💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐

💞🌷🦚শরণাগতি🦚🌷💞

💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’গুরু - বৈষ্ণব  - ভগবান তিনিহেঁ স্মরণ ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে হয় সর্ববিঘ্ন বিনাশন ।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ  I I’’

 

‘’বন্দে নন্দ ব্রজস্ত্রীণাং পাদরেণুমভীক্ষশঃ ।

যাসাং হরিকথোদগীতং পুনাতি ভুবনত্রয়ম ।।‘’

ত্রিজগৎ পবিত্র করে যাঁহাদের কণ্ঠোদ্গীর্ণ হরিকথাগীতি, আমার মাথার ভূষণ করি তাঁহাদের পাদরেণু। শিরে তুলিয়া এদের পদধূলি সার্থক করি আমি আমার জ্ঞানশুষ্ক এই জীবন। গোপীগণের এই নির্ম্মল প্রেম ভক্তিকে জগতে জানাতেই গৌরহরি এসেছেন এই কলিযুগে। মহাপ্রভু তাই নিজের বদান্যতা প্রকাশ করলেন। এযুগের সবাই অধম প্রায়। এরা তপস্যা করে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হয়ে তবে ব্রজের ভজন করবে, তা সম্ভব নয়। তাই তিনি যুগধর্ম শ্রীহরিনাম মহামন্ত্র প্রচার করলেন,-

‘’হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে I

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে I I’’

 

‘’কৃষ্ণ আমাকে অবশ্য রক্ষা করবেন’’ এই বিশ্বাসটি শরণাগতির তৃতীয়াঙ্গ । অর্জুনকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,- হে কৌন্তেয়, তুমি আমার এই প্ৰতিজ্ঞা সকলকে ( নিজে প্ৰতিজ্ঞা করে ) জানাও যে, আমার ভক্তের কখনও নাশ হবে না। কৰ্ম্মী ও জ্ঞানীগণ আপন-ধৰ্ম্মবলে নিজেদেরকে রক্ষা করবে ; কিন্তু আমার ভক্তের পদস্খলিত হলেও আমি তার রক্ষাকৰ্ত্তা ।" শরণাগত লোক এই কথায় দৃঢ় বিশ্বাস করেন ।

 

🌺🌷🌺

" অবশ্য রক্ষিবেন কৃষ্ণ" এই বিশ্বাসে ( বাচিক এবং কায়িক ) ঠাকুর ভক্তিবিনোদ বলেন,-

এখন বুঝিনু প্রভু ! তোমার চরণ।

অশোক অভয়ামৃত -পূর্ণ সর্বক্ষন।।

সকল ছাড়িয়া তুয়া চরণকমলে।

পড়িয়াছি আমি নাথ! তব পদতলে।।

 

তব পাদপদ্ম নাথ! রক্ষিবে আমারে।

আর রক্ষাকর্তা নাহি এ ভব-সংসারে।।

আমি তব নিত্যদাস জানিনু এবার।

আমার পালন - ভার এখন তোমার।।

 

বড় দুঃখ পাইয়াছি স্বতন্ত্র জীবনে।

সব দুঃখ দূরে গেল ও - পদ বরণে।।

যে -পদ লাগিয়া রমা তপস্যা করিলা ।

যে -পদ পাইয়া শিব শিবত্ব লভিলা ।।

 

যে -পদ লভিয়া ব্রহ্মা কৃতার্থ হৈলা ।

যে -পদ নারদমুনি হৃদয়ে ধরিলা ।।

সেই সে অভয় পদ শিরেতে ধরিয়া ।

পরম - আনন্দে নাচি পদগুন গাইয়া ।।

 

সংসার - বিপদ হ’তে অবশ্য উদ্ধার।

ভকতিবিনোদ, ও -পদ করিবে তোমার।।

 

🌺🌷🌺

‘’অবশ্য রক্ষিবেন কৃষ্ণ" এই বিশ্বাসে ( মানসিক ) ঠাকুর ভক্তিবিনোদ বলেন,-

তুমি ত’  মারিবে যা'রে, কে তারে রাখিতে পারে,

তব  ইচ্ছা-বশ ত্রিভুবন ।

ব্রহ্মা - আদি দেবগণ, তব দাস অগণন,

করে তব আজ্ঞার পালন ।।

 

