💐🌻শান্তি লাভ🌻💐

💐🌹🌻🌺💞🌿💞💞🌿💞🌺🌻🌹💐

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

দুঃখ-দুর্দশা থেকে শান্তি লাভের উপায়ঃ-

আমাদের ভগবদ্ সেবা-বিমুখ আচরণই সমস্ত দুঃখভোগের কারণ ৷ মানব জাতির পিতা মহর্ষি মনু উল্লেখ করেছেন,-

অধর্মপ্রভবং চৈব দুঃখযোগং শরীরিণাম্ ৷

ধর্মার্থপ্রভবং চৈব সুখসংযোগমক্ষয়ম্।।

অর্থাৎ,- “জীবের সমস্ত দুঃখ অধর্ম থেকেই উৎপন্ন হয়। পক্ষান্তরে ধর্ম পালনের ফলে জীবের অক্ষয়সুখ লাভ হয়।''

কলির পাঁচ অধর্ম্মের অর্থাৎ দুঃখের স্থান ৷ এ সকল কর্ম্মের জন্য মানুষকে নূন্যতম হলেও দুঃখভোগ করতে হয় রোগ হিসাবে কিংবা শোক হিসাবে ৷

(শ্রীমদ্ভাগবতম্ হইতে উদ্ধৃত)

(১) দ্যূত; যথা তাস, দাবা, পাশা, ঘোড়দৌড়, জলের খেলা, জুয়া, লটারি, সতরঞ্চ, দশপঁচিশ, বাঘবন্দী, প্রভৃতি। তার মধ্যে মিথ্যা থাকে, এই সব করলে সত্যের নাশ হয়।

(২) পান; যথা তাম্বূল, গুবাক, নস্য, তামাক, গাঁজা, অহিফেন, সুরা, ভাং, কালকূট, ধুস্তর, তাড়ি, প্রভৃতি। মাধ্বিক, ঐক্ষব, দ্রাক্ষ্য, তাল, খর্জ্জুর, পনসজাত, মৈরেয়, মাক্ষিক, টাঙ্ক, মাধুক, নারিকেলজাত ও অন্নজাত এই দ্বাদশপ্রকার মদ্যও পানের মধ্যে গণ্য। তার মধ্যে গর্ব্ব থাকে, এই সব করলে দয়ার নাশ হয় ।

(৩) স্ত্রী; যথা অবৈধ স্ত্রীসঙ্গ ও নিজ বৈধ স্ত্রীতে আসক্তি (এবং স্ত্রীসঙ্গীর সঙ্গ) । তার মধ্যে কাম থাকে, এই সব করলে শৌচের নাশ হয় ।

(৪) সূনা; অর্থাৎ নিজ দেহ পোষণের জন্য অপরকে হত্যা করা ৷ প্রাণিবধের মধ্যে হিংসা থাকে । এই করিলে সত্য, দয়া, শৌচ এবং তপের নাশ হয়। পশুহননে অনুমোদনকারী, হতপশুর মাংসবিভাগকারী, স্বয়ং হন্তা, মাংসক্রয়বিক্রয়কারী, পাচক, পরিবেশক, এবং ভক্ষক এই সমস্ত জনই ঘাতকশ্রেণীভুক্ত।

(৫) জাত; অর্থাৎ সুবর্ণ, রৌপ্যাদি দ্রব্য এবং টাকা পয়সা। স্বর্ণের মধ্যে মিথ্যা, গর্ব্ব, স্ত্রীজনিত কাম, হিংসা, ও শত্রুতা নামক একটি পঞ্চম অনর্থ বিরাজিত ।

পাপ যতই ক্ষুদ্র হোক তার শাস্তি পেতেই হবে ৷ কেননা পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,-

সর্বস্য চাহং হৃদি সন্নিবিষ্টো মত্তঃ স্মৃতির্জ্ঞানমপোহনং চ।

বেদৈশ্চ সর্বৈরহমেব বেদ্যো বেদান্তকৃদ্ বেদবিদেব চাহম্।।  (গীতা ১৫/১৫)

