💐🏵️💞🌺��🌺💞🏵️💐

🌷বৈষ্ণবের বিরহ তিথি🌷

💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I হরে কৃষ্ণ, আজ বিশেষ শুভদা তিথি। আজ পরম বৈষ্ণব শ্রীল লোকনাথ গোস্বামীর শুভ বিরহ তিথি পূজা।

 

'লোকনাথাখ্যা - গোস্বামী শ্রীলীলামঞ্জরী পুরা'  (গৌর গণদীপিকা ১৮৭)

 

শ্রীকৃষ্ণলীলায় যিনি লীলামঞ্জরী সখী ছিলেন, তিনি গৌরলীলাপুষ্টির জন্য শ্রীলোকনাথ গোস্বামীরূপে প্রকটিত হইয়াছিলেন। শ্রীঅদ্বৈতাচার্যের শিষ্য শ্রীপদ্মনাভ চক্রবর্ত্তী এবং সীতাদেবীর পুত্ররূপে বাংলাদেশের যশোর জেলার অন্তর্গত তালখডি গ্রামে জন্ম হয় শ্রীলোকনাথ গোস্বামীজীর। তিনি অদ্বৈতাচার্যের পাঠশালাতে ব্যাকরণাদি অধ্যয়ণ করতেন। শ্রীগৌরসুন্দরের সঙ্গে তাঁর প্রথম মিলন ওখানে হয়। ১৪৩১ শকাব্দে অগ্রহায়ণ মাসে শ্রীলোকনাথ গোস্বামী গৃহস্থ আশ্রম পরিত্যাগ করতঃ শ্রীনবদ্বীপ ধামে শ্রীমন্মহাপ্রভুর নিকট উপনীত হইলে শ্রীমন্মহাপ্রভু তাঁহাকে সঙ্গে সঙ্গে শ্রীধাম বৃন্দাবন যাইবার জন্য আদেশ প্রদান করিলেন।

 

শীঘ্র সন্ন্যাস গ্রহণ করিয়া বৃন্দাবনে যাইবেন, শ্রীমন্মহাপ্রভুর  এইরূপ সংকল্প হওয়ায় লোকনাথ গোস্বামীকে বৃন্দাবনে পাঠাইতে মহাপ্রভু অভিলাষী হইলেন। লোকনাথ গোস্বামী মহাপ্রভুর সন্ন্যাস গ্রহণ, তাঁহার অদর্শন, মহাপ্রভুর সন্ন্যাস ভক্তগণ কিভাবে সহ্য করিবেন চিন্তা করিয়া ব্যাকুলভাবে ক্রন্দন করিতে লাগিলেন। শ্রীমন্মহাপ্রভু লোকনাথ গোস্বামীর বিরহ ব্যাকুলতা দেখিয়া তাঁহাকে আলিঙ্গন করতঃ গোপনে অনেক প্রবোধ বাক্যের দ্বারা বুঝাইলে লোকনাথ গোস্বামী মহাপ্রভুর ইচ্ছাতে আত্মসমর্পণ করিলেন। মহাপ্রভুর অনেক নির্দেশ নিয়ে লোকনাথ গোস্বামীজী প্রভুর সান্নিধ্যে ছেড়ে বৃন্দাবনের পথে চলতে লাগলেন। মন চাই না যেতে প্রাণগৌরকে ছেড়ে, তবে প্রভুর নির্দেশ মানতেই হবে। সাথে চলেন ভূগর্ভ গোস্বামীজী।

 

বৃন্দাবনে পৌঁছে লোকনাথ গোস্বামীজী সর্বক্ষণ মহাপ্রভু চিন্তা করিয়া অশ্রুবর্ষণ করিতে লাগিলেন এবং মহাপ্রভুর দর্শনের জন্য অত্যন্ত ব্যাকুল হইয়া পড়িলেন।  তিনি যখন শুনিলেন মহাপ্রভু সন্ন্যাস গ্রহণ করতঃ নীলাচলে গিয়াছেন ও তথা হইতে দক্ষিণ ভারত যাত্রা করিয়াছেন, তিনিও মহাপ্রভুর দর্শন আকাঙ্ক্ষায় দক্ষিণে ছুটিয়া চলিলেন। সেখানে পৌঁছে জানতে পারলেন মহাপ্রভু তো বৃন্দাবন চলে গেলেন, তিনি আবার বৃন্দাবনের দিকে যাত্রা শুরু করলেন। বৃন্দাবনে পৌঁছিয়া পুনঃ শুনিলেন মহাপ্রভু প্রয়াগে আছেন। লোকনাথ গোস্বামী হতাশ হইয়া পুনঃ প্রয়াগ যাত্রার উদ্যোগ করিলে মহাপ্রভু স্বপ্নে দর্শন দিয়া এইভাবে ছোটাছোটি করিতে নিষেধ করিলেন এবং বৃন্দাবনে থাকিয়া ভজন করিতে বলিলেন।

