💐🏵️💞🌺��🌺💞🏵️💐
🌷🌻বৈষ্ণবের ব্যাসপূজা🌷
💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I হরে কৃষ্ণ, আজ - মঙ্গলবার পরমহংস শ্রীল বংশীবদনানন্দ ঠাকুর ও শ্রীল শ্যামানন্দ প্রভুর শুভ আবির্ভাব তিথিপূজা মহামহোৎসব।
💐শ্রীল বংশীবদনানন্দ ঠাকুর💐
''বংশী কৃষ্ণপ্রিয়া যাসীৎ সা বংশীদাস ঠক্কুরঃ
।।''
যিনি কৃষ্ণপ্রিয়া বংশী ছিলেন, তিনি এক্ষণে বংশীদাস ঠাকুর। শ্রীকৃষ্ণের অধরামৃৎস্পৃষ্ট বংশীর সৌভাগ্যের মহিমা শ্রীকৃষ্ণপ্রিয়া গোপীগণ কীর্ত্তন করিয়াছেন। ব্রজের সবই চিন্ময়। সেই ব্রজের চিন্ময় বংশীর অবতার শ্রীল বংশীবদনানন্দ ঠাকুর।
শ্রীল বংশীবদনানন্দ ঠাকুর বৈষ্ণব সমাজে পাঁচটী নামে পরিচিত। বংশীবদন, বংশীদাস, বংশী, বদন ও বদনানন্দ। ইনি একজন প্রসিদ্ধ পদকর্ত্তা ছিলেন। ১৪১৬ শকে মধুপূর্ণিমা শুভ তিথিবাসরে (চৈত্র পূর্ণিমা তিথিতে) ইনি আবির্ভূত হন। ইঁহার পিতার নাম শ্রীছকড়ি চট্টোপাধ্যায়, জননী শ্রীচন্দ্রকলা দেবী। এইরূপ কথিত হয় যে ঠাকুরের আবির্ভাব কালে শ্রীমন্মহাপ্রভু ও শ্রী অদ্বৈতাচার্য্য প্রভু উপস্থিত ছিলেন। শ্রীমন্মহাপ্রভুর সন্ন্যাস গ্রহণের পরে শ্রী বংশীবদন ঠাকুর শ্রীশচীমাতা ও শ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর রক্ষক সেবকরূপে নিযুক্ত হইয়াছিলেন।
'বংশী শিক্ষা' গ্রন্থে এইরূপ লিখিত আছে,-
''চৌদ্দ শত ষোল শকে মধু পূর্ণিমায়
।
বংশীর প্রকটোৎসব সর্ব্বলোকে গায়
।।''
'শ্রীপাট পর্যটনে',-
''কুলিয়া পাহাড়পুর দুই ত নির্দ্ধার
।
বংশীবদন, কবিদত্ত, সারঙ্গঠাকুর
।।
এই দুই গ্রামে তিনি সতত বিহার
।
কুলিয়া পাহাড়পুর নাম খ্যাত হয়
।।''
ইঁহার শ্রীপাট কোলদ্বীপে (বর্ত্তমানে শহর নবদ্বীপে) বা কুলিয়া পাহাড়পুরে। শ্রীল বংশীবদন ঠাকুর গার্হস্থ্যলীলা করিয়াছিলেন। শ্রীনিত্যানন্দ দাস ও শ্রীচৈতন্য দাস তাঁহার দুই পুত্র। শ্রীল বংশীবদন ঠাকুরের সেবিত বিগ্রহ শ্রীপ্রাণবল্লভ
। পরে শ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর ইচ্ছাক্রমে ইনি শ্রীগৌরাঙ্গ বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন। ঠাকুরের পূর্ব্ব পুরুষগণের প্রতিষ্ঠিত শ্রীগোপীনাথ বিগ্রহ তথায় পূর্ব্বে বিরাজিত ছিলেন। ইনি শেষ জীবনে বিল্বগ্রামে যাইয়া অবস্থান করিয়াছিলেন। বিল্বগ্রামের ভট্টাচার্য্য ব্রাহ্মণগণ ইঁহারই বংশধর বলিয়া কথিত।