তব ইচ্ছামতে যত, গ্রহগণ অবিরত,

শুভাশুভ ফল করে দান ।

রোগ - শোক - মৃত্যু - ভয়, তব ইচ্ছামতে হয়,

তব আজ্ঞা সদা বলবান ।।

 

তব ভয়ে বায়ু বয়, চন্দ্র - সূর্য সমুদয়,

স্ব-স্ব নিয়মিত কার্য করে ।

তুমি ত’ পরমেশ্বর, পরব্রহ্ম পরাৎপর,

তব বাস ভকত-অন্তরে ।।

 

সদা শুদ্ধ সিদ্ধকাম, ‘ভকতবৎসল’ - নাম,

ভকত - জনের নিত্যস্বামী ।

তুমি ত’ রাখিবে যা'রে, কে তারে মারিতে পারে,

সকল বিধির বিধি তুমি ।।

 

তোমার চরণে নাথ !   করিয়াছি  প্রণিপাত,

ভকতিবিনোদ তব দাস ।

বিপদ হইতে স্বামী!   অবশ্য তাহারে তুমি,

রক্ষিবে, - তাহার এ বিশ্বাস।।

 

🌺🌷🌺

সিদ্ধদেহে – আত্মনিবেদন

 

আত্মসমর্পনে গেলা অভিমান।

নাহি করবুঁ নিজ রখা-বিধান ।।

তুয়া ধন জানি’ তুহুঁ রাখবি, নাথ !

পালয় গোধন জ্ঞান করি’ তুয়া সাথ।।

 

চরাওবি মাধব ! যামুনতীরে ।

বংশী বাজাওত ডাকবি ধীরে ।।

অঘ-বক মারত' রখা-বিধান।

করবি সদা তুহুঁ গোকুল-কান !।

 

রক্ষা করবি তুহুঁ নিশ্চয় জানি' ।

পান করবুঁ হাম জামুন-পানি ।।

 

'কালিয়-দোখ করবি বিনাশা ।

শোধোবি নদীজল, বাড়াওবি আশা ।।

পিয়ত দাবানল রাখবি ম’য় ।

‘গোপাল’, ‘গোবিন্দ’ নাম তব হয়।।

 

সুরপতি - দুর্মতি - নাশ বিচারি’ ।

রাখবি বর্ষনে, গিরিবরধারি!।

চতুরানন করব যব চোরি ।

রখা করবি মুঝে, গোকুল - হরি !!

 

ভকতিবিনোদ - তুয়া গোকুল - ধন।

রাখবি কেশব! করত যতন ।।

 

‘’শ্ৰীকৃষ্ণই আমার একমাত্র পালয়িতা” -  এরূপ বুদ্ধি শরণাগতির চতুর্থ অঙ্গ। ‘’অন্য মানুষ আমাকে পালন করেন বা আমি অর্জন করে নিজেকে পালন করি’’ — এই বুদ্ধি অতিশয় নিকৃষ্ট । কৃষ্ণ অনুকূল না হলে কেউ আমাকে পালন করতে পারেনা এবং আমিও স্বয়ং অর্জন করতে পারব না। অতএব কৃষ্ণ ব্যতীত আমার আর কেউ পালন - কৰ্ত্তা নাই।

 

🌺🌷🌺

গোপতৃত্বে বরণ - দৈন্যাত্মক (কায়িক )

 

কি জানি কি বলে, তোমার ধামেতে,

হইনু শরণাগত।

তুমি দয়াময়, পতিত - পাবন,

পতিত - তারণে রত।।

 

ভরসা আমার, এইমাত্র নাথ!

তুমি ত’ করুণাময়।

তব দয়াপাত্র, নাহি মোর সম,

অবশ্য ঘুচাবে ভয়।‌

 

আমারে তারিতে, কাহার শকতি,

অবনী - ভিতরে নাহি।

দয়াল ঠাকুর! ঘোষনা তোমার,

অধম পামরে ত্রাহি।।

 

সকল ছাডিয়া, আসিয়াছি আমি,

তোমার চরণে নাথ !

