Wednesday, September 8, 2021

🌳🦚🌷💞🌻🍁🌻💞🌷🦚🌳

🏵️💐🌞শ্রীকৃষ্ণের স্বরূপ🌞💐🏵️

🌳🦚🌷💞🌻🍁🌻💞🌷🦚🌳

বিশেষ পোষ্ট

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’গুরু - বৈষ্ণব  - ভগবান তিনিহেঁ স্মরণ ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে হয় বিঘ্ন বিনাশন ।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ I’’

 

‘’যৎকীর্ত্তনংযৎস্মরণংযদীক্ষণং 
যদ্বন্দনংযচ্ছ্রবনংযদর্হণম্ । 
লোকস্যসদ্যোবিধুনোতিকল্মষং 
তস্মৈসুভদ্রশ্রবসেনমোনমঃ ।।  (ভাগবত - ২//১৫)

অর্থাৎ,- আমি সেই সর্বমঙ্গলময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে সশ্রদ্ধ প্রণাম নিবেদন করি; যাঁর যশগাথা কীর্ত্তন, স্মরণ, দর্শন, বন্দন, শ্রবণ ও পূজনের ফলে সমস্ত পাপরাশি অচিরেই ধৌত হয়। 

 

বৈদিক সনাতন ধর্মশাস্ত্র ব্রহ্মসংহিতার পঞ্চম অধ্যায়ের প্রথম শ্লোকে প্রজাপতি শ্রীব্রহ্মা বলেছেন,-

ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণ, সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ

অনাদিরঃ আদি গোবিন্দ, সর্বকারণঃ কারণম্ ।।

অর্থাৎ,- শ্রীকৃষ্ণ, যিনি গোবিন্দ নামেও পরিচিত, তিনি হচ্ছেন পরম ঈশ্বর। তাঁর রূপ সচ্চিদানন্দময়, অর্থাৎ সৎ, চিৎ আনন্দ বা কর্মময়, জ্ঞানময় আনন্দময়। তিনি হচ্ছেন সব কিছুর পরম উৎস। তাঁর কোনো উৎস নেই, কেনোনা তিনি হচ্ছেন সর্ব কারণের পরম কারণ।"

 

পৃথিবীতে মানব জাতির আদি পিতা ব্রহ্মাসহ সব মহাজন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর জ্ঞানে ভজনা করেছেন। তাঁকে সব কারণের পরম কারণ জেনেই মানব মুক্তির জন্য তাঁকে আরাধনার কথা বলে গেছেন। মহাশূন্যে দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান সব গ্রহ, নক্ষত্র এবং কোটি কোটি ব্রহ্মাণ্ড তার থেকে সৃষ্টি এবং সবের স্থিতি প্রলয়ও তাঁর মধ্যেই সাধিত হয়। অমলপুরাণ শ্রীমদ্ভাগবতে প্রথম স্কন্ধের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ২৮ ২৯ নং শ্লোকে বলা হয়েছে, "সমস্ত বৈদিক শাস্ত্রে জ্ঞানের পরম উদ্দেশ্য হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তাঁর প্রীতির জন্যই সকল প্রকার যজ্ঞ, তপস্যা বৈদিক কর্ম্ম করতে হয়। তিনিই হচ্ছেন জীবনের পরম উদ্দেশ্য।"

 

ঈশোপনিষদের আবাহন অংশে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে বলা হয়েছে,- "তিনি সম্পূর্ণভাবেই পূর্ণ এবং তাঁর থেকে উদ্ভূত সকল কিছুই সর্বতো ভাবে পূর্ণ। যেহেতু শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমপূর্ণ, তাই তাঁর থেকে অসংখ্য অখণ্ড পূর্ণ সত্তা বিনির্গত হলেও তিনি পূর্ণ রূপেই অবশিষ্ট থাকেন। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,-

অহং সর্বস্য প্রভবো মত্তঃ সর্বং প্রবর্ততে।

ইতি মত্বা ভজন্তে মাং বুধা ভাবসমন্বিতাঃ।।  গীতা (১০ / )

