🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚

🌳🌻🌴মাখন চোর🌴🌻🌳

🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’গুরু - বৈষ্ণব - ভগবান তিনিহেঁ স্মরণ ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে হয় সর্ববিঘ্ন বিনাশন ।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

 

এমন উৎকর্ষতা পূর্ণ ভক্তির সন্ধান যদি না বুঝিলেন, তবে বিফল এ মানব জনম। আধ্যাত্মিক সাধন জগতে জ্ঞান,যোগ, ভক্তিতে মানব দেহের সাধনার কথা ও তাঁর সর্বোচ্চ প্রাপ্তির বিচার বারংবার বিচার্য হয়েছে। মানব দেহের সর্বোচ্চ লাভ বা প্রাপ্তি কি সেটা জানা দরকার।কেবল জাগতিক সুখ ভোগের জন্য মানব জনম নয়। শাস্ত্র বলছে -

‘’কৃষ্ণ ভক্তি বিনা মিছা এ মানব জনম’’  ---( চৈ.চ)

এটাই সত্যি -"কৃষ্ণ প্রেমধন যে জন পায়।

পরশ রতন সে জনে পাশরিয়া যায়"।।

 

মূল কথা হরি ভজনই মানব জীবনের সার। আবার ভক্তির অনেক স্তর। কিন্তু ব্রজ নারীদের দুর্লভ ভক্তির বিচার সকলের কাছেই অগম্য। কারণ ভগবান স্বয়ং তাঁদের প্রেমা - ভক্তির কাছে ঋণী। সাধকের ভাবের উপর নির্ভর করে ভক্তিরস আস্বাদন। মহাপ্রভু "আত্মারামস্য মুনয়" শ্লোকের অসংখ্য প্রকারের ব্যাখ্যা দিলেন। একজন সাধক ব্রহ্ম চিন্তন করে, কঠিন তপস্যা করে, মহৎযোগী হয়ে তবে তিনি মুক্ত হন। স্বর্গলোক, ব্রহ্মলোক, বৈকুণ্ঠ আদি কত দিব্যলোকে সাধকগণ আছেন। কিন্তু কেহ সেই পরম মধুরাতি মধুর গোলক বৃন্দাবনের মধুর রাধাকৃষ্ণের মধুর যুগলরস মাধুর্য্য আস্বাদন করতে পারছেন না। কিন্তু গোপীগণের কাছে এই দুর্লভ প্রেমভক্তি স্বপ্রকাশিত।

নারদজী, উদ্ধব, অর্জুন, বড়ো বড়ো যোগী মুনীর কাছেও এই প্রেমা ভক্তি পরম বিস্ময়ের যা শ্রীমদ্ভাগবতে ১০ম স্কন্ধে উদ্ধবজী নিজে বারংবার স্বীকার করেছেন এবং গোপীগণের চরণ ধূলি প্রার্থনা করেছেন,-

‘’বন্দে নন্দ ব্রজস্ত্রীণাং পাদরেণুমভীক্ষশঃ।

যাসাং হরিকথোদগীতং পুনাতি ভুবনত্রয়ম।।‘’

ত্রিজগৎ পবিত্র করে যাঁহাদের কণ্ঠোদ্গীর্ণ হরিকথাগীতি,আমার মাথার ভূষণ করি তাঁহাদের পাদরেণু। শিরে তুলিয়া এদের পদধূলি সার্থক করি আমি আমার জ্ঞানশুষ্ক এই জীবন।

গোপীগণের এই নির্ম্মল প্রেম ভক্তিকে জগতে জানাতেই গৌরহরি এসেছেন এই কলিযুগে। মহাপ্রভু তাই নিজের বদান্যতা প্রকাশ করলেন। এযুগের সবাই অধম প্রায়। এরা তপস্যা করে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হয়ে তবে ব্রজের ভজন করবে,তা সম্ভব নয়। তাই তিনি যুগধর্ম শ্রীহরিনাম মহামন্ত্র প্রচার করলেন,-

‘’হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে I

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে I I’’

শ্রীমন্মহাপ্রভু এই নামের স্বরূপ, ব্রজ প্রেমরসে মত্ত হয়ে নিজে গোপীভাব আস্বাদন করলেন এবং মহৎ কৃপাপূর্বক রূপ সনাতন আদি গোস্বামীগণের মাধ্যমে তিনি প্রত্যেক সাধকের আত্মায় মানস ভজনযোগ্য একটি দিব্য সিদ্ধদেহ মঞ্জরী স্বরূপ দান করলেন; যাতে সাধকগণ এই জন্মেই সর্বোচ্চ ভজন করে গোলোকে রাধাদাসী ভাবকান্তি গ্রহণ করে গোপী দেহে রাধাকৃষ্ণের যুগল সেবা পেতে পারে। ইহাই তো পরম প্রাপ্তি।

গোপীদের মাখন কেন গ্রহণ করে মাখনচোর?

