💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐

💞🌷🦚শরণাগতি🦚🌷💞

💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’গুরু - বৈষ্ণব  - ভগবান তিনিহেঁ স্মরণ ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে হয় সর্ববিঘ্ন বিনাশন ।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ  I I’’

 

আজানুলম্বিত – ভুজৌ কনকাবদাতৌ,

সংকীর্ত্তনৈকপিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ ।

বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম্মপালৌ,

বন্দে জগৎ প্রিয়করৌ করুণাবতারৌ ।।

 

🌷💞🌷

গীতার চরম শিক্ষা ''শরণাগতি''। শ্ৰীরূপ গোস্বামী প্ৰভু ‘ভক্তিরসামৃত সিন্ধু’তে শরণাগতির সর্বোত্তম অবস্থা বর্ণনা করেছেন। ঠাকুর ভক্তিবিনোদ তাঁর আদর্শ-চরিত্রে ও শিক্ষায়, শরণাগতি সম্বন্ধে বিভিন্ন প্ৰবন্ধে ও তাঁর স্বরচিত গীতি-গ্রন্থে শরণাগতির ছয়টি লক্ষণের অভূতপূৰ্ব্ব বিশ্লেষণ করেছেন। এগুলি হলো,-

 

 (১) কৃষ্ণকে গোপ্তৃত্বে  বরণ,*

 (২)  দৈন্য,

 (৩) আত্ম - নিবেদন,

 (৪) ‘কৃষ্ণ অবশ্য রক্ষা করবেন’ — এই বিশ্বাস, 

 (৫) ভক্তির আনুকূল্য স্বীকার ও

 (৬) ভক্তির প্রতিকূলতা বৰ্জন ।

গোপ্তৃত্বে একমাত্র পালনকর্তা হিসাবে শরণাগতির এই ছয় প্রকার ভেদ। শরণাগতির এই ছয়টি অঙ্গকেই এককথায় ‘’ষড়ঙ্গ- শরণাগতি’’ বলা হয় ।

 

শ্ৰীজীব গোস্বামী প্ৰভু  তাঁর ‘’ভক্তিসন্দর্ভ’’ গ্রন্থে ‘’শ্ৰীভক্তি রসামৃত সিন্ধু’’  গ্রন্থে কথিত শরণাগতির ছয়টি লক্ষণের মধ্যে ‘’কৃষ্ণকে গোপ্তৃত্বে বরণ’’ কেই শরণাগতির ‘অঙ্গী’ ও অন্যান্য পাঁচটিকে ‘অঙ্গ’  বলেছেন। যাঁরা কৃষ্ণকে একমাত্র পালনকর্তা রূপে বরণ করেননি  বা সেই বিষয়ে যাঁদের কিঞ্চিৎ মাত্ৰও সন্দেহ আছে, তাঁরা পূর্ণ- শরণাগত নন। সেই অদ্বিতীয় গোপ্তা কৃষ্ণের গোপীগণ হলেন পূর্ণ - শরণাগত। ঠাকুর ভক্তিবিনোদ তাঁর শরণাগতি'-গীতির আরম্ভে বলেছেন,- শ্ৰীকৃষ্ণচৈতন্য জীবের প্রতি দয়া পরবশ হয়ে অত্যন্ত দুর্লভ প্রেম দান করবার জন্য নিজ-পাৰ্ষদ ও নিজ-ধামের সঙ্গে অবতীর্ণ হয়ে ভক্তদের জীবনস্বরূপ শরণাগতি শিক্ষা দিয়েছেন। ভক্তিবিনোদ বলছেন,-

 

শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু জীবে দয়া করি' ।

স্বপার্ষদ স্বীয় ধাম সহ অবতরি ।।

 

অত্যন্ত দুর্ল্লভ প্রেম করিবারে দান ।

শিখায় শরণাগতি ভকতের প্রাণ ।।

 

দৈন্য, আত্মনিবেদন, গোপ্তৃত্বে বরণ ।

'অবশ্য রক্ষিবে কৃষ্ণ'—বিশ্বাস পালন ।।

 

