Thursday, November 24, 2022

🌳🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚🌳

🌷পরম দুর্ল্লভ মানব - জীবন🌷

🌳🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚🌳

বিশেষ পোষ্ট

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ I’’

গুরবে গৌরচন্দ্রায় রাধিকায়ৈ তদালয়ে।

কৃষ্ণায় কৃষ্ণভক্তায় তদ্ভক্তায় নমো নমঃ।।

 

মানব জীবনের অন্তিম গতি ভগবদ্বাম

আমরা দেখি জগতে সকলেই উচ্চপদ এবং ভোগ ঐশ্বৰ্য্য লাভের জন্য চেষ্টা করছে প্ৰত্যেকেই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হইতে চায়। এই জগতে আমরা কি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবার জন্য এসেছি ? এই দেব - দুর্ল্লভ মানব - জীবনের পরম উদ্দেশ্য কি ?

প্ৰকৃতপক্ষে জীবনের পরম উদ্দেশ্য হচ্ছে আত্ম - উপলব্ধি তথা ভগবৎ - উপলব্ধি, যার মাধ্যমে জড় জীবনের দুঃখ - দুৰ্দশার চির অবসান হয়। ভগবদ্ভক্তি সাধন করে কৃষ্ণভাবনা জাগ্রত করে শ্রীভগবানের কাছে ফিরে যাওয়াই হচ্ছে জীবনের পরম অন্তিম উদ্দেশ্য। ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে ভুলে থাকার জন্য এই জড় জগৎরুপ জেলখানায় আমরা ত্রিতাপ দুঃখ ভোগ করছি। এখানে জীবসমূহ অজ্ঞানতার ফলে কৃষ্ণ - বিস্মৃতির জন্য সংসার-চক্ৰে নিদারুণ কষ্টভোগ করে চলেছে

‘’কৃষ্ণ ভুলি যেই জীব অনাদি বহির্মুখ।

অতএব মায়া তারে দেয় সংসার দুঃখ।।‘’ চৈতন্যচরিতামৃত( মধ্য ২০/১১৭)

‘’ তে বিদুঃ স্বার্থগতিং হি বিষ্ণুং,

দুরাশয়া যে বহিরর্থমানিনঃ।

অন্ধাঃ যথান্ধৈরুপনীয়মানা-

স্তেহপীশতন্ত্র্যামুরুদাম্নি বদ্ধাঃ।।‘’ (ভাগবত //৩১)

অর্থাৎ,- যারা জড় জগৎকে ভোগ করার বাসনার দ্বারা আবদ্ধ এবং তাই যারা তাদেরই মত বিষয়াসক্ত অন্ধ ব্যক্তিকে তাদের নেতা বা গুরুরূপে বরণ করেছে, তারা বুঝতে পারে না যে, জীবনের প্রকৃ্ত উদ্দেশ্য হচ্ছে ভগবৎ-ধামে ফিরে যাওয়া এবং ভগবান শ্রীবিষ্ণুর সেবায় যুক্ত হওয়া। অন্ধের দ্বারা পরিচালিত হয়ে অন্ধরা যেমন প্রকৃ্ত পথের সন্ধান না জেনে অন্ধকূপে পতিত হয়, তেমনই জড় বিষয়াসক্ত ব্যক্তিরা অন্য বিষয়াসক্ত ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে সকাম কর্মরূপ অত্যন্ত দৃঢ় রজ্জুর বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং সংসারচক্রে বারবার আবর্তিত হয়ে ত্রিতাপ দুঃখ ভোগ করতে থাকে।

 

''অশিতিং চতুরশ্চৈব লক্ষাংস্তাঞ্জীব জাতিষু।

ভমদ্ভিঃ পুরুষৈঃ প্রাপ্যং মানুষ্যং জন্মপর্যায়াৎ।।

তদপ্যভলতাং জাতঃ তেষামাত্মাভিমানিনাম্।

বরাকাণামনাশ্রিত্য গোবিন্দচরণদ্বয়ম্।।'' (ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ)

অর্থাৎ,- ক্রমবিকাশের ক্রমিক পর্যায়ে চুরাশি লক্ষ যোনি ভ্রমণ করার পর জীব মনুষ্য-দেহ লাভ করে। এত দুর্লভ এই মনুষ্য জন্ম পেয়েও গণ্ডমূর্খ ব্যক্তিরা শ্রীগোবিন্দের চরণকমল যুগলের আশ্রয় গ্রহণ না করে তা হেলায় নষ্ট করে।

 

''লব্ধা সুদুর্লভমিদং বহুসম্ভবান্তে

মানুষ্যমর্থদমনিত্যমপীহ ধীরঃ।

তূর্ণং যতেত পতেদনুমৃত্যু যাব-

ন্নিঃশ্রেয়সায় বিষয়ঃ খলু সর্বতঃ স্যাৎ।।'' (ভাগবত ১১//২৯)

