🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚

🌳🌴শ্রীনৃসিংহ চতুর্দশী🌴🌳

🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু, গুরু,বৈষ্ণব ভক্তবৃন্দের শ্রী চরণে আমার দণ্ডবৎ প্রণাম। সকল ভক্তদের আনন্দের সাথে জানাচ্ছি আগামী ১৫/০৫/২০২২ ইং রোজ রবিবার  শ্রীশ্রী নৃসিংহদেব ভগবানের শুভ আবির্ভাব ও অভিষেক মহোৎসব I সকলকে জানাই অগ্রীম কৃষ্ণপ্রীতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

(পারণ - পরদিন পূর্ব্বাহ্ন ০৯।২২ মিঃ মধ্যে শ্রীনৃসিংহ চতুর্দশী ব্রতের পারণ)

 

শ্রীনৃসিংহদেবের চতুর্দশী ব্রত মাহাত্ম্য

বৈশাখ মাসের শুক্লা চতুর্দশীতে শ্রীনৃসিংহ দেব আভির্ভূত হয়েছিলেন, তাই এই তিথিতে ব্রত পালন পূর্বক তাঁর পূজা ও উৎসব করতে হয়। বৃহন্নারসিংহ পুরাণে ভগবান শ্রীনৃসিংহদেব ভক্ত প্রহ্লাদকে বললেন,-

‘’বর্ষে বর্ষে তু কর্তব্যং মম সন্তুষি কারণম্।

মহা গুহ্যমিদং শ্রেষ্ঠং মানবৈর্ভবভীরুতি ।।‘’

অর্থাৎ,- প্রতি বছর আমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে চতুর্দশী ব্রত পালন করা কর্তব্য। জন্ম মৃত্যুময় সংসার ভয়ে ভীত মানুষ এই পরম গোপনীয় শ্রেষ্ঠ ব্রত পালন করবেন।

 

শ্রীনৃসিংহদেব বলেছেন,- আমার ব্রতেরদিন জেনেও যে ব্যক্তি ব্রত পালন করেন না, চন্দ্র-সূর্য্য যতদিন থাকবে ততদিন পর্যন্ত সেইজন নরক যন্ত্রণা ভোগ করবে। যদিও আমরা তাঁর ভক্তরা এই ব্রত পালন করে থাকি, তবুও প্রত্যেকের এই ব্রত পালন করার অধিকার আছে। প্রহ্লাদ মহারাজ ভগবান শ্রীনৃসিংহদেবের কাছে প্রার্থনা করে বললেন,- হে ভগবান ! হে নৃসিংহদেব, হে সকল দেবগণের আরাধ্য প্রভু আপনাকে প্রণাম। হে প্রভু ! আপনার শ্রীচরণে আমার একটি নিবেদন আমি জানিতে চাই আপনার প্রতি আমার ভক্তি কিরুপে উৎপন্ন হল? কিরুপে আমি আপনার প্রিয় ভক্ত হলাম?

 

শ্রীনৃসিংদেব বললেন,- হে বুদ্ধিমান প্রহ্লাদ, একান্ত মনে শোনো। প্রাচীন কালে তুমি ব্রাহ্মণ ছিলে, কিন্তু বেদপাঠ করোনি। তোমার নাম ছিল বসুদেব এবং তুমি ছিলে বেশ্যাসক্ত। তোমার কোন সুকর্ম্ম ছিল না, কেবল একটি মাত্র আমার ব্রত করেছিলে। সেই ব্রতের প্রভাবে তোমার এরকম আমার প্রতি ভক্তি হয়েছে। প্রহ্লাদ বললেন,- হে নৃসিংহদেব! হে অচ্যুত, হে প্রভু, আমি কার পুত্র ছিলাম এবং কি করতাম? বেশ্যাসক্ত অবস্থায় কিভাবে আপনার ব্রত পালন করলাম, দয়া করে বলুন।

 

শ্রীনৃসিংহদেব বললেন,- পুরাকালে অবন্তীপুরে এক বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ ছিলেন, তার নাম ছিল বসুশর্মা। ধর্মপরায়ণ ও বৈদিক ক্রিয়া অনুষ্ঠানে তিনি সদা তৎপর ছিলেন এবং তাঁর স্ত্রী জগৎপ্রসিদ্ধা সুশীলা পতিব্রতা সদাচারিণী ছিলেন। তাদের পাঁচ পুত্র ছিল। চারজন ছিল সদাচারী, বিদ্বান, পিতৃভক্ত। কিন্তু কনিষ্ঠ পুত্রটি ছিল অসদাচারী, সর্বদা বেশ্যাসক্ত,সুরাপায়ী। সেই কনিষ্ঠ পুত্রটি ছিলেন তুমি। নিত্য বেশ্যাগৃহেই তুমি বসবাস করতে। এক সময় এক বনমধ্যে তুমি ও তোমার সেই বান্ধবী বেড়াতে গিয়েছিলে। তোমরা মনে করেছিলে দিনটা বেশ ভালোই কাটবে। কিন্তু তোমাদের নিজেদের মধ্যে চরিত্র বিষয়ে বিশেষ রকমের কলহ বেধে যায়। তোমাদের মধ্যে মনোমালিন্যের কারণে মৌনভাবে তোমরা আলাদাভাবে একটি স্থানে এসে বসেছিলে।

