🦚🌹💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🌹🦚

🌷শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যই পরমতত্ত্ব🌷

🦚🌹💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🌹🦚

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’নমো মহাবদান্যায় কৃষ্ণপ্রেম প্রদায় তে ।

কৃষ্ণায় কৃষ্ণচৈতন্য নাম্নে গৌরত্বিষে নমঃ ।।‘’

 

আজানুলম্বিত – ভুজৌ কনকাবদাতৌ,

সংকীর্ত্তনৈকপিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ ।

বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম্মপালৌ,

বন্দে জগৎ প্রিয়করৌ করুণাবতারৌ ।

 

উপনিষদে যাঁকে অদ্বৈত ব্রহ্ম বলেন, তিনিই এই (শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যের) অঙ্গজ্যোতি। যোগশাস্ত্রে যোগীগণ যে পুরুষকে অন্তর্যামী আত্মা (পরমাত্মা) বলেন, তিনিও এঁরই আংশিক  বিভুতি। এমনকী তত্ত্ববিচারে যাঁকে ষড়ৈশ্বর্যপূর্ণ ভগবান বলা হয়,তিনিও স্বয়ং ইনিই অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যেরই অভিন্ন স্বরূপ ৷ এই জগতে শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য অপেক্ষা পরতত্ত্ব বা শ্রেষ্ঠ বস্তু আর  কিছু নাই অর্থাৎ 'সাধন পন্থা সাধারণত তিন প্রকার - 'জ্ঞান', 'যোগ' ও 'ভক্তি' ৷ 'জ্ঞানমার্গের সাধকেরা নির্বিশেষ ব্রহ্মকে পরতত্ত্ব বা শ্রেষ্ঠতত্ত্ব বলেন।' 'যোগমার্গের সাধকেরা পরমাত্মার ধ্যান করেন ও পরমাত্মাকেই পরতত্ত্ব বলেন।' ''ভক্তিমার্গের সাধকেরা ভক্তির দ্বারা ভগবানের ভজনা করেন ৷ এই মার্গের সাধকদের দৃষ্টিতে অসমোর্ধ্বমাধুর্য দ্বিভুজ মুরলীধর শ্রীকৃষ্ণই পরতত্ত্ব এবং স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণই শ্রীচৈতন্যরূপে অবতীর্ণ হয়েছেন বলে শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যই পরতত্ত্ব।''

 

‘’অনর্পিতচরীং চিরাৎ করুণয়াবর্তীণ কলৌ,

সমর্পয়িতুমুন্নতোজ্জ্বলরসাং স্বভক্তিশ্রিয়ম্ ।

পুরতসুন্দরদ্যুতিকদম্বসন্দীপিতঃ,

সদা হৃদয়কন্দরে স্ফুরদু বঃ শচীনন্দনঃ ।।‘’

অর্থাৎ,- বহুকাল পর্যন্ত পূর্বে যা অর্পণ করা হয়নি, সেই উন্নত - উজ্জ্বল রসময়ী নিজস্ব ভক্তি - সম্পদ দান করবার জন্য যিনি কৃপা করে, এই কলিযুগে অবতীর্ণ হয়েছেন, স্বর্ণ থেকেও অতি উজ্জ্বল দ্যুতিসম্পন্ন সেই শচীনন্দন শ্রীগৌরহরি সকলের হৃদয় - কন্দরে সর্বদা প্রকাশিত হোন।

 