ভক্তি-অনুকূল মাত্র কার্য্যের শ্বীকার ।

ভক্তি-প্রতিকূল ভাব-বর্জ্জনাঙ্গীকার ।।

 

ষড়ঙ্গ শরণাগতি হইবে যাঁহার ।

তাঁহার প্রার্থনা শুনে শ্রীনন্দকুমার ।।

 

রূপ-সনাতন-পদে দন্তে তৃণ করি' ।

ভকতিবিনোদ পড়ে দুই পদ ধরি' ।।

 

কাঁদিয়া কাঁদিয়া বলে, আমি ত' অধম ।

শিখায়ে শরণাগতি করহে উত্তম ।।

 

 আমরা ভগবানকে তাঁর নামের দ্বারা যে আহ্বান করি, সেই প্রার্থনা-সূচক নাম শরণাগত ব্যক্তির কাছেই ফলদায়ক  হয়। শরণাগতি ছাড়া ভগবান কারও আহ্বানে সাড়া দেন না । অনেক সময় আমরা ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে মনে করি, ভগবানকে তো অনেক ডেকেছি, কিন্তু তিনি আমাদের ডাক শুনছেন না ! কিন্তু আমরা একটুও গভীরভাবে ভেবে দেখি না, আমরা কতটুকু শরণাগত হতে পেরেছি ।

 

শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর  শ্ৰীরূপ- সনাতনকে “শরণাগতির শিক্ষক” বিচার করে তাঁদের কাছে শরণাগতি- ভিক্ষা চেয়েছেন । শরণাগত ব্যক্তি শ্ৰীরূপ-সনাতনের কৃপায় “ভাল আমি' হতে চান,  ‘বড় আমি’ হতে চাননা। এইজন্যই ঠাকুর ভক্তিবিনোদ বলেন,-

''রূপ-সনাতন-পদে দন্তে তৃণ করি ।

 ভকতিবিনোদ পড়ে দুই পদ ধরি ।।

 কাঁদিয়া কাঁদিয়া বলে আমি ত’ অধম ।

 শিখায়ে শরণাগতি করহে উত্তম ।।'' 

 

''শ্ৰীরূপানুগ ভক্তগণ “ভাল আমি’ হবার বিচারে, প্রতিষ্ঠিত। তাঁরা “সর্বোত্তম’ হয়েও “বড় আমি’ হতে চাননা। ঠাকুর ভক্তিবিনোদ কায়িক, বাচিক ও মানসিক-ভেদে ( দেহ, মন ও বাক্য - ভেদে) শরণাগতির ছয় প্রকার বিভাগ করেছেন। ছয় প্রকার শরণাগতিই কায়িক, বাচিক ও মানসিক-ভেদে তিন তিন প্রকার ‌। শ্রীজীব গোস্বামী প্ৰভু শরণাগতি সম্বন্ধে এইরকম বলেছেন,

যড়্ বৰ্গাদি অবিকৃত সংসার ভয় বাধ্যমান ।

এব হি শরণং প্ৰবিশতি অনন্য গতিঃ ।।

ভক্তিমাত্ৰ কামোহপি তৎকৃত ভগবদ্বৈমুখ্য বাধ্যমানঃ ।

অনন্যগতিত্বঞ্চ দ্বিধা দর্শতে ।

আশ্রয়ান্তরস্য অভাব কথনেন নাতি প্ৰতজ্ঞয়া।

কদাচিৎ আশ্রিতম্ভ, আপ্যনস্য ত্যজনেন চ ।''   ( ভক্তিসন্দৰ্ভ - ২৩৬ )

 

কাম, ক্ৰোধ, লোভ, মোহ প্রভৃতি ছয় রিপু-কৃত সংসার-ভয় পর্যালোচনা করে ভাগ্যবান জীব অনন্যগতি হয়ে শ্ৰীকৃষ্ণচরণে শরণাপন্ন হন। যাঁর কেবল শুদ্ধভক্তিমাত্ৰই কামনা, তিনিও তার দ্বারা ভগবদ্  বিমুখতা আশঙ্কা করে নিজেকে অনন্যগতি মনে করেন। অনন্যগতিত্ব দুই প্ৰকার। এক প্রকার অনন্যগতি এই যে, অন্য আশ্রয় না পেয়ে এরূপ বলেন,- “হে কৃষ্ণ ! আমি সংসার-সুখ, কৰ্ম্ম ও তার ফলরূপ ভোগ এবং জ্ঞান ও তার ফলরূপ মুক্তি ভালো করে পৰ্য্যালোচনা করে দেখলাম, — চিৎস্বরূপ আত্মা যে আমি, — তোমার অভয় পদ ছাড়া সেই আমার আর কোনও প্ৰকৃত আশ্রয় নাই। আমি তোমার শরণাপন্ন হলাম।”

