💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐

💞🌷🦚শরণাগতি🦚🌷💞

💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’গুরু - বৈষ্ণব  - ভগবান তিনিহেঁ স্মরণ ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে হয় সর্ববিঘ্ন বিনাশন ।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ  I I’’

 

অনন্য কৃষ্ণভক্তিতে যখন জীবের শ্রদ্ধা হয়, তখন জীব এই সংকল্প করেন যে, আমি কৃষ্ণভক্তির অনুকুল সমস্ত বিষয় স্বীকার করব। অনুকূল বিষয় স্বীকার না করলে ভক্তি অনুশীলন কিভাবে হতে পারে ? সংসারে আবদ্ধ হয়ে বিষয়-ধ্যানে জীবন কাটাচ্ছি । সেই সব বিষয়-ধ্যান আমাকে বিষয়ে বারবার গাঢ়ভাবে আবদ্ধ করছে। অতএব কৃষ্ণভক্তির অনুকূল যা কিছু হয়, তাই মাত্ৰ অঙ্গীকার করলে ভক্তির অনুশীলন হবে এবং ক্রমশঃ বিষয়-বন্ধন ক্ষয় হয়ে পড়বে। শ্ৰীজীব গোস্বামী দ্বারা প্ৰদৰ্শিত প্ৰথা অনুসারে কায়িক, বাচিক ও মানসিক ভেদে ত্ৰিবিধ আনুকূল্যের পৃথক আলোচনা করছি।

 

দেহগত পঞ্চবিধ আনুকুল্য যথা—  ১) রসনাগত, ২) কর্ণগত,  ৩) চক্ষুগত,  ৪) হস্ত-পদ আদি শরীরগত এবং ৫) ঘ্রাণগত ।

 

( ক ) রসনা বা জিহ্বাকে ভক্তির অনুকুল করতে হলে শ্ৰীকৃষ্ণ-প্ৰসাদ ও ভক্ত-প্ৰসাদ-সেবন-ব্ৰতই একমাত্ৰ উপায়। প্ৰসাদ সেবার সময় ভোগসুখ মনে হয় না, কেবল জীবননাথ শ্ৰীকৃষ্ণের ভোজন-সুখই মনে পড়ে। প্রসাদ-সেবার সময় নিজের ভোগসুখ মনে করলে আর আনুকূল্য ভাব থাকে না।

 

( খ ) চক্ষুকে ভক্তির অনুকুল করতে হলে শ্ৰীমূৰ্ত্তি-দর্শন, বৈষ্ণব দর্শন, ভগবৎ লীলা স্থানের বিবিধ শোভা-দর্শন এবং লীলা-প্রতিকৃতি ইত্যাদি দৰ্শন-ব্ৰতই একমাত্ৰ উপায়। যা কিছু চক্ষুর বিষয়ীভূত হয়, তাতে ভগবৎ- সম্বন্ধ দর্শন করাই আসল প্রয়োজন ।

 

( গ ) ঘ্রাণকে ভক্তির অনুকূল করতে হলে শ্ৰীকৃষ্ণার্পিত তুলসী, পুষ্প-চন্দন আদির ঘ্রাণ-গ্ৰহণ ব্ৰতই একমাত্র উপায়। যে কিছু গন্ধ গ্রহণ করতে হয়, তা কৃষ্ণ-সম্বন্ধের সাথে গ্ৰহণ করা উচিত। এই বিষয়ে ভাগবতে বর্ণনা করা হয়েছে যে,-  সনক- সনাতন আদি কুমারেরা পূর্বে নির্বিশেষ ব্ৰহ্মের আলোচনায় প্রবৃত্ত ছিলেন, কিন্তু যখন শ্রীকৃষ্ণ - পাদপদ্ম - কিঞ্জঙ্ক মিশ্র তুলসীগন্ধ নাসিকাতে প্রবিষ্ট হল, তখন তাঁদের মধ্যে  ভক্তিজনিত বিকার উদিত হতে লাগল ।

 

