🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚

🌷কার্ত্তিক মাসে প্রদীপদান🌷

🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’গুরু - বৈষ্ণব  - ভগবান তিনের স্মরণ ।

তিনের স্মরণ হইতে হয় বিঘ্ন বিনাশন ।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

 

আজানুলম্বিত – ভুজৌ কনকাবদাতৌ,

সংকীর্ত্তনৈকপিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ।

বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম্মপালৌ,

বন্দে জগৎ প্রিয়করৌ করুণাবতারৌ।

 

কার্ত্তিক মাসে দীপদানের মাহাত্ম্য ও দামোদর মাস সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেই I

 

কার্ত্তিক মাস পরম করুণাময় ভগবান শ্রীহরির সেবার মাস। কার্ত্তিক মাস বা দামোদর মাস ভক্তগণের কাছে অতীব মাহাত্ম্যপূর্ণ একটি মাস। কেননা এ মাসে হরিভক্তির অনুকূলে যে কোন কার্যই সহস্রগুণ অধিক ফলদান করে। ভক্তিভরে স্বল্প পরিমাণ ভগবদ্ সেবা সম্পাদন করলেও ভগবান শ্রীহরি অতিশয় প্রীত হন। বিশেষ করে কার্তিক মাসের অন্যতম একটি ভগবৎ সেবা হচ্ছে ভগবানের মন্দিরে বা গৃহমন্দিরে ভগবানের উদ্দেশ্যে দীপদান। এই সম্বন্ধে বিভিন্ন শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, এই মাসে শ্রীহরির মন্দিরে দীপ দান করলে তাকে আর জন্ম মৃত্যুময় জগতে ফিরে আসতে হয় না।

 

‘’শ্রীহরিভক্তিবিলাস’’ গ্রন্থের ১৬শ বিলাস অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কার্ত্তিক   মাসে দেবালয়ে ভক্তিভাবে দীপদান, অখন্ড দীপাবলীর আয়োজন, বাড়িতে বাড়িতে দীপমালা সজ্জা ও আকাশ প্রদীপ দান করলে ভগবান শ্রীহরি প্রীতি লাভ হয়। নিয়ম সেবার কাল ও অক্ষয় পূণ্য অর্জনের এ মাসে সকলেরই নিরামিষ ভোজন করা উচিত। প্রতিদিন ভাগবতের দশম স্কন্ধের দামোবন্ধন লীলী পাঠ করা উচিত। দিনের বেলা ভোগরাগ, প্রসাদ গ্রহণ করা উচিত।

 

স্কন্দ পুরাণে বলা হয়েছে,

"অব্রতেন ক্ষিপেদ যন্ত মাসং দামোদর --প্রিয়ম।

তির্যগযোনীমবাপ্লোতি সর্ব ধর্ম বহিস্কৃতঃ।।

স ব্রহ্মহ স গোঘ্নশ্চ স্বর্ণস্তেয়ী সদানুতী।

ন করোতি মুণিশ্রেষ্ঠ যো নঃ কার্ত্তিকে ব্রতম।।

হে মুণিশ্রেষ্ঠ নারদ! ভগবান শ্রী দামোদরের প্রিয় কার্ত্তিক মাস যে ব্যক্তি বীণা নিয়মে অতিবাহিত করে সে সর্বধর্ম বহিস্কৃত ও তীর্যক যোনী প্রাপ্ত হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি কার্ত্তিক ব্রত পালন করে না, সে ব্রহ্মঘাতী, গো ঘাতী, স্বর্ণ অপহারী ও সদা মিথ্যাবাদী হয়ে থাকে।

 

স্কন্দ পুরাণে আরো বলা হয়েছে যে, যদি কেউ ঘিয়ের প্রদীপ বা তিল তৈলের প্রদীপ বিষ্ণু মন্দিরে কার্ত্তিক মাসে প্রজ্জ্বলিত করেন তাহলে সে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ করেন। কারও বংশে কোন সন্তান যদি কার্ত্তিক  মাসে বিষ্ণু মন্দিরে দীপদান করার মাধ্যমে শ্রীবিষ্ণুর প্রীতিসাধনে উদ্যোগী হয়, তাহলে বংশের সকলেই মুক্তি লাভের অধিকারী হয়। এমনকি কারও যদি মন্দার পর্বতের মতো বিপুল পরিমাণ পাপও সঞ্চিত থাকে, কার্ত্তিক মাসে ভক্তিসহকারে শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের মন্দিরে দীপদান করলে নিঃসন্দেহে তাঁর সমস্ত পাপ বিনষ্ট নয়।

 