অর্থাৎ,- আমি সমস্ত জীবের হৃদয়ে অবস্থিত এবং আমর থেকেই স্মৃতি, জ্ঞান ও বিলোপ হয়। আমিই সমস্ত বেদের জ্ঞাতব্য এবং আমিই বেদান্তকর্তা ও বেদবিৎ। অতএব আমরা যদি ভগবদ্ অনুগত হয়ে কৃষ্ণভাবনাময় জীবন যাপন করি, তবে আমাদের স্মৃতি ও জ্ঞান জাগ্রত হবে ৷ নতুবা, যদি আমরা বৈদিক শাস্ত্র বিরুদ্ধ জীবন প্রণালীতে চলি, তবে আমাদের স্মৃতিশক্তি, জ্ঞানবুদ্ধি বিলুপ্ত হবে ৷

ভগবান আমাদের স্বতন্ত্র ইচ্ছা দিয়েছেন ৷ সেই ক্ষুদ্র স্বাধীনতার জন্যে আমরা নিজের ইচ্ছা মতো কাউকে ভালবাসতে পারি ৷ ভালবাসা আত্মার ধর্ম্ম ৷ এই স্বতন্ত্র ইচ্ছাশক্তির উপর শ্রীকৃষ্ণ হস্তক্ষেপ করেন না, কারণ ভালবাসা কখনও বাধ্যতামূলক হইতে পারে না ৷ স্বতঃস্ফূর্ত্ত ভাবেই ভালবাসা সম্ভব ৷ শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরম প্রীতির পাত্র, পরম প্রেমাস্পদ ৷ আমাদের স্বতঃস্ফূর্ত্ত প্রীতি সেবা দিয়ে তাঁর কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন,-

মন্মনা ভব মদ্ভক্তো মদ্ যাজী মাং নমস্কুরু।

মামেবৈষ্যসি সত্যং তে প্রতিজানে প্রিয়োহসি মে।। (গীতা ১৮/৬৫)

অর্থাৎ,- তুমি আমাতে চিত্ত অর্পণ কর, আমার ভক্ত হও, আমার পূজা কর এবং আমাকে নমস্কার কর। তা হলে তুমি আমাকে অবশ্যই প্রাপ্ত হবে ৷এই জন্য আমি তোমার কাছে সত্যই প্রতিজ্ঞা করছি, যেহেতু তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয়। কিন্তু আমরা আমাদের স্বতন্ত্রতার অপব্যবহার করে শ্রীকৃষ্ণে মন রাখছি না ৷

শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরম ভোক্তা, তাঁর অণুঅংশস্বরূপ ভোক তত্ত্ব  গুণ আমাদের মধ্যে কিঞ্চিৎ থাকে ৷ কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন বিভু, পরম নিয়ন্তা এবং আমরা তাঁর দাসমাত্র ৷ তাই তাঁর ইচ্ছার অনুকূলে আমাদের অণুস্বতন্ত্র শক্তিকে নিয়োগ করতে হবে ৷ অর্থাৎ, কৃষ্ণ যা চান না আমরা যেন তা না করে বসি ৷ কিন্তু সেই স্বতঃস্ফূর্ত অপ্রাকৃত প্রীত মায়ামোহময় জগতে বিকৃত রূপ ধারণ করে ৷ যেমন তেঁতুলের স্পর্শে দুধ দইতে পরিণত হয় ৷ সেরকম শ্রীকৃষ্ণের মায়াশক্তির সংস্পর্শে এসে অপ্রাকৃত প্রেম বিকৃত হয়ে মায়ামোহগ্রস্থ জড় কামে পরিণত হয় ৷ স্বাধীনতার অপব্যবহার করার ফলে এই দুঃখক্লেশপূর্ণ জড় জগতে আমরা সুখভোগ করবার জন্য সর্বদা ব্যস্ত পড়েছি এবং মায়ার ক্ষণস্থায়ী মরণশীল নারী -পুরুষ, পতি-পত্নী, পুত্র-কন্যা সবাইকে মন প্রাণ অর্পণ করছি ৷

জীব নিত্য কৃষ্ণদাস  এই কথা ভুলে ৷

মায়ার নফর হৈয়া চিরদিন বুলে।। (প্রেমবিবর্ত)

ভগবান গীতায় বলেছেন,-

ধ্যায়তো বিষয়ান্ পুংসঃ সঙ্গস্তেষূপজায়তে।

সঙ্গাৎ সঞ্জায়তে কামঃ কামাৎ ক্রোধোহভিজায়তে।।

ক্রোধাদ্ ভবতি সম্মোহঃ সম্মোহাৎ স্মৃতিবিভ্রমঃ।

স্মৃতিভ্রংশাদ্ বুদ্ধিনাশো বুদ্ধিনাশাৎ প্রণশ্যতি।। (গীতা ২/৬২ - ৬৩)