( ঘ ) কৰ্ণকে ভক্তির অনুকুল করতে হলে হরিকথা, ভক্তকথা ও হরিসম্বন্ধিত বিষয়কথার শ্রবণ-ব্ৰতই একমাত্র উপায় । যথা,- ব্ৰহ্মা বললেন, হে দেবগণ ! যাঁরা পরস্পর হরিকথার আলাপ করতে করতে ভক্তিবিকার লাভ করেন, তাঁরা ঊর্দ্ধে নিত্যধামে যেতে সক্ষম।

 

( ঙ ) হস্তপদ ইত্যাদি অঙ্গকে ভক্তির অনুকূল করতে হলে সেই সেই অঙ্গ দ্বারা ভগবৎসেবা ও বৈষ্ণবসেবাই একমাত্র উপায় । যথা,-

‘’যেভাবে কৃষ্ণভক্তদের শুদ্ধ রতি হয়, সেইভাবে কৃষ্ণ-পাদপদ্মে মন, কৃষ্ণগুণ বর্ণনে বাক্য, কৃষ্ণমন্দির মার্জনাদিতে হস্ত, কৃষ্ণকথায় কৰ্ণ, কৃষ্ণমূৰ্ত্তি ও মন্দিরাদির দর্শনে চক্ষু, কৃষ্ণদাস অঙ্গস্পর্শনে স্পর্শেন্দ্ৰিয়, কৃষ্ণ- পাদপদ্মগত তুলসী-সৌরভে ঘ্রাণ, কৃষ্ণাৰ্পিত বস্তুতে রসনা, কৃষ্ণলীলাস্থলী ভ্রমণে পাদদ্বয়, কৃষ্ণপাদ অভিবন্দনে মস্তক ও ভোগেচ্ছা-শূন্য কৃষ্ণদাস্যে বাসনাকে  নিযুক্ত করা কর্তব্য । এইসকল উপায়েই কৃষ্ণে স্থিরচিত্ত হওয়া যায় । যাঁর ইন্দ্ৰিয়গুলি  ইন্দ্ৰিয়ের অধিপতি কৃষ্ণে স্থিরতা লাভ করে, তিনিই এই চঞ্চল সংসারে ধৈৰ্য্য লাভ করতে সক্ষম হন। " এইভাবে কায়িক শরণাগতি হয়ে থাকে ।

 

মানসিক শরণাগতি তিন প্রকার, যথা — 

১) ধ্যানগত,  ২) বিচারগত ও ৩) আস্বাদনগত।

মনের কার্য্য-ধ্যান ও বুদ্ধির কাৰ্য্য-বিচার । সকল চিন্তা,  সকল বিচার এবং সমস্ত আস্বাদন ভক্তির অনুকুল করতে হলে সেই সেই  মানস-ব্যাপার গুলিতে  কৃষ্ণ-সম্বন্ধ স্থাপন করা উচিত । ব্যবহারিক সমস্ত কথালাপ, গীত ও কাব্য প্রভৃতি কৃষ্ণ-সম্বন্ধযুক্ত করতে পারলে আনুকূল্য সিদ্ধি হয়।  যথা,- “হে কৃষ্ণ । “আমি তোমার” এইভাবে বচনের ও মানসবৃত্তির দ্বারা এবং কৃষ্ণলীলাস্থলী সমাশ্রিত শরীরের দ্বারা শরণাগত পুরুষ আনন্দ লাভ করেন।

 

🌳🌴🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚🌴🌳

🌷🌻ভক্তির অনুকূলে কার্য্য স্বীকার🌷

🌳🌴🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚🌴🌳

তুয়া ভক্তি-অনুকূল যে-যে কার্য হয় ।

পরম-যতনে তাহা করিব নিশ্চয় ।।

 

ভক্তি-অনুকূল যত বিষয় সংসারে ।

করিব তাহাতে রতি ইন্দ্রিয়ের দ্বারে ।।

 

শুনিব তোমার কথা যতন করিয়া ।

দেখিব তোমার ধাম নয়ন ভরিয়া ।।

 

তোমার প্রসাদে দেহ করিব পোষণ ।

নৈবেদ্য- তুলসী - ঘ্রাণ করিব গ্রহণ ।।

 