‘স্কন্দ পুরাণে’ ব্রহ্মা নারদ সংবাদে বর্ণনা করা হয়েছে যে, যিনি কোটি সহস্র পাতকে পাতকী হয়েও শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও কার্ত্তিক মাসে শ্রীহরির মন্দিরে শুদ্ধাচারে ভক্তিভরে উপস্থিত হয়ে নিমেষমাত্র সময়ের জন্যও একটিমাত্র দীপ শ্রীভগবানের প্রীতিবিধানের উদ্দেশ্যে নিবেদন করেন, তবে তিনি নিখিল পাতক থেকে উদ্ধার লাভ করেন। ‘পদ্ম পুরাণে’ বলা হয়েছে, যিনি কার্ত্তিক মাসে ভগবান শ্রীজনার্দনের সম্মুখে অখন্ড অর্থাৎ অহোরাত্রব্যাপী দীপ দান করেন বা গগনতলে উচ্চভাবে দীপ প্রজ্জ্বলন করেন, তিনি ধনধান্যবান, সমৃদ্ধিশালী, পুত্রবান ও সর্বৈশ্বর্য সম্পন্ন হয়ে ভগবদ্ভক্তিযুক্ত হন এবং অন্তিমে দিব্যকান্তিময় বিমানে আরোহণ করে ভগদ্ধামে গিয়ে ক্রীড়া করার সৌভাগ্য অর্জন করেন। এছাড়া কার্ত্তিক মাসে দীপদান করলে রাজপথ, তরুমূল, গোষ্ঠ ও দুর্গম পথে দীপাবলী উৎসব উপলক্ষ্যে দীপসজ্জা করলে মহাফল লাভ করা যায় এবং এর ফলে সমাজের অশেষ কল্যাণ সাধিত হয়।

 

ভবিষ্য পুরাণে উল্লেখিত হয়েছে যে, যিনি কার্ত্তিক মাসে বিশেষতঃ শ্রীহরির উত্থান সময়ে দ্বাদশীতে অথবা একাদশী দিনে সুন্দররূপে প্রদীপমালা রচনা করেন তিনি অযুত সূর্যের মত প্রভাবশালী হয়ে আপন তেজ দ্বারা জগৎ সমুদ্ভাসিত করেন, অর্থাৎ তিনি নিজগুণে সর্বত্র যশস্বী হন। যে ব্যক্তি যতসংখ্যক ঘৃতের প্রদীপ হরিমন্দিরে প্রজ্জ্বলিত করেন, তিনি দীপসংখ্যানুসারে তত সহস্র বৎসর দিব্য ধামে বিহার করে থাকেন। শ্রীব্রহ্মা বৈষ্ণবদের উদ্দেশ্যে সতর্কবাণী উচ্চারণ পূর্বক শ্রীনারদ মুনিকে বলেছেন, কার্ত্তিক মাসে যে বৈষ্ণব শ্রীহরির মন্দিরে দীপদান না করে, সে একজন মূর্খ। সূর্য গ্রহণ কালে কুরুক্ষেত্র তীর্থ এবং চন্দ্রগ্রহণে নর্মদা তীর্থে দান-দক্ষিণা করলে যে পুণ্য হয়, কার্ত্তিক মাসে শ্রীশ্রীরাধামাধবের আনন্দ বিধানের উদ্দেশ্যে মন্দিরে দীপদান করলে তার চেয়েও কোটিগুণ পুণ্য উপার্জন করা যেতে পারে।

 

প্রধানতঃ তিন ধরণের প্রদীপ বা দীপ ভগবানের মন্দিরে প্রদান করার বিধান দেওয়া হয়েছে কর্পূরের দীপ, ঘৃতের দীপ, এবং তিল তেলের প্রদীপ। এ কথা হরিভক্তিবিলাসে বলা হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়েছে যে, কখনই কোন চর্বি জাতীয় পদার্থে দীপ দান করা উচিত নয়। দীপ নিবেদন করতে হবে পরমভক্তি সহকারে। কর্দমাক্ত স্থানে দীপ স্থাপন করা উচিত নয়। লাল রঙের বস্ত্র, ময়লা বা পুরনো বস্ত্র দিয়ে দীপবর্তিকা বা শলতে তৈরী করা উচিত নয়। যে দীপ একবার প্রজ্জ্বলিত করা হয়েছে, তা কখনও নিজ হাতে নিভানো উচিত নয়।

 

