🦚💐🏵️🌷🏵️💐🦚

🌷শ্রীমনঃ শিক্ষা🌷

🦚💐🏵️🌷🌺💐🦚

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I (শ্রীমনঃ শিক্ষা শ্রীল-রঘুনাথদাস-গোস্বামিপাদ বিরচিত)

 

আজানুলম্বিত – ভুজৌ কনকাবদাতৌ,

সংকীর্ত্তনৈকপিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ।

বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম্মপালৌ,

বন্দে জগৎ প্রিয়করৌ করুণাবতারৌ।

 

‘’রতিং গৌরী-লীলে অপি তপতি সৌন্দর্য্যকিরণৈঃ

শচী-লক্ষ্মীঃ-সত্যাঃ পরিভবতি সৌভাগ্যবলনৈঃ।

বশীকারৈশ্চন্দ্রাবলিমুখ-নবীনব্রজসতীঃ

ক্ষিপত্যারাদ্ যা তাং হরিদয়িতরাধাং ভজ মনঃ।।১০।।‘’

অর্থাৎ,- হে মন! যিনি সৌন্দর্যকিরণসমূহদ্বারা কন্দর্পপ্রিয়া রতিদেবী, শিবপত্নী গৌরীদেবী এবং লীলানাম্নী শক্তিকে তাপ প্রদান করেন, সৌভাগ্যসম্বলদ্বারা শচী, লক্ষ্মী ও সত্যভামা দেবীকে পরিভব করেন এবং স্ব-সুলভ বশীকরণ-ধর্মাদিদ্বারা চন্দ্রাবলী প্রভৃতি নবীন ব্রজসতীগণকে দূরে নিক্ষেপ করিতেছেন সেই শ্রীকৃষ্ণদয়িতা শ্রীরাধাকে ভজন কর।।১।।

 

সৌন্দর্য-কিরণমালা, জিনে, রতি, গৌরী, লীলা

অনায়াসে স্বরূপবৈভবে।

শচী, লক্ষ্মী, সত্যভামা, যত ভাগ্যবতী রমা

সৌভাগ্য-বলনে পরাভবে।

 

ভজ মন, চরণ তাঁহার।

চন্দ্রাবলী-মুখ যত, নবীনা নাগরীশত

বশীকারে করে তিরস্কার।।

 

সে যে কৃষ্ণ-প্রাণেশ্বরী, কৃষ্ণ-প্রাণাহ্লাদকারী

হ্লাদিনী স্বরূপশক্তি সতী।

তাঁহার চরণ ত্যজি, যদি কৃষ্ণচন্দ্ৰ ভজি

কোটিযুগে কৃষ্ণগেহে গতি।।

 

সখীকৃপা-ভেলা ধরি, প্রেমসিন্ধু মাঝে চরি

বৃষভানুনন্দিনী-চরণে।

কবে বা পড়িয়া রব, ঈশ্বরীর কৃপা পাব

গণিত হইব নিজ-জনে।।১০।।

 

(১১)

সমং শ্রীরূপেণ স্মর বিবশ-রাধাগিরিভূতো

ব্রজে সাক্ষাৎ সেবালভনবিধয়ে তদ্‌গণযুজোঃ।

তদিজ্যাখ্যা-ধ্যান-শ্রবণ-নতি-পঞ্চামৃতমিদং

ধয়ন্নীত্যা গোবর্ধননুদিনং ত্বং ভজ মনঃ।।১১।।

অর্থাৎ,- হে মন! তুমি নিজ-গুরুদেব শ্রীরূপের সহিত ব্রজধামে গোষ্ঠে ললিতা সুবলাদিগণযুক্ত, পরস্পরের প্রতি কন্দর্পভাববিবশ শ্রীরাধাকৃষ্ণের সাক্ষাৎ সেবালাভের জন্য প্রত্যহ ভজন-পরিপাটি সহকারে শ্রীযুগলপূজা, নাম, ধ্যান, শ্রবণ এবং প্রণামরূপ পঞ্চবিধ অমৃত পান করিয়া সর্বদা

