🌲🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚🌲

🦜🌻শ্রীদামোদর ব্রত-মাহাত্ম্য🌻🦜

🌲🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚🌲

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I উর্জ্জাব্রত, দামোদর ব্রত, কার্ত্তিক ব্রত বা নিয়মসেবা ব্রত আরম্ভ উপলক্ষে সবাইকে জানাই  কৃষ্ণপ্রীতি এবং শুভেচ্ছা। যাঁহারা কৃষ্ণকৃপা ও কৃষ্ণভক্তি লাভ করতে চান - তাঁহারা অবশ্যই এই ব্রত পালন করিবেন।

 

কার্ত্তিক মাস বা দামোদর মাস ভক্তগণের কাছে অতীব মহত্বপূর্ণ একটি মাস। কেননা এই মাসে হরিভক্তির অনুকূল যে কোন কার্যই সহস্রগুণ অধিক ফলদান করে। ভক্তিভরে স্বল্প পরিমাণ ভগবদ্ সেবা সম্পাদন করলেও ভগবান শ্রীহরি অতিশয় প্রীত হন। বিশেষ করে কার্ত্তিক মাসের অন্যতম একটি ভগবৎ সেবা হচ্ছে ভগবানের মন্দিরে বা গৃহমন্দিরে ভগবানের উদ্দেশ্যে দীপদান। এই সম্বন্ধে বিভিন্ন শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, এই মাসে শ্রীহরি মন্দিরে দীপ দান করলে তাকে আর এই জন্ম মৃত্যুময় জগতে ফিরে আসতে হয় না।

 

‘’শ্রীহরিভক্তিবিলাস’’ গ্রন্থের ১৬শ বিলাস অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কার্ত্তিক মাসে দেবালয়ে ভক্তিভাবে দীপদান, অখন্ড দীপাবলীর আয়োজন, বাড়িতে বাড়িতে দীপমালা সজ্জা ও আকাশ প্রদীপ দান করলে ভগবান শ্রীহরি প্রীতিলাভ করেন। ‘’স্কন্দ পুরাণে’’  বলা হয়েছে যে যদি কেউ ঘিয়ের প্রদীপ বা তিল তৈলের প্রদীপ বিষ্ণু মন্দিরে কার্ত্তিক মাসে প্রজ্জ্বলিত করেন তাহলে সে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ করেন। কারও বংশে কোন সন্তান যদি কার্ত্তিক মাসে বিষ্ণু মন্দিরে দীপদান করার মাধ্যমে শ্রীবিষ্ণুর প্রীতিসাধনে উদ্যোগী হয়, তাহলে বংশের সকলেই মুক্তি লাভের অধিকারী হয়। এমনকি কারও যদি মন্দার পর্বতের মতো বিপুল পরিমাণ পাপও সঞ্চিত থাকে, কার্ত্তিক মাসে ভক্তিসহকারে শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের মন্দিরে দীপদান করলে নিঃসন্দেহে তাঁর সমস্ত পাপ বিনষ্ট নয়।

 

‘’স্কন্দ পুরাণে’’  ব্রহ্মা নারদ সংবাদে বর্ণনা করা হয়েছে,- যিনি কোটি সহস্র পাতকে পাতকী হয়েও শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও কার্ত্তিক মাসে শ্রীহরির মন্দিরে শুদ্ধাচারে ভক্তিভরে উপস্থিত হয়ে নিমেষমাত্র সময়ের জন্যও একটিমাত্র দীপ শ্রীভগবানের প্রীতিবিধানের উদ্দেশ্যে নিবেদন করেন, তবে তিনি নিখিল পাতক থেকে উদ্ধার লাভ করেন। ‘’পদ্ম-পুরাণে’’  বলা হয়েছে, যিনি কার্ত্তিক মাসে ভগবান শ্রীজনার্দনের সম্মুখে অখন্ড অর্থাৎ অহোরাত্রব্যাপী দীপ দান করেন বা গগনতলে উচ্চভাবে দীপ প্রজ্জ্বলন করেন, তিনি ধনধান্যবান, সমৃদ্ধিশালী, পুত্রবান ও সর্বৈশ্বর্য সম্পন্ন হয়ে ভগবদ্ভক্তিযুক্ত হন এবং অন্তিমে দিব্যকান্তিময় বিমানে আরোহণ করে ভগদ্ধামে গিয়ে ক্রীড়া করার সৌভাগ্য অর্জন করেন।