'সত্য', 'ত্রেতা', 'দ্বাপরের ন্যায় বহু বহুকাল পর্য্যন্ত  ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর ভক্তি - সম্পত্তি দান করেননি ৷ স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এক কল্পে (অর্থাৎ ব্রহ্মার একদিনে) একবার জগতে অবতীর্ণ হন ৷ যে দ্বাপরে তিনি ব্রজে অবতীর্ণ হয়ে রাসলীলাদি প্রকাশ করেন, ঠিক তার পরবর্তী কলিতেই তিনি শ্রীরাধার ভাবকান্তি অঙ্গীকার করে শ্রীশ্রীগৌরসুন্দররূপে নবদ্বীপে অবতীর্ণ হয়ে অতি সুদুর্লভ কৃষ্ণপ্রেম বা ভক্তিসম্পত্তি (ব্রজপ্রেম) দান করেন ৷ কিন্তু তার পরে এবং বর্ত্তমান কলির পূর্বে এই সুদীর্ঘকাল সেরূপ প্রেমভক্তি আর দান করেননি ৷ পুনরায় এই কলিতে সেই লুপ্তপ্রায় উন্নত -  উজ্জ্বল রসময়ী শৃঙ্গার বা মধুর ভাবসম্পন্ন প্রেমভক্তি কলিহত জীবের মধ্যে বিতরণের জন্য স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কৃপাপূর্বক শ্রীশ্রীগৌরসুন্দর রূপে অবতীর্ণ হলেন ৷

 

শ্রীশ্রীগৌরসুন্দরের বিতরিত বস্তুকে উন্নত এবং উজ্জ্বল রস বলা হল কেন ? উন্নত অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ, রস হল মধুর রস ৷ ব্রজেন্দ্র - নন্দন শ্রীকৃষ্ণ ব্রজে চার ভাবের ভক্তের প্রেমরস আস্বাদন  করেছেন, যথা দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য ও মধুর ৷ ব্রজবাসি জনের শ্রীকৃষ্ণে মমতা - বুদ্ধির গাঢ়তা অনুযায়ী প্রীতি বিধানের উৎকণ্ঠাও তীব্র থেকে তীব্রতম হয়ে থাকে ৷ শ্রীকৃষ্ণ তাঁহাদের একান্ত আপনজন, কিন্তু তাঁদেরও মমতা - বুদ্ধির তারতম্য আছে ৷ তাই দাস্য অপেক্ষা সখ্য, সখ্য অপেক্ষা বাৎসল্য, বাৎসল্য অপেক্ষা মধুর রসের মমতা - বুদ্ধির তারতম্য বেশি।

 

শ্রীকৃষ্ণের রসাস্বাদন চমৎকারিতা এবং প্রেমবশ্যতাও বেশি ৷ এই কারণে দাস্য অপেক্ষা সখ্য, সখ্য অপেক্ষা বাৎসল্য, বাৎসল্য অপেক্ষা মধূর ভাব উন্নত ৷ মধুর রসের আর একটি নাম শৃঙ্গার রস ৷ শ্রীকৃষ্ণ নিজেই বলেছেন,- "সব রস হৈতে শৃঙ্গারে অধিক মাধুরী ৷'' এবং "পরিপূর্ণ কৃষ্ণপ্রাপ্তি এই প্রেমা হইতে" ৷ আর ভক্ত কেবল প্রেমের মাধ্যমেই শ্রীকৃষ্ণের মাধুর্য রস আস্বাদন করতে পারেন ৷ সুতরাং "দাস্য, সখ্য ও বাৎসল্য অপেক্ষা মধুরভাবেই শ্রীকৃষ্ণ মাধুর্য আস্বাদনের শ্রেষ্ঠ উৎকর্ষতা ৷ এই উন্নত উজ্জ্বল রস অর্থাৎ শ্রেষ্ঠবস্তু সকলকে দান করবার জন্যই ভগবান 'শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য' এই কলিযুগে অবতীর্ণ হয়েছেন।

 