শ্রীগোবর্ধনের আরাধনা কর।।১১।। 

 

ব্রজের নিকুঞ্জ-বনে, রাধাকৃষ্ণ সখীসনে,

লীলারসে নিত্য থাকে ভোর।

সেই দৈনন্দিন-লীলা, বহু ভাগ্যে যে সেবিলা,

তাহার ভাগ্যের বড় জোর।।

 

মন! যদি চাহ সেই ধন।

শ্রীরূপের সঙ্গ লয়ে, তাঁর অনুচরী হয়ে,

কর তাঁর নির্দিষ্ট ভজন।।

 

হৃদয়ে রাগের ভাবে, কালোচিত সেবা পাবে,

সদা রসে রহিবে মজিয়া।

বাহিরে সাধন-দেহ, করিবে ভজন-গেহ,

নিঃসঙ্গ বা সাধুসঙ্গ লঞা।।

 

যুগল-পূজন, ধ্যান, নতি, শ্রুতি, সংকীর্ত্তন,

পঞ্চামৃতে সেব গোবর্ধনে।

রূপ-রঘুনাথ-পায় এ ভক্তিবিনোদ চায়,

দৃঢ়মতি এরূপ ভজনে।।১১।।

 

(১২)

মনঃশিক্ষাদৈকাদশকবরমেতন্মুধুরয়া

গিরা গায়ত্যুচ্চৈঃ সমধিগত-সৰ্বাৰ্থততি যঃ।

সযুথঃ শ্রীরূপানুগ ইহ ভবন্ গোকুলবনে

জনো রাধাকৃষ্ণাতুলভজনরত্নং স লভতে।।১২।।

অর্থাৎ,- যিনি মনশিক্ষাপ্রদ এই একাদশ শ্লোকের যাবতীয় অর্থ সম্যক্‌ অবগত হইয়া মধুর বচনে ইহা উচ্চৈঃস্বরে কীর্ত্তন করেন, তিনি শ্রীসনাতন গোস্বামীর ও শ্রীগোপালভট্ট শ্রীরঘুনাথভট্ট গোস্বামীদ্বয় ও শ্রীজীবগোস্বামী প্রমুখ যূথের সহিত বর্তমান শ্রীরূপ গোস্বামীর অনুগত হইয়া এবং শ্রীবৃন্দাবনে শ্রীরাধাকৃষ্ণের অনুপম ভজনরত্ন লাভ করেন।।১২।।

 

ইতি-শ্রীমনঃশিক্ষ্যাখ্যমেকাদশকং সম্পূর্ণম্।

 

অর্থকে অনর্থ’ জান, পরমার্থ দিব্যজ্ঞান,

হৃদয়ে ভাবহ একবার।

দারা, পুত্র, বন্ধুজন, কেহ নহে নিজ জন,

মরণেতে কেহ নহে কার।।

 

তোমার মরণ হলে, দেহটি ভাসায়ে জলে,

সবে যাবে গৃহে আপনার।

তবে কেন মিথ্যা আশা, বিষয়-জল-পিপাসা,

যদি কেহ নাহি হৈল কার।।

 

যদি বল, লভি সুখ, জীবনে না পাই দুঃখ,

অতএব অর্থচেষ্টা করি।

সেই মিথ্যা কথা রায়, জীবন অনিত্য হায়,

নাহি রহে শতবর্ষোপরি।।

 

অতএব জান সার, যেতে হবে মায়াপার,

যথা সুখে দুঃখ নাহি হয়।

কিসে বা সাধিব বল, সেই ত’ অপূর্ব ফল,

যাহে নাহি শোক, দুঃখ ভয়।।

 

কেবল বৈরাগ্য করি' তাহা না পাইতে পারি,

কেবল জ্ঞানেতে তাহা নাই।

বৈরাগ্য জ্ঞানের বলে, বিষয়-বন্ধন গলে,

জীবের কৈবল্য হয় ভাই।।

 

