🏵️🌺🌷🌺🏵️

🌷উড়ন ষষ্ঠী🌷

🏵️🌺🌷🌺🏵️

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম। আজ বিশেষ শুভদা তিথি। শ্রী শ্রী রাধা বাঁকে বিহারি জীউর শুভ প্রাকট্য তিথি পূজা বিহার পঞ্চমী ।  আগামী কাল শ্রীপুরুষোত্তম ধামে শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের পবিত্র উড়ন ষষ্ঠী। 

 

বিহার পঞ্চমী উপলক্ষে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের মথুরা জিল্লা অন্তর্গত শ্রীধাম বৃন্দাবনে নিধিবন ও বাঁকে বিহারী মন্দিরে প্রচুর ভক্ত সমাগম ঘটে। কথিত আছে ১৫৬২ সালের মার্গশীর্ষ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চম তিথিতে স্বামী হরিদাসের সঙ্গীত চর্চায় খুশি হয়ে নিধিবন রাজ মন্দির থেকে আবির্ভূত হন ঠাকুর বাঁকে বিহারী। তাই এই দিনটি বিহার পঞ্চমী হিসাবে পালিত হয়। এই তিথিতে ভগবান পুরুষোত্তম রাজা রামচন্দ্রের সঙ্গে সীতা দেবীর বিবাহ হয়েছিল তাই এই তিথিকে বিবাহ পঞ্চমী ও বলা হয়।

 

‘’গুরু - বৈষ্ণব  - ভগবান তিনের স্মরণ ।

তিনের স্মরণ হইতে হয় বিঘ্ন বিনাশন ।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।’’

 

গুরবে গৌরচন্দ্রায় রাধিকায়ৈ তদালয়ে।

কৃষ্ণায় কৃষ্ণভক্তায় তদ্ভক্তায় নমো নমঃ।।

 

জগন্নাথ লীলা

🏵️🌺🌷🌺🏵️

বারো মাসে তেরো পার্বণ। কথাটা ওড়িশা'র পুরী থেকে চলে আসছে। কারন সেখানকার অধিবাসীদের ধ্যান, জ্ঞান, মন-প্রাণ জুড়ে রয়েছে প্রভু জগন্নাথ দেবের মন্দির যেখানে সারা বছর জুড়ে নানা উৎসব লেগেই থাকে যেমন স্নানযাত্রা, রথযাত্রা, দোলযাত্রা, পুষ্যাভিষেক, রুক্মিনী হরন ইত্যাদি। তেমনি একটি উৎসব হলো ওড়ন ষষ্ঠী অর্থাৎ এই দিনে ভগবান শ্রী জগন্নাথদেব কে শীতকালীন পোশাক পরানো হয়। সাধারণত ভগবানকে মার যুক্ত পোশাক পরানো হয় না এবং এ কাপড় পরে ভগবানের পূজা ও করা যায় না। নতুন কাপড় ভগবানকে নিবেদন করার পূর্বে ধৌত করা হয়। কিন্তু জগন্নাথ পুরীতে এই দিনে ভগবান কে মার যুক্ত পোশাক পরানো হয়। কাপড়ে মার যুক্ত করলে তাতে গরম অনুভূত হয় এই জন্য পান্ডারা তা জগন্নাথ কে নিবেদন করেন।

 

প্রকৃতপক্ষে ভগবানের কাছে শীত উষ্ণ সবই সমান কিন্তু আমাদের মনকে সব সময় তার প্রতি অনুরক্ত রাখার সুবিধার্থে তিনি এই সকল লীলা করে থাকেন। ওড়ন ষষ্ঠী সম্পর্কে চৈতন্য ভাগবত ও চৈতন্য চরিতামৃতে একটি ঘটনা বর্ণিত আছে। চৈতন্য ভাগবতের ঘটনাটি নিচে বর্ণিত হলো :