এমন কি ছিল গোপীদের কাছে কৃষ্ণ স্বয়ং বিনা ডাকে চলে আসত চুরি করতে। ওদের মনে ছিল কাম মানে কামনা। গোপী চাই তো কৃষ্ণ তাদের ঘরে এসে চুরি করে। আসলে গোপিদের মন তো মাখনের মত আর ভগবান তো তাদের চিত্তরূপী মাখনকে চুরি করত। সবার আগে জানতে হবে মাখন তৈরি হয় কেমন করে, এটা জানা খুবই দরকার, সবার আগে লাগে দুধ, দুধ দোহন করতে হয়। তারপর ওটা ভাল করে জ্বাল দিতে হয়। তারপর ঠান্ডা করতে হয়। তারপর জমাতে হয়। তারপর যখন মন্থন করা হয়,তারপর ওতে জল ছাড়ে, তারপর মথনী দন্ড দিয়ে মন্থন করলে চাঁচ নীচে পড়ে থাকে তারপর মাখন উপরে উঠে আসে।

এখন আমাদের চিত্তকে মাখন কি রূপ বানাব?

সবার আগে যেমন দুধ দোহন করতে হয়, শুদ্ধ দুধ নিতে হয় শুদ্ধ পাত্রে । কেমন দুধের প্রয়োজন জীবনে? "গীতার উপদেশ" রূপী একদম শুদ্ধ দুগ্ধ। দুধ দোহনের জন্য পাত্রের প্রয়োজন । পাত্র কেমন হবে তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শুরু যদি ঠিক না হয়। ঠিক মত দুগ্ধ নেওয়া না হলে মাখন কি করে হবে। তাই পাত্রের দুই পরিস্থিতিতে দুধ নষ্ট হয়। এক যেমন তেমন পাত্রে নিলে দুধ ফেটে নষ্ট হয়ে যায়। দুই পাত্র ছিদ্র হলে দুধ পড়ে নষ্ট হয়। গীতা ভাগবত রুপী দুধ রাখতে হলে হৃদয়রুপী পাত্রের দরকার। লক্ষ্য রাখতে হবে হৃদয় পাত্র যাতে কামনা বাসনার টক যেন না থাকে, আর দ্বিতীয় হল কুসঙ্গরূপী ছিদ্র যেন না থাকে। তা না হলে আমরা দুধ তো ঢালছি উপর থেকে। কবে যে ছিদ্র দিয়ে বের হল জানতে পারব না।

মানে গীতারকথা ভাগবতের কথা শুনছি ঠিক কিন্তু কুসঙ্গের কারণে সবকিছু সুফল কবে জীবন থেকে বের হবে তা জানতে পারব না। জ্ঞান গ্রহণ করতে থাকছি আর অন্যদিকে কুসঙ্গে আছি। তাহলে কি করে হবে। হৃদয় পাত্রের দুধ তো ফেটে যাবে। তাহলে কি করে বুঝব আমরা কুসঙ্গে আছি? ভাগবত কথা শুনছি, কথা শোনার জন্য হৃদয়ে যদি ব্যাকুলতা উদয় হতে থাকে। যদি ব্যাকুলতা না বাড়ে তাহলে বুঝতে হবে মনে কোন সমস্যা আছে। মন কুসঙ্গে আছে। এইবার মাখনের দুধ জ্বাল দিতে হবে, দুধ আগুনে জ্বাল দিতে হবে। আমার হৃদয়ে ভাগবতরুপী দুগ্ধকে বিরহঅগ্নিতে জ্বাল দিতে হবে।

জাবালি নামে এক ঋষি ছিল, ব্রহ্মবিদ্যা প্রাপ্ত করল তারপর ভাবতে লাগল জ্ঞানের অন্তিম লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন। তিনি সফল হয়েছেন ভাবতে লাগলেন। এক দিন এক পর্বতের উপরে গিয়ে দেখলেন এক সুন্দর যুবতী তপস্যা করছে। ঋষি জাবালি জিজ্ঞাসা করলেন সেই যুবতীকে "আপনি কে? আর এখানে তপস্যা কেন করছেন?"

