Friday, May 15, 2020


শ্রীমদ্ভাগবতের সর্ব্বশ্রেষ্ঠত্ব
🌿💞🌿💞🌿💞🌿💞🌿💞🌿💞🌿💞🌿
বিশেষ পোষ্ট
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I
‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

আজানুলম্বিত - ভুজৌ কনকাবদাতৌ,
সংকীর্ত্তনৈকপিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ।
বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম্মপালৌ,
বন্দে জগৎপ্রিয়করৌ করুণাবতারৌ।
মায়ামুগ্ধ জীবের নাহি স্বতঃ কৃষ্ণজ্ঞান।
জীবেরে কৃপায় কৈলা কৃষ্ণ বেদ-পুরাণ।।  (চঃচৈ মধ্য ২০.১২২)

মায়ার প্রভাবে আচ্ছন্ন বদ্ধ জীব তার নিজের চেষ্টায় কৃষ্ণ স্মৃতি জাগরিত করতে পারে না। তাই শ্রীকৃষ্ণ তাঁর অহৈতুকী কৃপার প্রভাবে জীবকে বেদ পুরাণাদি স্বার্থ গ্রন্থাবলী দান করেছে।

📚শ্রীমদ্ভাগবতের স্বরূপ---
শ্রীসনাতন গোস্বামী ভাগবতের স্বরূপ বলছেন, "শ্রীকৃষ্ণঃ পরিবর্ত্তিত", পূর্ণব্রহ্ম কৃষ্ণ শব্দব্রহ্মরূপে পরিবর্তিত। শ্রীগ্রন্থ আর শ্রীগোবিন্দ অভিন্ন।
শ্রীগ্রন্থে দ্বাদশটি স্কন্ধ আছে। কোন কোন আচার্য শ্রীগ্রন্থের ধ্যানে বলেছেন,-

''পাদো যদিও প্রথম দ্বিতীয়, তৃতীয়  চতুর্থ তুর্য কটিও যদ উরু।
নাভিমষ্ট পঞ্চম এবম  ষষ্ঠম, ভুজঙ্গরাঙ দু যুগলম তথান।।
কণ্ঠস্থ রাজন নবম যদিও, মুখারবিন্দম দশমম প্রফুল্লম।
একাদশ যস্য ললাট পট্টম, শিরোপি দ্বাদশ এবম ভাতি।।
তোমাদি দেব করুণা নিধানম, তমাল বর্ণ সুমিত অবতারম।
অপার সংসার সমুদ্র সেতুম, ভজাম্যহম ভাগবতম।।''

প্রথম দ্বিতীয় স্কন্ধ শ্রীকৃষ্ণের দুই চরণ যে চরণবলি মহারাজনিজ মস্তকে ধারণ করেছিলেন। গোপীরা যা নিজ বক্ষে ধারণ করেন।
তৃতীয় চর্তুথ স্কন্ধ শ্রীকৃষ্ণের দুই উরু, যে উরুদেশেপ্রহ্লাদ মহারাজকে বসিয়েছিলেন শ্রীভগবান নৃসিংহ অবতারে।
পঞ্চম- ষষ্ঠ স্কন্ধ দুই পার্শ্বদেশ যে পার্শ্বদেশেমা যশোদাদামবন্ধন করেছিলেন।
সপ্তম অষ্টম স্কন্ধ শ্রীকৃষ্ণের দুই বাহু। যে বাহু দিয়েশ্রীদাম, সুদাম, অর্জুনসখাদের বক্ষে ধারণ করেন।
নবম স্কন্ধ ভগবানের হৃদয়, যে হৃদয়ে থাকে প্রিয় রাধারাণী
একাদশস্কন্ধ ভগবানের কপাল। যে কপালে অলকা তিলকা করে শৃঙ্গার করানমা যশোদা
দ্বাদশ স্কন্ধ হল ভগবানের মস্তক যা ময়ূরপুচ্ছ শোভিত হয়।
আর দশমস্কন্ধ হল ভগবানের শ্রীমুখের হাসি। অধরের মধুর হাসি 'মঞ্জুহাস্যতাম" শ্রীভগবান সৃষ্টি, স্থিতি, লয়ের কর্ত্তা তিনি সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান, তিনি কৃপাময়--- এসব কথা শোনা হয়েছে। এখন ঋষিগণ জানতে চান ভগবানের মধ্যে হাসি আছে কিনা। আনন্দ আছে কিনা। রস আছে কিনা। ভাগবতের দশম স্কন্ধ এই জিজ্ঞাসার উত্তর দিয়েছেন।

শ্রীমদ্ভাগবতের পরিচয় দিতে ভাগবত নিজে বলছেন--
নিগমকল্পতরোর্গলিতং ফলং
শুকমুখাদমৃতদ্রবসংযুতম।
পিবত ভাগবতং রসমালয়ং
মুহুরহো রসিকা ভুবি ভাবুকাঃ।।

