🌳🌴🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚🌴🌳

💐🌻শ্রীশ্রীবলদেবের শুভ আবির্ভাব💐

🌳🌴🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚🌴🌳

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I আগামীকাল ১২ই আগস্ট রোজ শুক্রবার শ্রীকৃষ্ণের অষ্টম অবতার ভগবান বলরামের শুভ আবির্ভাব তিথি বা শুভ বলরাম জয়ন্তী। কৃপা করে সবাই একাদশী ব্রত যেমন পালন করা হয় তেমনই শ্রীশ্রীবলদেবের শুভ আবির্ভাব তিথি পালনের মাধ্যমে আদি গুরু বলরামে কৃপায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সান্নিধ্য লাভের আশির্বাদ লাভ করে মনুষ্য জীবন সার্থক করুন। ভগবান কৃষ্ণের স্বয়ং প্রকাশ বিগ্রহ হলেন বলরাম। যাঁহারা কৃষ্ণকৃপা ও কৃষ্ণভক্তি লাভ করতে চান - তাঁহারা অবশ্যই এই ব্রত পালন করিবেন। (পারণ - ২৭ শ্রাবণ, ১৩ আগষ্ট, শনিবার প্রাতঃ ০৫/৩০ মিঃ মধ্যে শ্রীবলদেবাবির্ভাব-পৌর্ণমাসীর পারণ।) আপনি নিজে পৌর্ণমাসীর ব্রত পালন করুন ও অন্যকে পালনে উৎসাহিত করুন।

 

‘’নমস্তে তু হলগ্রাম নমস্তে মুসলায়ুধ ।

নমস্তে রেবতীকান্ত নমস্তে ভক্ত - বৎসল ।।

নমস্তে বলিনাং শ্রেষ্ঠ নমস্তে ধরণীধর ।

প্রলম্বারে নমস্তে তু ত্রাহি মাং কৃষ্ণ - পূর্বজ ।।‘’

শ্রীবলদেব প্রভুর আবির্ভাব লীলা

মথুরায় কংসের কারাগারে শ্রীবসুদেব আর দেবকীদেবী যখন আবদ্ধ ছিলেন তখন তাদের ছয়টি সন্তানকে কংস পর পর হত্যা করেন। 'বৈবস্বত' - মন্বন্তররে আঠাস চতুর্যুগে দ্বাপর যুগ তথা কলিযুগের সন্ধিক্ষণে উনিস্বী অবতার ভগবান শ্রীবলরাম তথা কোড়ি অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যদুবংশে অবতীর্ণ হয়ে পৃথিবী মাতার দুঃখ নিবারণ করেছিলেন । শ্রীবলদেবজী প্রথমে দেবকী মাতার সপ্তম গর্ভে আবির্ভূত হয়ে সাত মাস অবস্থান করেন। তখন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ যোগমায়াদেবীকে আদেশ করেন,-

‘’দেবক্যাং জঠরে গর্ভ শেষাখ্যং ধাম মামকম ।

তৎ সন্নিকৃষ্য রোহিণ্যা উদরে সন্নিবেশয ।।''    (ভা ১০ / ২ - ৮)

অর্থাৎ,- হে জগৎপূজ্যে সর্ব্ব মঙ্গলে তুমি গোপ, গোপী ও গোগণ - সুশোভিত ব্রজে গমন কর। সেই নন্দ - গোকুলে  বসুদেব - মহিষী রোহিণীদেবী বাস করিতেছেন। বসুদেবের অন্যান্য পত্নীও কংসের ভয়ে ভীতা হইয়া সেই স্থানের নিভৃত প্রদেশে অবস্থান করিতেছেন। তুমি সেই স্থানে গমনপূর্বক দেবকীর উদরে আমার দ্বিতীয় স্বরূপ বা আশ্রয় সঙ্কর্ষণ, যিনি (অংশে ) শেষ সংজ্ঞায় সঙ্গিত হন তাঁহাকে অক্লেশে আকর্ষণ করিয়া অন্যের অলক্ষ্যে রোহিণীর উদরে সংস্থাপন কর।

 

শ্রীজীব গোস্বামী  দ্বারা রচিত 'শ্রীগোপালচম্পু' - গ্রন্থে শ্রীবলদেব প্রভুর আবির্ভাব সম্পর্কে এইরকম বর্ণনা আছে,-

''অত যোগমায়া রোহিণ্যাং সপ্তমাসিকং গর্ভ স্ত্রস্তং বিধায়

দেবক্যাং তদবিধং তং (গর্ভ ) তস্যাং নিয়োজয়ামাস।

ততশ্চ লব্ধ সর্বসময় - সম্পদেশে চতুর্দশে মাসি

শ্রাবণতঃ প্রাক শ্রবণরক্ষ সমস্ত সুখ –

রোহিণী রোহিণী গুণগণনয়া সুষমং সিতসুষমং সুতং সুষাব।।''