 

পদ্মপুরাণ বলেন -

বিষ্ণুকেশবমুদ্দিশ্য দীপং দদ্যাত্তু কাৰ্ত্তিকে ।

আকাশস্থং জলস্থঞ্চ শৃণু তস্যাপি যৎফলং ।।

ধনধান্যং সমৃদ্ধিশ্চ পুত্রবানীশ্বরো গৃহে ।

লোচনে চ শুভে তস্য বিদ্বানপি চ জায়তে ।।

অর্থাৎ,- যে ব্যক্তি কার্ত্তিক মাসে বিষ্ণু কেশবকে উদ্দেশ করিয়া আকাশে বা জলে দীপদান করে, তাহার যে ফল হয় তাহা বলি, শ্রবণ কর। এইরূপ দীপদানকারী ধন, ধান্য, সমৃদ্ধি, পুত্রবান তথা গৃহে ঈশ্বর অর্থাৎ ঐশ্বৰ্য্যসম্পন্ন হয়েন এবং তাহার লোচনেদ্বয় কল্যাণযুক্ত হয় ও তিনি বিদ্বান হইয়া জন্মগ্রহণ করেন ।

 

আকাশে প্রদীপদান মন্ত্র:-

দামোদরায় নভসি তুলায়াং লোলয়া সহ ।

প্রদীপন্তে প্রযচ্ছামি নমোহনস্তায় বেধসে ।।

অর্থাৎ,- হে দামোদর ! কার্ত্তিক মাসে আকাশে- মহালক্ষ্মী শ্রীরাধার সহিত তোমাকে প্রদীপদান করিতেছি । তুমি অনন্ত বিধাতা তোমাকে নমস্কার। এছাড়া কার্ত্তিকমাসে দীপদান করলে, রাজপথ, তরুমূল, গোষ্ঠ ও দুর্গম পথে দীপাবলী উৎসব উপলক্ষ্যে দীপসজ্জা করলে; মহাফল লাভ করা যায় এবং এর ফলে সমাজের অশেষ কল্যাণ সাধিত হয়। ‘’ভবিষ্য পুরাণে’’  উল্লেখিত হয়েছে যে যিনি কার্ত্তিক মাসে বিশেষতঃ শ্রীহরির উত্থান সময়ে দ্বাদশীতে অথবা একাদশী দিনে সুন্দররূপে প্রদীপমালা রচনা কনেন, তিনি অযুত সূর্যের মত প্রভাবশালী হয়ে আপন তেজ দ্বারা জগৎ সমুদ্ভাসিত করেন, অর্থাৎ তিনি নিজগুণে সর্বত্র যশস্বী হন। যে ব্যক্তি যতসংখ্যক ঘৃতের প্রদীপ হরিমন্দিরে প্রজ্জ্বলিত করেন, তিনি দীপসংখ্যানুসারে তত সহস্র বৎসর দিব্য ধামে বিহার করে থাকেন।

 