অর্থাৎ,- বহু জন্ম - মৃত্যুর পর জীব এই মনুষ্যদেহ লাভ করে, যা অনিত্য হওয়া সত্ত্বেও জীবকে পূর্ণসিদ্ধি লাভের সুযোগ প্রদান করে। অতএব ধীর ব্যক্তির কর্ত্তব্য হচ্ছে অবিলম্বে এই পূর্ণসিদ্ধি লাভের জন্য প্রযত্ন করা এবং কখনই জন্ম - মৃত্যুর চক্রে পতিত হওয়া উচিত নয়। ইন্দ্রিয় ভোগের বিষয় তো জঘন্যতম প্রজাতিদের মধ্যেও সুলভ, পক্ষান্তরে কৃষ্ণভাবনামৃত শুধু মানব - জীবনেই লাভ করা সম্ভব।

 

''নৃ্দেহমাদ্যং সুলভং সুদুর্লভং

প্লবং সুকল্পং শুরুকর্ণধারম্

ময়ানুকূলেন নভস্বতেরিতং

পুমান্ ভবাব্ধিং তরেৎ আত্মহা।।'' (ভাগবত ১১/২০/১৭)

অর্থাৎ,- সমস্ত প্রকার সুফলের মূলস্বরূপ সুদুর্লভ এই মনুষ্যজন্ম প্রকৃ্তির নিয়মে সুলভে লাভ করা যায়। এই মনুষ্যদেহ এক সুপরিকল্পিত নৌকার মতো, গুরুদেব হচ্ছেন সুদক্ষ কর্ণধার এবং পরমেশ্বরের বাণী হচ্ছে অনুকূল বায়ু। এত সুযোগ সত্ত্বেও যে মানুষ এই মনুষ্য - জন্মের সদ্ব্যবহার করে না সে আত্মঘাতী।

 

''আহারনিদ্রাভয়মৈথুনং

সামান্যমেতদ্ পশুভির্নরাণাম্।

ধর্মোঃ হি তেষামধিকো বিশেষো

ধর্মেণ হীনাঃ পশুভিঃ সমানাঃ।।'' (হিতোপদেশ)

অর্থাৎ,- আহার, নিদ্রা, ভয় মৈথুন - এই চারটি কর্ম মানুষ পশুর মধ্যে সমানভাবে বর্ত্তমান। কিন্তু মানুষের অধিকতর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, তারা পারমার্থিক অনুশীলনে নিযুক্ত হইতে সক্ষম। অতএব পারমার্থিক জীবন তথা ধর্ম ছাড়া মানুষ পশুর সমান।

 

''কামস্য নেন্দ্রিয়প্রীতির্লাভো জীবেত যাবতা।

জীবস্য তত্ত্বজিজ্ঞাসা নার্থো যশ্চেহ কর্মভিঃ।।'' (ভাগবত //১০)

অর্থাৎ,- ইন্দ্রিয়সুখ ভোগকে কখনই জীবনের উদ্দেশ্য বলে গ্রহণ করা উচিত নয়। সুস্থ জীবন যাপন করা অথবা আত্মাকে নির্ম্মল রাখার বাসনাই কেবল করা উচিত, কেন না মানব-জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে পরমতত্ত্ব সম্বন্ধে অনুসন্ধান করা। ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কর্ম করা উচিত নয়।

''প্রবৃত্তিরেষা ভূতানাং নিবৃত্তিস্তু মহাফলম্।'' (মনু সংহিতা)

অর্থাৎ,- এই জড় জগতে সকলেই প্রবৃত্তি মার্গের প্রতি আসক্ত হয়, কিন্তু নিবৃত্তি মার্গের অনুগমন করেই মহত্তম সম্পদ লাভ করা যায়।

 

''যো বা এতদক্ষরং গার্গি বিদিত্বাস্মাল্লোকাৎ প্রৈতি ব্রাহ্মণঃ।।'' (বৃহদারণ্যক উপঃ //১০)

অর্থাৎ,- যিনি জীবনের মূল সমস্যার (জন্ম, মৃত্যু, জরা ব্যাধির) সমাধান সম্পর্কে অবগত হয়ে দেহত্যাগ করেন, তিনিই ব্রাহ্মণ।

''অসতো মা সদ্গময় তমসো মা জ্যোতির্গময় মৃত্যোর্মামৃতং গময়।''

(বৃঃ আরণ্যক উপঃ //২৮)

অর্থাৎ,- অসত্যে থেকো না, নিত্য সত্যের জগতে গমন কর। অন্ধকারে থেকো না, জ্যোতির্ময় লোকে গমন কর। জড় দেহ গ্রহণ করে জন্ম - মৃত্যুর চক্রে ঘুরে মর না, অমরত্ব লাভ কর।

 

''কৌমার আচরেৎ প্রাজ্ঞো ধর্মান্ ভাগবতানিহ।

দুর্লভং মানুষং জন্ম তদপ্যধ্রুবমর্থদম্।।'' (ভাগবত //)

