Friday, November 22, 2019


শ্রীল নরহরি সরকার ঠাকুর
(তিরোভাব) 

পুরা মধুমতি প্রাণসখী বৃন্দাবনে স্থিতা I
অধুনা নরহৰ্য্যাখ্য: সরকার প্রভো প্রিয়: II

শ্রীল নরহরি সরকার ঠাকুর শ্রীচৈতন্য শাখায় গণিত হন Iশ্রীকৃষ্ণ লীলায় যিনি বৃন্দাবনে প্রাণসখী ,তিনি নরহরি দাস সরকার ঠাকুর রূপে আবির্ভূত হইয়াছেন I শ্রীমনমহাপ্রভুর ইচ্ছা ক্রমে তিনি বৈদ্য কুলে আবির্ভূত হইয়া সেই কুলকে ধন্য করিয়াছেন I ইনি শ্রীখণ্ডবাসি  ভক্ত গনের মধ্যে মহাপ্রভুর প্রধান পার্ষদ I
বৰ্দ্ধমান জেলায় কাটোয়ার নিকটে শ্রীখণ্ড স্টেশন হইতে এক মাইল দূরে নরহরি ঠাকুরে শ্রীপাঠ I শ্রীখণ্ডবাসি  ভক্তগণের মধ্যে নরহরি সরকার ঠাকুর ব্যতীত শ্রীমুকুন্দ,শ্রীরঘুনন্দন,শ্রীচিরজীব,শ্রীসুলোচন,শ্রীদামোদর কবিরাজ,শ্রীরামচন্দ্র কবিরাজ,শ্রীগোবিন্দ কবিরাজ,শ্রীবলরাম দাস,শ্রীরতিকান্ত,শ্রীরামগোপাল দাস,শ্রীপিতাম্বর দাস,শ্রীশচীনন্দন,শ্রীজগদানন্দ মুখ্য ছিলেন I নরহরি সরকার ঠাকুরের বৈদ্যকুলে আবির্ভাব সমন্ধে মহামহোপাধ্যায় ভরত মল্লিক 'চন্দ্রপ্রভায়''এইরূপ লিখিয়াছেন

শ্রীখণ্ড নাম নগরী iডে বঙ্গেষু বিশ্রুতা I
সর্ব্বেষামেব বৈদ্যনামাশ্রয় যত্র বিদ্যতে II

যত্র গোষ্ঠীভূতা বৈদ্যI জঃ খন্ডহভুদ ভিসকপ্রিয়ঃI
বিশেষতঃ কুলিনানাঃ সর্বেষামেব বাসভূ:II

‘’খণ্ডবাসী মুকুন্দদাস,শ্রীরঘুনন্দন I
নরহরিদাস, চিরঞ্জীব,সুলোচন II

এইসব মহাশাখা চৈতন্য -কৃপাধI I
প্রেমফল-ফুল করে যাঁহা তাঁহা দান II’’



শ্রীগৌড়ীয় বৈষ্ণব অভিধানে নরহরি সরকার ঠাকুরের আবির্ভাব সন ১৪০১ শকাব্দ,মতান্তরে ১৪০২ শকাব্দ -এইরূপ নির্দেশ করিয়াছেন I ইহার পিতার নাম শ্রীনারায়ণ দাস,মাতার নাম শ্রীগৌরী I শ্রীগৌরী, মুরারি সেনের কন্যা ছিলেন I নারায়ণ দাসের তিন পুত্র I শ্রীমুকুন্দ,শ্রীমাধব, শ্রীনরহরি I

‘’ভাগ্যবন্ত নারায়ণদাসের নন্দন I
মুকুন্দ,মাধব,নরহরিতিনজন II

মুকুন্দের পুত্র রঘুনন্দন  ঠাকুর I
ইহার দর্শনে সব তাপ হয় দূর II’’
-ভক্তিরত্নাকর ১১-৭৩০-৭৩১