শ্রীব্রহ্মা- বৈষ্ণবদের উদ্দেশ্যে সতর্কবাণী উচ্চারণপূর্বক শ্রীনারদ মুনিকে বলেছেন,- হে নারদ! যে মানব কার্ত্তিক ব্রত না করে, সে ব্রহ্মঘাতী, গোঘাতী, স্বর্ণচোর ও সর্বদা মিথ্যাবাদী। হে বিপেন্দ্র! বহু পূজা করে এবং শতবার শ্রাদ্ধ করেও কার্ত্তিকে ব্রত না করার ফলে স্বর্গ প্রাপ্ত হয় না। কার্ত্তিকে ব্রত না করলে যে উৎকৃষ্ট দান, সুমহান তপস্যা ও জপ সকলই বিফল হয়। হে নারদ! কার্ত্তিক মাসে উত্তম বৈষ্ণব ব্রত না করলে সপ্ত জন্মার্জিত পুণ্য বৃথা হয়। স্কন্দ ও পদ্মপুরাণে দামোদর ব্রতের মাহাত্ম্য প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, সর্বতীর্থে যে স্নান, সর্বদানের যে ফল, কার্ত্তিক মাসের কোটি অংশের একাংশেরও সমান হয় না। কার্ত্তিকের সমান মাস নাই, সত্যযুগের সমান যুগ নাই, বেদের সমান শাস্ত্র নাই, গঙ্গার সমান তীর্থ নাই। যে মানব কার্ত্তিকে শ্রীবিষ্ণু মন্দির প্রদক্ষিণ করে সে পদে পদে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফলভাগী হয়। যে মানব কার্ত্তিকে শ্রীহরির সম্মুখে নৃত্য, গীত, বাদ্য, ভক্তিসহ করে,সে অক্ষয়পদ বিষ্ণুধাম প্রাপ্ত হয়। হে মুনিবর! কার্ত্তিকে যিনি হরিকথা শ্রবণ করেন, তিনি শতকোটি জন্মের আপদসমূহ থেকে নিস্তার পান।

 

সূর্যগ্রহণকালে কুরুক্ষেত্র তীর্থ এবং চন্দ্রগ্রহণে নর্মদাতীর্থে দান - দক্ষিণা করলে যে পুণ্য হয়, কার্ত্তিক  মাসে শ্রীশ্রীরাধামাধবের আনন্দ বিধানের উদ্দেশ্যে মন্দিরে দীপদান করলে তার চেয়েও কোটিগুণ পুণ্য উপার্জন করা যেতে পারে। প্রধানতঃ তিন ধরণের প্রদীপ ভগবানের মন্দিরে প্রদান করার বিধান দেওয়া হয়েছে কর্পূরের দীপ, ঘৃতের দীপ, এবং তিল তেলের প্রদীপ। এ কথা হরিভক্তিবিলাসে বলা হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়েছে যে, কখনই কোন চর্বি জাতীয় পদার্থে দীপ দান করা উচিত নয়। দীপ নিবেদন করতে হবে পরমভক্তি সহকারে। কর্দমাক্ত স্থানে দীপ স্থাপন করা উচিত নয়। লাল রঙের বস্ত্র, ময়লা বা পুরনো বস্ত্র দিয়ে দীপবর্তিকা বা শলতে তৈরী করা উচিত নয়। যে দীপ একবার প্রজ্জ্বলিত করা হয়েছে, তা কখনও নিজ হাতে নিভানো উচিত নয়।

 

‘’স্কন্দ পুরাণে’’  দীপদান মাহাত্ম্য সম্বন্ধে শ্রীব্রহ্মা নারদ মুনিকে বলেছিলেন,- ‘’হে দেবর্ষি! শ্রীহরির উদ্দেশ্যে ভক্তিভাবে সকর্পূর দীপদান যিনি করেন, সেই দীপদাতার বংশে যারা জন্মগ্রহণ করেছে, ভবিষ্যতে যারা জন্মগ্রহণ করবেন এবং যারা গত হয়েছে, তারা সকলেই চিরদিন দেবলোকে বিহার করে শ্রীহরির কৃপায় মোক্ষ লাভ করেন’’। নারদ পুরাণে রুঙ্গদমোহিনী সংবাদে লেখা আছে, একদিকে সমগ্র পৃথিবী দান এবং অন্যদিকে কার্ত্তিকে ভগবানের উদ্দেশ্যে দীপদান স্থাপন করলে দেখা যাবে যে তুলনায় দীপদানই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু নিজের দীপদানই নয়, ‘পরদীপ-প্রবোধন’ অর্থাৎ অন্যকে দীপদানে সাহায্য করা বা অন্য কারো প্রদত্ত নিভে আসা অনুজ্জ্বল দীপকে পুনঃরায় উজ্জ্বল করে দেওয়া বিষয়েও মহিমা কীর্ত্তন করা হয়েছে। শ্রীহরি মন্দিরে পরদত্ত দীপ জ্বালিয়ে দিলে এবং বৈষ্ণবের সেবা করলে রাজসূয় ও অশ্বমেধ যজ্ঞজনিত পুণ্যফল লাভ হয়। কার্ত্তিক মাসে ভগবানের উদ্দেশ্যে দীপদানের যে সুফল সে সম্পর্কে- বিভিন্ন পুরানে অনেক দৃষ্টান্তও উল্লেখ রয়েছে।