💐শ্রীল শ্যামানন্দ প্রভু💐
শ্রীশ্যামানন্দ প্রভু শ্রীকৃষ্ণলীলায় দ্বাদশ গোপালের অন্যতম সুবল সখার অনুগতের অনুগত পার্ষদ ছিলেন।শ্রীগৌরীদাস পণ্ডিতের কৃষ্ণলীলার পূর্ব্ব পরিচয় সুবল সখা। গৌরীদাস পণ্ডিতের শিষ্য হৃদয়ানন্দ (হৃদয় চৈতন্য),হৃদয়ানন্দের শিষ্য শ্যামানন্দ। যাঁহাকে ইহ সংসারে লোকে শ্রীমদ হৃদয়ানন্দের প্রিয় শিষ্য বলিয়া কীর্ত্তন করে,যিনি সুবলসখার অনুগত বলিয়া স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণচন্দ্রের প্রিয়তম জনের অনুশিষ্য,সেই রসিকেন্দ্র মুকুটমণি শ্রীযুক্ত শ্যামানন্দ প্রভু শ্রীরাধামাধবের প্রিয় অন্তরঙ্গ - লীলাবিলাস সেবায় আমার অনুরাগ উৎপত্তি করিয়া আমার চিত্তে অহর্নিশ বিরাজিত থাকুন।
শ্রীশ্যামানন্দ প্রভু ১৪৫৬ শকে মধুপূর্ণিমা তিথিবাসরে (চৈত্রপূর্ণিমা) মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত খড়্গপুর রেলস্টেশনের নিকটবর্ত্তী ধারেন্দা বাহাদুরপুর গ্রামে পিতা শ্রীকৃষ্ণ মণ্ডল ও মাতা শ্রীদুরিকাকে অবলম্বন করিয়া আবির্ভূত হইয়াছিলেন। শ্যামানন্দ প্রভুর পিতা শ্রীকৃষ্ণ মণ্ডলের সুবর্ণরেখা নদীর তীরে দণ্ডেশ্বর গ্রামে নিবাসস্থান ছিল।ধারেন্দা, বাহাদুরপুর, রায়নী বা রোহিণী, গোপীবল্লভপুর ও নৃসিংহপুর এই পাঁচটি শ্রীপাট শ্যামানন্দ প্রভুর শিষ্যগণের প্রিয় স্থান। শ্রীশ্যামানন্দ প্রভু সদগোপ (কেবট জাতি) কুলে আবির্ভূত হইয়াছিলেন। বৈষ্ণব স্বরূপতঃ নির্গুণ।
তিনি
যে কোন কুলে আবির্ভূত হইতে পারেন। নিম্নকুলে আবির্ভাবলীলা দেখিয়া বৈষ্ণবকে জাতিবুদ্ধি করিলে নরকপ্রাপ্তি ঘটে ।
''অর্চ্চ্যে বিষ্ণৌ শিলাধীঃ গুরুষু নরমতি বৈষ্ণবে জাতিবুদ্ধির্বিষ্ণোবা,
বৈষ্ণবানাং কলিমলমথনে পাদতীর্থে হম্বুবুদ্ধিঃ ।
শ্রীবিষ্ণোর্নাম্নি মন্ত্রে সকলকলুষহে শব্দসামান্য বুদ্ধিবিষ্ণৌ,
সর্ব্বেশ্বরেশে তদিতরস মধীর্যস্য বা নারকী সঃ ।।''
''নীচ - জাতি নহে কৃষ্ণভজনে অযোগ্য
।
সৎকুল - বিপ্র নহে ভজনের যোগ্য
।।
যেই ভজে,সেই বড়,অভক্ত - হীন, ছার
।