“স্কন্দ পুরাণে” দীপদান মাহাত্ম্য সম্বন্ধে শ্রীব্রহ্মা নারদ মুনিকে বলেছিলেন “হে দেবর্ষি! শ্রীহরির উদ্দেশ্যে ভক্তিভাবে সকর্পূর দীপদান যিনি করেন, সেই দীপদাতার বংশে যারা জন্মগ্রহণ করেছে, ভবিষ্যতে যারা জন্মগ্রহণ করবেন এবং যারা গত হয়েছে, তারা সকলেই চিরদিন দেবলোকে বিহার করে শ্রীহরির কৃপায় মোক্ষ লাভ করেন”। নারদ পুরাণে রুঙ্গদ মোহিনী সংবাদে লেখা আছে, একদিকে সমগ্র পৃথিবী দান এবং অন্যদিকে কার্ত্তিকে ভগবানের উদ্দেশ্যে দীপদান স্থাপন করলে দেখা যাবে যে তুলনায় দীপদানই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু নিজের দীপদানই নয়, স্কন্দ পুরাণে ‘পরদীপ-প্রবোধন’ অর্থাৎ অন্যকে দীপদানে সাহায্য করা বা অন্য কারো প্রদত্ত নিভে আসা অনুজ্জ্বল দীপকে পুনঃরায় উজ্জ্বল করে দেওয়া বিষয়েও মহিমা কীর্ত্তন করা হয়েছে। শ্রীহরি মন্দিরে পরদত্ত দীপ জ্বালিয়ে দিলে এবং বৈষ্ণবের সেবা করলে রাজসূয় ও অশ্বমেধ যজ্ঞজনিত পুণ্যফল লাভ হয়।

 

🦚প্রদীপ দানের ফল শৃতি🦚

কার্ত্তিক মাসে ভগবানের উদ্দেশ্যে দীপদানের যে সুফল সে সম্পর্কে বিভিন্ন পুরাণে অনেক দৃষ্টান্তও উল্লেখ রয়েছে। যেমন পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে ত্রেতাযুগে ভাস্কর নামে সৌরাষ্ট্র দেশবাসী এক কৃষক ছিল। তার স্ত্রীর নাম ছিল কলিপ্রিয়া। সে সর্বদাই অসৎ পুরুষের প্রতি আসক্ত ছিল। যিনি কিনা নিজের স্বামীকে কোন রকমের সম্মান প্রদর্শন করত না। সে ভাবত অন্য পুরুষই তার স্বামী। আর বিবাহিত পুরুষটি তার যোগসূত্র মাত্র। কলিপ্রিয়া সর্বদাই মদ্য মাংস ভক্ষণ করত এবং নিজের স্বামীকে উচ্ছিষ্ট খেতে দিত। আর অপ্রীতিকর ভাষায় নিন্দামন্দ করত। কলিপ্রিয়া একদিন ভাবল আমার স্বামী আমার পায়ের শৃঙ্খল স্বরূপ কেন এটার মৃত্যু হয় না। মরলেই আমি অন্য পুরুষের সাথে ইচ্ছামতো মেলামেশা করতে পারব।

 

এই ভেবে কলিপ্রিয়া একদিন নিজের স্বামীর মস্তক কেটে হত্যা করে, অভীষ্ট পুরুষের দিকে যাত্রা করে। কিন্তু গিয়ে দেখে তার অভীষ্ট পুরুষটিকে বাঘ খেয়ে ফেলেছে। তখন কলিপ্রিয়া নিজের বাড়ি ফিরে এসে মৃত স্বামীর চরণ ধরে কান্না করতে থাকে। এবং নিজেকে অসহায় ভেবে অন্য নগরে গমন করে। সেখানে কার্ত্তিক মাসের সকালে নর্মদায় স্নান করে দামোদর ব্রতকারী বৈষ্ণবদের দেখতে পেলেন। তিনি বৈষ্ণবদের দেখলেন যে, তাঁরা ভগবান শ্রীদামোদরের পূজা করছে। কলিপ্রিয়া তখন জিজ্ঞাসা করল তারা কি পূজা করছে এবং তার ফল কি? তারা বলল, মাতা সর্বকালোত্তম শুভ শ্রীশ্রীরাধাদামোদরের পূজা করছি। এখন কোটি জন্মর্জিত পাপক্ষরণের উপায়স্বরূপ এই কার্ত্তিক মাস উপস্থিত হয়েছে।

 

কলিপ্রিয়াও তাদের অনুসরণ করে সর্বপ্রকার পাপকর্ম পরিহার করে ভগবানের উদ্দেশ্যে প্রদীপ নিবেদন করে। অবশেষে একদিন দেহত্যাগ করে। তখন যমদূতগণ তাকে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছিল। আর সেই সময় স্বর্ণনির্মিত বিমানে বিষ্ণুদূতগণ উপস্থিত হয়ে যমদূতদের তাড়িয়ে দেয় এবং কলিপ্রিয়াকে বিষ্ণুলোকে নিয়ে যায়। এই প্রসঙ্গে সূত গোস্বামী বলেন, যে নারী ও নর পবিত্র এই মাসে শ্রীশ্রীরাধাদামোদরের উদ্দেশ্যে প্রদীপ নিবেদন করে তবে তার সমস্ত পাপ বিনষ্ট হয় এবং তিনি বৈকুণ্ঠ লোকে গমন করেন।

 

