🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚

🌷🍁শ্রীশ্রী শিক্ষাষ্টকম🍁🌷

🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚

খুব গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট 

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’তুণ্ডে তাণ্ডবিনী রতিং বতনুতে তুণ্ডাবলী লব্ধয়ে।

কর্ণ ক্রোড়কড়ম্বিনী ঘটরতেকর্ণা র্ব্বুদেভ্যঃ স্পৃহাংI I

চেতঃ প্রাঙ্গণসঙ্গিনী বিজয়তে সৰ্ব্বেন্দ্রিয়াণাং কৃতিং।

নোজানে জনিত কিয়ন্তিরমৃতৈঃ কৃষ্ণেতিবর্ণদ্বয়ীI I‘’

অর্থাৎ,- ''কৃষ্ণ'' এই দুইটি বর্ণ যে কিপরিমাণ অমৃতদিয়া গঠিত হইয়াছে তাহা জানিনা । যখন ইহা রসনাতে নৃত্য করিতে থাকে, তখন আরও বহু রসনা লাভ করিতে ইচ্ছাহয়, যখন কর্ণরন্ধ্রে অঙ্কুরিত হয়, তখন অৰ্ব্বুদ সংখ্যক কৰ্ণ পাইবার জন্য স্পৃহা জন্মে; এবং চিত্ত প্রাঙ্গণে প্রবিষ্ট হইলে সমুদায় ইন্দ্রিয় ব্যাপার ইহার নিকট পরাস্ত হইয়া যায় ।  এই মাধুর্য্য- রস সিঞ্চিত হরিনাম- মাহাত্ম্য- ব্যঞ্জক অপূর্ব শ্লোক পাঠ করিতে করিতে প্রেমরসময় গৌরচন্দ্রের ভক্তগণ প্রেমাবিষ্ট হইয়া পড়েন ।

 

🌷শ্রীশ্রী শিক্ষাষ্টকম পঞ্চম পর্ব্ব🌷

কবিরাজ গোস্বামী বলিয়াছেন,-

"উদ্বেগে দিবস না যায়, ‘ক্ষণ’ হইল ‘যুগসম’ ।

বর্ষার মেঘ প্রায় অশ্রু বর্ষে দু’নয়ন ॥  

গোবিন্দ - বিরহে শূন্য হৈল ত্রিভুবন ।

তুষানলে পোড়ে, যেন না যায় জীবন ।।”

এই প্রকারে ভাবিতে ভাবিতে দিন যায় কিন্তু বিরহ অগ্নিতে পোড় খাইয়া তখন সাধক আরও উন্নত হইতে থাকে । তখন ঈর্ষা, উৎকণ্ঠা, দৈন্য পৌঢ়ি, বিনয় একত্রে উদয় হওয়ায় সাধক স্থির হইতে পারে না, কাজেই প্রাণবল্লভ শ্রীগোবিন্দের জন্য প্রাণ কেমন হইয়া উঠে, এই ভাবটী দেখাইতে শ্রীমতি রাধিকার অবস্থা স্মরণ করিয়া শ্ৰীমন্মহাপ্ৰভু সেই ভাবের শ্লোক বলিয়া ভক্তগণের আনন্দ বৰ্দ্ধন করিলেন ।

 

“আশ্লিষ্য বা পাদরতাং পিনষ্টু

মামদর্শনান্নৰ্ম্মহতাং করোতু বা ।

যথা তথা বা বিদধাতু লম্পটো

মৎপ্রাণ নাথস্তু স এব নাপরঃ I I ৮ I I ”

শ্ৰীচরণাশ্রিতা কিঙ্করী আমাকে (শ্রীরাধাকে) শ্রীকৃষ্ণ আলিঙ্গন করিয়া নিজেতে পৰ্য্যাপ্ত করুন, অথবা অদর্শন দ্বারা মৰ্ম্মাহত করুন অথবা লম্পট চূড়ামণি, আমাকে পরিত্যাগ করিয়া যথাতথা অপর নায়িকার সহিত বিহার করুন তথাপি তিনিই আমার এক মাত্র ভরসা, তিনিই আমার প্রাণনাথ অপর কেহ নহে ।  