 

সেখানে তুমি অতি পুরনো ধ্বংসাবশেষ গৃহ নিদর্শন স্বরুপ কিছু ইট পাথর দেখেছিলে। সেই নির্জন স্থানে আলাদাভাবে উপবেশন করে তোমরা দুইজন ক্রন্দন করেছিলে আপন আপনভাবে। সারাদিন তোমরা অনাহারী ছিল, এমনকি জল পর্যন্ত পান করোনি। সারারাতও তোমরা জাগরিত ছিলে। ক্লান্ত শরীরে দুঃখিত অন্তরে মনোমালিন্য হওয়ায় তুমি সেখানে শুয়ে পড়ে প্রার্থনা করছিলে, হে ভগবান! হে শ্রীহরি, এই জগতের কত লোক সুন্দর! আমার মা-বাবা কত সুন্দর ধর্মপ্রাণ। আমার ভাইয়েরাও  কত সুন্দর! তারা নিষ্ঠাবান, চরিত্রবান। কিন্তু আমি অধঃপতিত, মহা মন্দমতি। আমি চরিত্রহীন, পথের পাগলের চেয়েও অধম।

 

হে ভগবান! ভালো লোকেরা তোমার শরণাগত, আমি মুর্খ কারও শরণাগত নই। আমি অতি নিঃসঙ্গ আমি বড় অসহায় অবস্থায় তোমার কাছে প্রার্থনা করছি, হে প্রভু আমাকে বিশুদ্ধ জীবন দান করো; এভাবে তুমি ক্রন্দন করছিলে আর তোমার বান্ধবী, সেও একান্ত মনে প্রার্থনা করছিল, হে ভগবান! আমি সমাজের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য স্তরের জীব। সভ্য সমাজ থেকে আমি বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্ন। এই জগতে অনেক নিষ্ঠাবতী স্বাধ্বী সুন্দরী নারী রয়েছে আর আমি মহাপাপীনি  গণিকাবৃত্তি করেই জীবন নষ্ট করেছি। প্রতিদিনই কেবল পাপের বোঝা বাড়িয়েছি। নরকযাতনা কতই না এই পোড়া কপালে অপেক্ষা করছে। ভদ্র সমাজে কেউ কোনদিনও আমার দিকে তাকাতেও চায় না। আমি এই জগতের কোনও পথ খুঁজে পাচ্ছিনা। হে পরম করুণাময় ভগবান,, যদি তোমার অহৈতুকী কৃপাদৃষ্টি আমার প্রতি থাকে তবে দয়া করে আমার এই জীবন পরিবর্তন করে দাও! এভাবে সে আকুল অন্তরে ক্রন্দন করতে লাগলো।

 

শ্রীনৃসিংহদেব বললেন,- হে প্রহ্লাদ, সেই স্থানটি ছিল আমার প্রাচীন মন্দির। সেই দিনটি ছিল বৈশাখ মাসের শুক্লা চতুর্দশী আমার আবির্ভাবের দিন। তোমরা উপবাসী ছিলে, রাত্রি জাগরণ করছিলে জীবনের কল্যাণ প্রার্থনা করছিলে অর্থাৎ অজ্ঞাতসারেই তোমরা আমার পরম-মঙ্গলময় চতুর্দশী ব্রত পালন করেছিলে। সেই ব্রত প্রভাবে তুমি এ জন্মে আমার প্রিয় ভক্তরুপে জন্মগ্রহণ করেছ আর সেই বেশ্যাও স্বর্গলোকে অপ্সরা জীবন লাভ করে ত্রিভুবনে সুখচারিনী হয়েছে।

 

হে প্রহ্লাদ! আমার ব্রতের প্রভাব শোনো। সৃষ্টিশক্তি লাভের জন্য ব্রহ্মা আমার এই চতুর্দশী ব্রত পালন করেছিলেন। ত্রিপুরাসুরকে বধের উদ্দেশ্যে মহাদেব এই ব্রত করেছিলেন। স্বর্গসুখ লাভের জন্যই দেবতারা আগের জন্মে আমার ব্রত করেছিলেন। বেশ্যাও এই ব্রতের প্রভাবে ত্রিলোকে সুখচারিনী হয়েছে। যে সমস্ত মানুষ আমার এই ব্রতশ্রেষ্ঠ পালন করবে, শতকোটি কল্পেও তাদের সংসারে পুনরাগমন নেই। আমার ব্রত প্রভাবে অপুত্রক ভক্তপুত্র লাভ করে, দরিদ্র ধনশালী হয়, তেজস্কামী তেজঃলাভ করে, রাজ্যকামী রাজ্য পায় আর আয়ুস্কামী দীর্ঘায়ু লাভ করে। স্ত্রীলোকেরা আমার এই চতুর্দশী ব্রত পালন করলে ভাগ্যবতী হয়, এই ব্রত সৎপুত্র প্রদ, অবৈধব্যকর ও পুত্রশোক বিনাশন, দিব্য সুখপ্রদ। স্ত্রী-পুরুষ যারা এই উত্তমব্রত পালন করে, তাদের আমি সুখ ও ভুক্তি-মুক্তি ফল দান করি। হে প্রহ্লাদ, দুরাত্মাদের আমার ব্রত পালনে মতি হয় না। পাপকর্মেই সর্বদা তাদের মতি।