একবার শ্রীশ্রী গৌরসুন্দর সকল ভক্ত লয়ে পুরীতে ওড়ন ষষ্ঠী দেখতে এলেন। এই উৎসবে বিভিন্ন প্রকার বাদ্যযন্ত্র যেমন মৃদঙ্গ, মহুরী, শঙ্খ, দুন্দুভি, কাহাল, ঢাক, ডগর, কাড়া ইত্যাদি গগন বিদারী শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে। 'ওড়ন ষষ্ঠী ' হতে মকর সংক্রান্তি পর্যন্ত সেই নূতন পোষাক পরিচ্ছেদ জগন্নাথ প্রয়োগ করেন। জগন্নাথ দেবের নীলাভ দেহে শুক্ল, পীত ও নীলবর্ণের স্বর্ণজরি ও মুক্তাখচিত রেশমী বস্ত্র অতি শোভা পাচ্ছে। পুষ্পের বালা, পুষ্পমুকুট ও পুষ্পহার দিয়ে জগন্নাথ দেব অলঙ্কৃত আছেন।

 

ষোড়শ উপাচারে যথা গন্ধ পুষ্প, ধুপ, দীপসহ পূজা শেষে বিভিন্ন প্রকারের ভোগ নিবেদন করা হল। প্রেমাবেশে মহাপ্রভু পার্ষদবৃন্দসহ 'ওড়ন ষষ্ঠী' উৎসব শেষ রাত পর্যন্ত দর্শন করলেন। শ্রীচৈতন্যমহাপ্রভু উপাসক ও উপাস্য(জগন্নাথ)। তাঁর কৃপা বিনা কে ঈশ্বরের মন বুঝতে পারে? প্রভু স্বয়ং দারুরূপে যোগাসনে উপবিষ্ট হয়ে, সন্ন্যাসী রূপে ভক্তিযোগ অবলম্বন পূর্বক নিজ নিজের সেবা করেন। উৎসব শেষে মহাপ্রভু পরমানন্দে নিজ বাসায় প্রত্যাগমন করলেন। ভক্তদের বিদায় দিয়ে তিনি স্বগৃহে বিরলে নিজানন্দে বিভোর হলেন। ভক্তরা যার যে বাসায় গমন করলেন। বিদ্যানিধি ও স্বরূপ দামোদর যাওয়ার পথে একে অপরকে অকপটে মনের কথা আলাপন করছেন। বিদ্যানিধি মহাশয় স্বরূপ দামোদরের কাছেসন্দেহ ভরে জিজ্ঞাসা করলেন,"এই দেশে শ্রুতি স্মৃতি থাকতে কেন জগন্নাথদেবকে অধৌত মাড় যুক্ত বস্ত্র দেওয়া হয়?"

 

স্বরূপ দামোদর বলছেন, - "শোন, এসব এখানকার দেশাচার; এতে এখানে কোন দোষগ্রহণ করে না। কেন তুমি এটাকে এত গুরুত্ব দিচ্ছ? এর দোষ ধরা তোমার উচিত নয়। শ্রুতি স্মৃতি জানলে সব জায়গায়, সব সময় পালন করতে হবে এমন কথা নেই। এই উৎসব এইভাবে বহুকাল যাবৎ পালিত হচ্ছে। ঈশ্বরের যদি অন্তরে ইহা না চায় তাহলে রাজা কেন নিষেধ করেন না"? "ভাল কথা, ঈশ্বর তাঁর ইচ্ছামত যাকিছু করতে পারেন। তবে সেবক কেন ঈশ্বরের ন্যায় কার্য্য করেন"? বিদ্যানিধি বললেন। "পূজারী, পাণ্ডা, শৃঙ্গারকারী সেবক, পড়িছা, বেহারা- তারা কি করে এই অশুদ্ধ বস্ত্র স্পর্শ করে? জগন্নাথ স্বয়ং ঈশ্বর, সব কিছুই তাঁর সম্ভব। তাই বলে সকলেই কি তাঁর আচরণ করবে? মাড়যুক্ত কাপড় স্পর্শ করে, হাত না ধুলে শুদ্ধ হয় না। যদি তারা সকলে সুবুদ্ধি সম্পন্ন তাহলে কেন তারা ইহা করে না?

