💐💥🏵️🌺🌷🌺🏵️💥💐

🎇🎆শুভ দীপাবলি🎆🎇

💐💥🏵️🌺🌷🌺🏵️💥💐

শ্রীশ্রীগুরুগৌরাঙ্গজয়তঃ

সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌরভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্তকোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম। আজ বিশেষ শুভদা তিথি। আত্মাকে প্রজ্বলিত করে পরিশুদ্ধ করে সেই পরমব্রহ্মে লীন হওয়ার পূণ্যতিথি এই দীপাবলি উৎসব উপলক্ষে  সকলকে জানাই শুভ দীপাবলির আন্তরিক কৃষ্ণপ্রীতি শুভেচ্ছা।

 

 ''তমসো মা জ্যোতির্গময়''

উপনিষদের একটি প্রার্থনা,- ''অন্ধকার থেকে আমাকে আলোকে নিয়ে চলো''। দীপাবলির অর্থ হল ‘আলোকের শ্রেণী’। আলোক, যা অন্ধকার দূর করে, অজ্ঞানতার অন্ধকার, অশান্তি, অসহিষ্ণুতা, অনুৎসাহ, দুঃখ-দুর্দশা বা বৃথা অহঙ্কারের অন্ধকার।

 

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব “দীপাবলি। পিতৃপক্ষে যেসব পূর্বপুরুষগণ মর্ত্যে আগমন করেন, দীপাবলিতে তাঁদের পথ প্রদর্শনার্থে উল্কা জ্বালানো হয়। ঐ দিন আলোকসজ্জা ও বাজি পোড়ানো হয় এবং আকাশ প্রদীপ দেওয়া হয়। দীপাবলি হল আলোর উৎসব। দুর্গাপূজার আনন্দ- উচ্ছ্বাসের পর  বিজয়ার আনন্দ-বিদায়ে অবচেতনে হলেও যে বিয়োগ-বিধূর চেতনায় মন আবিষ্ট হয়, দীপাবলির আলোকে তা আবার উজ্জীবিত হয়ে ওঠে । বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে দীপাবলিতে কালীপূজা হয়। এখানে দীপাবলি আর কালী পূজা একসূত্রে গাঁথা। অন্যান্য অঞ্চলে এই দিনে গণেশ পূজা এবং লক্ষ্মী পূজাও করা হয়।

 

জৈন ধর্মের প্রবর্তক মহাবীর দীপাবলির দিনেই মোক্ষ বা নির্বাণ লাভ করেন। দীপাবলির দিনেই শিখ ধর্মগুরু গুরু হরগোবিন্দ সিং সম্রাট জাহাঙ্গীরকে পরাজিত করেন। যে জন্যে শিখ এবং জৈন ধর্মাবলম্বীদেরও অন্যতম অনুষ্ঠান দীপাবলি। তবে ইতিহাসের সাক্ষ্য অনুযায়ী ত্রেতাযুগে শ্রীরামচন্দ্র রাবণ বধ করে চৌদ্দ বছরের বনবাস শেষে এইদিন অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন করেন। শ্রীরামচন্দ্রের বন-গমনে, তাদের একান্ত  প্রিয় প্রভুর বিরহে  অযোধ্যা - বাসীগণের অন্তরে দীর্ঘকালীন অন্ধকারের ছায়া নেমে আসে । ‘বিপ্রলম্ভ’ ও ‘সম্ভোগ’  অর্থাৎ ‘বিরহ’ ও ‘মিলন’   প্রেমভক্তির দুটি অঙ্গ ।

 

দীর্ঘ চৌদ্দ বছরের বিরহের পর প্রভুর সাথে মিলনের দিনটিতে অযোধ্যা বাসীগণের অন্তর থেকে উৎসারিত প্রেমের প্রকাশ এই দীপাবলি। প্রজারা খুশীতে  সারা রাজ্য জুড়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে ও আতসবাজি পুড়িয়ে তাদের হৃদয়ের উচ্ছ্বাস ব্যক্ত করলেন । ত্রেতাযুগে রাম-রাজ্যে ঘটে যাওয়া সেই অধ্যায়কে সামনে রেখেই বর্তমানে বিশ্বজুড়ে দীপাবলি উৎসব পালিত হয়। দীপাবলি মূলত পাঁচদিন ব্যাপী উৎসব। দীপাবলির আগের দিনের চতুর্দশীকে (এই দিনকে দীপাবলি উৎসবের প্রথম দিন বলা হয়) বলা হয় ‘ভূত চতুর্দশী’  বা ‘নরক চতুর্দশী’; এই দিনে শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর স্ত্রী সত্যভামা নরকাসুরকে বধ করেছিলেন।

 

চতুর্দশীর পরে অমাবস্যা তিথি এই উৎসবের দ্বিতীয় দিন, কিন্তু এই দিনই মূখ্য হিসেবে উদযাপিত হয়। এই অমাবস্যার রাতেই শাক্ত ধর্মের অনুসারীগণ শক্তিদেবী কালীর পূজা করেন। তাছাড়া এই দিনে লক্ষ্মী ও অলক্ষ্মী পূজাও করা হয়। কথিত আছে এই দিনে ধন- সম্পদের দেবী লক্ষ্মী বরদাত্রী রূপে ভক্তদের মনোকামনা পূর্ণ করেন। বিষ্ণুপুরাণ মতে, বিষ্ণুর বামনাবতার অসুর বলিকে পাতালে পাঠান; দীপাবলির দিনে অন্ধকার ও অজ্ঞতা বিদূরিত করতে, ভালবাসা ও জ্ঞানের শিখা প্রজ্বলিত করতে অসুর বলিকে পৃথিবীতে এসে লক্ষ লক্ষ প্রদীপ জ্বালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। দীপাবলির তৃতীয় দিন  কার্তিকা শুদ্ধ; এই দিন অসুর বলিরাজ  নরক থেকে বেরিয়ে পরিশুদ্ধ হয়ে বিষ্ণুর বরে পৃথিবী শাসন করেন।