আমি নিত্যদাস, তুমি পালয়িতা,

তুমি গোপ্তা, জগন্নাথ !!

 

তোমার সকল, আমি মাত্র দাস,

আমারে  তারিবে তুমি।

তোমার চরণ, করিনু বরণ,

আমার নাহি ত’ আমি।।

 

ভকতিবিনোদ, কাঁদিয়া শরণ,

ল’য়েছে তোমার পায়‌।

ক্ষমি’ অপরাধ, নামে রুচি দিয়া,

পালন করহে তায়।‌।

 

জীবের আত্মনিবেদনই শরণাগতির পঞ্চমাঙ্গ । “আমি” কেউই নই, আমি যত কিছু ‘আমার’ বলে বলে থাকি সমস্তই কৃষ্ণের ; আমি কৃষ্ণের সংসারে দাস মাত্র ; কৃষ্ণের ইচ্ছাই প্রবল ; আমার স্বতন্ত্র ইচ্ছা নিরর্থক ; কৃষ্ণের ইচ্ছার অনুগত থাকাই আমার স্বভাব ; মূর্খতা বশতঃ এ পৰ্য্যন্ত যেসব বস্তু ও ব্যক্তিতে “আমি” ও “আমার’ বলে বুদ্ধি ছিল, তা আমি শ্ৰীকৃষ্ণে অৰ্পণ করলাম ; আজ থেকে আমি-আমার নই, - কৃষ্ণের” - এই বুদ্ধির নাম আত্ম-নিক্ষেপ।

 

🌺🌷🌺

আত্মনিবেদন - অহংতাস্পদ দেহী সমর্পণ (কায়িক )

 

‘অহং' মম’  - শব্দ - অর্থ যাহা কিছু হয় ।

অর্পিলুঁ তোমার পদে, ওহে দয়াময় !!

‘আমার’ আমি ত’ নাথ! না রোহিনু আর ।

এখন হইনু আমি কেবল তোমার ।।

 

‘আমি’ শব্দে দেহী জীব অহংতা ছাড়িল ।

ত্বদীয়াভিমান আজি হৃদয়ে পশিল ।।

আমার সর্বস্ব-দেহ, গেহ অনুচর ।

ভাই, বন্ধু, দারা, সুত, দ্রব্য, দ্বার, ঘর ।।

 

সে - সব হৈল তব, আমি হৈনু দাস ।

তোমার গৃহেতে এবে আমি করি বাস ।।

তুমি গৃহস্বামী, আমি সেবক তোমার ।

তোমার সুখেতে চেষ্টা এখন আমার ।।

 

স্থূল - লিঙ্গ - দেহে মোর সুকৃত - দুষ্কৃত ।

আর মোর নহে, প্রভু! আমি ত’ নিষ্কৃত ।।

তোমার ইচ্ছায় মোর ইচ্ছা মিশাইল ।

ভকতিবিনোদ আজ আপনে ভুলিল ।।

 

🌺🌷🌺

আত্মনিবেদন - মমতাস্পদ দেহসমর্পণ (কায়িক )

 

‘আমার বলিতে প্রভু! আর কিছু নাই ।

তুমিই আমার মাতা পিতা - বন্ধু - ভাই ।।

বন্ধু, দারা, সুত - সুতা - তব দাসী - দাস ।

সেই ত’ সম্বন্ধে সবে আমার প্রয়াস ।।

 

ধন, জন, গৃহ, দ্বার ‘তোমার’ বলিয়া ।

রক্ষা করি আমি মাত্র সেবক হইয়া ।।

তোমার কার্যের তরে উপার্জিব ধন ।

তোমার সংসার - ব্যয় করিব বহন ।।

 

ভালমন্দ নাহি জানি সেবা মাত্র করি ।

তোমার সংসারে আমি বিষয় - প্রহরী ।।

তোমার ইচ্ছায় মোর ইন্দ্রিয় - চালনা ।

শ্রবণ, দর্শন, ঘ্রাণ, ভোজন - বাসনা ।।

 

নিজ-সুখ লাগি’ কিছু নাহি করি আর ।

ভকতিবিনোদ বলে, তব সুখ-সার ।।

ক্রমশ…