 

রাজমন্ত্রী যদি এসব বিচার না করেন তাহলে তিনি নির্বোধ। রাজাও বুঝি মাড়যুক্ত বস্ত্র মস্তকে ধারন করেন?" স্বরূপ দামোদর উত্তরে বললেন, - "শুন ভাই! আমি যত বুঝি এই ওড়ন যাত্রা উৎসবে দোষ নাই। পরমব্রহ্ম জগন্নাথরূপে অবতীর্ণ হয়ে এই সব বিধিনিষেধ বিচার করতে বাধ্য নন। বিদ্যানিধি বললেন, - "আমি স্বীকার করছি জগন্নাথ পরমব্রহ্ম, তিনি যদি বিধি নিষেধ লঙ্ঘন করেন তাতে কোন দোষ আসে না। কিন্তু নীলাচলে বাস করে এই সব সেবকেরাও কি ব্রহ্ম হয়ে গেছে? কেন তারা এই লোকাচার বর্জন করবে? আরে!এখানে সকলেই যে ব্রহ্মের অবতার হয়েছে"!! সেবকদের দোষ নির্ণয়ের আলোচনায় উভয়ে হাসা-হাসির মাধ্যমে হাতা হাতি করছেন। কেউই জানতেন না জগন্নাথের সেবকদের প্রভাব কত। কিন্তু কৃষ্ণ জানেন, তাঁর প্রতি ভক্তদের অনুরাগ কত গভীর।

 

কখনো কখনো কৃষ্ণ নিজ সেবকেরে ভুল করান এবং পরবর্তীতে তা খণ্ডন করে হৃদয়ের দোষত্রুটি মোচন করেন। প্রকৃতপক্ষে বিদ্যানিধির অন্তরে এই যে ভ্রম, তার কারণও কৃষ্ণ। আবার তাঁর অসীম কৃপা দিয়ে তিনি ভক্তদের ভ্রম চ্ছেদ করেন। অনুগ্রহ করে এবারে শুনুন কিভাবে কৃষ্ণ বিদ্যানিধির অন্তরের ভ্রান্তি দূর করলেন। দুই বন্ধু (স্বরূপ দামোদর ও পুণ্ডরীক বিদ্যানিধি) এইভাবে রঙ্গ রসে শ্রীকৃষ্ণের নিত্যসেবা করতে যার যে বাসায় ফিরলেন। বিদ্যানিধি অন্যান্য কার্য্যাদি সমাপন করে বিশ্রাম নিমিত্ত শয়ন করলেন। অন্তর্যামী প্রভু চৈতন্য গোসাই জগন্নাথ রূপ ধারন করে স্বপ্নে প্রেমনিধির নিকটে এলেন। প্রেমনিধি মহাশয় দেখেন জগন্নাথ ও বলরাম বিজয়ীর বেশে উপস্থিত।

 

জগন্নাথ বিদ্যানিধিকে ধরে ক্রোধ ভরে মুখে চড় মারলেন। দুই ভাই মিলে বিদ্যানিধির দুই গালে এতই জোরে চড় মেরেছেন যে বিদ্যানিধি মহাশয়ের দুই গাল এবং জগন্নাথ-বলরামের দুই হস্তের আঙ্গুল সমূহ ফুলে গেছে। দুঃখ পেয়ে প্রেমনিধি, "কৃষ্ণরক্ষা কর ! অপরাধ ক্ষমা কর !" বলে ডাকতে লাগলেন। এই বলে দু'ভা'য়ের পদতলে লুণ্ঠিত হলেন। "গোসাই ! কোন অপরাধে আমাকে মারছেন?" প্রভু বলেন,- "প্রভু বলেন, তোর অপরাধের অন্ত নাই। আমি এবং আমার সেবকের কোন জাতি নাই। তাই এইসব জাতি আচার আমাদের বেলায় প্রয়োজন নয়। তুমি এইসব জান তবুও সেই কথাই বারবার বলছ। তবে কেন এই জাতিনাশা স্থানে রয়েছ? তুমি যদি জাত্যাভিমান রক্ষা করতে চাও তাহলে স্বদেশে ফিরে যাও।