এ প্রসঙ্গে আর একটি কাহিনী আছে-

কোন এক মুষিকা (স্ত্রী ইঁদুর) কার্ত্তিক বা দামোদর মাসে একাদশীর দিনে ঘটনাক্রমে অন্যের জ্বালানো প্রদীপের তেল খেতে গিয়ে তার মুখের সাহায্যে প্রদীপের শৈলত্যে জাগিয়ে দেয়। ফলে প্রায় নিভে যাওয়া প্রদীপের আলো আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠে এবং এই সুকৃতির ফলে তার বৈকুণ্ঠ গতি লাভ হয়। শাস্ত্রে আরো বলা হয়েছে, যদি কেউ প্রদীপ দেখাতে নাও পারে শুধুমাত্র প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত বিষ্ণু মন্দির দর্শন করেন তবে সেই বংশের কেউ নরকগামী হন না। কার্ত্তিক বা দামোদর মাসের গুরুত্ব আরোপ করতে গিয়ে শ্রীল প্রভুপাদ বলেন, এই পবিত্র মাসে যারা ভগবান শ্রীদামোদরের উদ্দেশ্যে ভক্তিসহকারে ভগবানের আনন্দ বিধানের জন্য প্রদীপ নিবেদন করে তাদের অজ্ঞান অন্ধকার দূরীভূত হয়ে, হৃদয়ে জ্ঞানপ্রদীপ প্রজ্জ্বলিত হয় এবং সমস্ত কলুষতা থেকে মুক্ত হয়। অবশেষে মানব জীবনের চরম উদ্দেশ্য কৃষ্ণভক্তি লাভ করে গোলোকে গতি লাভ হয়।

 

স্কন্দপুরাণে ব্রহ্মা-নারদ সংবাদে বলা হয়েছে :-

🌷হে মুনিবর ! যে মানব কার্ত্তিক ব্রত না করে, সে ব্রহ্মঘাতী, গোঘাতী, স্বর্ণচোর, ও সর্বদা মিথ্যাবাদী।

🌷হে বিপেন্দ্র! বহু পূজা করে এবং শতবার শ্রাদ্ধ করেও কার্তিকে ব্রত না করার ফলে স্বর্গ প্রাপ্ত হয় না।

🌷কার্ত্তিকে ব্রত না করলে যে উৎকৃষ্ট দান,সুমহান তপস্যা ও জপ সকলই বিফল হয়।

🌷হে নারদ! কার্তিক মাসে উত্তম বৈষ্ণব ব্রত না করলে সপ্ত জন্মার্জিত পুণ্য বৃথা হয়। রাধাকৃষ্ণের যুগল আরাধনার মধ্য দিয়ে মাস টি উদযাপন করতে হয়।

🌷দামোদর ব্রতের মাহাত্ম্য স্কন্দ ও পদ্মপুরাণে দামোদর ব্রতের মাহাত্ম্য প্রসঙ্গে বলা হয়েছে :-

🌷সর্বতীর্থে যে স্নান, সর্বদানের যে ফল, কার্ত্তিক মাসের কোটি অংশের একাংশেরও সমান হয় না।

🌷কার্ত্তিকের সমান মাস নাই, সত্যযুগের সমান যুগ না, বেদের সমান শাস্ত্র নাই, গঙ্গার সমান তীর্থ নাই।

🌷যে মানব কার্ত্তিকে শ্রীবিষ্ণু মন্দির প্রদক্ষিণ করে সে পদে পদে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল ভাগী হয়।

🌷যে মানব কার্তিকে শ্রীহরির সম্মুখে নৃত্য,গীত,বাদ্য,ভক্তিসহ করে,সে অক্ষয়পদ বিষ্ণুধাম প্রাপ্ত হয়।

🌷হে মুনিবর ! কার্ত্তিকে যিনি হরিকথা শ্রবণ করেন, তিনি শতকোটি জন্মের আপদসমূহ থেকে নিস্তার পান।

🌷কার্ত্তিকে নিমেষার্দ্ধকাল দীপদান ফলে সহস্রকোটিকল্প অর্জিত বহু পাপ বিলুপ্ত হয়।

🌷মেরু ও মন্দর পর্বত সদৃশ অশেষ পাপ করলেও কার্ত্তিকে দীপদান প্রভাবে সর্বপাপ দগ্ধ হয় এতে সন্দেহ নাই।

🌷প্রজ্বলিত কর্পূর সমন্বিত দীপ দ্বারা আরতি করলে সপ্তকল্প যাবত ভগবদ্ধামে বাস হয়। মনোহর দৃশ্য প্রদীপ দ্বারা শ্রীহরির আরতি করলে কাম-ক্রোধাদি বিদূরিত হয় এবং পুনর্জন্ম হয় না। দীপের আলোতে ভগবানের মুখমণ্ডল দর্শন করলে ব্রহ্মহত্যাদি পাপ হতে মুক্ত হওয়া যায়। যে গৃহে দীপদান করা হয় তার সর্বদা ধন, যশ, পুত্র লাভ হয় এবং পূর্বপুরুষগণ সন্তোষ্ট হন!