 

কিভাবে এই ব্রত পালন করব ?

👉ব্রতের পূর্ব দিন:- অবশ্যই একাদশীর ন্যায় নিরামিষ ভোজন করে সংযম করতে হবে।

👉ব্রতের দিন:- গোধূলি লগ্নে শ্রীনৃসিংহদেবের অভিষেক। তারপর অভিষেকের চরণামৃত দিয়ে উপবাস ভেঙ্গে একাদশীর ন্যায় অনুকল্প প্রসাদ গ্রহণ করবেন তবে নির্জ্জলা ব্রত সর্বোত্তম।

👉ব্রতের পরদিন পারণ:- সময় মধ্যে পারণকরা সবার কর্ত্তব্য।

 

★★★সবাইকে অনুরোধ রইল অবশ্যই মনে রাখবেন যে, চতুর্দশী ব্রত বা কোন উপবাস মানেই কিন্তু শুধু না খেয়ে থাকা নয়,বরং শুদ্ধ/পবিত্র দেহ,মন নিয়ে ব্রত/উপবাস রেখে নিরন্তর "ভগবানের নাম জপ" হরিকথা শ্রবণ, কীর্ত্তন,গীতাপাঠ করে "ভগবান কে প্রসন্ন/খুশি করাই  ব্রত/উপবাসের মূল উদ্দেশ্য"★★★

 

‘’চতুর্দ্দশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব।

প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব।।‘’

 

এই মন্ত্র পাঠ করে নির্দিষ্ট সময়ের আগে পারণ করতে হয়।

গীতার মাহাত্ম্যে উল্লেখ আছে…

 

‘’যোহধীতে বিষ্ণুপর্বাহে গীতাং শ্রীহরিবাসরে।

স্বপন জাগ্রৎ চলন তিষ্ঠন শত্রুভির্ন স হীয়তে।।‘’

অর্থাৎ,-  শ্রীবিষ্ণুর উৎসবের দিনে, একাদশী ও জন্মাষ্টমীতে যিনি গীতা পাঠ করেন , তিনি চলুন বা দাড়িয়ে থাকুন, ঘুমিয়ে বা জেগে থাকুন,(যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন) শত্রু কখনো তার কোন ক্ষতি করতে পারেনা। সকলের নিকট প্রার্থনা রইল নৃসিংহদেবের মহা ব্রত ভক্তিসহ কারে পালন করবেন।

 

জনম সফল তা'র, কৃষ্ণ-দরশন যা'র

ভাগ্যে হইয়াছে একবার ।

বিকশিয়া হৃন্নয়ন   করি' কৃষ্ণ দরশন

ছাড়ে জীব চিত্তের বিকার ।।

বৃন্দাবন-কেলি চতুর বনমালী ।

ত্রিভঙ্গ-ভঙ্গিমারূপ         বংশীধারী অপরূপ

রসময় নিধি, গুণশালী ।।

বর্ণ নব জলধর      শিরে শিখিপিচ্ছবর

অলকা তিলক শোভা পায় ।

পরিধানে পীতবাস   বদনে মধুর হাস

হেন রূপ জগৎ মাতায় ।।

ইন্দ্রনীল জিনি কৃষ্ণরূপখানি    হেরিয়া কদম্বমুলে ।

মন উচাটন না চলে চরণ    সংসার গেলাম ভুলে ।।

(সখি হে) সুধাময় সে রূপ মাধুরী।

দেখিলে নয়ন, হয় অচেতন,  ঝরে প্রেমময়বারি ।।

বিবা চুড়া শিরে কোবা বংশী করে কিবা সে ত্রিভঙ্গ ঠাম ।

চরণ কমলে, অমিয়া উছলে, তাহাতে নূপুর দাম ।।

সদা আশা করি ভৃঙ্গরূপ ধরি চরণকমলে স্থান ।

অনায়াসে পাই কৃষ্ণগুণ গাই আর না ভজিব আন ।।

💐জয় শ্রীনৃসিংহ ভগবানের জয় 💐💐জয় শ্রীপ্রহ্লাদ মহারাজের জয়💐