 

আমি যেভাবে এই উৎসবের ব্যবস্থা করেছি, তুমি শাস্ত্র বিচারে ভেবেছ বুঝি, কোন অনাচার হয়েছে। আমাকে পরমব্রহ্ম বলে আবার আমার ভক্তের নিন্দা করছ যে, কেন তারা মাড় যুক্ত কাপড় আমাকে দিয়েছে?" খুব ভীত হয়ে বিদ্যানিধি কাঁদতে লাগলেন ও জগন্নাথের চরণে মস্তক অবনত করলেন। "পাপিষ্ঠের সকল অপরাধ ক্ষমা কর I হে প্রভু ! যে বদনে তোমার ভক্তের প্রতি অবজ্ঞা ভরে হেসেছি, তুমি' ত ভালো করে সে বদনের শাস্তি বিধান করেছ। আজ আমার বড় শুভদিন। তোমার পদ্মহস্তে আমার মুখে চড় মেরে আমাকে খুব সৌভাগ্যবান করেছ"। জগন্নাথদেব উত্তর করলেন,"তোমাকে আমার পরমভক্ত জেনে এই বিশেষ অনুগ্রহ প্রদর্শন করলাম "।

 

স্বপ্নে দুই ভাই রাম ও হরি, বিদ্যনিধিকে দেখাতে এসেছিলেন তার প্রতি কত প্রেম। এই স্বপ্ন দেখে বিদ্যানিধি জেগে উঠে গালে চড়ের বেদনা অনুভব করে হাসতে লাগলেন। জগন্নাথের চড়ে দুই গাল ফুলে উঠেছে। প্রেমনিধি তা দেখে বললেন, "ভাল, ভাল তো! যে অপরাধ করেছি, তাতে এই শাস্তি পেয়ে অল্পে বেঁচেছি।" দেখ! দেখ! বিদ্যানিধির কি মহিমা । সেবকের প্রতি জগন্নাথ দেবের দয়ার চরম সীমা। কৃষ্ণের নিজের পুত্র প্রদুম্নকেও এভাবে কখনো শিক্ষার নিমিত্তে চড় মারেন নি। সীতাদেবী, রুক্মিনী, সত্যভামা কেউই এমন কৃপা পায়নি। যদিও তিনি সাক্ষাতে অপরাধীকে মারেন, কিন্তু স্বপ্নে শাস্তিরূপ প্রসাদ দান করেন, কুত্রাপি পরিদৃষ্ট হয় না। কিন্তু কেউ যদি স্বপ্নে তার পাপের সাজা অথবা কোন সম্পদ পায়, জেগে উঠে দেখে কিছুই নাই। পরন্তু স্বপ্নে শাস্তি প্রদান করলে কেউ জানতে পারে না ।

 

কদাচিৎ কালিন্দীতট - বিপিন - সঙ্গীত - তরলো,

মুদাভীরীনারী - বদনকমলাস্বাদ মধুপঃ।

রমা - শম্ভু - ব্ৰহ্মাসুরপতি গণেশার্চ্চিত পদো,

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে॥১॥

যিনি কখনও কখনও যমুনা তীরস্থ বন মধ্যে, সঙ্গীত করিতে করিতে ভ্রমরের ন্যায় আনন্দে ব্রজগোপাঙ্গণাদের মুখারবিন্দের মধু পান করেন এবং লক্ষ্মী, শিব, ব্ৰহ্মা, ইন্দ্র ও গণেশ প্রভৃতি দেবদেবীগণ যাঁহার পদযুগল অৰ্চনা করিয়া থাকেন সেই প্ৰভু জগন্নাথ আমার নয়ন পথের পথিক হউন। 

