব্বদা ধ্যান করে এবং মৃত্যুর পর অন্ধতমঃ অতিতামসীক যোনিতে প্রবেশ করে।

এটা ভাগবতের কথা, কিন্তু যাওয়াটা তো মুশকিল গুরুমহারাজ বলতেন শীতকালে আপনি এক পুকুরের কাছে আসেন স্নান করবার জন্য আর মনে মনে ভাবছেন, “পুকুরে ডুব দেব ? না ! ঠাণ্ডা লাগছে, স্নান করব না !” পুকুর ঘিরে হেঁটে গিয়ে ভাবছেন, “নামব কি ? নামব না নামব কি ? নামব না…” যদি আপনি গামছাটা জলে ছুড়ে ফেলে দেন, তখন গামছাটা ধরার জন্য পুকুরের মধ্যে লাফ দিয়ে পড়তে হয় এখানেও এরকম হচ্ছে,- মনটাকে ছুড়ে ফেলে দিতে হবে। এই জন্মে মানুষ-জন্ম লাভ করে কিন্তু কত কষ্ট মানুষ করছে,- “বুড়ো কালে আমাকে কে দেখবে ? বুড়ো কালে আমার কী হবে ? আমার সব সহ্য হয় না। খাওয়া-দাওয়া কে দেবে ?” সব চিন্তা ছেড়ে দিয়ে গুরু-বৈষ্ণবের সেবা করতে হবে।

আমার মঙ্গল যদি আমি না দেখি, আমার মঙ্গলটা অন্যজন কে দেখবে ? আমার উপকার যদি আমি করতে না পারি, আমার উপকার অন্য কে করতে পারে ? নিজেই নিজের বন্ধু, নিজেই নিজের শত্রু আমি বলি না যে, যাদের ছেলে-মেয়ে বড় হয় নি, ছেলে-মেয়ে ছেড়ে দিতে হবে,- তাদেরকে ছেড়ে দিয়ে যাওয়া যায় না, আপনি বাড়িতে হরিনাম করতে পারেন কিন্তু যাদের ছেলে-মেয়ে বড় হয়েছে তাদের সংসারে আবদ্ধ হয়ে থাকার কোন প্রয়োজনই নেই গুরুদেব কত আশ্রম তৈরি করে রেখে গিয়েছেন, তবু আমরা সেই গৃহমেধী হয়ে, সংসারে আবদ্ধ হয়ে পড়ে থাকব আর কি

‘’মায়াজালে বদ্ধ য়ে, আছ মিছে কাজ য়ে।
এখনও চেতন পেয়ে, রাধামাধব-নাম বল রে।।‘’

অর্থাৎ,- মায়া জালের মধ্যে বদ্ধ হয়ে নিজের মিছে কাজ করে বসে আছি, তখন মৃত্যুর পরে ওই অন্ধতমঃ অতিতামসীক যোনিতে প্রবেশ করতে হবে।

‘’স্ত্রী, পুত্র, দারা, পরিবার, দেহ পতন হলে কী হবে আমার ?” এই দেহ পতন হয়ে গেলে আমার কি থাকবে আর, বলুন ? সেইজন্য বারবার সাধু-গুরু-বৈষ্ণবগণ আপনাদের বাড়িতে আসেন কত ভাগ্য আপনাদের। আপনারা কীর্ত্তন করেন, ‘কর মরে আত্মসাথ’ – ‘’প্রভু, আমাকে আত্মসাথ করে নিয়ে যাও ‘’ সাধুরা আপনাদের টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত নিতে আসেন না, আপনাদের আত্মসাথ করে নিতে আসেন আর গুরু-গোবিন্দের সেবায় লাগিয়ে দেন সেই চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।

‘’কলের্দোষনিধেরাজন্ অস্তি হ্যেকো মহানগুণঃ I
কীর্ত্তনাদেব কৃষ্ণস্য মুক্তসঙ্গঃ পরং ব্রজেৎ I I‘’ (শ্রীমদ্ভাগবত)
কলি সমস্ত দোষের বটে, তথাপি হে রাজন ! কলির একটি মহাগুণ এই যে, কৃষ্ণকীর্ত্তনে জীব মায়াবদ্ধ হতে মুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণরূপ পরতত্ত্ব লাভ করে।

‘’নাম-সংকীর্তন যস্য সর্বপাপ প্রণাশনম্।
প্রণামো দুঃখশমনস্তং নমামি শ্রীহরিং পরম্।।‘’
যে হরিনাম সংকীর্ত্তন করিলে ইহকাল পরকালের পাপরাশি নিঃশেষে দগ্ধ হয়,আমি সেই নামরূপী পরমাত্মা স্বরূপ শ্রীহরিকে প্রণাম করি।

No comments:

Post a Comment

💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐 🌷বৈষ্ণবের ব্যাস পূজা🌷 💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐 শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দ...