🌳🦚💐🏵️🌷🏵️💐🦚🌳

💐🌻সৎসঙ্গের মাহাত্ম্য🌻💐

🌳🦚💐🏵️🌷🏵️💐🦚🌳

বিশেষ পোষ্ট

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’গুরু - বৈষ্ণব  - ভগবান তিনিহেঁ স্মরণ ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে হয় বিঘ্ন বিনাশন ।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।’’

 

🍁শ্রীমন্মহাপ্রভু ও সনাতন গোস্বামী সংবাদ🍁

সনাতন ! সাধু সঙ্গের অপার মহিমা সাধুসঙ্গ দ্বারা হরিভক্তিতে শ্রদ্ধা ও ভক্তিফল ভগবৎ প্রেম উৎপন্ন হয় ও সংসার ক্ষয় প্রাপ্ত হয়। বাস্তবিক সাধুকৃপা ব্যতীত, সৎবিষয়ে রতি ও ভগবানে ভক্তি দূরে থাকুক, শাস্ত্রেই সাধুসঙ্গের মাহাত্ম্য বর্ণিত হইয়াছে। ভাগবতে কথিত হইয়াছে,-
‘’তুলয়াম লবেনাপি ন স্বৰ্গং নাপুনর্ভবং। 
ভগবৎসঙ্গিসঙ্গস্য মৰ্ত্ত্যানাং কিমুতাশিষঃ  I I’’
অর্থাৎ,- ভগবদ্ভক্ত সাধুর সহিত অত্যল্প কাল সঙ্গ হইলে যে ফল হয়, তাহার সহিত স্বর্গ ও অপবর্গেরই তুলনা হইতে পারে না। মরণশীল মানবের তুচ্ছ রাজভোগ , সুখের সহিত কি প্রকারে তাহার তুলনা হইবে ? 

হে সনাতন ! শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত এই যে, ভগবানে নিৰ্ম্মল শ্রদ্ধা উৎপন্ন হইলে বেদবিহিত ধৰ্ম্ম কৰ্ম্ম জ্ঞান যোগ-সাধনার আর প্রয়োজন নাই । শ্রদ্ধাবান ব্যক্তিরা সকল ধৰ্ম্ম পরিত্যাগ করিয়া কেবল শ্ৰীহরির শরনাপন্ন হইয়া থাকেন । ফলতঃ প্রাণের ভোজনেই যেমন সকল ইন্দ্রিয়ের তৃপ্তি হয়, সেইরূপ ভক্তিপূৰ্ব্বক ভগবান অচ্যুতের আরাধনা করিলেই সকল কৰ্ম্ম কৃত হয় । ভাগবতে দেবর্ষি নারদ এই কথা বলিয়াছেন । শ্রদ্ধাবান ব্যক্তিই ভক্তির অধিকারী । শাস্ত্র যুক্তি ও জ্ঞানযোগে যাহার ভক্তি দৃঢ়ীভূত হইয়াছে, তিনিই সর্বোত্তম ভক্ত। যিনি শাস্ত্র যুক্তি অবগত নহেন, অথচ দৃঢ় শ্রদ্ধাবান তিনিও মহাভাগ্যবান, তাঁহাকে মধ্যম বলা যায়। যাঁহার শ্রদ্ধা অতি কোমল, তিনি কনিষ্ঠ। কিন্তু ইঁহারাও ক্রমে ভক্তোত্তম হইবেন ।

 

রতি প্রেমের তারতম্যানুসারে ভক্তির তারতম্য হইয়া থাকে । ভাগবতের একাদশ স্কন্ধে ভক্তির লক্ষণে কথিত হইয়াছে ; যিনি সর্বভূতে আপনার ভগবদ্ভাব দর্শন করেন, এবং পরমাত্মার অধিষ্ঠানে সকল বস্তুর অবস্থিতি দেখেন, তিনিই ভক্তোত্তম । যিনি ঈশ্বরে প্রেম, তাঁহার অনুগত ভক্ত জনে মৈত্রী, অজ্ঞ জনের প্রতি কৃপা ও শত্রুর প্রতি উপেক্ষা করেন, তিনি ভগবদ্ভক্ত দিগের মধ্যে মধ্যম | যিনি শ্রদ্ধাপূর্বক হরির পূজা করেন, কিন্তু ভগবদ্ভক্ত কি অন্যের পূজা করেন না, তিনি প্রাকৃত ভক্ত, ক্রমশঃ তিনিও ভক্তোত্তম হইবেন । 

 