কর-দ্বারে করিব তোমার সেবা সদা ।

তোমার বসতি-স্থলে বসিব সর্বদা ।।

 

তোমার সেবায় কাম নিয়োগ করিব ।

তোমার বিদ্বেষী -জনে ক্রোধ দেখাইব ।।

 

এই-রূপে সর্ব-বৃত্তি আর সর্ব-ভাব ।

তুয়া অনুকূল হয়ে লভুক প্রভাব ।।

 

তুয়া ভক্ত - অনুকূল যাহা যাহা করি ।

তুয়া ভক্তি-অনুকূল বলি’ তাহা ধরি ।।

 

ভকতিবিনোদ নাহি জানে ধর্মাধর্ম ।

ভক্তি-অনুকূল তার হউ সব কর্ম ।।

 

প্রাতিকুল্য- বৰ্জনই শরণাগতির দ্বিতীয়াঙ্গ। এটিও কায়িক, বাচিক ও মানসিক ভেদে ত্ৰিবিধ ৷ "ভগবৎ - ভাগবত - প্ৰসাদ ছাড়া কিছুই ভোজন করবনা, ভগবৎ - ভাগবতরূপ মন্দির ও স্থানাদি ব্যতীত আর কিছুই দেখব না, প্রসাদ-গন্ধ ব্যতীত আর কিছুই ঘ্রাণ নেবনা, ভগবৎ-ভাগবত-কথা ব্যতীত আর কোন কথা শুনব না, হস্তপদ প্রভৃতি অঙ্গকে ভগবৎ-ভাগবত-সম্বন্ধ-শূন্য ব্যাপারে নিযুক্ত করব না, সেগুলি ছাড়া অন্য কিছুই ধ্যান, বিচার ও আস্বাদন করব না, সেই বিষয় ছাড়া অন্য কাব্য-গীতা বলব না” — এরূপ সঙ্কল্পই প্রাতিকুল্য-বৰ্জন। অর্থাৎ ভগবদ্ভক্তি- সাধনের যা- ই প্রতিকূল হয়, তা- ই বৰ্জনীয়। সাংসারিক জীবের পক্ষে এই ব্যাপারটি বড়ই কঠিন। যতদূর সম্ভব হতে পারে, এই ব্যাপারে যত্নবান না হলে ঐকান্তিকী ভক্তি লাভ করা নিতান্ত দুঃসাধ্য।

 

এই সম্বন্ধে শাস্ত্ৰে যেসকল কথা আছে, তা সংক্ষেপে বর্ণনা করা যাক যথা,-

অবৈষ্ণব-প্রদত্ত অন্ন, পতিত লোকের এবং কৃষ্ণে নিবেদিত হয়নি – এমন অন্ন মাংস-তুল্য পরিত্যাজ্য । ভাগবতেও বলা হয়েছে,- অসৎব্যক্তির সঙ্গে কদাচ সঙ্গ করবে না । পাপাচারী ও বিষয়াসক্ত ব্যক্তিরা সহজেই অসৎ হয়ে পড়ে । পুণ্যবান ও শাস্ত্ৰজ্ঞ লোকের মধ্যে যারা কৃষ্ণভক্তিশূন্য ও বৈষ্ণববিদ্বেষী, তাদেরও সাথেও সঙ্গ করবে না ; কেন না, তারাও অত্যন্ত অসৎ । অসৎসঙ্গ করলে সৰ্ব্বাৰ্থহানি ও অধঃপতন হয় । অন্য বিষয়ে আসক্তিতে জীবের ততদূর মোহ ও বন্ধ হয়না, যতদূর কামিনীতে আসক্তি ও কামিনীতে আসক্ত পুরুষের আসক্তিতে হয় ।

 

🌳🌴🦚💐🌻🏵️🌺🌷🌺🏵️🌻💐🦚🌴🌳

🌷💞ভক্তির প্রতিকূল ভাব-বর্জন অঙ্গীকার🌷

🌳🌴🦚💐🌻🏵️🌺🌷🌺🏵️🌻💐🦚🌴🌳

‼🌷‼এক ‼🌷‼

কেশব! তুয়া জগত বিচিত্র ।

করম-বিপাকে, ভব-বন ভ্রম-ই,

পেখলুঁ রঙ্গ বহু চিত্র ।।

 