 

পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে ত্রেতাযুগে ভাস্কর নামে সৌরাষ্ট্র দেশবাসী এক কৃষক ছিল। তার স্ত্রীর নাম ছিল কলিপ্রিয়া। সে সর্বদাই অসৎ পুরুষের প্রতি আসক্ত ছিল। যিনি নিজের স্বামীকে কোন রকমের সম্মান প্রদর্শন করত না। তিনি ভাবত অন্য পুরুষই তার স্বামী। আর বিবাহিত পুরুষটি তার যোগসূত্র মাত্র। কলিপ্রিয়া সর্বদাই মদ্য মাংস ভক্ষণ করত এবং নিজের স্বামীকে উচ্ছিষ্ট খেতে দিত। আর অপ্রীতিকর ভাষায় নিন্দামন্দ করত। কলিপ্রিয়া একদিন ভাবল আমার স্বামী আমার পায়ের শৃঙ্খল স্বরূপ কেন এটার মৃত্যু হয় না। মরলেই আমি অন্য পুরুষের সাথে ইচ্ছামতো মেলামেশা করতে পারব। এই ভেবে কলিপ্রিয়া একদিন নিজের স্বামীর মস্তক কেটে হত্যা করে, অভীষ্ট পুরুষের দিকে যাত্রা করে। কিন্তু গিয়ে দেখে তার অভীষ্ট পুরুষটিকে বাঘ খেয়ে ফেলেছে। তখন কলিপ্রিয়া নিজের বাড়ি ফিরে এসে মৃত স্বামীর চরণ ধরে কান্না করতে থাকে। এবং নিজেকে অসহায় ভেবে অন্য নগরে গমন করে।

 

সেখানে কার্ত্তিক মাসের সকালে নর্মদায় স্নান করে দামোদর ব্রতকারী বৈষ্ণবদের কে দেখতে পেলেন। তিনি দেখলেন বৈষ্ণবগণ ভগবান শ্রীদামোদরের পূজা করছে। কলিপ্রিয়া তখন জিজ্ঞাসা করল তারা কি পূজা করছে এবং তার ফল কি? তারা বলল মাতঃ সর্বকালোত্তম শুভ শ্রীশ্রীরাধাদামোদরের পূজা করছি। এখন কোটি জন্মর্জিত পাপক্ষরণের উপায়স্বরূপ এই কার্ত্তিক মাস উপস্থিত হয়েছে। কলিপ্রিয়াও তাদের অনুসরণ করে সর্বপ্রকার পাপকর্ম পরিহার করে ভগবানের উদ্দেশ্যে প্রদীপ নিবেদন করে। অবশেষে একদিন দেহত্যাগ করে। তখন যমদূতগণ তাকে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছিল আর সেই সময় স্বর্ণনির্মিত বিমানে বিষ্ণুদূতগণ উপস্থিত হয়ে যমদূতদের তাড়িয়ে দেয় এবং কলিপ্রিয়াকে বিষ্ণুলোকে নিয়ে যায়। এই প্রসঙ্গে সূত গোস্বামী বলেন,- ''যে নারী ও নর পবিত্র এই মাসে শ্রীশ্রীরাধাদামোদরের উদ্দেশ্যে প্রদীপ নিবেদন করে তবে তার সমস্ত পাপ বিনষ্ট হয় এবং তিনি বৈকুণ্ঠ লোকে গমন করেন।''

 