বিষ্ণুভক্তি -পরায়ণ সাধুর শরীরে সকল মহাগুণের সঞ্চার হয়। হে সনাতন! সংক্ষেপে বৈষ্ণব লক্ষণ বলিতেছি শ্রবণ কর। কৃপালু, অকৃতদ্রোহ, সত্যবাদী, নির্দ্দোষ , বদান্য , মৃদু, শুচি , অকিঞ্চন, সর্ব্বোপকারক , শান্ত , কৃষ্ণৈকশরণ, অকাম, নিরীহ, স্থির, বিজিতষড়গুণ , মিতভুক, অপ্রমত্ত , মানদ, অমানী, গম্ভীর, করুণ, মৈত্র, কবি, দক্ষ , মৌনী এই সকল বৈষ্ণব লক্ষণ বলিয়া জানিবে । ভাগবতে দেবাহুতিকে কপিলদেব বলিয়াছেন, সাধুব্যক্তি সর্ব্বদুঃখসহনশীন, কারুণিক ও সকল প্রাণীর সুখদ ; তাঁহার কেহ শত্রু নাই, তিনি শান্ত ও সরল স্বভাব এবং সুশীলতাই তাঁহার ভূষণ স্বরূপ। হে সনাতন ! সাধুসঙ্গ হইতেই হরি ভক্তির জন্ম হয়। ভাগবতের উপদেশ এই, পণ্ডিতেরা বলিয়াছেন, মহৎসেবা সাধুসঙ্গই মুক্তির দ্বার, আর যোষিৎ সঙ্গীদিগের সঙ্গই নরকের দ্বার। সেই সাধুরাই মহৎ, যাঁহারা সর্ব্বত্র সমদর্শী, প্রশান্তচিত, ক্রোধশূন্য, বন্ধুভাবাপন্ন ও সদাচার সম্পন্ন ।

 

 সৎসঙ্গের মাহাত্ম্য অসীম। ভাগবতে কথিত হইয়াছে,-
‘’অত আত্যন্তিকং ক্ষেমং পৃচ্ছামো ভবতোহনষাঃ । 
সংসারেস্মিন ক্ষণার্দ্ধোহপি সৎসঙ্গঃ সেবধিনৃর্ণাং  I I’’
অর্থাৎ,-  হে অনঘ ঋষিগণ ! আপনাদিগকে এখন আত্যন্তিক মঙ্গলকর বিষয় জিজ্ঞাসা করিতেছি । এ সংসারে ক্ষণকালমাত্র সৎসঙ্গ লাভেও মহানিধি লাভ হয় । 

‘’সতাং প্রসঙ্গাম্মম বীর্য্যসম্বিদো 
ভবন্তি হৃৎকর্ণরসায়নাঃ কথাঃ । 
তজ্জোষণাদাশ্ব পবর্থবর্ত্মণি 
শ্রদ্ধারতির্ভক্তি রনুক্রমিষ্যতি  I I’’
অর্থাৎ,-  সাধুজনের সহিত প্রকৃষ্টরূপে সঙ্গ হইলে, আমার বীর্য্য প্রকাশক হৃৎকর্ণ রসায়ন কথা উপস্থিত হইয়া থাকে । তাহা শ্রবণ দ্বারা অপবর্গবর্ত্ম স্বরূপ শ্ৰীহরিতে প্রথমতঃ শ্রদ্ধা তৎপরে রতি ও অবশেষে ভক্তি উৎপন্ন হইয়া থাকে। 

সনাতন ! অসৎসঙ্গই অনর্থের মূল । অসৎসঙ্গ ত্যাগই বৈষ্ণবের শ্রেষ্ঠ সদাচার। স্ত্রীসঙ্গীদিগকে অসাধু ও অভক্ত বলিয়া জানিবে । 
‘’ন তথাস্য ভবেস্মোহো বন্ধশ্চান্য প্রসঙ্গতঃ | 
যোষিৎসঙ্গ পুংসো যথা তৎসঙ্গিসঙ্গতঃ  I I’’
অর্থাৎ,-  রমণীসঙ্গ ও রমণী সঙ্গীদিগের সঙ্গ যেমন মোহ ও বন্ধনের কারণ, অন্যের সঙ্গ তেমন নয় । 

‘’সত্যং শৌচং দয়া মৌনং বুদ্ধি হ্রীঃ শ্রীযশঃ ক্ষমা । 
মা দমো ভগশ্চেতি যৎ সঙ্গাং যাতি সঃ ক্ষয়ঃ  I I’’
অর্থাৎ,-  হে সনাতন ! অসাধুসঙ্গে সত্য, শৌচ, দয়া, সৎপ্রবৃত্তি, বুদ্ধি, লজ্জা, শ্ৰী, যশ, ক্ষমা,  শম, দম ও ঐশ্বর্য্য সকলি ক্ষয় প্রাপ্ত হয় । 

