🦚💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐🦚

🌷শুভ আবির্ভাব ব্যাসপূজা 🌷

🦚💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐🦚

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I হরে কৃষ্ণ, আজ বিশেষ শুভদা তিথি।, পরম ভাগবতবর শ্রীল ভক্তিদয়িত মাধব গোস্বামী মহারাজের অন্তরঙ্গ পার্ষদ বিশ্বব্যাপী শ্রীচৈতন্য গৌড়ীয় মঠের পূর্বতন আচার্য্য, গৌড়ীয় সিংহ পুরুষ খ্যাত মহাতেজস্বী বৈষ্ণব মহাজন, বৈষ্ণবকুল চূড়ামণি পরমারাধ্যতম পতিতপাবন পরমকরুণাময় শ্রীনিত্যানন্দের - অভিন্ন - প্রকাশ, ভাগবত - জ্ঞান – প্রদাতা, ভগবানের - সেবায় - অধিকার - প্রদানকারি অস্মদীয় গুরুপাদপদ্ম, ওঁ বিষ্ণুপাদ পরিব্রাজকাচার্য্য ত্রিদণ্ডি স্বামী ১০৮ শ্রী - শ্রীমদ্ভক্তিসৌরভ আচার্য্য গোস্বামী গুরুমহারাজের ৮২ তম শুভ আবির্ভাব তিথি পূজা। পরম বৈষ্ণব শ্রীরাধাকৃষ্ণের নিত্য সখা শ্রীল সারঙ্গ ঠাকুর ও শ্রীকালিয়া কৃষ্ণদাস মহাশয়ের শুভ বিরহ তিথি।

 

শ্রী শ্রীমদ্ভক্তিসৌরভ আচার্য্য গোস্বামী গুরুমহারাজের উপদেশাবলী,-

০১-শ্রীভগবানের ও তদ্ভক্তের শুভাবির্ভাব ও তিরোভাব তিথিদ্বয় মহোৎসব রূপে পালন করিলে অথবা যেখানে পালিত হয়, সেখানে যোগদান করিলে আধ্যাত্ম জীবনের উন্নয়ন ও এ বিষয়ে অনুরাগ ক্রমশঃ বর্ধিত হয়।

 

‘’জন্ম কর্ম চ মে দিব্যম এবম যো বেত্তি তত্ত্বতঃ ।

ত্যত্ত্বা দেহম পুনর্জন্ম নৈতি মামেতি সঃ অর্জুন ।।‘’   (গীতা- ৪/৯)

অর্থাৎ,-  হে অর্জুন, যিনি আমার এই প্রকার দিব্য জন্ম এবং কর্ম যথাযথ ভাবে জানেন, তাঁকে আর দেহ ত্যাগ করার পর পুনরায় জন্মগ্রহণ করতে হয় না, তিনি আমার নিত্যধাম লাভ করেন।

 

০২-শ্রীভগবান ও তদ্ভক্তের জন্য যে সময়, অর্থ ও দৈহিক কষ্ট স্বীকার করি,-তাহা নিত্য ভগবৎ ধামে সঞ্চিত থাকে । আমাদের শক্তি ও সামর্থ্য যাহা কিছু ভগবদুদ্দেশ্যে ব্যয়িত হয়, তাহার সুফল আমরা আগামী জীবনে লাভ করিতে পারি।

''তোমার সেবায় দুঃখ হয় যত,সেই ত পরম সুখ।

সেবা সুখ দুঃখ পরম সম্পদ নাশয়ে অবিদ্যা দুঃখ।।''

 

০৩-ভগবৎ ভাবোন্মত্ততা, দেহ ও মনের সংযম, পবিত্রতা এবং যথার্থ ভগবৎ প্রীতির উদ্দেশ্যে বৈরাগ্য প্রধান মহাজন ও মহাপুরুষের নিস্কলঙ্কিত শুদ্ধ শ্রীকৃষ্ণ ভজন আদর্শময় জীবন চরিত্র প্রীতি পূর্বক শুদ্ধভক্তি লাভের উদ্দেশ্যে মনযোগ দিয়া নিত্য অনুশীলন, পরস্পর শ্রবণ, কীর্ত্তন ইত্যাদি করিলে অতি শীঘ্র জীবন পবিত্রতা লাভ করে এবং ভগবানের শুদ্ধভক্তির উদয় হয় । ইহা অপেক্ষা সহজ পথ আর নাই ।

''মহাজন যেন গত: স পন্থা ।।''

 

০৪-ভগবৎ তত্ত্বের সর্বোত্তম প্রকাশ স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁহার নিত্যলীলাধাম শ্রীবৃন্দাবনেই করিয়াছেন । শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্যের পূর্ণতম প্রকাশ সর্বোত্তম রসের উৎকর্ষ মধুর আশ্রয় বিগ্রহ ব্রজগোপী ভাবে বিভাবিত আনুগত্যে সেই অখণ্ড রসবল্লভ বিষয়বিগ্রহ স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে 'ভজনই' সাধনার চরম ও পরম লক্ষ্য।

 