কৃষ্ণভজনে নাহি জাতি - কুলাদি বিচার
।।'' (চৈ: চ: অন্ত ৪/৬৬)
শ্যামানন্দ প্রভুর আবির্ভাবের পূর্ব্বে পুত্রকন্যা গত হইলে পিতামাতা সংকল্প করিলেন এইবার যে পুত্রসন্তান হইবে তাহাকে বিষ্ণুপাদপদ্মে সমর্পণ করিবেন। পিতামাতা দুঃখ পাওয়ার পর শ্যামানন্দকে পুত্ররূপে পাইয়া দুঃখের সহিত পালন করিয়াছিলেন বলিয়া প্রথমে তাঁহার নাম 'দুঃখী' রাখিয়াছিলেন।
শ্রী শ্যামানন্দ প্রভু শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য - নিত্যানন্দের প্রিয় গৌরীদাস পণ্ডিতের শিষ্য হৃদয়চৈতন্যর নিকট অম্বিকা কালনা যাইয়া দীক্ষা গ্রহণ করিয়াছিলেন। তাহার দীক্ষা নাম হইল 'দুঃখী কৃষ্ণ দাস'। হৃদয় চৈতন্য প্রভু দুঃখী কৃষ্ণদাসকে বৃন্দাবনে যাইয়া ভজন করিতে আদেশ করিলে দুঃখী কৃষ্ণদাস গুরুদেবের বিরহে ব্যাকুল হইলেও গুরুদেবের আজ্ঞা পালনের জন্য নবদ্বীপ, গৌড় মণ্ডল দর্শন করতঃ বৈষ্ণবগণের কৃপা প্রার্থনা করিয়া নানা তীর্থ ভ্রমণান্তে বৃন্দাবন পৌঁছিলেন। তথায় রাধা - শ্যামসুন্দরের আরাধনায় নিমগ্ন হইলেন। বৈষ্ণব জগতের শ্রেষ্ঠ পাত্ররাজ ষড় গোস্বামীর অন্যতম শ্রীজীব গোস্বামীর আনুগত্যে দুঃখী কৃষ্ণদাস ভক্তিশাস্ত্র অধ্যয়ন করিতে লাগিলেন। শ্রীনিবাস, নরোত্তম ও দুঃখী কৃষ্ণদাস বৃন্দাবনে শ্রীজীব গোস্বামীর নিকট শাস্ত্র অধ্যয়ন করিয়াছিলেন।
শ্রীজীব গোস্বামী শ্রীনিবাস, নরোত্তম ও দুঃখী কৃষ্ণদাসকে যথাক্রমে আচার্য্য, ঠাকুর ও শ্যামানন্দ নাম প্রদান করিয়াছিলেন। শ্রীল নরোত্তম ঠাকুর উত্তরবঙ্গে এবং শ্রীল শ্যামানন্দ প্রভু ওড়িষ্যায় গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম্ম প্রচার করিয়াছিলেন। পূর্ব্বে মেদিনীপুর জেলা ওড়িষ্যা সাম্রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। এই হেতু মেদিনীপুর শহরে শ্যামানন্দ প্রভুর পুতস্মৃতি সংরক্ষণ কল্পে তথায় সংস্থাপিত মঠের নাম রাখা হইয়াছে ''শ্রীশ্যামানন্দ গৌড়ীয় মঠ।'' শ্যামানন্দ প্রভু রাধারাণীর কত প্রিয় ছিলেন বৃন্দাবনে একটি অলৌকিক ঘটনা দ্বারা তাহা সুনিশ্চিত রূপে প্রমাণিত হয়। শ্রীজীব গোস্বামীর আদেশে গৌড়মণ্ডলে যাওয়ার পূর্ব্বে বৃন্দাবনে এই অদ্ভুতলীলা সংঘটিত হয়।