 

আমি- কৃষ্ণপদ দাসী, -রস-সুখরাশি,

আলিঙ্গিয়া করে  আত্মসাথ ৷  

কিবা না দেয় দরশন,  না জানে মোর তনুমন,

তবু তিঁহো মোর প্রাণনাথ ।।  

সখি হে ! শুন মোর মনের নিশ্চয় ।

প্রিয় অনুরাগ করে, কিবা দুঃখ দিয়া মারে

মোর প্রাণেশ্বর কৃষ্ণ, অন্য নয় ॥

মহাপ্রভু শিক্ষার চরমে এই যে শ্লোকটি শিক্ষাচ্ছলে উক্ত করিলেন ইহা চিত্র জল্পাদি দশবিধ প্রলাপের বিজল্প প্ৰলাপ, সাধকের এ একবিধ চরম অবস্থা।

 

শ্রীরাধা শ্রীকৃষ্ণের প্রতি তাঁহার অনুরাগের চরম দেখাইয়াছেন তিনি লম্পটাদি শব্দ প্রয়োগ করিলেও স্বয়ং যে তাঁহাতে গাঢ় অনুরাগবতী তাহা দেখাইয়াছেন, শ্রীকৃষ্ণের সুখেই যে তাঁহার সুখ, তিনি যে তাঁহার প্রাণনাথের সুখ ব্যতিরেকে আর কিছু চাহেন না , তিনি যে তাঁহাকে অশেষ প্রকারে দুঃখ প্রদান করিলেও তিনি কেবল তাঁহার সুখ চাহেন, ইহাই এখানে অভিব্যক্ত হইয়াছে । উক্ত ভাবে ভাবিত ভক্তেরও  এইরূপ অবস্থা । তিনি তাঁহার হৃদয়-বল্লভ শ্রীকৃষ্ণের সুখ ছাড়া আর কিছু চাহেন না।

 

শ্রীরাধার ঐ ভাবের বিষয় শ্রীকবিরাজ গোস্বামী শ্রীচরিতামৃতে লিখিয়াছেন,-

"না গণি আপন দুঃখ, সবে বাঞ্ছি তাঁর সুখ

তাঁর সুখে আমার তাৎপৰ্য্য ।

মোরে যদি দিয়ে দুঃখ, তাঁ হৈল মহাসুখ

সেই দুঃখ মোর সুখবর্ষ্য ।”

অর্থাৎ,- শ্ৰীকৃষ্ণ সুখেই আমার সুখ, আমাকে দুঃখ দিয়া সে সুখ পাইলেও আমার সুখ, কেননা তিনি আমার সুখদ প্রাণনাথ । এখানে শ্রীমন্মহাপ্রভুও এই প্রকারে নাম সাধনের চরম সিদ্ধাস্ত করিয়া যে সকল অমূল্য উপদেশ দিয়াছেন এদতিরিক্ত কাহারও কিছু বলিবার নাই । সাধনের দ্বারা এতাদৃশ প্রেম লাভই পঞ্চম পুরুষাৰ্থ বলিয়া শাস্ত্রে উক্ত হইয়াছে ।

 