 

ভুজে সব্যে বেণুং শিরসি শিখিপিচ্ছং কটিতটে,

দুকূলং নেত্ৰান্তে সহচরি কটাক্ষং বিদধতে।

সদা শ্ৰীমদ্বৃন্দাবন - বসতি লীলা পরিচয়ো,

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে॥২॥

যিনি বামহস্তে বেণু, মস্তকে ময়ুরপুচ্ছ এবং কটিতটে পীতাম্বর ও নয়ন প্ৰান্তে সহচরী গোপালাদিগের প্রতি কটাক্ষপাত করে সর্ব্বদা শ্রীবৃন্দাবন ধামে বাস ও লীলা করিতেছেন, সেই প্ৰভু জগন্নাথ আমার নয়ন পথের পথিক হউন॥২।।

 

মহাম্ভোধেস্তীরে কনকরুচিরে নীলশিখরে,

বসন্ প্রাসাদান্তঃ সহজ বলভদ্ৰেণ বলিনা।

সুভদ্ৰামধ্যস্থঃ সকলসুর সেবাবসরদো,

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে॥৩॥

যিনি মহাসমুদ্রের তীরদেশে, কনকোজ্জ্বল নীলাদ্রির শিখরে প্রাসাদাভ্যন্তরে বলশালী সহোদর শ্রীবলদেব ও সুভদ্রার মধ্যভাগে বাস করছেন, যিনি সমস্ত দেবগণকে সেবা করার নিমিত্ত সুযোগ  প্রদান করিয়াছেন, সেই প্ৰভু জগন্নাথ দেব আমার নয়ন পথের পথিক হউন॥৩।।

 

কৃপা - পারাবারঃ সজল - জলদ - শ্রেণিরুচিরো,

রমাবাণীরামঃ স্ফুরদমল পদ্মেক্ষণমুখৈঃ।

সুরেন্দ্রৈরারাধ্যঃ শ্রুতিগণশিখা - গীতচরিতো,

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে।।৪।।

যিনি কৃপাসিন্ধু তুল্য, যিনি সজল- জলধারা- রুচির কান্তি, লক্ষ্মীসরস্বতী যাঁর বামভাগে অবস্থিতা, যাঁর মুখমণ্ডল অমল কমলের ন্যায় শোভমান, যিনি সমস্ত দেবগণের আরাধ্য - ধন এবং বেদপুরাণ ও শ্রুতি শাস্ত্রসমূহ যাঁহার চরিত্র গান করিতেছেন, সেই প্ৰভু জগন্নাথদেব আমার নয়ন পথের পথিক হউন।।৪।।

 

রথারূঢ়া গচ্ছন পথি মিলিত - ভূদেব - পটলৈঃ

স্তুতিপ্ৰাদুৰ্ভাবং প্রতিপদমুপাকর্ণ্য সদয়ঃ।

দয়াসিন্ধুর্বন্ধুঃ সকলজগতাং সিন্ধু সুতয়া,

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে॥৫॥

রথে আরোহণ করিয়া গমন করিতে থাকিলে পথিমধ্যে ব্ৰাহ্মণগণ মিলিত হয়ে যাঁর স্তব করিতে  থাকেন, সেই স্তব শ্রবণ করিয়া যিনি পদে পদে প্ৰসন্ন হন, যিনি দয়ার সাগর, যিনি নিখিল  জগতের বন্ধু, এবং যিনি সমুদ্রের প্রতি সদয় হইয়া তদুপকূলে বিরাজ করিতেছেন, সেই প্রভু জগন্নাথদেব  আমার নয়ন পথের পথিক হউন॥ ৫।।