অর্থাৎ,- যোগমায়া রোহিণীদেবীর সপ্তম মাসের গর্ভকে নষ্ট করে দেবকী দেবীর সপ্তম মাসের গর্ভকে সঙ্কর্ষণ করে রোহিণীদেবীর  গর্ভে  স্থাপন করেন। তারপরে সমস্ত শুভসময় - সূচক চউদহ মাসে শ্রাবণমাসের প্রথম অর্ধে  শ্রবণ - নক্ষত্র - যুক্ত সময় অর্থাৎ পূর্ণিমা তিথিতে সমস্ত সুখলাভ কারিণী রোহিণীদেবী এক দিব্য সুন্দর শ্বেতবর্ণ পুত্র কে জন্ম দিয়েছিলেন।

 

শ্রীবলদেব তত্ত্ব এবং মহিমা

 শ্রী বলদেব প্রভুই শ্রীগৌর অবতারে পরম দয়ালু শ্রীমন্নিত্যানন্দ- প্রভু; তাহার কৃপা বিনা শ্রী গৌর হরি তথা শ্রী শ্রীরাধাকৃষ্ণ-চরণকমল লাভ নিতান্তই অসম্ভব-

       ‘’হেন নিতাই বিনে ভাই, রাধাকৃষ্ণপাইতে নাই,

                দৃঢ় করি' ধর নিতাইয়ের পায়।‘’

          সুতরাং গৌড়ীয় মহাজনগণের- নির্দেশানুসারে সাধকভক্তগণ অতিযত্নের সহিত শ্রীমন্নিত্যানন্দ প্রভু এবং শ্রীবলদেব-প্রভুর আবির্ভাব-কালে ব্রতোপবাস-পালনদ্বারা তাঁহার অহৈতুকী কৃপা প্রার্থনা করেন।

 

'স্বয়ংরূপ’  শ্রীগৌরকৃষ্ণের অভিন্ন ‘স্বয়ংপ্রকাশ’  শ্রীনিত্যানন্দ-বলদেব প্রভুই ‘মূল-সঙ্কর্ষণ। তিনিই-‘সঙ্কর্ষণ’  এবং  ‘কারণাব্ধিশায়ী’  ‘গর্ভোদকশায়ী’ - ক্ষীরাব্ধীশায়ী’ পুরুষাবতার-ত্রয় ও সহস্রফণাযুক্ত ‘অনন্তদেব’  বা ‘শেষ’ এই বিষ্ণু তত্ত্ব - বর্গর  মূল আকর বা অংশী। ''শ্রীনিত্যানন্দ- সঙ্কর্ষণ প্রভু স্বয়ং বিষ্ণু -পরতত্ত্ব বস্তু; সুতরাং সমান ধর্মবসতঃ স্বয়ংরূপ' শ্রীকৃষ্ণেরই প্রকাশ -বিশেষ। অর্থাৎ সমগ্ৰ চিৎসত্তা বা শুদ্ধসত্ত্ব প্রাকট্য-বিধায়িনী-  সন্ধিনী’  শক্তির অধিষ্ঠাতৃ দেবতাই- শ্রীনিত্যানন্দ - বলরাম।

''অতএব আগে বলরামের স্তবন।

করিলে সে -মুখে স্ফুরে চৈতন্য-কীর্ত্তন।।    (চৈ: ভা: আ: ১ / ১৪)

 

শ্রীল নরোত্তম ঠাকুর বলিয়াছেন,-

''আর কবে নিতাই চাঁদের করুণা হইবে ।

সংসার -বাসনা মোর কবে তুচ্ছ হবে ।।''

তাঁহারা শ্রীবলদেবকে বিষয়বিগ্ৰহ-তত্ত্ব-শ্রীবিষ্ণুতত্ত্ব বলিয়া না জানিয়া তাঁহার ভোক্তৃত্ব অপসারণ করিতে প্রয়াস - পায়, তাঁহারা অনভিজ্ঞতা-দোষে দুষ্ট। ‘’শ্রীমদ্ভাগবতে ১০ম স্কন্ধে ৩৪ ও ৬৫ তম অধ্যায়ে- এবং ৫ম স্কন্ধে ১৭ ও ২৫শ অধ্যায়ে, ৬ষ্ঠ স্কন্ধে- ১৬শ অধ্যায়ে সকল জীবের সেব্যতত্ত্ব শ্রীবলরামের বা সঙ্কর্ষণের মহিমা প্রকাশিত হইয়াছে। তাঁহাতে যাঁহারা উদাসীন থাকে, তাঁহারা কখনও ভক্তিমার্গে উন্নতি লাভ করিতে পারে না। তাঁহারা নিজ মনোধর্ম জাত মায়িক বিচারকার্যে অপ্রাকৃত বিষ্ণু তত্ত্বের- আকর -স্বরূপ শ্রীবলরাম বা সঙ্কর্ষণ-তত্ত্বে প্রবেশ- লাভ করিতে অসমর্থ।‘’ (শ্রীশ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত- সরস্বতী ঠাকুর প্রভুপাদ)।

 