এ প্রসঙ্গে আর একটি কাহিনী আছে,- কোন এক মুষিকা (স্ত্রী ইঁদুর) কার্ত্তিক বা দামোদর মাসে একাদশীর দিনে ঘটনাক্রমে অন্যের জ্বালানো প্রদীপের তেল খেতে গিয়ে তার মুখের সাহায্যে প্রদীপের শৈলত্যে জাগিয়ে দেয়। ফলে প্রায় নিভে যাওয়া প্রদীপের আলো আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠে এবং এই সুকৃতির ফলে তার বৈকুণ্ঠ গতি লাভ হয়। শাস্ত্রে আরো বলা হয়েছে, যদি কেউ প্রদীপ দেখাতে নাও পারে শুধুমাত্র প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত বিষ্ণু মন্দির দর্শন করেন তবে সেই বংশের কেউ নরকগামী হন না। কার্ত্তিক বা দামোদর মাস এই পবিত্র মাসে যারা ভগবান শ্রীদামোদরের উদ্দেশ্যে ভক্তিসহকারে ভগবানের আনন্দ বিধানের জন্য প্রদীপ নিবেদন করে তাদের অজ্ঞান অন্ধকার দূরীভূত হয়ে হৃদয়ে জ্ঞানপ্রদীপ প্রজ্জ্বলিত হয় এবং সমস্ত কলুষতা থেকে মুক্ত হয়। অবশেষে মানব জীবনের চরম উদ্দেশ্য কৃষ্ণভক্তি লাভ করে গোলোকে গতি লাভ হয়।

 

শ্রীরাধাদামোদর-পূজাবিধি পদ্মপুরাণে কার্ত্তিকব্রতে---

১৯৫। শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়তমা শ্রীরাধিকা, গোপিকাগণ মধ্যে শ্রেষ্ঠা, কার্ত্তিকে শ্রীদামোদর নিকটে শ্রীরাধিকারও পূজা করা উচিত।

১৯৬। ব্রজবাসী ব্রাহ্মণ এবং তৎপত্নীকে বস্ত্র, অলঙ্কার ও ভোজনাদি দান দ্বারা পূজা করা কর্তব্য।

১৯৭। হে বিপ্রগণ! কার্ত্তিকে শ্রীরাধিকার সন্তোষের জন্য যিনি শ্রীরাধিকা প্রতিমাকে পূজা করে তার প্রতি  দামোদর ভগবান তুষ্ট হন।

১৯৮। কার্ত্তিকের প্রতিদিন 'দামোদরাষ্টকম্' নামক স্তোত্র (সত্যব্রত মুনি কথিত) পাঠ করবে, তা দামোদরের অর্চন স্বরূপ ও শ্রীদামোদরের আকর্ষণকারী।

 

দামোদর ব্রতের (নিয়ম সেবা) সংকল্প:-

'হৃষীকেনং হৃষীকেশ সেবনং ভক্তিরুচ্যতে' সর্বান্তকরণে ইন্দ্রিয়সমূহ দ্বারা ইন্দ্রিয়াধিপতি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের তথা সেবাই ভক্তি। কিভাবে সময়ের সর্বোচ্চ উপযোগ করে ভগবানের সেবা করা যায় সেটাই দামোদর ব্রতের সংকল্প হওয়া উচিত। তবে সর্বাগ্রে এটা খেয়াল রাখা উচিত যে, নিয়মগুলো (সংকল্প) যেন লোকদেখানো বা শুধুই নিয়মমাত্র থেকে না যায়। ব্রতের সময়সীমা পর্যন্ত যেন সেগুলো পালনযোগ্য হয় সেটাও বিবেচনা করতে হবে। ইষ্টদেবের প্রীতিবিধানার্থ নানাবিধ ব্রতনিয়ম বা সংকল্প করা যেতে পারে। যেমন,-

১। নিত্য মঙ্গলারতি দর্শন ও গুরুপূজায় অংশগ্রহণ।

২। নিত্য ভাগবত ক্লাসে যোগদান।

৩। হবিষ্যান্ন গ্রহণ।

৪। সন্ধ্যায় আরতিতে অংশগ্রহণ ও দামোদরের জন্য দীপদান।

৫। বেশি সংখ্যক হরিনাম জপ - (২৪, ৩২, ৪৮, ৬৪ বা তদুর্ধ্ব)

৬। সকাল-সন্ধ্যা প্রতিদিন তুলসী পূজা ও পরিক্রমা।

৭। তিনবেলা মন্দির পরিক্রমা।

৮। বেশি সংখ্যক গ্রন্থ প্রচার।

৯। প্রতিদিন 'দামোদরাষ্টকম্' পাঠ।

১০। 'লীলাপুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ', 'শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা যথাযথ', শ্রীমদ্ ভাগবত' প্রভৃতি গ্রন্থাদি পাঠ।

