Sunday, May 17, 2020


অম্বরীষ মহারাজ
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I
''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

‘’তোমাদি দেব করুণা নিধানম, তমাল বর্ণ সুমিত অবতারম।
অপার সংসার সমুদ্র সেতুম, ভজাম্যহম ভাগবতম।।''

🍁🍀বৈষ্ণব বিদ্বেষের ফল🍀🍁
ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণের প্রীতি সাধনের জন্য একবার অম্বরীষ মহারাজ শ্ৰীধাম বৃন্দাবনে এক বৎসর ব্যাপী দ্বাদশী মহাব্ৰত পালন করেছিলেন। এক বৎসর ধরে দ্বাদশী ব্রত পালন করে, কার্ত্তিক মাসে তিন রাত্ৰ উপবাসের পর তিনি পবিত্ৰ যমুনা নদীতে স্নান করে, বৃন্দাবনের মধুবনে ভগবান শ্ৰীহরির আরাধনা শুরু করলেন। তারপর অতিথি - অভ্যাগত ব্ৰাহ্মণদের তৃপ্তি সহকারে ভোজন বিবিধ প্রকারে দান - দক্ষিণা আদি ক্ৰিয়া যথাযথভাবে সমাপনের পর যখন তিনি একাদশীর উপবাস ভঙ্গের জন্য দ্বাদশীতে সময়কালের মধ্যে পারণ করতে যাবেন, ঠিক সেই মুহূর্তে প্ৰচণ্ড প্ৰতাপশালী দুর্বাসা মুনি এসে তার দ্বারদেশে দণ্ডায়মান হলেন।

অত্যন্ত অস্তব্যস্ত হয়ে অম্বরীষ মহারাজ যথাযথভাবে অতিথি সৎকার করে, ভোজনের জন্য দুর্বাসা মুনিকে অনুরোধ করলেন। মহারাজের প্ৰাৰ্থনায় সম্মত হয়ে দুর্বাসা মুনি স্নান আদি ক্ৰিয়া করতে যমুনায় গেলেন এবং সেখানে সমাধিমগ্ন হওয়ায় তার ফিরে আসতে কিছুটা বিলম্ব হল। এদিকে অম্বরীষ মহারাজের পারণের সময় আছে আর মাত্র আধ মুহূৰ্ত এখন যদি তিনি সময় অতিক্ৰম হওয়ার আগে পারণ না করেন, তা হলে তার পুরো বৎসরের ব্ৰত পালনটি নিস্ফলায় পৰ্যবসিত হবে। তিনি এখন উভয় সংকটে পড়েছেন, একদিকে ব্ৰতভঙ্গ, অন্যদিকে অতিথি অবমাননা। অগত্যায় ব্ৰাহ্মণদের কাছ থেকে শাস্ত্ৰসিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করে তিনি কুশাগ্রে এক বিন্দু জল গ্ৰহণ করে একাদশী ভঙ্গ করলেন এবং উভয় সংকট থেকে মুক্ত পেলেন

🍁🌿💞🌿💞🌿💞🍁
দিকে মহাতেজস্বী দুৰ্বাসা মুনি তাঁর যোগসিদ্ধির প্রভাবে জানতে পারলেন যে, মহারাজ অম্বরীষ অতিথি সেবার পূৰ্বে জলের দ্বারা পারণ করে তাকে অবমাননা করেছেন; তাই তিনি ক্ৰোধানলে প্ৰজ্বলিত হয়ে মহাভাগবত অম্বরীষ মহারাজকে প্ৰচণ্ডভাবে তিরস্কার করলেন এবং তাকে উপযুক্ত শিক্ষা দেবার জন্য তার জটা ছিন্ন করে তারথেকে ভয়ঙ্করী দানব সৃষ্টি করলেন। সেই দানব অম্বরীষ মহারাজকে ত্রিশুল দ্বারা আক্রমণ করতে উদ্ধত হলে মুহুর্তের মধ্যে কোটি কোটি সূর্য্যের  মহাতেজশালী শ্রীবিষ্ণুর ভক্তরক্ষক সুদর্শনচক্র এসে সেই দানবকে ভস্ম করে দিল এবং দুর্বাসা  মুনিকেও হত্যা করতে তার দিকে এগিয়ে গেল।