অর্থাৎ,- আমি জড় চেতন জগতের সব কিছুর উৎস। সব কিছু আমার থেকেই প্রবর্তিত হয়। সেই সত্ত্ব অবগত হয়ে পন্ডিতগণ শুদ্ধ ভক্তি সহকারে আমার ভজনা করেন।

 

চৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থে শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য  মহাপ্রভু বলেছেন,-

‘’একলে ঈশ্বর কৃষ্ণ আর সব ভৃত্য।''

একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন পরম ঈশ্বর। শ্রীমদ্ভগবদগীতায় অজুর্নও বলেছেন,-

পরং ব্রহ্ম পরং ধাম পবিত্রং পরমং ভবান্।

পুরুষং শাশ্বতং দিব্যমাদিদেবমজং বিভুম্।।  গীতা (১০ / ১২)

অর্থাৎ,- অর্জুন বললেন- তুমি পরম ব্রহ্ম, পরম ধাম, পরম পবিত্র পরম পুরুষ। তুমি নিত্য, দিব্য, আদি দেব, অজ বিভু।

 

সনাতন বৈদিক গ্রন্থের সর্বত্রই ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে একমাত্র উপাস্য বলা হয়েছে এবং মুক্তির জন্য তাঁর শ্রীপাদপদ্মের ধ্যান করার নির্দ্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও সমস্ত বৈদিক পৌরাণিক শাস্ত্রগ্রন্থ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে অজ অর্থাৎ জন্মরহিত বলে উল্লেখ করেছেন, সেখানে ভগবানের জন্মতিথি উৎসবের বিষয়টি অনেকের কাছেই সংশয়ের মনে হইতে পারে। আসলে সনাতন ধর্মের আরেকটি পরিচয় হলো এটি যুগ ধর্ম। যুগে যুগে ভগবান জীবের কল্যাণের জন্য, মুক্তির জন্য পৃথিবীতে বিভিন্ন রূপে  আসেন।

 

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার চতুর্থ অধ্যায়ে ভগবান নিজেই এরূপ আবির্ভাব সম্পর্কে বলেছেন, "যখনই ধর্মের গ্লানি বা অধঃপতন হয় এবং অধর্মের অভ্যুত্থান হয়, তখন আমি নিজেকে প্রকাশ করে অবতীর্ণ হই। সাধুদের পরিত্রাণ করার জন্য, দুষ্কৃতকারীদের বিনাশ করার জন্য এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।" গীতা (/ -)

 

বস্তুত একজন মানুষের জন্মের মতো ভগবানের জন্মপ্রক্রিয়া এক নয়। যদিও ভগবান সাধারণ মানুষের মতো রূপ ধারণ করে মানুষের মাঝেই অবস্থান করেন। ভগবানের এরূপ আবির্ভাবের কারণ বর্ণনাতেই তাঁর ভগবত্তা প্রকাশ পেয়ে থাকে। ভগবান নিজেই বলেছেন যে, ধর্মের গ্লানি হলে এবং অধর্ম বেড়ে গেলে সাধু-সজ্জন ব্যক্তিরা যখন অধর্মের দ্বারা নির্যাতিত হন তখন তাদের রক্ষার জন্য, দুষ্টদের বিনাশ করে ধৰ্ম প্রতিষ্ঠার জন্য ভগবান চিন্ময় ধাম হইতে এই পৃথিবীতে অবরতণ করেন। যাঁকে আমরা অবতার বলি।

 

দ্বাপর যুগে অত্যাচারী রাজা কংস, জরাসন্ধ শিশুপালদের মতো অত্যাচারীদের হাত থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্য এবং ধর্ম্ম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথির রোহিণী নক্ষত্রে বসুদেব দেবকীর পুত্ররূপে কংসের কারাগারে আবির্ভূত হন। মানবতা প্রতিষ্ঠার জন্য অন্যায় অন্যায়কারীকে প্রতিহত করে ন্যায়-সত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। অধর্ম্মের মূল উৎপাটন করে ধর্ম্মের বিজয় পতাকা উড়িয়েছেন তিনি। অত্যাচারী শোষকদের বিরুদ্ধে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের যুদ্ধ যুগে যুগে মানুষকে ন্যায়ের পথে সত্য-সুন্দরের প্রতিষ্ঠার জন্য অনুপ্রাণিত করে। ধর্ম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে শান্তি স্থাপন, সত্যের সন্ধানে সবার নবজাগরণ ভগবানের অপার করুণার দান।