অর্থাৎ,- প্রাজ্ঞ ব্যক্তি মনুষ্যজন্ম লাভ করে জীবনের শুরু থেকেই, অর্থাৎ বাল্যকাল থেকেই অন্য সমস্ত প্রয়াস ত্যাগ করে ভাগবত - ধর্ম্ম অনুষ্ঠান করবেন। মনুষ্যজন্ম অত্যন্ত দুর্লভ এবং অন্যান্য শরীরের মতো অনিত্য হলেও তা অত্যন্ত অর্থপূর্ণ, কারণ মনুষ্য - জীবনে ভগবানের সেবা সম্পাদন করা সম্ভব। নিষ্ঠাপূর্বক কিঞ্চিৎ মাত্র ভগবদ্ভক্তির অনুষ্ঠান করলেও মানুষ পূর্ণসিদ্ধি লাভ করতে পারে।

(প্রহ্লাদ মহারাজ)

 

সুতরাং এই ভৌতিক জগতে উদ্দেশ্যহীন ভাবে চুরাশি লক্ষ যোনিতে পরিভ্ৰমণ করা বুদ্ধিমান ব্যক্তির কাজ নয়

) কৰ্মীর কৰ্মফল ,

) জ্ঞানীর নিৰ্বিশেষ মুক্তি ,

) যোগীর অষ্টসিদ্ধি প্ৰাপ্তি যেহেতু এই জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্ত করে না , তাই তা প্ৰকৃতই নিত্য মঙ্গলময় উদ্দেশ্য হতে পারে না মানব-জীবনের উদ্দেশ্য বা অন্তিম গতি হল ভগবদ্বামে ফিরে যাওয়া। যা শুধুমাত্র ভক্তিযোগের দ্বারা ভগবানের নাম, রুপ, গুণ লীলা শ্রবণ কীর্ত্তন করার মাধ্যমে সেখানে যাওয়া যায়।

 

সেই সম্বন্ধে ভগবদগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন,-

'' তদ্ ভাসয়তে সুর্যো শশাঙ্কো পাবকঃ,

যদ গত্বা নিবর্তন্তে তদ্ধাম পরমং মম।‘’ গীতা ১৫/

অর্থাৎ,- আমার সেই পরম চিন্ময় ধাম সূৰ্য , চন্দ্ৰ অথবা বিদ্যুতের আলোকের দ্বারা আলোকিত হয় না। যারা একবার সেই চিন্ময় ধামে ফিরে যায় , তারা আর কখনও এই পার্থিব জগতে ফিরে আসে না।

ভক্তিযোগ আরম্ভ হয় ''হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্ৰ'' কীর্ত্তনের মাধ্যমে এই সম্বন্ধে বৃহন্নারদীয় পুরাণে বলা হয়েছে,---

''হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামৈব কেবলম্

কলৌ নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব গতিরন্যথা।''

অনুবাদঃ ''এই কলিযুগের একমাত্ৰ পন্থা হরিনাম , হরিনাম , হরিনাম কীৰ্তন করা ছাড়া অন্য কোন গতি নেই , অন্য কোন গতি নেই , অন্য কোন গতি নেই''

 

শ্রীমন্মহাপ্রভু উপদেশ

''চেতোদর্পণমার্জনং ভবমহাদাবাগ্নি-নির্বাপণং

শ্রেয়ঃকৈরবচন্দ্রিকাবিতরণং বিদ্যাবধূজীবনম্।

আনন্দাম্বুধিবর্ধনং প্রতিপদং পূর্ণামৃতাস্বাদনং

সর্বাত্মস্নপনং পরং বিজয়তে শ্রীকৃষ্ণসংকীর্ত্তনম্।।''

অর্থাৎ,- চিত্তরূপ দর্পণের মার্জনকারী, ভবরূপ মহাদাবাগ্নি নির্বাপণকারী, জীবের মঙ্গলরূপ কৈরবচন্দ্রিকা বিতরণকারী, বিদ্যাবধূর জীবনস্বরূপ, আনন্দ-সমুদ্রের বর্ধনকারী, পদে পদে পূর্ণামৃতাস্বাদনস্বরূপ এবং সর্বস্বরূপে শীতলকারী শ্রীকৃষ্ণ - সংকীর্ত্তন বিশেষরূপে জয়যুক্ত হোন। আসুন আমরা বিষয়চিন্তা বাদ দিয়ে হরি নাম নিষ্ঠা সহকারে জপ কীর্ত্তন করি।

হরে"কৃষ্ণ"হরে"কৃষ্ণ"কৃষ্ণ"কৃষ্ণ"হরে"হরে I

হরে"রাম"হরে"রাম"রাম"রাম"হরে"হরে।।

জয় শ্রীরাধাকৃষ্ণের জয়। জয় শচীনন্দন গৌরহরির জয়।।


 

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...