‘’চেতোদর্পণমার্জনং ভবমহাদাবাগ্নি-নির্বাপণং,

শ্রেয়ঃকৈরবচন্দ্রিকাবিতরণং বিদ্যাবধূজীবনম্।

আনন্দাম্বুধিবর্ধনং প্রতিপদং পূর্ণামৃতাস্বাদনং,

সর্বাত্মস্নপনং পরং বিজয়তে শ্রীকৃষ্ণসংকীর্ত্তনম্।।‘’

অর্থাৎ,-  চিত্তরূপ দর্পণের মার্জনকারী, ভবরূপ মহাদাবাগ্নি নির্বাপণকারী, জীবের মঙ্গলরূপ কৈরবচন্দ্রিকা বিতরণকারী, বিদ্যাবধূর জীবনস্বরূপ, আনন্দ-সমুদ্রের বর্ধনকারী, পদে পদে পূর্ণামৃতাস্বাদনস্বরূপ এবং সর্বস্বরূপে শীতলকারী শ্রীকৃষ্ণ-সংকীর্ত্তন বিশেষরূপে জয়যুক্ত হোন।

 

০৫-মন্ত্রশ্রেষ্ঠ মহামন্ত্র যাহা গৌরহরি জগৎ কে প্রদান করিয়া ও শিখাইয়া গিয়াছেন সেই,---

''হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।''

এই মহামন্ত্রই জীব মাত্রেই ভক্তি ও প্রেমভরে রসনা যোগে উচ্চঃস্বরে কীর্ত্তনই আমাদের প্রধান সাধন । নিরন্তর শুদ্ধান্তঃ করেন সেই কৃষ্ণনাম কীর্ত্তন, শ্রবণ, মননের দ্বারা জীবের অনন্ত জীবনের নিখিল পাপ অচিরেই বিনাশ প্রাপ্ত হয়। এক জীবনেই শুদ্ধাত্মা সংসার মুক্ত হইয়া শ্রীকৃষ্ণধামে পরমানন্দময় প্রেম সেবা লাভ করেন।

 

‘’ন ধনং ন জনং ন সুন্দরীং কবিতাং বা জগদীশ কাময়ে।

মম জন্মনি জন্মনীশ্বরে ভবতাদ্ভক্তিরহৈতুকী ত্বয়ি।।‘’

অর্থাৎ,-  হে জগদীশ! আমি ধন, জন বা সুন্দরী রমণী কামনা করি না; আমি কেবল এই কামনা করি যে, জন্মে জন্মে তোমাতেই আমার অহৈতুকী ভক্তি হোক।

🏵️জয়🌷গুরুদেব🏵️জয়🌷গুরুদেব🏵️জয়🌷গুরুদেব🏵️

💐শ্রীল সারঙ্গ ঠাকুর💐

''ব্রজে নান্দীমুখী যাসীৎ সাদ্য সারঙ্গঠাকুরঃ।

প্রহ্লাদো মন্যতে কৈশ্চিন্মৎপিত্রা স ন মন্যতে ।।''    (গৌ: গ: দীপিকা )

 

ব্রজে যিনি নান্দীমুখী ছিলেন, তিনি এক্ষনে সারঙ্গ ঠাকুর। কোন কোন মহাত্মা তাঁহাকে প্রহ্লাদ বলিয়া মানেন। ঠাকুর সারঙ্গ দাস - শার্ঙ্গ ঠাকুর, শার্ঙ্গ পাণি, শার্ঙ্গধর এই নামেও পরিচিত। ইনি নবধাভক্তির পীঠস্বরূপ শ্রীনবদ্বীপধামের অন্তর্গত দাস্যভক্তিক্ষেত্র শ্রী মোদদ্রুম দ্বীপে (মামগাছিতে ) বাস করিতেন। ইনি গঙ্গা তীরে নির্জ্জনে তীব্র ভজন করিয়া অলৌকিক শক্তি লাভ করিয়াছিলেন। ভজনে বিঘ্ন হইবে আশঙ্কায় সারঙ্গ ঠাকুর প্রথমে শিষ্য না করার সংকল্প ছিল, কিন্তু শ্রীমন্মহাপ্রভুর পুনঃ পুনঃ প্রেরণা ক্রমে তিনি শিষ্য করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন।

 

শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর প্রভুপাদ শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতের অনুভাষ্যে ঠাকুরের চরিত্র  মাহাত্ম্য বর্ণনে লিখিয়াছেন,- শ্রীমন্মহাপ্রভুর কতৃক আদিষ্ট হইয়া শ্রীসারঙ্গ ঠাকুর সংকল্প গ্রহণ করিলেন; আগামীকাল প্রাতে যাঁহাকে তিনি দেখিবেন তাঁহাকেই শিষ্য করিবেন। ঘটনাচক্রে পরদিন প্রত্যুষে ভাগীরথী স্নানকালে তাঁহার পাদদেশে একটী মৃতদেহের স্পর্শ হয়। তিনি তাঁহাকেই পুনর্জীবন দান করিয়া শিষ্য করিলেন। এই শিষ্যটি 'শ্রীঠাকুর মুরারি' নামে প্রসিদ্ধ হইলেন। শ্রীশার্ঙ্গের নামের সহিত 'মুরারি' যুক্ত হইয়া শার্ঙ্গমুরারি এইরূপ নাম হইল।