 

অত্যাচারী রাজা, অসুর দৈত্যদের বিনাশ করে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শাসক শ্রেণীকে ন্যায় সত্যের পথে থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। আবার সত্যবাদী-ধার্মিক রাজাদের পুরস্কৃত করে প্রজা পালনে তাদের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসাও করেছেন। জীবশিক্ষার জন্য ভগবানের পৃথিবীতে আগমন। আসুরিক ভাবাপন্ন মানুষের কাছে তিনি মৃত্যু স্বরূপ, আবার ভক্তের কাছে তিনি সৎ-চিৎ-আনন্দময় অপার করুণার সাগর। যুগে যুগে লীলা বিলাস করার জন্যই শ্রীভগবানের ভাবে পৃথিবীতে আগমন।

 

পরমেশ্বর হয়েও তিনি কখনও কখনও ভক্তির দ্বারা বাঁধা পড়েন ভক্তের কাছে, কখনও কাল হয়ে মৃত্যু দণ্ড দেন পাপী-অত্যাচারীকে। দ্বাপরযুগে ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পরমেশ্বর হয়েও অর্জুনের রথের চালক বা সারথী হয়েছেন। আবার লোকশিক্ষার জন্য দ্বারকার রাজা হয়ে আদর্শ প্রজাপালক শাসকের কর্তব্য করণীয় শিক্ষা দিয়েছেন।

 

সত্য প্রতিষ্ঠায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বজ্রের মতো কঠোর যেমন, তেমন ভক্তের প্রীতিময় ভালোবাসায় ফুলের মতো কোমল। পূর্ণ আত্মা, মহাত্মার অপার করুণা লাভের জন্য শতসহস্র বছর সাধু, সন্ন্যাসী, যোগীরা আরাধনা করার পরও ব্যর্থ হইতে পারে। অথচ প্রেমপূর্ণ ভক্তির দ্বারা ভগবান ভক্তের অনুগত.হয়ে পড়েন। এভাবেই ভগবান আমাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য যুগে যুগে পৃথিবীতে অবতরণ করে পাপীদের উদ্ধার করে মানবমুক্তির পথ প্রদর্শন করেছেন। জন্যই তিনি মুক্তিদাতা।

 

প্রাণ গোবিন্দ শ্রীবাসুদেবের শ্রীচরণে প্রার্থনা করি, যেন আজকের অশান্তিময় পৃথিবী পুনরায় শান্তিময় হয়ে ওঠে, সব অন্যায়-অত্যাচার যেনো তাঁর করুণায় দূর হয়। সৎ শক্তির জাগরণে জগৎবাসী যেন মুক্তির পথ খুঁজে নিতে পারে। হৃদয়ের ভীরুতা কেটে আত্মশক্তিতে বলিয়ান হয়ে অন্যায়কে যেন প্রতিহত করে ন্যায় সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে পারি পৃথিবীর সর্বত্র। পুণ্য লগ্নে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে এই হোক আমাদের সবার প্রার্থনা।


পরমকরুনাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী আর সকল বৈষ্ণব ভক্ত পার্ষদদের শ্রীচরণে আমাদের করুণ প্রার্থনা, সবার মঙ্গলময়, কল্যাণময়, ভক্তিময়, মুক্তিময়, শান্তিময়, সুন্দরময় এবং আনন্দময় করে রাখুন নিরন্তর।

‘’হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ  কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে !

হরে রাম হরে রাম  রাম রাম হরে হরে ! !’’

💞জয় ভক্তবৎসল শ্রীভগবানের জয়💐💐জয় সকল ভক্তবৃন্দের জয়💞


 

No comments:

Post a Comment

🌳🦚💐🏵️🌷🏵️💐🦚🌳 💐 পক্ষবর্দ্ধিনী মহাদ্বাদশী 💐 🌳🦚💐🏵️🌷🏵️💐🦚🌳 শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ সকল সাধু , গুরু , বৈষ্ণব ...