কৈবল্যে আনন্দ নাই, ‘সর্বনাশ’ বলি তাই,

কৈবল্যের নিতান্ত ধিক্কার।

এদিকে বিষয় গেল, শ্রেষ্ঠ কিছু না মিলিল,

কৈবল্যের করহ বিচার।।

 

অতএব জ্ঞানিজন, ভুক্তি-মুক্তি নাহি ল’ন,

কৃষ্ণভক্তি করেন সাধন।

বিষয়েতে অনাসক্তি, কৃষ্ণপদে অনুরক্তি,

সম্বন্ধাভিধেয়-প্রয়োজন।।

 

জীব সে কৃষ্ণের দাস, ভক্তি বিনা সর্বনাশ

ভক্তিবৃক্ষে ফলে প্রেমফল।

সেই ফল প্রয়োজন, কৃষ্ণপ্রেম নিত্যধন,

ভুক্তি মুক্তি তুচ্ছ সে সকল।।

 

কৃষ্ণ-চিদানন্দ-রবি, মায়া-তাঁর ছায়া-ছবি,

জীব-তাঁর কিরণাণুকণ।

তটস্থ ধর্মের বসে, জীব যদি মায়া স্পর্শে

মায়া তারে করয়ে বন্ধন।।

 

কৃষ্ণ বৰ্হিমুখ যেই, মায়া-স্পর্শি-জীব সেই,

মায়াস্পর্শে কর্ম-সঙ্গ পায় ।

মায়াজালে ভ্রমি’ মরে, কর্ম-জ্ঞানে নাহি তরে,

কষ্টনাশ মন্ত্রণা করায়।।

 

কভু কর্ম আচরয়, অষ্টাঙ্গাদি যোগময়,

কভু ব্রহ্মজ্ঞান আলোচন।

কভু কভু তর্ক করে, অবশেষে নাহি তরে,

নাহি মানে আত্ম-তত্ত্ব ধন।।

 

ভ্রমিতে ভ্রমিতে যবে, ভক্তজন-সঙ্গ হবে

তবে শ্রদ্ধা লভিবে নির্মল।

সাধু-সঙ্গে কৃষ্ণ ভজি’, হৃদয়-অনর্থ ত্যজি

নিষ্ঠা লাভ করে সুবিমল।।

 

ভজিতে ভজিতে তবে, সেই নিষ্ঠা ‘রুচি’ হবে,

ক্রমে রুচি হইবে ‘আসক্তি'।

আসক্তি হইতে ভাব’, তাহে হবে ‘প্রেম’লাভ

এই ক্রমে হয় শুদ্ধভক্তি।।

 

শ্রবণ, কীর্তন, মতি, সেবা, কৃষ্ণাৰ্চন, নতি,

দাস্য, সখ্য, আত্মনিবেদন।

নবধা সাধন এই, ভক্তসঙ্গে করে যেই

সেই লভে কৃষ্ণপ্রেমধন।।১২।।

 

ধন মোর নিত্যানন্দ,  পতি মোর গৌরচন্দ্র,  প্রাণ মোর যুগলকিশোর ।

অদ্বৈত আচার্য্য বল,  গদাধর মোরকুল,  নরহরি বিলসই মোর ॥১॥

বৈষ্ণবের পদধূলি,  তাহে মোর স্নানকেলি,  তর্পণ মোর বৈষ্ণবের নাম ।

বিচার করিয়া মনে,  ভক্তিরস আস্বাদনে,  মধ্যস্থ শ্রীভাগবত - পুরাণ ॥২॥

বৈষ্ণবের উচ্ছিষ্ট,   তাহে মোর মনোনিষ্ঠ,  বৈষ্ণবের নামেতে উল্লাস ।

বৃন্দাবনে চৌতারা,  তাহে মোর মনোঘেরা,  কহে দীন নরোত্তম দাস ॥৩॥