‘’তেসশান্তেষু মূঢ়েযু পণ্ডিতাম্বস্বসাধুষু | 
সঙ্গং ন কুর্য্যাচ্ছোচ্যেষু যোষিৎ ক্রীড়ামৃগেষচ  I I’’
অর্থাৎ,- যাহারা অশান্ত, মূঢ়, খণ্ডিতাত্মা অর্থাৎ দেহেতে যাহাদের আত্মবুদ্ধি, যাহারা শোকের পাত্র এবং ক্রীড়ামৃগের ন্যায় যোষীগণের একান্ত অধীন; সেই সকল অসাধু জনের সঙ্গ করিবে না । ভক্ত বৈষ্ণব এই সকল দুঃসঙ্গ ও বর্ণাশ্রম ধৰ্ম্মের অসার কৰ্ম্মকাণ্ড পরিত্যাগ করিয়া তৃণাদপি সুনীচ অকিঞ্চন হইয়া শ্ৰীহরির শরণাপন্ন হইয়া থাকেন ।

 

সৰ্ব্বশক্তিমান, ভক্তবৎসল করুণাময় ভগবানকে পরিত্যাগ করিয়া পণ্ডিতগণ কখন অন্যের ভজনা করেন না । শরণাগত অকিঞ্চন ভক্তের লক্ষণ এই, ঈশ্বর সেবার অনুকুল বিষয় গ্রহণ ও প্রতিকূল বিষয় বর্জন, ' ভগবান আমাকে রক্ষা করিবেন’ এই বিশ্বাস, তাঁহার রক্ষিতৃত্বে আত্মসমর্পণ, তাহার প্রিয়কাৰ্য্য সাধনে সুখ দুঃখ চিন্তা না করিয়া আত্মনিক্ষেপ করা এবং তাঁহার শরণ বিষয়ে নিষ্ঠাযুক্ত মতি, এই ছয়টি শরণাগতের লক্ষণ ।

 

ভাগবতে ভগবান বলিয়াছেন,- 
‘’মর্ত্যে যদা ত্যক্ত সমস্ত কৰ্ম্ম
নিবেদিতাত্মা বিচিকীর্ষিতোমে । 
তদামৃতত্বং প্রতিপদ্যমানো 
ময়াত্মভূয়াস চ কল্পতে বৈ  I I’’
অর্থাৎ,-  মরণশীল মনুষ্য যখন সমস্ত কৰ্ম্ম পরিত্যাগ করিয়া আমার সেবাতে আত্ম নিবেদন করেন, তখন তিনি আমৃতত্ব লাভ করিয়া মত্তুল্য ঐশ্বৰ্য্য প্রাপ্তির যোগ্য হন। 

 

‘’কলের্দোষনিধেরাজন্ অস্তি হ্যেকো মহানগুণঃ  I

কীর্ত্তনাদেব কৃষ্ণস্য মুক্তসঙ্গঃ পরং ব্রজেৎ  I I‘’ (শ্রীমদ্ভাগবত)

অর্থাৎ,-  কলি সমস্ত দোষের বটে, তথাপি হে রাজন ! কলির একটি মহানগুণ এই যে, কৃষ্ণকীর্ত্তনে জীব মায়াবদ্ধ হইতে মুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণরূপ পরতত্ত্ব লাভ করেন।

 

‘’নাম - সংকীর্ত্তন যস্য সর্বপাপ প্রণাশনম্ ।

প্রণামো দুঃখশমনস্তং নমামি শ্রীহরিং পরম্ ।।‘’

অর্থাৎ,-  যে হরিনাম সংকীর্ত্তন করিলে ইহকাল ও পরকালের পাপরাশি নিঃশেষে দগ্ধ হয়,আমি সেই নামরূপী পরমাত্মা স্বরূপ শ্রীহরিকে প্রণাম করি। পরমকরুণাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী এবং সকল বৈষ্ণব ভক্ত - পার্ষদদের শ্রীচরণকমলে নিরন্তর প্রার্থনা করি, সকলের জীবন যেনো রাধা-কৃষ্ণময়তায় পূর্ণ হয়ে, মঙ্গলময়, কল্যাণময়, ভক্তিময়, সুন্দরময় আর আনন্দময় হয়ে উঠুক।

 

"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে !

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে  !!"

!! জয় শ্রীরাধাকৃষ্ণের জয় !! !! জয় সকল ভক্তবৃন্দের জয় !!