Friday, May 1, 2020


শ্রীজাহ্নবা দেবী
আবির্ভাব
''শ্রীবারুণীরেবত বংশসম্ভবে,
তস্য প্রিয়ে দ্বে বসুধা জাহ্নবী।
শ্রীসূর্য্যদাসস্য মহাত্মনঃ সুতে,
ককুদ্মীরূপস্য সূর্য্যতেজসঃ।।
কেচিৎ শ্রীবসুধাদেবীং কলাবপি বিবৃন্বতে।
অনঙ্গমঞ্জরীং কেচিজ্জাহ্নবীঞ্চ প্রচক্ষতে। 
উভয়ন্তু সমীচীনং পূর্ববন্যায়াৎ সতাং মতম।।'' (গৌঃ গঃ দীপিকা)

''পূর্ব্বে যাঁহারা বারুণী রেবতবংশসম্ভূতা রেবতী বলদেবের পত্নী ছিলেন তাঁহারাই এই অবতারে বসুধা এবং জাহ্নবী নামে নিত্যানন্দের দুই পত্নী হন। এই দুইজন সূর্য্যতুল্য তেজস্বী সূর্য্যদাসের কন্যা। এই সূর্য্যদাস পূর্ব্বে রেবতীর পিতা ককুদ্মী ছিলেন। কোন কোন ব্যক্তি কলিযুগে বসুধা দেবীকে অনঙ্গ মঞ্জরী, কেহ কেহ বা জাহ্নবা দেবীকেও অনঙ্গ মঞ্জরী বলিয়া থাকেন। সদ্ব্যক্তিগণের মতে পূর্ব্বের ন্যায় উভয়ই প্রশস্য।''

শ্রীজাহ্নবা মাতার পিতা শ্রীসূর্য্যদাস সরখেল। শ্রীগৌড়ীয় বৈষ্ণব অভিধানে জাহ্নবা মাতার জননীরূপে 'ভদ্রাবতী' উল্লিখিত হইয়াছে। নবদ্বীপ হইতে অল্পদূরে শালিগ্রাম শ্রীসূর্য্যদাস সরখেলের শ্রীপাট। সূর্য্যদাস সরখেলের কনিষ্ঠ ভ্রাতৃত্রয় ছিলেন যথাক্রমে শ্রীগৌরীদাস, শ্রীকৃষ্ণদাস শ্রীনৃসিংহ চৈতন্য। শ্রীনরহরি চক্রবর্ত্তী ঠাকুরের রচিত ভক্তিরত্নাকর গ্রন্থে শ্রীজাহ্নবাদেবীর পূত চরিত্র বর্ণিত হইয়াছে। সূর্য্যদাস সরখেল একজন প্রাচীন ব্রাহ্মণের নির্দ্দেশ অনুসারে কন্যাদ্বয় - বসুধা, জাহ্নবাকে শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর পাদপদ্মে সমর্পণ করিলে বিবাহের পর নিত্যানন্দ প্রভুর কৃপায় নিত্যানন্দ প্রভুকে বলরাম এবং বসুধা জাহ্নবাকে বলদেবের বামে ও দক্ষিণে বারুনী ও রেবতী রূপে দর্শন করিয়া পরমানন্দে আত্মবিস্মৃতি হইলেন।

শ্রীনিত্যানন্দশক্তি শ্রীজাহ্নবা দেবীর কৃপা ব্যতীত কেহই ভবসাগর হইতে উত্তীর্ণ হইতে পারেন না, শ্রীনিত্যানন্দের সেবা এবং তাঁহারাই আরাধ্য শ্রীগৌরহরির শ্রীরাধাকৃষ্ণের প্রেম - সেবা লাভ করিতে পারেন না।
''ওগো শ্রীজাহ্নবা - দেবী ! দাসে করুণা।
কর আজি নিজগুণে ঘুচাও যন্ত্রণা।।
তোমার চরণতরী করিয়া আশ্রয়।
ভবার্ণব পার ' 'রেছি নিশ্চয়।।
তুমি নিত্যানন্দশক্তি, কৃষ্ণভক্তি গুরু।
দাসে করহ দান পদ - কল্পতরু।।
কত কত পামরেরে করেছ উদ্ধার।
তোমার চরণে আজ কাঙ্গাল ছার।।''  (কল্যাণ কল্পতরু)