ঝামটপুরের  নিকটে কোগ্রামনিবাসী শ্রীচৈতন্য মঙ্গল রচয়িতা শ্রীল লোচনদাস ঠাকুর ইহার শিষ্য ছিলেন I এইজন্য শ্রী লোচানদাস ঠাকুর শ্রীচৈতন্য মঙ্গলে শ্রীগদাধর দাস শ্রী নরহরি দাস ঠাকুরকে শ্রীমন মহাপ্রভুর অত্যন্ত প্রিয়রূপে উল্লেখ করিয়াছেন I শ্রীবৃন্দাবন দাস ঠাকুর রচিত শ্রীচৈতন্য ভাগবতে খণ্ডবাসী ভক্ত গনের মহিমা বিস্তারিত ভাবে বর্ণিত হয় নাই I

শ্রীল লোচনদাস ঠাকুর তাঁহার গুরুদেব সম্বন্ধে এইরূপ লিখিয়াছেন

‘’শ্রীনরহরি দাস ঠাকুর আমার I
বৈদ্যকুলে মহাকুল-প্রভাব যাঁহার II

অনর্গল কৃষ্ণপ্রেম কৃষ্ণময় তনু I
অনুগত জনে না বুঝান প্রেম বিনু II

বৃন্দাবনে মধুমতী নাম ছিল যাঁর I
রাধাপ্রিয় সখী তিহো মধুর ভাণ্ডার II

এবে কলিকালে গৌরসঙ্গে নরহরি I
রাধাকৃষ্ণ -প্রেমের ভাণ্ডারে অধিকারী II’’

পিতা শ্রীনারায়ণ দাস অপ্রকঠ হইলে জ্যেষ্ঠ পুত্র শ্রীমুকুন্দ নবদ্বীপে শ্রীনরহরি দাসের অধ্যয়নের ব্যবস্থা করিয়াছিলেন I এইরূপ শ্রুত হয় শ্রীমুকুন্দ সংসারের ব্যয় নির্বাহের জন্য বাদশাহের গৃহ চিকিৎসকের কার্য্যও করিয়া ছিলেন I নরহরি সরকার ঠাকুর অত্যল্প সময়ের মধ্যেই  সুপন্ডিত ভক্তিরসজ্ঞ হইলেন I শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর সান্নিধ্যে আসিবার পূর্বেই  তিনি শ্রীরাধা গোবিন্দের লীলা সূচক পদাবলী রচনা করিয়াছিলেন I শ্রীগদাধর পণ্ডিত প্রভু যে-সময় শ্রীমন মহাপ্রভু নিকট নিরন্তর অবস্থান করিয়া মহাপ্রভুর সেবা করিতেন,সেই সময় নরহরি সরকার ঠাকুর মহাপ্রভুর সেবায় নিয়োজিত হইবার সৌভাগ্য লাভ করিয়াছিলেন I নরহরি সরকার ঠাকুরের নির্দিষ্ট অন্তরঙ্গ সেবা চামর-ব্যঞ্জন I শ্রীগৌরাঙ্গের নিজজন শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের রচিত 'শ্রীগৌর-আরতি' কীর্তনে নরহরি সরকার ঠাকুর প্রভূতি খণ্ডবাসী ভক্তগণের নির্দিষ্ট সেবা চামর-ব্যঞ্জন উল্লিখিত  হইয়াছে I যথা-

‘’নরহরি আদি করি চামর ঢুলায় I
সঞ্জয়-মুকুন্দ-বাসুঘোষ আদি গায় II’’

ইহার রচিত গ্রন্থাবলী মধ্যে 'ভক্তিচন্দ্রিকাপট্ল' 'শ্রীকৃষ্ণভজনামৃত' 'শ্রীচৈতন্য সহস্র নাম' 'শ্রীশচীনন্দনাষ্টক' 'শ্রীরাধাষ্টক' আদি গ্রন্থসমূহ ভক্তগণের নিকট বিশেষভাবে সমাদৃত প্রসিদ্দ I

তাঁহার  জীবনচরিতে এইরূপ একটি অদ্ভুত ঘটনা শ্রুত হয় :-- একদিন শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু শ্রীখণ্ডে নরহরি সরকার ঠাকুরের শ্রীপাটে যাইয়া নরহরি নিকট মধু পান করিবার ইচ্ছা প্রকাশ করিলে I তিনি তাহাঁর শ্রীপাটের নিকটবর্তী একটি পুস্করিণীর জলকে নিজশক্তি প্রভাবে মধুরূপে পরিণত করিয়াছিলেন I উক্ত পুস্করিণীর জলের দ্বারা নরহরি সরকার ঠাকুর মহাপ্রভু নিত্যানন্দ প্রভু পিপাসা নিবৃত্তি করিয়াছিলেন I তদবিধ উহা মধু পুস্করিণী নামে খ্যাত হয় I শ্রীমন মহাপ্রভুর স্বপ্নাদেশে নরহরি সরকার ঠাকুর যে তিনটি গৌরবিগ্রহ প্রকটিত করিয়াছিলেন,তাহা শ্রীখণ্ডে,কাটোয়ায় গঙ্গানগরে সেবিত হইয়াছিলেন I