🌷এছাড়া আরো অনেক মাহাত্ম্য পুরাণে বর্নিত আছে, সবাইকে অনুরোধ করব,আপনারা দামোদর ব্রত পালন করুন এবং মানব জীবন ধন্য করুন। এই মাসে বেশি করে হরিনাম জপ করুন এবং প্রতিদিন সন্ধ্যায় ভগবান দামোদরকে দীপদান করুন।

 

দামোদর মাস মানেই ১০০০ গুণ বোনাসের মাস :

👉🏻৩০০০ বার বিষ্ণু নামে ১ বার কৃষ্ণ নামের সমান হয়। আর এই দামোদর মাসে মাত্র ১ বার কৃষ্ণ নাম নিলে ১০০০ বার কৃষ্ণ নামের সমান হয়।

🌷আমরা জানি, প্রতিদিন ১৬ মালা করে ১ কোটি মহামন্ত্র জপ করতে প্রায় ১৬ বছর সময় লাগে। কিন্তু এই দামোদর মাসে ভগবান আমাদেরকে একটি বিশেষ বোনাস উপহার দিচ্ছেন। মাত্র ১ বার কৃষ্ণ নাম নিলে ১০০০ বার কৃষ্ণ নামের সমান হবে। অর্থাৎ ১০০০ গুণ বেশি ফল পাওয়া যাবে।

🌷যদি কেউ প্রতিদিন ১৬ মালা জপ করেন তাহলে অনায়াসে সে এই ৩০ দিনেই প্রায় ৫ কোটি মহামন্ত্র জপের সমান ফল পাবেন। অর্থাৎ প্রায় ৮০ বছরের ফল পাচ্ছেন মাত্র এই ১ মাসে।

🌷তাই এই দামোদর মাসকে ভগবানের বিশেষ বোনাসের মাসও বলা হয়।( শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণের যুগল আরাধনার মধ্য দিয়ে এই ব্রতের মাস টি অতিবাহিত হয়।)

 

🏵️মূষিক উপাখ্যান  কার্ত্তিক মাসে দীপ মাহাত্ম্য🏵️

পদ্মপুরাণে শৌনক সূত গোস্বামীকে বলেছেন,- “হে সূত! কার্ত্তিক ব্রতের ফল কি? এটা না করলেই বা দোষ কি? আমার নিকটে কার্ত্তিক ব্রতের মাহাত্ম্য বলুন।”

 

 

সূত বললেন,- ''হে মুনিশ্রেষ্ঠ! জৈমিনির প্রশ্নে ব্যাসদেব যা বলেছিলেন তা কীর্ত্তন করছি। কার্ত্তিক  মাসে যে ব্যক্তি মৎস্য, তৈল ও মৈথুন ত্যাগ করে, সে বহুজন্মকৃত পাপ মুক্ত হয়ে হরিগৃহে গমন করে। যে নর কার্ত্তিকমাসে  মৎস্য ও মৈথুন ত্যাগ না করে, সে নিশ্চয়ই প্রতি জন্মে অজ্ঞান স্থাবরাদি ও শূকর জন্ম লাভ করে। মানবগণ কার্ত্তিকমাসে তুলসীপত্র দ্বারা জনার্দনের পূজা করলে পত্রে পত্রে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল প্রাপ্ত হয়। কার্ত্তিকমাসে যে বকপুষ্প দ্বারা জনার্দনের পূজা করে সে হরির কৃপায় দেবগণেরও দুর্লভ মোক্ষ প্রাপ্ত। যে নর সর্পিসংযুক্ত (ঘৃত যুক্ত) অন্ন হরিকে দান করে সে সর্বপাপ মুক্ত হয়ে হরিমন্দিরে গমন করে।

 

যে নর কার্ত্তিকমাসে একটি পদ্মও যদি দান করে, সে পাপবর্জিত হয়ে অন্তে বিষ্ণুপদে গমন করে। যে নর হরিপ্রিয় কার্ত্তিকমাসে প্রাতঃস্নান করে, যে সর্বতীর্থে স্নান করলে যে ফল, সেই ফল পায়। যে নর কার্ত্তিকমাসে নভোমণ্ডলে দীপ দান করে, শ্রীহরি তার প্রতি সদা তুষ্ট থাকেন। যে জন কৃষ্ণমন্দিরে সঘৃত দীপ দান করে তার মাহাত্ম্য বিশেষরূপে বর্ণনা করছি, শ্রবণ কর।'' ত্রেতাযুগে বৈকুণ্ঠ নামে একজন শুচি ব্রাহ্মণ বাস করতেন। সেই দ্বিজ একদা কার্ত্তিকমাসে শ্রীহরির পুরোভাগে ঘৃতপূর্ণ দীপ দান করে গৃহে গমন করলেন। সেই সময় এক মুষিক ঘৃত খেতে আরম্ভ করলে প্রদীপ উজ্জ্বল হলো; অমনি সে প্রাণভয়ে পলায়ন করল।