🍁🌿💞🌿💞🌿💞🍁
দুর্বাসা মুনি আকাশে, পৃথিবীতে, পাতালে, সমুদ্রে, ত্ৰিজগতের লোকপালদের গ্ৰহলোকে এবং স্বৰ্গলোকে উপনীত হয়েছিলেন দুৰ্দান্ত প্ৰতাপশালী সুদৰ্শন চক্রের হাত থেকে পরিত্ৰাণের জন্য, কিন্তু সর্বত্ৰই চক্ৰ তাকে অনুসরণ করছিল। শেষে তিনি দৌড়তে দৌড়তে ব্রহ্মলোকে লোকপতি ব্ৰহ্মার শরণাপন্ন হলেন। ব্ৰহ্মা বললেন, “তুমি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের একান্ত শরণাগত ভক্তের চরণে মহাপরাধ করেছ, তাই তোমাকে রক্ষা করতে আমি অসমৰ্থ।‘’  ব্ৰহ্মার দ্বারা প্ৰত্যাখ্যান হয়ে বিষ্ণু চক্রের দহনে পীড়িত দুৰ্বাসা প্ৰাণভয়ে কৈলাসে গিয়ে শিবের শরণাপন্ন হলেন।

শিবও ব্ৰহ্মার সুরে বললেন, “আমি, সনৎকুমার, নারদ, লোকপতি ব্ৰহ্মা, ব্যাস, দেবল, যমরাজ, মরীচি সকলেই ভগবানের মায়াশক্তির দ্বারা আচ্ছন্ন, ভগবানের এই সুদৰ্শন চক্রের ভয়ংকর তেজ আমাদের কাছেও দুর্বিষহ; সুতরাং তুমি ভগবান বিষ্ণুর শরণাপন্ন হও , তিনি অত্যন্ত দয়ালু, নিশ্চয়ই তোমার মঙ্গল সাধন করবেন।''

🍁🌿💞🌿💞🌿💞🍁
দেবাদিদেব শিবের কাছেও নিরাশ হয়ে অগত্যা দুৰ্বাসা মুনি ভগবানের আলয় বৈকুণ্ঠে প্ৰবেশ করে ভগবান শ্ৰীবিষ্ণুর পাদপদ্মে নিপতিত হয়ে অনেক স্তবস্তুতি করলেন এবং তার ভক্তের চরণে নিজের অপরাধজনক আচরণ স্বীকার করেন; আত্মরক্ষার জন্য ভগবানের কাছে অনুনয় বিনয় করলেন। তখন পরমেশ্বর ভগবান ব্ৰাহ্মণ - কুলোদ্ভুত দুর্বাসা মুনিকে বললেন,-
''অহং ভক্তপরাধীনো হ্যস্বতন্ত্ৰ ইব দ্বিজ।
সাধুভিগ্ৰস্তহাদয়ো ভক্তৈৰ্ভক্তজনপ্রিয়ঃ।।''  ( ভাগবত / / ৬৩ )


অর্থাৎ,- আমি সম্পূৰ্ণরুপে আমার ভক্তদের অধীন। প্ৰকৃতপক্ষে, আমি স্বাধীন বা স্বতন্ত্ৰ নই, যেহেতু আমার ভক্তরা সম্পূৰ্ণরুপে জড় - জাগতিক বাসনা শূন্য, তাই আমি আমার ভক্তদের হৃদয়ের অন্তস্থলে বসবাস করি। আমার ভক্তদের কি কথা, এমন কি যারা আমার ভক্তের ভক্ত তারাও আমার অত্যন্ত প্রিয়।
‘’বৈষ্ণব হৃদয়ে সদা গোবিন্দ - বিশ্রাম।
গোবিন্দ কহেন মম বৈষ্ণব পরাণ।।‘’