নরহরি সরকার ঠাকুর পুরুষোত্তমধামে শ্রীমন মহাপ্রভুর লীলারও সঙ্গী হইয়াছিলেন I

‘’নরহরি দাস আদি যত খণ্ডবাসী I
শিবানন্দ সেন সঙ্গে মিলিলা সবে আসি II’’

শ্রীমনমহাপ্রভু দাক্ষিণাত্যবাসিগণকে কৃষ্ণপ্রেম প্রদানের দ্বারা উদ্ধার করতঃ শ্রীপুরুষোত্তমধামে প্রত্যাবর্তন করিলে, শ্রীমননিত্যানন্দ প্রভু কালাকৃষ্ণ দাসকে নবদ্বীপে পাঠাইয়াছিলেন I মহাপ্রভুর পুরীতে প্রত্যাগমন -সংবাদ গৌড়দেশের ভক্তগণকে দিবার জন্য I পুরীতে মহাপ্রভুর প্রত্যাগমন -সংবাদ জানিতে পারিয়া গৌড়দেশীয় ভক্তগণ যখন পুরী যাইবার উদ্যোগ করিয়াছিলেন,সেই সময় খণ্ডবাসী ভক্তগণ তাঁহাদের সঙ্গী হইয়াছিলেন I

''মুকুন্দ,নরহরি,রঘুনন্দন খণ্ড হইতে I
আচার্য্যের ঠাত্রী আইলা নীলাচল যাইতে II’’

শ্রীপুরুষোত্তমধামে জগন্নাথ দেবের রথাগ্রে গৌড়দেশীয় ভক্তগণ যে সাত সম্প্রদায়ে বিভক্ত হইয়া নৃত্য করিয়াছিলেন,তাহার মধ্যে সপ্তম সম্প্রদায়ে খণ্ডবাসী ভক্তগণ ছিলেন I সপ্তম সম্প্রদায়ের সংকীর্ত্তনে  নরহরি সরকার ঠাকুর রঘুনন্দন নৃত্য করিয়াছিলেন I
''খন্ডের সম্প্রদায় করে অন্যত্র কীর্ত্তন I
নরহরি নাচে তাঁহা শ্রীরঘুনন্দন II’’

শ্রীমন মহাপ্রভু মুকুন্দ,রঘুনন্দন নরহরিকে সেবাকার্য্য বিভাগ কালে নরহরি সরকারকে 'ভক্তসহ অবস্থানরূপ''সেবা প্রদান করিয়াছিলেন I

নিম্নলিখিত গীতিটি নরহরি সরকার ঠাকুর রচিত বলিয়া কথিত ---

‘’আওল গৌর,                       পুণ্হি নদীয়া পুর,
হোযত মনহি উল্লাস I
ঐছে আনন্দ কন্দ,                            কিয়ে হেরব,
করবহি কীর্তন- বিলাস I I’’

হরি হরি কব হাম হেরব সো মুখচাঁদ ……..I

নরহরি সরকার ঠাকুর আনুমানিক ১৫৪০ খৃষ্টাব্দে অগ্রহায়ণ মাসে কৃষ্ণা -একাদশী তিথিতে অপ্রকট হন I তৎকালে নরহরি সরকার ঠাকুরের যে তিরোভাব হইয়াছিল,তাহার ব্যবস্থা সুষ্ঠূরূপে শ্রীনিবাস আচার্য করিয়াছিলেন I নিত্যানন্দ প্রভুর পুত্র শ্রীবীরভদ্র গোস্বামী এবং তৎকালীন শ্রেষ্ঠ বৈষ্ণবগন এই উৎসবে যোগদান করিয়াছিলেন I

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...