 

পলায়ন কালে এক সর্প কর্তৃক দংশিত হয়ে সে প্রাণত্যাগ করল। তখন যমদূতগণ এসে তাকে রজ্জুবদ্ধ করে নিয়ে যাবার উপক্রম করল। অমনি শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী চতুর্ভূজ বিষ্ণুদূতগণ স্বর্ণ নির্মিত এক বিমানে করে সেখানে আগমন করল। সেই দূতগণ দ্রুত পাশবন্ধন ছিন্ন করে যমকিঙ্করগণকে বলল, - ‘হে মূঢ়গণ! এ মুষিক বিষ্ণুভক্ত; একে বৃথা বন্ধন করেছিস। যদি তোদের জীবনের আশা থাকে, তবে শীঘ্র প্রত্যাবর্তন কর।’ এই কথা শুনে যমদূতগণ প্রকম্পিত কায়ে জিজ্ঞাসা করল, - ‘ হে বিষ্ণুদূতগণ! তোমরা একে কোন্ পুণ্যপ্রভাবে বিষ্ণুপুরে নিয়ে যাচ্ছ? এ মহাপাপী; যমালয়ে শাস্তি বিধানই এর কর্ত্তব্য ।’

 

 বিষ্ণুদূতগণ বলল,- ‘এই মুষিক বাসুদেবের পুরোভাগে প্রদীপ বোধন (উষ্কিয়ে দেওয়া) করেছে; সেই কর্ম বশতই একে বিষ্ণুমন্দিরে নিয়ে যাচ্ছি।'' যে ব্যক্তি অনিচ্ছায়ও বিষ্ণুর অগ্রে দীপের বোধন করে, সে কোটিজন্মার্জিত পাপ পরিহার করে হরির গৃহে গমন করে। কার্ত্তিকমাসে একাদশী তিথিতে যে নর ভক্তি সহকারে প্রদীপ দান করে, তার পুণ্য আখ্যান করতে শ্রীহরি ভিন্ন আর কেউই সমর্থ নয়। যেজন হরির গৃহে ভক্তিপূর্বক ঘৃতপূর্ণ দীপ দান করে, তার সহস্র অশ্বমেধেই বা কি প্রয়োজন? অশ্বমেধকর্তা স্বর্গে গমন করে, কিন্তু কার্ত্তিকে দীপদাতা হরিমন্দিরে বৈকুণ্ঠে গমন করে। বিষ্ণুদূতগণ মুখে এরূপ বাক্য শুনে সেই যমদূতগণ যথাস্থানে গমন করল।

 

বিষ্ণুদূতগণ সেই মুষিকের রথে আরোহণ করে বিষ্ণুমন্দিরে গমন করল। শত মন্বতর কাল সে বিষ্ণুসান্নিধ্যেই রইল। তারপর হরির কৃপায় সে মর্ত্যভূমে রাজকন্যা হয়ে জন্ম লাভ করল। সে পুত্রে-পৌত্রে সমাযুক্ত হয়ে চিরকাল সুখভোগ করল। পরিশেষে সে হরিসেবা-মাহাত্ম্যে ইহলোক হতে গোলোকে গমন করল। মর্তবাসী এই উত্তম দীপমাহাত্ম্য শ্রবণ করে সেই সর্বপাপে বিনির্মুক্ত হয়ে বিষ্ণুমন্দিরে গমন করে।

 

🌷'আকাশ দীপ' এর মহিমা🌷

স্কন্দপুরাণে - পূর্বকালে দ্রাবিড়দেশে বুদ্ধ নামে এক ব্রাহ্মণ ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ছিল খুবই দুষ্টা প্রকৃতির এবং দুরাচার সম্পন্না। ঐ স্ত্রীর সংসর্গে থাকার ফলে ব্রাহ্মণের আয়ু ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হলেন। পতির মৃত্যুর পরেও ঐ স্ত্রীলোকটি আরও বিশেষভাবে ব্যভিচারে লিপ্ত হলো। এমনকি লোকনিন্দার ভয় না করে সে নির্লজ্জের মতো ব্যবহার করতে লাগল। তার কোনো পুত্র বা ভাই ছিল না। সে সর্বদাই ভিক্ষার অন্ন ভোজন করত। নিজের হাতে প্রস্তুত না করে সর্বদাই পরের বাড়ি থেকে ভিক্ষা করে বাসি অন্ন খেত এবং অনেকসময় অপরের বাড়িতে রান্না করতে যেত। তীর্থযাত্রা আদি থেকে সর্বদাই দুরে থাকত।

 