🍁🌿💞🌿💞🌿💞🍁
সৃষ্টিকৰ্তা ব্ৰহ্মা, জগৎ ধ্বংস সাধনকারী দেবাদিদেব শিব থেকে আরম্ভ করে ব্ৰহ্মাণ্ডের সর্বশ্ৰেষ্ঠ দেবতারা সকলেই ভগবানের নিয়ন্ত্ৰণাধীনে আজ্ঞাবাহী দাস। ''অথচ সর্বনিয়ন্তা ভগবান ভক্তের অধীন'' ভগবান বললেন,- ''তুমি শুদ্ধভক্তের চরণে অপরাধ করেছ তিনিই কেবল পারেন তোমাকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে।''

🍁🌿💞🌿💞🌿💞🍁
দুর্বাসা মুনি নিজের অপরাধ ভক্তের মহিমা ভগবানের নিকট শ্রবণ করে সঙ্গে সঙ্গে ভূতলে  অম্বরীষ মহারাজের চরণে সমর্পিত হলেন। অম্বরীষ মহারাজ অত্যন্ত বিনয়ী শান্ত প্রকৃতির ভক্ত ছিলেন। দুর্বাসা মুনির এমন ব্যবহারে লজ্জিত হলেন এবং দুর্বাসা মুনিকে রক্ষা করতে সুদর্শনচক্রের প্রতি স্তবস্তুতি করলেন। সুদর্শনচক্র অম্বরীষ মহারাজের স্তুতিতে প্রসন্ন হয়ে দুর্বাসা  মুনিকে পরিত্রাণ দিলেন।

🍁🌿💞🌿💞🌿💞🍁
ভক্তের চরণে অপরাধ করেও দুর্বাসা মুনি সেই ভক্তের কৃপায় মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত বৈষ্ণবগণ অনেক মহান তাই তাদের প্রতি বিদ্বেষভাব করলে নিজের অমঙ্গলই হয়। সবাই অম্বরীষ মহারাজের মতো শুদ্ধভক্তকে অনুসরণ করে ভক্তিযোগ অনুশীলন করে কৃষ্ণপ্রেম লাভ করুন।

‘’কলের্দোষনিধেরাজন্ অস্তি হ্যেকো মহানগুণঃ I
কীর্ত্তনাদেব কৃষ্ণস্য মুক্তসঙ্গঃ পরং ব্রজেৎ I I‘’ (শ্রীমদ্ভাগবত)
কলি সমস্ত দোষের বটে, তথাপি হে রাজন ! কলির একটি মহানগুণ এই যে, কৃষ্ণকীর্ত্তনে জীব মায়াবদ্ধ হইতে মুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণরূপ পরতত্ত্ব লাভ করেন।

‘’নাম - সংকীর্ত্তন যস্য সর্বপাপ প্রণাশনম্।
প্রণামো দুঃখশমনস্তং নমামি শ্রীহরিং পরম্।।‘’
যে হরিনাম সংকীর্ত্তন করিলে ইহকাল ও পরকালের পাপরাশি নিঃশেষে দগ্ধ হয়,আমি সেই নামরূপী পরমাত্মা স্বরূপ শ্রীহরিকে প্রণাম করি। পরমকরুণাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী এবং সকল বৈষ্ণব ভক্ত - পার্ষদদের শ্রীচরণকমলে নিরন্তর প্রার্থনা করি, সকলের জীবন যেনো রাধা-কৃষ্ণময়তায় পূর্ণ হয়ে, মঙ্গলময়, কল্যাণময়, ভক্তিময়, সুন্দরময় আর আনন্দময় হয়ে উঠুক।

"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে!!"
💐💐 জয় শ্রীরাধাকৃষ্ণের জয় 💐💐 জয় সকল ভক্তবৃন্দের জয় 💐💐

No comments:

Post a Comment

💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐 🌷বৈষ্ণবের ব্যাস পূজা🌷 💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐 শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দ...