 

পরব্রহ্মাপীড়ঃ কুবলয় - দলোৎফুল্ল - নয়নো,

নিবাসী নীলাদ্রৌ নিহিতচরণোহনন্তশিরসি।

রসানন্দী রাধা সরসবপুরালিঙ্গনসুখো,

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে॥৬॥

যিনি পরমার্চ্চনীয় পরব্রহ্ম, যাঁহার নেত্রযুগল নীল - কমল - দলের ন্যায় উৎফুল্ল, যিনি নীলাচলে অবস্থান করিতেছেন, যিনি অনন্তের শিরে পদার্পণ করিয়া রহিয়াছেন, যিনি শ্ৰীরাধিকার রসময় দেহ আলিঙ্গন সুখে সুখী, সেই প্ৰভু জগন্নাথদেব আমার নয়ন পথের পথিক হউন॥৬॥

 

ন বৈ যাচে রাজ্যং ন চ কণক - মাণীক্য - বিভবং,

ন যাচেহহং রম্যাং সকলজন - কাম্যাং বরবধূম্।

সদা কালে কালে প্ৰমথপতিনা গীতচরিতো,

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে॥৭॥

আমি রাজ্য চাহি না, স্বর্ণ মাণীক্যাদি বিভবও প্রার্থনা করি না এবং সকল লোক কমনীয়া মনোহারিণী কামিনীও চাই না, আমি সর্ব্বদা একান্ত মনে প্রার্থনা করি যেন ভূতনাথ যাঁর চরিত্র সর্ব্বক্ষণ কীৰ্ত্তন করেন সেই প্ৰভু জগন্নাথ আমার নয়ন পথের পথিক হউন॥৭॥

 

হর ত্বং সংসারং দ্রুততরমসারং সুরপতে,

হর ত্বং পাপানাং বিততিমপরাং যাদবপতে।

অহো দীনেহনাথে নিহিতচরণো  নিশ্চিতমিদং

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে॥৮॥

হে সুরপতে ! শীঘ্র আমাকে এ অসার সংসার হইতে উদ্ধার কর। হে যাদব পতে ! আমার অশেষ পাপভারও হরণ কর। দীন ও অনাথগণকে যিনি শ্রীচরণে সমৰ্পণ করিয়া থাকেন, সেই প্ৰভু জগন্নাথদেব আমার নয়ন পথের পথিক হউন ৷৷ ৮।।

 

জগন্নাথাষ্টকং পুণ্যং যঃ পঠেৎ প্ৰযতঃ শুচি।

সৰ্ব্বপাপ - বিশুদ্ধাত্মা বিষ্ণুলোকং স গচ্ছতি॥৯॥

যিনি সংযত ও শুদ্ধচিত্তে এই পরম পবিত্র জগন্নাথাষ্টক পাঠ করেন, তিনি সৰ্ব্বপাপ হইতে বিমুক্ত হইয়া বিষ্ণুলোকে গমন করেন॥ ৯।।

 

জয় জয় জগন্নাথ শচীর নন্দন ।

ত্রিভুবন করে যাঁ' র  চরণ বন্দন ।।

নীলাচলে শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধর।

নদীয়া নগরে দণ্ড-কমণ্ডলু কর ।।

কেহো বলে,- 'পুরবেতে রাবণ বধিলা' ।

গোলোকের বৈভবলীলা প্রকাশ করিলা ।।

শ্রীরাধার ভাবে এবে গোরা অবতার ।

''হরে কৃষ্ণ'' নাম গৌর করিলা প্রচার।।

বাসুদেব ঘোষ বলে করি' জোড় হাত ।

যেই গৌর, সেই কৃষ্ণ, সেই জগন্নাথ ।।

💞জয় পতিতপাবন পরম করুণাময় শ্রীজগন্নাথদেবের জয়💞