গৌরনাম নিতাইনাম বড়ই মধুর ।

যেই জন গৌরাঙ্গ ভজে সে বড় চতুর ।।

নামভজ নামচিন্ত নামকর সার ।

কলিযুগে নামবিনা গতি নাই আর ।।

গৌরনাম হৈতে হয় সংসার মোচন ।

গৌরনাম হৈতে পায় গৌরাঙ্গ চরণ ।।

নামবিনা কলিকালে আর নাই ধর্ম ।

সর্বমন্ত্র সার নাম এই শাস্ত্রমর্ম ।।

ছাড়িয়া সংসার শোক করহ কীর্ত্তন ।

প্রেমসুখে করযাবে ভবের বন্ধন ।।

কীর্ত্তন আগম বেদ হয় ব্রহ্মজ্ঞান ।

রাজসূয় অশ্বমেধ আর গঙ্গাস্নান ।।

কীর্ত্তন বৈকুণ্ঠপদ সর্ব পাপক্ষয় ।

কীর্ত্তন রসেরভক্তি সর্বস্থানে জয় ।।

শতভার সুবর্ণগো কোটি কন্যাদান ।

জপ তপ কেহ নয় নামের সমান ।।

দান ব্রত তপ শৌচ বেদ-অধ্যয়ন ।

গৌরাঙ্গ ভজন বিনা ভাই সব অকারণ ।।

গৌরাঙ্গ ভজনে হয় সবে অধিকারী ।

কিবা বিপ্র কিবা শূদ্র কি পুরুষ নারী ।।

একান্ত সরল ভাবে ভজ গৌরজন ।

তবে পাইবে ভাই শ্রীকৃষ্ণচরণ ।।

গৌরজন সঙ্গকর গৌরাঙ্গ বলিয়া ।

নিত্যানন্দ নাম বল নাচিয়া নাচিয়া ।।

অচিরে পাইবে ভাই নাম প্রেমধন ।

যাহা বিলাইতে প্রভুর নদে আগমন ।।

একমনে গাও সদা চৈতন্যের নাম।

সদাশান্তি পাবে আর জুড়াইবে প্রাণ ।।

গৌরনাম গায় কিংবা করয়ে শ্রবণ।

অন্তিমে সে জন পায় গৌরাঙ্গ চরণ ।।

দীনভক্তদাস গৌর হরির কৃপায়।

তাঁরই সুধামাখা নাম প্রেম ভরে গায়।

💐জয় গৌর💐জয় নিতাই💐💐জয় গৌর💐জয় নিতাই💐

 

🏵️শ্রীশ্রীশচীতনয়াষ্টকম্🏵️

শ্রীশ্রীশচীতনয়ায়নমঃ

উজ্জ্বল - বরণ - গৌরবর - দেহং

বিলসিত - নিরবধি - ভাববিদেহম্।

ত্রিভুবন - পাবন - কৃপয়ালেশং

তংপ্রণমামিচশ্রীশচীতনয়ম্॥১॥

অর্থাৎ,-যাঁর উজ্জ্বল বরণ, গৌরবর্ণ সুন্দর দেহখানি নিরবধি অসীমভাবসমূহে বিশেষরূপে উপচিত হয়ে শোভাপাচ্ছে, যাঁর কৃপা ত্রিলোক পবিত্র করে সেই কলিযুগপাবনাবতারী রাধাকৃষ্ণমিলিত তনু ভগবান শ্রীশচীতনয়কে আমি প্রণাম করি।

 

গদগদ - অন্তর - ভাববিকারং

দুর্জ্জন - তর্জ্জন - নাদ - বিশালম্।

ভবভয় - ভঞ্জন - কারণ - করুণং

তংপ্রণমামিচশ্রীশচীতনয়ম্॥২॥

অর্থাৎ,-যাঁর বাক্য গদগদ, অন্তরভাব বিকারে দ্রবীভূত, যাঁর হুঙ্কারে (সিংহনাদে) দুর্জ্জনগণ ভীত হয়, যাঁর করুণা, সংসার ভীতি খণ্ডন করে, সেই শচীতনয়কে আমি প্রণাম করি।

 