সে কখনও কোনো ভালো কথায় কর্ণপাত করত না। একদিন এক বিদ্বান তীর্থযাত্রী ব্রাহ্মণ তার গৃহে আগমন করল। যার নাম ছিল কুৎস। তাকে (ঐ স্ত্রীকে) ব্যভিচারে আসক্ত দেখে সেই ব্রহ্মর্ষি কুৎস বললেন- ওরে মূর্খ নারী! মনোযোগ সহকারে আমার কথা শ্রবণ কর। পৃথ্বি আদি পঞ্চভূত দ্বারা তৈরী এই রক্তমাংসের শরীর, যা কেবল দুঃখেরই কারণ, তুই তাকে যত্ন করছিস? এই দেহ জলের বুদবুদের মতো, একদিন যা অবশ্যই বিনষ্ট হবে। এই অনিত্য শরীরকে যদি তুই নিজ বলে মানিস, তাহলে নিজের বিচার পূর্বক এই মোহ পরিত্যাগ কর। ভগবান বিষ্ণুকে স্মরণ কর এবং তাঁর লীলাকাহিনী শ্রবণ কর।

 

এখন কার্ত্তিক মাস আগত হবে, তখন ভগবান দামোদরের প্রীতি বিধানের জন্য, স্নান, দান আদি কর্ম করে গৃহে বা মন্দিরে বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে দীপ নিবেদন করে শ্রীবিষ্ণুকে পরিক্রমা করবে এবং তাঁকে প্রণাম করবে। এই ব্রত বিধবা এবং সৌভাগ্যবতী নারী উভয়েরই অবশ্য পালনীয়। যার ফলে সমস্ত প্রকারের পাপের শাস্তি তথা সকল উপদ্রব নষ্ট হয়। কার্ত্তিক মাসে দীপদান নিশ্চিতরূপে ভগবান বিষ্ণুর প্রীতি বর্ধন করে। এই কথা বলে ব্রাহ্মণ কুৎস অপর একটি গৃহে গমন করলেন। তখন ঐ ব্রাহ্মণী ব্রহ্মর্ষি কুৎসের এই রকম উপদেশ শ্রবণ করে নিজ কর্মের জন্য অনুতাপ করতে লাগল এবং সে স্থির করল যে সে অবশ্যই কার্ত্তিক মাসে এই ব্রত পালন করবে।

 

তারপর যখন কার্ত্তিক মাস আগত হলো তখন সে পুরো মাস সূর্যোদয়ের সময় প্রাতঃস্নান তথা বিষ্ণুকে দীপদান সহ নিষ্ঠা সহকারে এই ব্রত পালন করল। তারপর কিছুকাল বাদে আয়ু শেষ হলে তার মৃত্যু হলো। তখন সে স্বর্গলোকে গমন করল এবং পরে মুক্তি লাভ করল। যে সমস্ত মানুষ কার্ত্তিক ব্রত পালন ও দীপদান আদি সম্পন্ন করে তারা যদি এই ইতিহাস শ্রবণ করে তাহলে তারাও মোক্ষ লাভ করে। ব্রহ্মা এরপর বললেন,- নারদ! এখন আকাশ দীপের মহিমা শ্রবণ কর। কার্ত্তিক মাস আগত হলে যিনি নিয়মিত ব্রাহ্মমুহূর্তে স্নান করে আকাশদীপ দান করেন তিনি সমস্ত লোকের প্রভু এবং অন্তে মোক্ষ লাভ করেন।

 

এইজন্য কার্ত্তিক মাসে স্নান, দান আদি কর্ম করার সাথে সাথে ভগবান বিষ্ণুর মন্দিরে এই একমাস দীপদান করা অবশ্য কর্তব্য। মহারাজ সুনন্দন চন্দ্রশর্মা নামক ব্রাহ্মণের পরামর্শ অনুসারে এই একমাস বিধিপূর্বক ব্রত অনুষ্ঠান করেছিলেন। কার্ত্তিক মাসে প্রতিদিন প্রাতঃস্নান করে পবিত্র হয়ে কোমল তুলসীদল দ্বারা ভগবান বিষ্ণুর পূজা এবং রাত্রিতে আকাশ দীপ দিতেন। দীপ প্রদানের সময় তিনি এই মন্ত্র পাঠ করতেন,-

 

দামোদরায় বিশ্বায় বিশ্বরূপধরায় চ ।

নমস্কৃত্যা প্রদাস্যামি ব্যোমদীপং হরিপ্রিয়ম্ ।।

অর্থাৎ,- ‘আমি সবের্শ্বর এবং বিশ্বরূপধারী ভগবান দামোদরকে নমস্কার করে এই আকাশদীপ প্রদান করছি যা ভগবানের পরম প্রিয়। হে দেবেশ্বর, এই ব্রতের ফলে যেন আপনার প্রতি আমার ভক্তি বর্ধিত হয়’- এইভাবে প্রার্থনা করে রাজা সুনন্দন দীপদান করতেন। ব্রাহ্মমুহূর্তে উঠে পুনর্বার আকাশদীপ দিতেন। এইভাবে তাঁর প্রাতঃস্নান এবং ভগবান বিষ্ণুর পূজা নিয়মিত চলতে লাগল। মাসে শেষে ব্রতভঙ্গ করে আকাশ দীপের নিয়মের সমাপ্তি করলেন এবং ব্রাহ্মণ ভোজন করিয়ে এই বিষ্ণুব্রত পূর্ণ করলেন।