বেদ কল্পবৃক্ষ। বেদকল্পবৃক্ষের গলিত ফল হচ্ছে শ্রীমদ্ভাগবত। গাছের আম দুই প্রকারের পেতে পারি আমরা। আঁকশি দিয়ে আহরণের ফলে বা গাছ হইতে পেকে নিজের থেকে পড়ে ভূতলে  তখন। একটি আবৃত অপরটি গলিত। আহৃত ফল কাঁচা থাকতে পারে। গলিত ফলটি সুপরিপক্ক। বেদ থেকে ধর্ম্ম, অর্থ, কাম মোক্ষ এই চারিপুরুষার্থ লাভ হয় বেদ কল্পতরু। এই কল্পতরু ফল শ্রীভগবান লীলাবর্ণন প্রধান পরমরসময় শ্রীমদ্ভাগবত। জগতে দেখা যায় ফলের আঁটি খোসা বাদ দিয়ে কেবলমাত্র রস পান করা হয়, কিন্তু ফলের আঁটি বা খোসা নাই, এটার সবই রস। অর্থাৎ শ্রীমদ্ভাগবতের কিছুই পরিত্যজ্য না, সবই পরমাদরে গ্রাহ্য। যদিও শ্রীভগবানের লীলারসময় শ্রীমদ্ভাগবত জগতে অতি দুর্লভ বস্তু, তবুও শ্রীভগবানের কৃপায় অতি সুলভ হয়েছে।

এই রস শ্রীভগবান স্বয়ং ব্রহ্মাকে দিয়েছিলেন, ব্রহ্মা নারদকে, নারদ ব্যাসকে এবং ব্যাস হইতে  শ্রীশুকদেব আস্বাদন করছেন শুকমুখ হইতে জগতে এসেছে। বৃক্ষের ফল যদি উচ্চ শাখা হইতে ভুমিতে পতিত হয়, তা হলে তা ভেঙে যায়। কিন্তু যদি শাখা প্রশাখা দিয়ে গড়িয়ে আসে আস্তে আস্তে মাটিতে পড়ে তা হলে আর সেই সম্ভাবনা থাকে না। শ্রীমদ্ভাগবত ব্রহ্মা নারদ ব্যাসাদি শিষ্যপ্রশিষ্য পরম্পরায় জগতে আসছে, কাজেই উচুঁ থেকে ফল পড়ে ভেঙে যায়নি তা অবিকৃত আছে। শুকপক্ষী যেমন মধুর ফল ছাড়া অন্য কিছুই খায় না, সেইরূপ পরমহংস চুড়ামণি আজন্ম সংসারত্যাগী শ্রীশুকমুনি পরমমধুর শ্রীকৃষ্ণ লীলারস ছাড়া অন্য রস আস্বাদন করেন না, সুতরাং শুকমুখনিগর্লিত এই রসময় ফল পরম মধুর।

শ্রীমদ্ভাগবত বিষয়ে শ্রীমন্মহাপ্রভুর বাণী
প্রশ্নোত্তরে ভাগবতে করিয়াছে নির্ধার।
যাঁহার শ্রবণে লোকে লাগে চমৎকার।।  (চৈঃচঃ মধ্য ২৪।৩১৯)
অর্থাৎ,- প্রশ্নোত্তরের আকারে শ্রীমদ্ভাগবতে পরম তত্ত্ব নির্ধারিত, হয়েছে, যা শ্রবণ করলে লোকেরা অত্যন্ত চমৎকৃত হয়।
                                         
আমা-হেন, যেবা কহ 'বাতুল' হয়।
এই দৃষ্টে ভাগবতের অর্থ জানয়।।  (চৈঃচঃ মধ্য ২৪।৩২৩)
অর্থাৎ,- কেউ যদি আমার মতো পাগল হয়, তাহলে সেও এই মতো শ্রীমদ্ভাগবতের অর্থ জানতে পারে।

চারিবেদে-উপনিষদে যত কিছু হয়।
তার অর্থ লঞা ব্যাস করিলা সঞ্চয়।।
যেই সূত্র যেই ঋক-বিষয় বচন।
ভাগবতে সেই ঋক শ্লোকে নিবন্ধন।।
 অতএব ব্রহ্মসূত্রের ভাষ্য শ্রীমদ্ভাগবত।
ভাগবত শ্লোক, উপনিষৎ কহে একমত।।  (চৈঃচঃ মধ্য ২৫।৯৮-১০০)
অর্থাৎ,- শ্রীল ব্যাসদেব চতুর্থবেদ উপনিষদের সিদ্ধান্ত সকল সংগ্রহ করে, বেদান্ত সূত্র লিপিবদ্ধ করলেন। বেদান্ত সূত্র বৈদিক জ্ঞানের উদ্দেশ্যে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, এবং আঠারো হাজার শ্লোকের মাধ্যমে, শ্রীমদ্ভাগবতে সেই একই উদ্দেশ্যে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অতএব ব্রহ্মসূত্রের ভাষ্য হলো শ্রীমদ্ভাগবত। ভাগবত শ্লোক উপনিষদের উদ্দেশ্য একই।  [প্রকাশানন্দ সরস্বতীর প্রতি মহাপ্রভু]
                         