দুই মায়ের উদর জাত এই শ্রীশ্রীবলদেব যিনি কলিযুগে শ্রীমনিত্যানন্দ প্রভু হিসাবে জন্মগ্রহন করেছেন।
"আনের কি কথা, বলদেব মহাশয়।
যার ভাব-শুদ্ধসখ্য-বাৎসল্যাদিময়।
তেহ আপনাকে করেন দাস-ভাবনা।
কৃষ্ণদাস- ভাব বিনু আছে কোন জনা।
সহস্র-বদনে যেঁহো শেষ সংকর্ষন।
দশ দেহ ধরি করে কৃষ্ণর সেবন।।   (চৈঃচঃআঃ৬।৭৪-৭৬)

তিনি সখা, ভাই, বস্ত্র, গৃহ, ব্যজন, শয্যা, আসন, ছত্র ও ভুষন হয়ে কৃষ্ণকে সেবা করেন। চৈতন্যচন্দ্রের প্রিয় বিগ্রহ বলাই। বলরামের কাজই হচ্ছে কৃষ্ণকে প্রসন্নতা প্রদান করা। যা কিছু কৃষ্ণের সেবার জন্য ব্যবহার করা হয়, তা প্রকৃতপক্ষে বলরামের প্রকাশ। যখন কৃষ্ণের গর্ভ সমুদ্রে শয়ন করার প্রয়োজনীয়তা হয়, তখন বলরাম সর্পরূপে তাঁর শয্যায় পরিণত হন,অনন্তশায়ী। এইভাবে বলরাম কৃষ্ণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করেন। বৃন্দাবনে কৃষ্ণ হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান এবং তাঁর প্রথম বিস্তার হচ্ছেন বলরাম। তারপর তিনি দ্বারকায় বাসুদেব,সঙ্কর্ষণ,প্রদ্রুম্ন এবং অনিরুদ্ধ রূপে বিস্তারিত করেছেন। এভাবে আমরা দেখতে পাই কৃষ্ণ লীলাতে বলরামের ভূমিকা ছিল।

 

 বৃন্দাবনে তিনি কৃষ্ণের বড় ভাই,তিনি কৃষ্ণের দেখাশোনা করতেন। বলরামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেবা হচ্ছে, তিনি জীবদের কৃষ্ণের দিকে আকর্ষিত করেন। এই জন্য বলরাম হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ প্রচারক। বলরাম হচ্ছেন আদি গুরু,তিনি সবাইকে কৃষ্ণের দিকে আকর্ষণ করান। যেমন একজন কৃষক জমি চাষ করার পর তাঁর জমির সকল ফসল সংগ্রহ করেন, ঠিক তেমন বলরাম সমস্ত জীবের ফসল সংগ্রহ করার পর তা কৃষ্ণের কাছে পৌঁছে দেন। এজন্য বলরাম হচ্ছেন আদি গুরু এবং সকল গুরুরা তাঁর বিস্তার বলে বিবেচিত হন। সে জন্য বলরাম জয়ন্তী আমাদের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। একমাত্র বলরামের কৃপার ফলে আমরা কৃষ্ণের কাছে ফিরে যেতে পারব।

বলদেবাভিন্ন বিগ্রহ শ্রীমনিত্যানন্দ প্রভু কলিযুগে শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভু কর্তৃক মহামন্ত্র নাম প্রচারের দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
"যারে দেখে তারে কহে দন্তে তৃন ধরি।
আমারে কিনিয়া লহ ভজ গৌরহরি।
এত বলি নিত্যানন্দ ভুমে গড়ি যায়।
সোনার পর্ব্বত যেন ধুলাতে লোটায়।
হেন অবতারে যার রতি না জন্মিল।
লোচন বলে সেই পাপী এলআর গেল"
হরিভক্তি বিলাস" গ্রন্থ অনুযায়ী শ্রীল প্রভুপাদ ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত আকর মঠরাজ শ্রীচৈতন্য মঠ ও তৎশাখা মঠসমূহে সমস্তদিন উপবাস থেকে সন্ধ্যায় অভিষেক, অনুকল্পান্তে পরদিবস পারণ করা হয়। বৈষ্ণব চরনে মোর এই মনস্কাম। ভজি যেন জন্মে জন্মে প্রভু বলরাম ।

 

হরি হরি! বিফলে জনম গড়াইনু ।

মনুষ্য জনম পাইয়া,    রাধাকৃষ্ণ না ভজিয়া,

জানিয়া শুনিয়া বিষ খাইনু ।।

 

গোলোকের প্রেমধন,    হরিনাম-সংকীর্ত্তন,

রতি না জন্মিল কেনে তায় ।

সংসার-বিষানলে,    দিবানিশি হিয়া জ্বলে,

জুড়াইতে না কৈনু উপায় ।।

 

ব্রজেন্দ্রনন্দন যেই,    শচীসুত হৈল সেই,

বলরাম হৈল নিতাই ।

দীনহীন যত ছিল,    হরিনামে উদ্ধারিল,

তার সাক্ষী জগাই - মাধাই ।।

 

হা হা প্রভু নন্দসুত,    বৃষভানুসুতাযুত,

করুণা করহ এইবার ।

নরোত্তম দাস কয়,    না ঠেলিহ রাঙ্গা পায়,

তোমা বিনে কে আছে আমার ।।

💐জয় শ্রীবলদেব প্রভুর জয়💐জয় শ্রীরোহিণীমাতার জয়💐