 

হবিষ্যান্ন:-

শ্রীশ্রী হরিভক্তিবিলাসের ১৩ অধ্যায়ের ১০-১৩ নং শ্লোকে হবিষ্যান্নের উপাদান উল্লেখ করা হয়েছে:

নিম্নোক্ত উপাদানগুলো হবিষ্যান্ন তৈরিতে ব্যবহার করা যাবে,- আতপ চাল, ঘি, কাওন, শ্যামা চাল, সৈন্ধব লবণ, ননীপূর্ণ গোদুগ্ধ, পাকা কলা, কাল শাক, গম, ফল (স্কন্ধপুরাণের নাগরখণ্ডে অবশ্যই কম বীজ পূর্ণ ফলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে) আমার, কাঁঠাল, লাবালী ফল, কেয়া ব্যতীত সকল মূল, পিপলী, হরিতকি, আমলকি, নারঙ্গ, ইক্ষুদ্রব্য (গুড় ব্যতিত)।

 

সর্বপ্রকার তেল পরিত্যাজ্য। নিম্নবর্ণিত দ্রব্যগুলো হবিষ্যান্নের অন্তর্ভুক্ত হলেও তা কার্ত্তিক মাসে বর্জন করতে বলা হয়েছে: মুগ ডাল, তিল তেল, বেতো শাক, সাত্ত্বিক শাক, মুলা, জিরা ও তেঁতুল। শরীরে তৈল সাবান কসমেটিক জাতীয় ইত্যাদি ব্যবহার নিষেধ। এসব ব্যবহার না করলে এই একমাস তাহলে অন্তিমে চিন্ময় দেহ প্রাপ্ত হবে। রাতে ফল দুধ কলা কাঁচা বাদাম ভাজা, এসব পেতে পারবে। প্রত্যকটা মাসের মধ্যে এই কার্ত্তিক বা দামোদর মাসটা ভগবানের অতি প্রিয় মাস। সব মাসে যা করি, সমস্যা নাই কিন্তুু এই মাসে এই ব্রত না পালন করে কেউ তাহলে তার মুক্তির আর কোনো পথ নাই নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হবে অনন্ত কাল।

 

পদ্মপুরাণে বর্ণিত কার্ত্তিকব্রতের অঙ্গসমূহ:-

৯২। রাত্রিশেষে হরি জাগরণ, প্রাতঃস্নান, তুলসীবন সেবন, দীপদান, শেষে উৎসব উদ্যাপন - কার্ত্তিকে এই সকল ব্রত।

৯৩। সম্পূর্ণ কার্ত্তিক মাসে ব্রতকারী পাঁচটি ব্রত অঙ্গ পালন দ্বারা ভুক্তি মুক্তি ফল প্রাপ্ত হন।

৯৪। কার্ত্তিকে হরি জাগরণ বিষ্ণুমন্দিরে, শিবালয়ে, অশ্বত্থমূলে বা তুলসীবনে করবে।

৯৫। কার্ত্তিক-ব্রতী বিপদাপন্ন হয়ে স্নানের জন্য যখন জল না পাবেন, অথবা ব্যাধিবশতঃ স্নানে অসমর্থ হলে শ্রীবিষ্ণুর নাম দ্বারা মন্ত্র স্নান করবেন।

৯৬। ব্রতকারী হয়ে যিনি উদ্যাপন বিডি করতে অসমর্থ, তিনি ব্রত সংপূর্তির জন্য যথাশক্তি ব্রাহ্মণগণকে ভক্তিপূর্বক ভোজন করাবেন।

৯৭। কার্ত্তিকে দীপদানে অসমর্থ হলে পরের প্রদত্ত দীপকে উদ্দীপিত করবে অথবা যত্নসহকারে বাতাসাদি হতে পর দীপকে রক্ষা করবে।

৯৮। তুলসী সেবার অভাবে বৈষ্ণব দ্বিজকে পূজা করবেন, ব্রতী এ সকলের অভাবে ব্রত সম্পূর্ণের জন্য ব্রাহ্মণগণের, গাভীগণের বা অশ্বত্থ ও বটবৃক্ষের সেবা করবে।