 যুবতী বলল,- "আমি ব্রহ্মবিদ্যা, আর ব্রজে গোপীরুপে জন্ম নিতে পারি এইজন্য আমি তপস্যা করছি।"

ঋষিবর অবাক হলেন, "ব্রহ্মবিদ্যা লাভের জন্য অনেক বছর মানুষ তপস্যা করে,আর ব্রহ্মবিদ্যার আগেও কিছু আছে?"

ঋষি জিজ্ঞাসা করলেন, "কেন তুমি গোপী হতে চাও?"

ব্রহ্মবিদ্যা বলল--- "ঐ জ্ঞান কি লাভ, ঐ তপস্যায় কি লাভ যা দিয়ে পরমব্রহ্মকে সগুন সাকার রুপে প্রত্যক্ষ আস্বাদন না করা যায়। যা ঐ ব্রজের গোপীনাথ প্রতিক্ষণ করছে, তাঁরাই একমাত্র মিলন আর বিরহের যে আনন্দ সেই আনন্দ সেই বিরহ আস্বাদন করছে। আমি ব্রহ্মবিদ্যা আমিও চাই সেই ব্রজের গোপী হতে, গোপীনাথের সুন্দর দর্শন করতে, আমিও চাই কৃষ্ণ বিরহ আর আনন্দ আস্বাদন করতে। তাই তপস্যা করছি।" এই কথা শুনে ঋষি জাবালিও তপস্যা করতে বসে গেলেন, তিনিও চান ব্রজের গোপীরূপে অবারিত হতে, বিরহের কি আনন্দ, সেই বিরহ যে প্রেমী জনের পরম বড় ধন। তা আস্বাদন করতে ঋষি  তপস্যা করছেন। যখন বিরহ আগুনে জ্বাল দিয়ে আমাদের হৃদয়ে ভাগবতরূপী জ্ঞানকে জমাতে হবে। অর্থাৎ ঐ বিরহে স্থিরতা আসবে। এই জমানোর কাজ একমাত্র গোপী জানে। জমার জন্য লাগে একটু টক।লেবুর একটু টক

গোপী কে?

যে প্রত্যেক ইন্দ্রিয় দিয়ে নিত্য বিহার রস আস্বাদন করে, দুধ জমাতে একটু টক অনেক। ওটার প্রভাব অনেক হয়। টক হল গুরুমন্ত্র। যা খুব ছোট হয়, কিন্তু প্রভাব অনেক বড় হয়। তারপর জল ছেড়ে দেয়, অর্থাৎ প্রেমরুপী জল ছেড়ে যায়, তারপর বিচারের মথানীর লাঠি দিয়ে দিয়ে মন্থন শুরু করতে হবে। মনের সকল কিছু নিচে বসে যাবে, মাখন যা নিবেদন হবে তা উপরে উঠে আসবে।

এই মাখন কি?

মা খ ন এই তিনটি অক্ষর দিয়ে মাখন শব্দটি গঠিত। মা অর্থ হল ক্রোধ, খন অর্থ হল নেই অর্থাৎ যার চিত্তে ক্রোধ নেই। যখন চিত্তে ক্রোধ দূর্বাসনা নেই, প্রেমময়ী হয়ে যায়। প্রেম শুধু কৃষ্ণের জন্য, সেই চিত্তরূপী গোপীদের মাখন গোপাল চুরি করে প্রতিমুহূর্তে। আমার তো কোন চিন্তা নেই আমার চিন্তা শুধু তোমার জন্য নাথ। তোমার কথা যেন থাকে প্রতি কথাতে, তোমার নাম যেন থাকে প্রতিমুহূর্তে মুখে, তোমার কথা যেন ভাবি সব সময়ই। এই হল গোপীভাব। যা পরম দূর্লভ। গোপী সাজলে হবে না, সত্যিকারে ভজন সাধনে গোপী হতে হয়। তখন গোপাল আমাদের মন রূপী মাখন গ্রহণ করবেন ।

 

যে ভাবো গোপী ভাবনা

যে ভাবো গোপী ভাবনা।

সামান্য জ্ঞানের কাজ নয় সে-ভাব জানা ।।

 

বৈরাগ্য ভাব বেদের বিধি, গোপীভাব অকৈতব নিধি,

ডুবল তাহে নিরবধি রসিক জনা ।।

 

যোগীন্দ্র মণীন্দ্র যারে, পায় না যোগ ধিয়ান করে,

সেই  কৃষ্ণ গোপীর দ্বারে হয়েছে কেনা ।।

যে-জন গোপী অনুগত, জেনেছে সে নিগূঢ় তত্ত্ব,

হরিদাস বলে যাতে কৃষ্ণ সদাই মগ্‍না ।।

🏵️জয় মাখনচোর🏵️জয় গোপীনাথ🏵️