অর্থাৎ,- ইন্দ্রিয়ের বিষয়সমূহ সম্বন্ধে চিন্তা করতে করতে মানুষের তাতে আসক্তি জন্মায়, আসক্তি থেকে কাম উৎপন্ন হয় এবং কামনা থেকে ক্রোধ উৎপন্ন হয়। ক্রোধ থেকে সম্মোহ, সম্মোহ থেকে স্মৃতিবিভ্রম, স্মৃতিবিভ্রম থেকে বুদ্ধিনাশ এবং বুদ্ধিনাশ হওয়ার ফলে সর্বনাশ হয়। অর্থাৎ, মানুষ পুনরায় জড় জগতের অন্ধকূপে অধঃপতিত হয়।        

''যারা গৃহ পরিবার বিষয়ে অত্যন্ত আসক্ত এবং সর্বদাই সেই চিন্তায় মগ্ন থাকে, পরম দুস্তর অনন্ত কাল অজ্ঞাতসারে তাদের অতিক্রম করে যায় ৷” (ভাঃ ১/১৩/১৭)

মায়াসক্তরা ভুলে গেলেও ভক্তরা ভগবানকে কখনো ভুলে যায় না ৷ তাই ভগবান বলেছেন, “আমি ভক্তজনপ্রিয়, ভক্ত সর্বদাই আমাকে চিন্তা করে, আমিও ভক্তদের জন্য চিন্তা করি ৷” (ভাঃ ৯/৪/৬৩)

যদি কেই অকপট চিত্তে ভগবানের শরণাগত হয় তবে ভগবানের অংশস্বরূপ আত্মা, যিনি প্রত্যেকের হৃদয়ে বিরাজমান, তিনি সহযোগিতা করবেন যাতে ভগবানকে লাভ করা যায় ৷ সেক্ষেত্রে ভগবান স্বয়ং বলেছেন,-

তেষাং সততযুক্তানাং ভজতাং প্রীতিপূর্বকম্।

দদামি বুদ্ধিযোগং তং যেন মামুপযান্তি তে।। (গীতা ১০/১০)

অনুবাদঃ যাঁরা ভক্তিযোগ দ্বারা প্রীতিপূর্বক  আমার ভজনা করে নিত্যযুক্ত, আমি তাঁদের শুদ্ধ জ্ঞানজনিত বুদ্ধিযোগ দান করি, যার দ্বারা তাঁরা আমার কাছে ফিরে আসতে পারেন। কিন্তু কপটতা করলে অর্থাৎ, তাঁকে ভুলে যেতে চাইলে তিনিও সেই বুদ্ধি দান করবেন যাতে তাঁকে ভুলে থাকতে পারা যায় ৷

যখন কেউ তার নিজের জন্য ভোগ্য বস্তু প্রাপ্য বলে মনে করে, তখন সে পরিনামে শান্তি পেতে পারে না ৷

ভুক্তি-মুক্তি-সিদ্ধিকামী সকলে অশান্ত ৷

কৃষ্ণভক্ত নিষ্কাম অতএব শান্ত।।

সরল জীবন যাপনে যে জীব সন্তুষ্ট, সেই জীব শান্তি লাভ করেন ৷ ভগবানের উদ্দেশ্যে কোন কিছু চাওয়াটা ভজন প্রতিকূল নয় ৷ কিন্তু অন্যথায় নিজ ইন্দ্রিয় তোষণে কোন কিছু কামনা করে বসলে ভজনে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় ৷

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন—

ভোক্তারং যজ্ঞতপসাং সর্বলোকমহেশ্বরম্।

সুহৃদং সর্বভূতানাং জ্ঞাত্বা মাং শান্তিমৃচ্ছতি।। (গীতা ৫/২৯)

অর্থাৎ,- আমাকে সমস্ত যজ্ঞ ও তপস্যার পরম ভোক্তা, সর্বলোকের মহেশ্বর এবং সমস্ত জীবের সুহৃদরূপে জেনে যোগীগণ জড় জগতের দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্ত হয়ে শান্তি লাভ করেন।

🍃♥ হরে ♬কৃষ্ণ ♬হরে ♬কৃষ্ণ ♬কৃষ্ণ ♬কৃষ্ণ ♬হরে ♬হরে

♬হরে ♬রাম ♬হরে ♬রাম ♬রাম ♬রাম ♬হরে ♬হরে ♥🍃