তুয়া পদ-বিস্মৃতি, আ-মর যন্ত্রনা,

ক্লেশ-দহনে দোহি’ যায় ।

কপিল, পতঞ্জলি, গৌতম, কনভোজী,

জৈমিনি, বৌদ্ধ আওয়ে ধাই’ ।।

 

তব কৈ নিজ-মতে, ভুক্তি, মুক্তি যাচত,

পাত-ই নানা-বিধ ফাঁদ ।

সো-সবু- বঞ্চক, তুয়া ভক্তি বহির-মুখ,

ঘটাওয়ে বিষম পরমাদ ।।

 

বৈমুখ-বঞ্চনে, ভট সো-সবু,

নিরমিল বিবিধ পসার ।

দণ্ডবত দূরত, ভকতিবিনোদ ভেল,

ভকত-চরণ করি’ সার ।।

 

‼🌷‼ দুই ‼🌷‼

তুয়া ভক্তি-প্রতিকূল ধর্ম যাতে রয় ।

পরম যতনে তাহা ত্যজিব নিশ্চয় ।।

 

তুয়া-ভক্তি- বহির্মুখ সঙ্গ না করিব ।

গৌরাঙ্গ বিরোধী-জন মুখ না হেরিব ।।

 

ভক্তি-প্রতিকূল স্থানে না করি বসতি ।

ভক্তির অপ্রিয় কার্যে নাহি করি রতি ।।

 

ভক্তির বিরোধী গ্রন্থ পাঠ না করিব ।

ভক্তির বিরোধী ব্যাখ্যা কভু না শুনিব ।।

 

গৌরাঙ্গ-বর্জিত স্থান তীর্থ নাহি মানি ।

ভক্তির বাধক জ্ঞান-কর্ম তুচ্ছ জানি ।।

 

ভক্তির বাধক কালে না করি আদর ।

ভক্তি বহির-মুখ নিজ-জনে জানি পর ।।

 

ভক্তির বাধিকা স্পৃহা করিব বর্জন ।

অভক্ত-প্রদত্ত অন্ন না করি গ্রহন ।।

 

যাহা কিছু ভক্তি-প্রতিকূল বলি’ জানি ।

ত্যজিব যতনে তাহা, এ নিশ্চয় বানী ।।

 

ভকতিবিনোদ পড়ি’ প্রভুর চরণে ।

মাগয়ে শকতি প্রতিকূল্যের বর্জনে ।।

 

‼🌷‼ তিন ‼🌷‼

বিষয়-বিমূঢ আর মায়াবাদী জন ।

ভক্তি-শূন্য দুঁহে প্রাণ ধরে অকারণ ।।

 

এই দুই-সঙ্গ নাথ! না হয় আমার ।

প্রার্থনা করিয়ে আমি চরণে তোমার ।।

 

সে দুয়ের মধ্যে বিষয়ী তবু ভাল ।

মায়াবাদী-সঙ্গ নাহি মাগি কন কাল ।।

 

বিষয়ী-হৃদয় যবে সাধু-সঙ্গ পায় ।

অনায়াসে লভে ভক্তি ভক্তের কৃপায় ।।

 

মায়াবাদ-দোষ যা’র হৃদয়ে পশিল ।

কুতর্কে হৃদয় তা’র বজ্র-সম ভেল ।।

 

ভক্তির স্বরূপ, আর ‘বিষয়’, ‘আশ্রয়’ ।

মায়াবাদী ‘অনিত্য’ বলিয়া সব কয় ।।

 

ধিক তা’র কৃষ্ণ-সেবা - শ্রবন - কীর্ত্তন ।

কৃষ্ণ-অঙ্গে বজ্র হানে তাহার স্তবন ।।

 

মায়াবাদ সম ভক্তি - প্রতিকূল নাই ।

অতএব মায়াবাদী - সঙ্গ নাহি চাই ।।

 

ভকতিবিনোদ মায়াবাদ দূর করি ।

বৈষ্ণব- সঙ্গেতে বৈসে নামাশ্রয় ধরি’ ।।