 

মহাপ্রভু নির্দেশ মতো লোকনাথ গোস্বামী ব্রজমণ্ডল ভ্রমণ করিতে করিতে একসময়ে তিনি    খদির বনে আসিলেন। মহাপ্রভু সব স্বপ্নাদেশ করছিল যেই ভাবে, সেইভাবে তিনি ছত্রবনের কাছে উমরাও নামে গ্রামে এলেন। সেখানে শ্রীকিশোরী কুণ্ডের দর্শন হল গোস্বামীজীর। শ্রীকিশোরী কুণ্ডের দর্শন মাত্র গোস্বামীজীর ভগবত প্রেমের অদ্ভুত ভাব হল। কিছুদিন ওখানে নির্জন স্থানে ভজন করতে করতে হঠাৎ করে তাঁর মনে প্রবল আকাঙ্ক্ষা হইল শ্রীরাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ সেবা করিবেন। লোকনাথ গোস্বামীর উৎকন্ঠার কথা জানিয়া ভক্তাধীন ভগবান নিজেই আসিয়া বিগ্রহ সমর্পণ করিয়া বিগ্রহের নাম রাধাবিনোদ ইহা জানাইয়া অদৃশ্য হইলেন।

 

লোকনাথ গোস্বামী কে এই বিগ্রহ দিয়া গেলেন চিন্তায় ব্যাকুল হইলেন। তখন শ্রীরাধাবিনোদ বিগ্রহ লোকনাথের প্রতি মধুরদৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া হাঁসিয়া বলিলেন,- 'আমি এই উমরাও গ্রামের কিশোরী কুণ্ডের তটে থাকি, তোমার উৎকণ্ঠা দেখিয়া আমি নিজেই তোমার নিকট আসিয়াছি, আমাকে আবার কে আনিবে ? আমার ক্ষুধা লাগিয়াছে, শীঘ্র আমাকে ভোজন করাও।' উহা শুনিয়া লোকনাথ গোস্বামীর দুই নেত্রে অশ্রু প্রবাহিত হইতে লাগিল। তিনি শীঘ্র রন্ধন করিয়া রাধাবিনোদকে পরিতৃপ্তির সহিত ভোজন করাইলেন। পরে পুষ্পশয্যা রচনা করিয়া তাঁহাকে শয়ন করাইয়া পল্লবের দ্বারা বাতাস এবং মনের আনন্দে পাদ সম্বাহন করিলেন।

 

রাধাবিনোদকে কোথায় রাখিবেন চিন্তা করিয়া একটি ঝোলা নির্ম্মাণ করিলেন, তাহাই রাধাবিনোদের সুন্দর মন্দির হইল। কিশোরীকুণ্ডে কিছুদিন অবস্থান করার পর লোকনাথ গোস্বামী বৃন্দাবন আগমণ করলে গোস্বামীরা শ্রীরাধাবিনোদজীকে দেখে অতি যত্ন করে রেখে দিলেন। লোকনাথ গোস্বামীজী বৃক্ষের তলে রেখে অতি প্রেমে পুজা সেবা করতে লাগল। পরে শ্রীবিগ্রহের কৃপায় মন্দির তৈরি করা হয় শ্রীরাধাবিনোদজী জন্য। তারপর আওরঙ্গজেবের সেনাপতি কালাপাহাড়ের আতঙ্কে শ্রীরাধাবিনোদজী জয়পুরে ত্রিপুলিয়া বাজারের সম্মুখে স্থানান্তরিত হয়। এখন যে বিগ্রহ আছে তা বৃন্দাবনের শ্রীগোকুলানন্দ মন্দিরে শ্রীগোকুলানন্দজীর ডানদিকে অবস্থিত।

 

নরোত্তম দাস ঠাকুরের গুরুদেব কে ছিলেন ও কিভাবে তিনি দীক্ষা পান সে সম্বন্ধে জেনে নিন?