অতএব ভাগবত সূত্রের অর্থ রূপ।
নিজ কৃত সূত্রের নিজ ভাষ্য স্বরূপ।।  (চৈঃচঃ মধ্য ২৫।১৪২)
অর্থাৎ,- অতএব শ্রীমদ্ভাগবত বেদান্ত সূত্রের প্রকৃত অর্থ বিশ্লেষন করে। বেদান্ত সূত্রের প্রণেতা ব্যাসদেব স্বয়ং সেই সূত্র সমূহের ভাষ্য স্বরূপ শ্রীমদ্ভাগবত বর্ণনা করেছেন।  [প্রকাশানন্দ সরস্বতীর প্রতি মহাপ্রভু]
                          
অতএব ভাগবতে এই তিন কয়।
সম্বন্ধ-অবিধেয়-প্রয়োজন-ময়।।  (চৈঃচঃ মধ্য ২৫।১৩১)
অর্থাৎ,- শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু আরও বললেন, "ভগবানের সঙ্গে জীবের সম্বন্ধে, এই সম্পর্ক স্থাপনের উপায় ভগবদ্ভক্তির পন্থা (অবিধেয়) এবং জীবের পরম উদ্দেশ্য (প্রয়োজন), ভগবৎ প্রেম, এই তিনটি বিষয় শ্রীমদ্ভাগবতে বর্ণিত হয়েছে। "
                            [প্রকাশানন্দ সরস্বতী প্রতি মহাপ্রভু]
'কৃষ্ণভক্তিরসস্বরূপ' শ্রীমদ্ভাগবত।
তাতে বেদশাস্ত্র হৈতে পরম মহত্ত্ব।।  (চৈঃচঃ মধ্য ২৫।১৫০)
অর্থাৎ,- শ্রীমৎ ভাগবত কৃষ্ণ ভক্তি রস স্বরূপ। তাই শ্রীমদভগবদ সমস্ত বৈদিক শাস্ত্র থেকে শ্রেষ্ঠ।  [প্রকাশানন্দ সরস্বতী প্রতি মহাপ্রভু]

অতএব ভাগবদ করহ বিচার।
 ইহা হৈতে পাবে সূত্র-সুতির অর্থ সার।।  চৈঃচঃ মধ্য ২৫।১৫৩
অর্থাৎ,- চৈতন্য মহাপ্রভু প্রকাশানন্দ সরস্বতীকে উপদেশ দিলেন, "তাই শ্রীমৎ ভাগবত বিচার করুন, তাহলে বেদান্ত সূত্রের সারার্থ বুঝতে পারবেন।"

বৃদ্ধ মাতা-পিতার যাই করহ সেবন।
বৈষ্ণব-পাশ ভাগ়বদ কর অধ্যয়ন।।  (চৈঃচঃ অন্ত্য ১৩।১১৩)
অর্থাৎ,- শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু রঘুনাথ ভট্টকে উপদেশ দিলেন, "ঘরে ফিরে গিয়ে তোমরা বৃদ্ধ পিতা-মাতার সেবা কর, এবং ভগবদ তত্ত্ব বেত্তা শুদ্ধ বৈষ্ণবের কাছে শ্রীমদ্ভাগবত অধ্যয়ন কর।  [রঘুনাথ ভট্টের প্রতি চৈতন্য মহাপ্রভু]
                        
ভাগবত পড়, সদা লহ কৃষ্ণনাম।
অচিরে করিবেন কৃপা কৃষ্ণ ভগবান।।  (চৈঃচঃ অন্ত্য ১৩।১২১)
"বৃন্দাবনে গিয়ে শ্রীমদ্ভাগবত পড় এবং সর্বক্ষণ কৃষ্ণ নাম গ্রহণ কর। পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অচিরেই তোমাকে কৃপা করবেন। "
                        [রঘুনাথ ভট্টের প্রতি চৈতন্য মহাপ্রভু]

বাসুদেবে ভগবতি ভক্তিযোগঃ প্রয়োজিতঃ
জনয়ত্যাশু বৈরাগ্যং জ্ঞানং যদহৈতুকম্ ।।  (ভাগবত //

অর্থাৎ,- ভক্তি সহকারে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা করা হলে অচিরেই শুদ্ধ জ্ঞানের উদয় হয় এবং জড়-জাগতিক বিষয়ের প্রতি অনাসক্তি আসে

💐জয় শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণের জয়💐💐 জয় শচীনন্দন গৌরহরির জয়💐

No comments:

Post a Comment

💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐 🌷বৈষ্ণবের ব্যাস পূজা🌷 💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐 শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দ...