শ্রীমন্নিত্যানন্দ প্রভু বিবাহলীলার পর শ্রীশচীমাতার ইচ্ছানুসারে শান্তিপুরে শ্রীঅদ্বৈতাচার্য্যের গৃহে পরে সপ্তগ্রামে শ্রীউদ্ধারণ দত্ত ঠাকুরের ভবনে কিছুদিন অবস্থান করিয়া গঙ্গার নিকটবর্ত্তী খড়দহে আসিয়া নিবাস স্থাপন করেন। শ্রীজাহ্নবা দেবীর কোন পুত্রসন্তান  হয় নাই। শ্রীক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণু এবং সাক্ষাৎ শ্রীগঙ্গাদেবী শ্রীনিত্যানন্দশক্তি শ্রীবসুধাকে অবলম্বন করিয়া পুত্র - কন্যা রূপে প্রকটিত হন।পুত্র শ্রীবীরচন্দ্র গোস্বামী বা শ্রীবীরভদ্র গোস্বামী এবং কন্যা শ্রীগঙ্গা। শ্রীবীরচন্দ্র প্রভু শ্রীজাহ্নবা মাতার কৃপাসিক্ত দীক্ষিত শিষ্য।

খেতরীধামে ফাল্গুনী - পূর্ণিমা তিথিতে শ্রীল নরোত্তম ঠাকুরের শ্রীবিগ্রহ প্রতিষ্ঠা মহোৎসবে শ্রীজাহ্নবা দেবী উপস্থিত ছিলেন এবং তাঁহারই নিয়ামকত্বে প্রতিষ্ঠার কৃত্যসমূহ সম্পন্ন হইয়াছিল।শ্রীজাহ্নবা দেবী ভোগরন্ধন করিয়া ভোগ নিবেদন করিয়া মহান্তগণকে স্বয়ং পরিবেশন করিয়া খাওয়াইয়াছিলেন।

শ্রীনিত্যানন্দ পার্ষদ শ্রীপরমেশ্বরীদাস ঠাকুর শ্রীজাহ্নবা দেবীর কৃপায় বৃন্দাবনে শ্রীরাধারাণীর সহিত শ্রীগোপীনাথের মিলন দর্শন করিয়াছিলেন। পরমেশ্বরীদাস ঠাকুর খড়দহে যাইয়া শ্রীবসুধা শ্রীজাহ্নবা দেবীকে প্রণাম করিয়া উক্ত অলৌকিক ঘটনার কথা জ্ঞাপন করিলে শ্রীজাহ্নবাদেবী প্রেমাবিষ্ট হন। তিনি আঁটপুরে শ্রীরাধাগোপীনাথ বিগ্রহের সেবা শীঘ্র প্রকাশের জন্য পরমেশ্বরী ঠাকুরকে আদেশ প্রদান করেন। শ্রীজাহ্নবাদেবী শ্রীযদুনন্দন আচার্য্যের দুইটি কন্যা শ্রীমতী শ্রীনারায়ণীর সহিত বীরচন্দ্র প্রভুর বিবাহলীলাও সম্পাদন করিয়াছিলেন। শ্রীবীরচন্দ্র প্রভুর শক্তিদ্বয় শ্রীমতী শ্রীনারায়ণীও শ্রীজাহ্নবা দেবীর শিষ্য হইলেন। 

বৈশাখ মাসের শুক্লানবমী তিথিকে অবলম্বন করিয়া শ্রীনিত্যানন্দশক্তি শ্রীজাহ্নবাদেবীর আবির্ভাব লীলা হয়।

আজ শ্রীজাহ্নবা দেবীর শুভ আবির্ভাব তিথি পূজা। শ্রীনিত্যানন্দশক্তি শ্রীজাহ্নবাদেবীর কৃপা ব্যতীত কেহই ভবসাগর হইতে উত্তীর্ণ হইতে পারেন না, তাই আমরা সবাই তাঁহার শ্রীচরণকমলে প্রার্থনা অর্পণ করি যেন তাঁহার শ্রীচরণে অহেতুকী ভক্তি লাভ করতে পারি। হরে কৃষ্ণ!!

No comments:

Post a Comment

💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐 🌷বৈষ্ণবের ব্যাস পূজা🌷 💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐 শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দ...