 

চতুর্থদিন হচ্ছে ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া; একে যম - দ্বিতীয়াও বলা হয়; এই দিন বোনেরা ভাইকে নিমন্ত্রণ করে, ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় কপালে ফোঁটা দেয়। আলোক সজ্জার এই উৎসব অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোক জ্বালাবার দিন। নিজের অন্তরের - বাহিরের সকল অজ্ঞতা ও তমঃকে দীপ শিখায় নাশ করার দিন, প্রেম - প্রীতি-ভালবাসার চিরন্তন শিখা প্রজ্বলিত করার দিন। দেশ থেকে দেশে, অঞ্চল থেকে অঞ্চলে  এই দিনের মাহাত্ম্য ভিন্ন ভিন্ন; তবু মূল কথা এক। আর আধ্যাত্মিকতার গভীর দর্শনে এই দিন - আত্মাকে প্রজ্বলিত করে পরিশুদ্ধ করে সেই পরমব্রহ্মে লীন হওয়ার পূণ্যতিথি এই দীপাবলি উৎসব।

 

(১)

গোপীনাথ, মম নিবেদন শুন ।

বিষয়ী দুর্জ্জন, সদা কামরত, কিছু নাহি মোর গুণ ।।

গোপীনাথ, আমার ভরসা তুমি ।

তোমার চরণে, লইনু শরণ, তোমার কিঙ্কর আমি ।।

গোপীনাথ, কেমনে শোধিবে মোরে ।

না জানি ভকতি, কর্ম্মে জড়মতি, পড়েছি সংসার - ঘোরে ।।

গোপীনাথ, সকল তোমার মায়া ।

নাহি মম বল, জ্ঞান সুনির্ম্মল, স্বাধীন নহে এ কায়া ।।

গোপীনাথ, নিয়ত চরণে স্থান ।

মাগে এ পামর, কাঁদিয়া কাঁদিয়া, করহে করুণা দান ।।

গোপীনাথ, তুমি ত' সকলি পার ।

দুর্জ্জনে তারিতে, তোমার শকতি, কে আছে পাপীর আর ।।

গোপীনাথ, তুমি কৃপা - পারাবার ।

জীবের কারণে, আসিয়া প্রপঞ্চে, লীলা কৈলে সুবিস্তার ।।

গোপীনাথ, আমি কি দোষে দোষী ।

অসুর - সকল, পাইল - চরণ, বিনোদ থাকিল বসি' ।।

(২)

গোপীনাথ, ঘুচাও সংসার - জ্বালা ।

অবিদ্যা যাতনা, আর নাহি সহে, জনম - মরণ মালা ।।

গোপীনাথ, আমি ত' কামের দাস ।

বিষয়-বাসনা, জাগিছে হৃদয়ে, ফাঁদিছে করম ফাঁস ।।

গোপীনাথ, কবে বা জাগিব আমি ।

কামরূপ অরি, দূরে তেয়াগিব, হৃদয়ে স্ফুরিবে তুমি ।।

গোপীনাথ, আমি ত' তোমার জন ।

তোমারে ছাড়িয়া, সংসার ভজিনু, ভুলিয়া আপন ধন ।।

গোপীনাথ, তুমি ত' সকলি জান ।

আপনার জনে, দণ্ডিয়া এখন, শ্রীচরণে দেহ স্থান ।।

গোপীনাথ, এই কি বিচার তব ।

বিমুখ দেখিয়া, ছাড় নিজ-জনে, না কর করুণা - লব ।।

গোপীনাথ, আমি ত' মূরখ অতি ।

কিসে ভাল হয়, কভু না বুঝিনু, তাই হেন মম গতি ।।

গোপীনাথ, তুমি ত' পণ্ডিতবর ।

মুঢ়ের মঙ্গল, তুমি অন্বেষিবে, এ দাসে না ভাব' পর ।।

(৩)

গোপীনাথ, আমার উপায় নাই ।

তুমি কৃপা করি', আমারে লইলে, সংসারে উদ্ধার পাই ।।

গোপীনাথ, পড়েছি মায়ার ফেরে ।

ধন - দারা সুত, ঘিরেছে আমারে, কামেতে রেখেছে জেরে ।।

গোপীনাথ, মন যে পাগল মোর ।

না মানে শাসন, সদা অচেতন, বিষয়ে র'য়েছে ঘোর ।।

গোপীনাথ, হার যে মেনেছি আমি ।

অনেক যতন, হইল বিফল, এখন ভরসা তুমি ।।

গোপীনাথ, কেমনে হইবে গতি ।

প্রবল ইন্দ্রিয় - , বশীভূত মন, না ছাড়ে বিষয়-রতি ।।

গোপীনাথ, হৃদয়ে বসিয়া মোর ।

মনকে শমিয়া, লহ নিজ - পানে, ঘুচিবে বিপদ ঘোর ।।

গোপীনাথ, অনাথ দেখিয়া মোরে ।

তুমি হৃষিকেশ, হৃষীক দমিয়া, তার' হে সংসৃতি - ঘোরে ।।

গোপীনাথ, গলায় লেগেছে ফাঁস ।

কৃপা - অসি ধরি, বন্ধন ছেদিয়া, বিনোদে করহ দাস ।।