অরুণাম্বরধর - চারু - কপোলং

ইন্দু - বিনিন্দিত - নখচয় - রুচিরম্।

জল্পিত - নিজগুণ - নাম - বিনোদং

তংপ্রণমামিচশ্রীশচীতনয়ম্॥৩॥

অর্থাৎ,-যাঁরপরিধানেঅরুনবসন, যাঁরসুন্দরগণ্ডদেশওনখকান্তিচন্দ্রকেনিন্দাকরে, যিনিনিজের (শ্রীশ্রীরাধা-কৃষ্ণের) নাম, গুণ ও লীলাকীর্ত্তন করেন অথবা নিজনাম গুণ কীর্ত্তনে উল্লসিতহন, সেই শ্রীশচীতনয়কে আমি প্রণাম করি।

 

বিগলিত - নয়ন - কমল - জলধারং

ভূষণ - নবরস - ভাববিকারম্।

গতি - অতিমন্থর - নৃত্যবিলাসং

তংপ্রণমামিচশ্রীশচীতনয়ম্॥৪॥

অর্থাৎ,-যাঁর নয়নপদ্ম থেকে জলধারা বিগলিত হচ্ছে, নবনব অপ্রাকৃত রসাস্বাদ জনিত ভাব বিকার সমূহ যাঁরভূষণ, যাঁরগমন অতিধীর, যাঁরনৃত্যবিচিত্র, সেই শ্রীশচীতনয়কে আমি প্রণাম করি।

 

চঞ্চল - চারু - চরণ - গতি - রুচিরং

মঞ্জীর - রঞ্জিত - পদযুগ-  মধুরম্।

চন্দ্র - বিনিন্দিত - শীতলবদনং

তংপ্রণমামিচশ্রীশচীতনয়ম্॥৫॥

অর্থাৎ,-যাঁর চঞ্চল পদের গমন ভঙ্গি মনোহর, (মঞ্জীর) নূপুর যাঁর পদদ্বয়ের শোভা সম্পাদন করছে, যাঁর বদন চন্দ্র অপেক্ষা শীতল, সেই শ্রীশচীতনয়কে আমি প্রণাম করি।

 

ধৃত - কোটি - ডোর - কমণ্ডলু - দণ্ডং

দিব্য - কলেবর - মুণ্ডিত - মুণ্ডম্।

দুর্জ্জন - কল্মষ - খণ্ডন - দণ্ডং

তংপ্রণমামিচশ্রীশচীতনয়ম্॥৬॥

অর্থাৎ,-কটিদেশ ডোর (কৌপিন-বহির্বাস), হস্তে দণ্ড, কমণ্ডলু প্রভৃতি ভূষণে বিভূষিত যাঁর দিব্য কলেবর, মস্তক মুণ্ডিত, যাঁর দণ্ডধারণ দুর্জ্জন গণের পাপ খণ্ডনেরজন্য, সেই শ্রীশচীতনয়কে আমি প্রণাম করি।

 

ভূষণ - ভূরজ - অলকা - বলিতং

কম্পিত - বিম্বাধরবর - রুচিরম্।

মলয়জ - বিরচিত - উজ্জ্বল - তিলকং

তংপ্রণমামিচশ্রীশচীতনয়ম্॥৭॥

অর্থাৎ,-ধরণীরধূলিনির্মিত অলকা সমূহ যাঁর ভূষণ, যাঁর বিম্বফলের মতো অধর কম্পিত হচ্ছে, যাঁর ললাটে উজ্জ্বল মলয়জ-চন্দনের তিলক শোভা পাচ্ছে, সেই শ্রীশচীতনয়কে আমি প্রণামকরি।

 

নিন্দিত - অরুণ - কমল - দল - লোচনং

আজানুলম্বিত - শ্রীভুজ - যুগলম্।

কলেবর - কৈশোর - নর্ত্তক - বেশং

তংপ্রণমামিচশ্রীশচীতনয়ম্॥৮॥

অর্থাৎ,-যাঁর নেত্রযুগল রক্তপদ্মেরপত্র তুল্য, বাহুযুগল জানুদেশ পর্যন্ত আলম্বিত, কিশোর-শরীর, নর্ত্তকবেশ, সেই শ্রীশচীতনয়কে আমি প্রণাম করি।