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নিত্য পার্ষদ শ্রীলোকনাথ গোস্বামী। মহাপ্রভু, লোকনাথ গোস্বামী ও ভূগর্ভ গোস্বামীকে বৃন্দাবনের লুপ্ত তীর্থ উদ্বারের দায়িত্ব দেন। কয়েক বছর পর ষড় গোস্বামীগণ এসে এর কাজ শুরু করেন। লোকনাথ গোস্বামী বৃন্দাবনে রাধাগোকুলানন্দ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুর তার একমাত্র শিষ্য। নরোত্তম দাস ঠাকুর কীভাবে বৃন্দাবনে লোকনাথ গোস্বামীর কৃপা লাভ করেছিলেন তাও প্রেম বিলাসে বর্ণিত হয়েছে। তিনি লোকনাথ গোস্বামীর নিকট দীক্ষা নেন শ্রাবন পূর্ণিমায়। শ্রী চৈতন্যমহাপ্রভুর সাক্ষাৎ শিষ্য বা পার্ষদরূপে পরিগণিত শ্রীল লোকনাথ গোস্বামী গৌড়ীয় বৈষ্ণব গণের মধ্যে সর্ব প্রথম শ্রীচৈতন্যমহাপ্রভুর দ্বারা আদিষ্ট হয়ে শ্রীল ভূগর্ভ গোস্বামীকে সঙ্গে নিয়ে বৃন্দাবনে এসেছিলেন। তিনি ভজনানন্দী বৈষ্ণব ছিলেন।

 

শ্রীলোকনাথ গোস্বামী তীব্র বৈরাগ্যের সাথে শ্রীব্রজমন্ডলে ভজন করেছিলেন। কাউকে শিষ্য করবেন না এমন সংকল্প ছিল তার। শ্রীল নরোত্তর দাস ঠাকুরের সংকল্প ছিল তিনি লোকনাথ গোস্বামীর শিষ্য হইবেন। নরোত্তম দাস ঠাকুর রাজপুত্র হয়েও লোকনাথ গোস্বামীর কৃপা লাভের জন্য বৃন্দাবনে তার বাহ্য কৃত্যের স্থানটি প্রতিদিন মাঝরাতে গিয়ে পরিষ্কার করে রাখতেন এবং হাত ধোয়ার জন্য ভালো মাটি ও জল রেখে দিতেন। শ্রী লোকনাথ গোস্বামী প্রতিদিন বাহ্য কৃত্য স্থানটি নির্মল ও দুর্গন্ধমুক্ত দেখে আশ্চর্যান্বিত হলেন। কে এমন কাজ করছে তা জানার জন্য শৌচস্থানের কাছে গোপনে অবস্থান করে হরিনাম করতে লাগলেন। মাঝরাতে একজনকে প্রবেশ করতে দেখে তিনি তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করলেন। তখন নরোত্তম দাস ঠাকুর লোকনাথ গোস্বামীর চরণে পতিত হয়ে কাঁদতে লাগলেন এবং তার কাছে দীক্ষা প্রার্থনা করলেন।

 

রাজপুত্র নরোত্তম দাস ঠাকুরের দৈন্য ও আর্তি দেখে স্নেহাদ্রচিও হয়ে লোকনাথ গোস্বামী নরোত্তম দাস ঠাকুরকে দীক্ষা প্রদান করলেন। শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুরই তার একমাত্র শিষ্য।আষাঢ় মাসের কৃষ্ণপক্ষের  অষ্টমীতে শূরীল লোকনাথ গোস্বামীজী নিত্যলীলাতে প্রবিষ্ট হন। নিত্যবৃন্দাবনে নিত্যলীলাতে শ্রীলোকনাথ গোস্বামীজী হলেন শ্রীমতি রাধারাণীর "শ্রীমঞ্জুলা মঞ্জুরী" যিনি প্রিয়া-প্রিয়তমের বস্ত্র যত্ন করে রাখা এবং প্রযোজনে পরিয়ে দেয়া রাধা ও শ্যামকে, নিকুঞ্জে প্রধান সেবা ছিল তাঁর। শ্রীবৃন্দাবনে "শ্রীরাধা গোকুলানন্দ" মন্দিরে শ্রীল লোকনাথ গোস্বামীজীর সমাধি। তাঁর দ্বারা সেবিত শ্রীরাধাবিনোদজী শ্রীগোকুলানন্দজী মন্দিরে সেবিত হয়।  

🌷শ্রীরাধাবিনোদ জীউ কি জয়🌷শ্রীল লোকনাথ গোস্বামী কি জয়🌷