 

 দ্বিতীয় প্রকার অনন্যগতিত্ব এইরকম,- ''হে কৃষ্ণ ! আমি কৰ্ম্মকাণ্ডকে আশ্রয় মনে করে সেই যোগ্য দেবতা আশ্রয় করে কত কোটি কোটি জন্মে বর্ণাশ্ৰমধৰ্ম্ম, যজ্ঞ ও ব্ৰতাদি করে দেখলাম, তাতে কোনপ্রকার নিত্যানন্দ নেই। আবার জ্ঞানকে আশ্রয় করে নির্বিশেষ ব্ৰহ্মপদাশ্রয় করে  মুক্তির আস্বাদন দ্বারা দেখলাম, তাতেও চিদানন্দ নেই। এই সমস্ত অবস্থার পর, হে নাথ ! আমি সেই আশ্রয় ত্যাগ করে এখন তোমার অমৃত - পদকমলের আশ্রয় গ্রহণ করলাম।''

 

 অনন্য কৃষ্ণভক্তিতে যখন জীবের শ্রদ্ধা হয়, তখন জীব এই সংকল্প করেন যে, আমি কৃষ্ণভক্তির অনুকুল সমস্ত বিষয় স্বীকার করব। অনুকূল বিষয় স্বীকার না করলে ভক্তি অনুশীলন কিভাবে হতে পারে ? সংসারে আবদ্ধ হয়ে বিষয়-ধ্যানে জীবন কাটাচ্ছি । সেই সব বিষয়-ধ্যান আমাকে বিষয়ে বারবার গাঢ়ভাবে আবদ্ধ করছে। অতএব কৃষ্ণভক্তির অনুকূল যা কিছু হয়, তাই মাত্ৰ অঙ্গীকার করলে ভক্তির অনুশীলন হবে এবং ক্রমশঃ বিষয়-বন্ধন ক্ষয় হয়ে পড়বে। শ্ৰীজীব গোস্বামী দ্বারা প্ৰদৰ্শিত প্ৰথা অনুসারে কায়িক, বাচিক ও মানসিক ভেদে ত্ৰিবিধ আনুকূল্যের পৃথক আলোচনা করছি।

 

রাধিকা - চরণরেণু,             ভূষণকরিয়াতনু,

অনায়াসে পাবে গিরিধারী।

রাধিকা - চরণাশ্রয়,            যেকরেসেমহাশয়,

তাঁ'রে মুঞি যাঁও বলিহারী।।

জয়জয় 'রাধা' নাম,           বৃন্দাবন যাঁর ধাম,

কৃষ্ণসুখ -  বিলাসের নিধি।

হেনরাধা - গুণগান,           নাশুনিল মোর কান,

বঞ্চিত করিল মোরে বিধি।।

তাঁ'র ভক্ত - সঙ্গে সদা,        রসলীলা প্রেমকথা,

যে করে সে পায় ঘনশ্যাম।

ইহাতে বিমুখ যেই,             তা'র কভু সিদ্ধি নাই,

নাহি যেন শুনি তা'র নাম।।

কৃষ্ণনাম - গানে ভাই,         রাধিকা – চরণ পাই,

রাধানাম - গানে কৃষ্ণচন্দ্র।

সংক্ষেপে কহিনু কথা,        ঘুচাও মনের ব্যথা,

দুঃখময় অন্যকথা – দ্বন্দ্ব । .      ( নরোত্তমদাসঠাকুর )

🏵️জয় রাধেশ্যাম🏵️🏵️জয় ব্রজধাম🏵️