 

শার্ঙ্গ ঠাকুরের প্রাচীন সেবা মামগাছি গ্রামে বিদ্যমান। একটি প্রাচীন বকুল বৃক্ষের সম্মুখে মন্দির নির্মিত হইয়াছে। শ্রীসারঙ্গ ঠাকুরের পূজিত শ্রীরাধাগোপীনাথ বিগ্রহ এখনও তথায় সেবিত হইতেছেন । শ্রীগৌর পার্ষদ শ্রীবাসুদেব দত্ত ঠাকুরের সেবিত বিগ্রহ শ্রীমদনগোপালও উক্ত মন্দিরে বিরাজিত আছেন। শ্রীনবদ্বীপধাম পরিক্রমাকালে পরিক্রমাকারী ভক্তগণ উহা দর্শন করিয়া থাকেন। উক্ত শার্ঙ্গ  মুরারীর শ্রীপাটের নিকটেই শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী প্রতিষ্ঠিত শ্রীবৃন্দাবন দাস ঠাকুরের শ্রীপাট। অগ্রহায়ণ মাসের কৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে শ্রীসারঙ্গ ঠাকুরের তিরোধান হয় I

 

💐শ্রীকালিয়া কৃষ্ণদাস💐

''প্রসিদ্ধ কালিয়া - কৃষ্ণদাস ত্রিভূবনে ।

গৌরচন্দ্র লভ্য হয় যাঁহার স্মরণে ।।''

'কালঃ শ্রীকৃষ্ণদাসঃ স যো লবঙ্গঃ সখা ব্রজে ।।'

শ্রীকালাকৃষ্ণ দাস শ্রীকৃষ্ণলীলায় দ্বাদশগোপালের অন্যতম লবঙ্গ সখা ছিলেন। ইঁহার শ্রীপাট পশ্চিম বঙ্গের বর্ধমান জেলার কাটোয়া থানার আকাইহাটি গ্রামে।

 

শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে অনুভাষ্যে লিখিয়াছেন,- 'পাবনা জেলা অন্তর্গত বেড়াবন্দরের প্রায় তিন মাইল পশ্চিমে ইছামতী নদীর উত্তরতীরে 'সোনাতলা' গ্রামনিবাসী 'গোস্বামী' মহাশয়গণের মতে কালা - কৃষ্ণদাস ঠাকুর বারেন্দ্র শ্রেণীর ব্রাহ্মণ কুলোদ্ভূত ভরদ্বাজ - গোত্র এবং ভাদড়গ্রামী। আকাইট হইতে কালা - কৃষ্ণদাস ঠাকুর হরিনাম প্রচার উপলক্ষে পাবনায় আগমন করেন। যে স্থানে তিনি আশ্রয় করেন, সেই মাঠে এখনও গৃহাদির ভগ্ন-চিহ্ন আছে। তিনি এই দেশে বিবাহ করেন এবং কিছুদিন পরে তিনি পুনরায় আকাইহাটে ও শ্রীবৃন্দাবনে গমন করেন।'

 

ইঁহার দুইপুত্র 'শ্রীমোহনদাস' ও শ্রীগৌরাঙ্গদাস' অথবা অপর নাম শ্রীবৃন্দাবনদাস। ইঁহার বংশধরগণ এখনও পাবনা জেলায় সোনতলা গ্রামে আছেন। সোনতলা গ্রামে কৃষ্ণা - দ্বাদশী তিথিতে কালা - কৃষ্ণদাস ঠাকুর তিরোভাব উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ইঁহার সেবিত বিগ্রহের নাম শ্রীকালাচাঁদ জীউ। সোনাতলায় শ্রীপাটের ভিটা, মন্দিরের ইট ও পুস্করিণীর ঘাট আজও দৃষ্ট হয়।

 

ঠাকুর বৈষ্ণবগণ,   করি এই নিবেদন,

মো বড় অধম দুরাচার ।

দারুণ - সংসার - নিধি        তাহে ডুবাইল বিধি,

কেশে ধরি' মোরে কর পার ।।

বিধি বড় বলবান,    না শুনে ধরম - জ্ঞান

সদাই করম - পাশে বান্ধে ।

না দেখি তারণ লেশ,    যত দেখি সব ক্লেশ,

অনাথ, কাতরে তেঁই কান্দে ।।

কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ,              মদ, অভিমান সহ,

আপন আপন স্থানে টানে ।

ঐছন আমার মন,  ফিরে যেন অন্ধজন,

সুপথ - বিপথ নাহি জানে ।।

না লইনু সৎ মত,    অসতে মজিল চিত,

তুয়া পায়ে না করিনু আশ ।

নরোত্তমদাসে কয় দেখি' শুনি' লাগে ভয়,

তরাইয়া লহ নিজ - পাশ ।।