 

এই পুণ্যের প্রভাবে রাজা এই পার্থিব জগতেই স্ত্রী, পুত্র, পৌত্র এবং আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে এক লক্ষ বৎসর সুখ উপভোগ করলেন এবং অন্তকালে স্ত্রীর সঙ্গে সুন্দর বিমানে আরূঢ় হয়ে চতুর্ভূজ (শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্ম দ্বারা সুশোভিত) বিষ্ণু সদৃশ রূপ লাভ করে মোক্ষ প্রাপ্ত হলেন। তারপর তিনি বিষ্ণুলোকে ভগবানের সান্নিধ্যে সুখ ও আনন্দের সঙ্গে বাস করতে লাগলেন। সেই কারণে দুর্লভ মনুষ্য জন্ম লাভ করে ভগবান বিষ্ণুর অত্যন্ত প্রিয় আকাশদীপ বিধিপূর্বক দান করা উচিৎ। এই সংসারে যে বিষ্ণুর প্রসন্নতা বিধানের জন্য আকাশদীপ প্রদান করে, তাকে ক্রুর মুখ বিশিষ্ট যমরাজের মুখ দর্শন করতে হয় না। একাদশীতে সূর্যের তুলারাশিতে অবস্থান অথবা পূর্ণিমাতে লক্ষ্মী সহিত ভগবান বিষ্ণুর প্রসন্নতা বিধানের জন্যই আকাশদীপ প্রদান করা চাই।

 

নমো পিতৃভ্যঃ প্রেতেভ্যো নমো ধর্মায় বিষ্ণবে ।

নমো যমায় রুদ্রায় কান্তারপতয়ে নমঃ ।।

অর্থাৎ,- ''পিতৃগণকে নমস্কার, প্রেতগণকে নমস্কার, ধর্মস্বরূপ বিষ্ণুকে প্রণাম, যমরাজকে নমস্কার তথা দুর্গম পথে রক্ষাকারী ইন্দ্রকে নমস্কার।'' এই মন্ত্র উচ্চারণ করে যে মানুষ পিতৃগণের নিমিত্ত আকাশে দীপদান করেন, তার পিতৃগণ নরকে থাকলেও উত্তম গতি প্রাপ্ত হন। যে দেবালয়ে, নদীর তীরে, রাজপথে, তথা নিদ্রা যাবার স্থানে দীপদান করে সে সর্বতোভাবে লক্ষ্মীপ্রাপ্ত হয়। যে ব্রাহ্মণ বা অন্যজাতির মন্দিরে দীপ প্রজ্জ্বলন করে সে বিষ্ণুলোকে প্রতিষ্ঠিত হয়। যে কণ্টকাকীর্ণ দুর্গম উঁচু নিচু পথে দীপ দান করে সে কখনো নরকে পতিত হয় না। পূর্বকালে রাজা ধর্মনন্দন আকাশদীপ দানের প্রভাবে শ্রেষ্ঠ বিমানে আরোহন করে বিষ্ণুলোকে প্রস্থান করেছিলেন।

 

আকাশ দীপ দান মন্ত্রঃ
দামোদরায় নভসি তুলায়াং লোলয়া সহ।
প্রদীপন্তে প্রযচ্ছামি নমো হনন্তায় বেধসে  I I

যিনি কার্ত্তিক মাসে হরিবোধিনী একাদশীতে ভগবান বিষ্ণুর সম্মুখে কর্পূর দিয়ে দীপ প্রজ্জ্বলন করেন তাঁর কুলে উৎপন্ন সমস্ত মানুষ ভগবান বিষ্ণুর প্রিয় ভক্ত হন তথা অন্তঃকালে মোক্ষলাভ করেন। পূর্বকালে কোনো এক গোপ অমাবশ্যা তিথিতে ভগবানের মন্দিরে দীপ প্রজ্জ্বলন করে তথা বারংবার জয়ধ্বনি উচ্চারণ করে রাজরাজেশ্বর হয়েছিলেন। এইভাবে স্বয়ং ব্রহ্মা নারদ মুনির কাছে কার্ত্তিক মাসে ভগবানের উদ্দেশ্যে নিয়মিত দীপ দান ও আকাশদীপ দানের মহিমা ব্যক্ত করেছিলেন। সকলেরই এইভাবে কার্ত্তিক মাসে দীপদান করা উচিত।