শ্রীমন্মহাপ্রভু শিক্ষাষ্টকের যেভাবে উপদেশ করিয়াছেন সম্পূর্ণ তদনুযায়ী ব্যাখ্যা করিয়া লোকরঞ্জন করিবার ক্ষমতা আমার নাই, তবে সহৃদয় পাঠক মহোদয়গণ আপন আপন সহৃদয়তা গুণে ব্যাখ্যার ভাষার প্রতি লক্ষ্য না করিয়া ভাব গ্রহণে প্রাণে আনন্দ অনুভব করেন ইহাই আমার অভিলাষ এবং তৎসঙ্গে আমাকে একটু একটু শক্তির সঞ্চার করুন যেন অকপট প্রাণে, প্রাণের ঠাকুর শ্রীমন্মহাপ্রভুর প্রদর্শিত পথে চলিয়া জীবন জনম সার্থক করিতে পারি। শ্লোক ব্যাখ্যা করিতে যাইয়া আমি পদে পদে শ্লোকের মর্য্যাদা হানি করিয়া অপরাধী হইয়াছি বলিয়া মনে হয়, সকলে কৃপা করুন এবং আপনাপন গুরুদেবের কৃপাশক্তি লাভ করিয়া সাধন সম্পদে সমাসীন হইয়া শিক্ষাষ্টকের ভাব আপনাপন অন্তরে উপভোগ করুন। জয় জয় শ্রী শ্ৰীকৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভুর জয় । ইতি শ্ৰীশ্ৰীগৌর চন্দ্র প্রেমাম্বুধি মথনোদ্ভুত শিক্ষাষ্টকম্ সম্পূৰ্ণম্।

 

শ্রীশিক্ষাষ্টকম্

 (১)

চেতোদর্পণমার্জনং ভবমহাদাবাগ্নিনির্বাপণং

শ্রেয়ঃকৈরবচন্দ্রিকাবিতরণং বিদ্যাবধূজীবনম

আনন্দাম্বুধিবর্ধনং প্রতিপদং পূর্ণামৃতাস্বাদনং

সর্বাত্মস্নপনং পরং বিজয়তে শ্রীকৃষ্ণসঙ্কীর্তনম

(২)

নাম্নামকারি বহুধা নিজসর্বশক্তি

স্তত্রার্পিতা নিয়মিতঃ স্মরণে ন কালঃ I

এতাদৃশী তব কৃপা ভগবন্মমাপি

দুর্দ্দৈবমীদৃশ মিহাজনি নানুরাগঃ I I

(৩)

“তৃণাদপি সুনীচেন তবোরিব সহিষ্ণুনা।

অমানিনা মানদেন কীর্তনীয়ঃ সদা হরিঃ ॥৩॥”

 (৪)

“ন ধনং ন জনং ন সুন্দরীং

কবিতাং বা জগদীশ কাময়ে ।

মম জন্মনি জন্মনীশ্বরে

ভবতাদ্ভক্তিরহৈতুকী ত্বয়ি ॥৪৷”

 (৫)

“অয়ি নন্দতনুজ কিঙ্করং

পতিতং মাং বিষমে ভবাম্বুধৌ ।

কৃপয়া তব পাদ - পঙ্কজ

স্থিতধূলিসদৃশং বিচিন্তয় ॥৫৷”

 (৬)

“নয়নং গলদশ্রুধারয়া বদনং গদগদরুদ্ধয়া গিরা ।

পুলকৈর্নিচিতং বপুঃ কদা তব নামগ্রহণে ভবিষ্যতি ॥৬৷”

(৭)

“যুগায়িতং নিমেষেণ চক্ষুষা প্রাবৃষায়িতম। 

শূন্যায়িতং জগৎ সৰ্ব্বং গোবিন্দ- বিরহেণ মে।। ৭৷।”

 (৮)

“আশ্লিষ্য বা পাদরতাং পিনষ্টু

মামদর্শনান্নৰ্ম্মহতাং করোতু বা ।

যথা তথা বা বিদধাতু লম্পটো

মৎপ্রাণ নাথস্তু স এব নাপরঃ I I ৮ I I”

 

প্রভুর’ শিক্ষাষ্টক’  শ্লোক যে‌ই পড়ে, শুনে,

কৃষ্ণে প্রেম-ভক্তি তার বাড়ে দিনে-দিনে  I I

(সমাপ্ত )