একদিন শ্রীশ্যামানন্দ প্রভু বৃন্দাবনে প্রেমাবিষ্ট হইয়া রাসমণ্ডলে মার্জ্জন করিতেছেন, এমন সময় শ্রীরাধারাণীর কি অলৌকিক কৃপা তিনি রাধারাণীর শ্রীচরণের নূপুর তথায় প্রাপ্ত হইলেন। অত্যন্ত উল্লাসভরে শ্যামানন্দ প্রভু নূপুরটিকে ললাটে স্পর্শ করাইলেন, তাহাতে ললাটে নূপুরাকৃতি তিলকের প্রাকট্য হইল। শ্যামানন্দ পরিবারে নূপুরতিলক প্রবর্ত্তিত হইয়াছে। শ্রীনরোত্তম ঠাকুর ও শ্রীশ্যামানন্দ প্রভু মুখ্যতঃ কীর্ত্তনের দ্বারাই প্রচার করিয়াছিলেন। উৎকলদেশে শ্যামানন্দ প্রভুর প্রচার ফলে বহু যবনও তাঁহার শিষ্য হইয়াছিলেন। শ্যামানন্দ প্রভুর অসংখ্য শিষ্যের মধ্যে শ্রীরসিক - মুরারি প্রধান ছিলেন। শ্রীশ্যামানন্দ প্রভু শ্রীদামোদর নামক একজন যোগীকে কৃপা করিয়া ভক্তিরসে প্রবর্ত্তিত করিয়াছিলেন।
শ্রীরসিক - মুরারি ও শ্রীদামোদর আদি ভক্তগণকে লইয়া শ্যামানন্দ প্রভু ধারেন্দা গ্রামেতে যে মহামহোৎসব করিয়াছিলেন, তাঁহার মহিমা আজও শ্রীশ্যামানন্দ পরিবারে ভক্তগণ কীর্ত্তন করিয়া থাকেন
। শ্রীশ্যামানন্দ প্রভু তাঁহার প্রধান শিষ্য শ্রীরসিকানন্দদেব গোস্বামীকে গোপীবল্লভ পুরে তাঁহার সেবিত শ্রীগোবিন্দের সেবা সমর্পণ করিয়াছিলেন। বৃন্দাবনে শ্যামানন্দ প্রভুর সেবিত বিগ্রহ রাধাশ্যামসুন্দর তাঁহার অধস্তন কতৃক অধুনা রাধাশ্যামসুন্দর মন্দিরে সেবিত হইতেছেন। বৃন্দাবনে গৌড়ীয় বৈষ্ণবগণের উক্ত মন্দির অন্যতম দর্শনীয়। শ্রীশ্যামানন্দ প্রভু শেষ জীবনে উৎকলে নৃসিংহপুর গ্রামে থাকিয়া বৈষ্ণব - ধর্ম্ম প্রচার করিয়াছিলেন। ১৫৫২ শকে আষাঢ়ী কৃষ্ণ - প্রতিপদ তিথিতে শ্রীল শ্যামানন্দ প্রভু এই নৃসিংহপুর গ্রামেই তিরোধান লীলা করেন।
'রাধাকৃষ্ণ’ বল্ বল্ বলরে সবাই ।
(এই) শিক্ষা দিয়া, সব নদীয়া ফিরছে নেচে’ গৌর-নিতাই ।
(মিছে) মায়ার বশে', যাচ্ছো ভেসে, খাচ্ছো হাবুডুবু, ভাই ।।
(জীব) কৃষ্ণদাস, এ বিশ্বাস, কর'লে ত’ আর দুঃখ নাই ।
(কৃষ্ণ) বলবে যবে, পুলক হ’বে, ঝ'রবে আঙ্খি, বলি তাই ।।
(রাধা-) কৃষ্ণ বল, সঙ্গে চল, এইমাত্র ভিক্ষা চাই ।
(যায়) সকল বিপদ ভক্তিবিনোদ, বলেন, যখন ও - নাম গাই ।।
'রাধাকৃষ্ণ’ বল্ বল্ বলরে সবাই ।
No comments:
Post a Comment