🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚

🌷শ্রীশ্রী শিক্ষাষ্টকম🌷

🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚

খুব গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট 

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’নমস্ত্রিকাল - সত্যায় জগন্নাথ সুতায় চ।

স - ভৃত্যায় স -পুত্রায় স - কলত্রায় তে নমঃ।।‘’

 

বন্দে গুরূনীশভক্তানীশমীশাবতারকান্‌ ।

তৎপ্রকাশাংশ্চ তচ্ছক্তীঃ কৃষ্ণচৈতন্যসংজ্ঞকম্‌ ।।

 

অন্বয়ঃ।- গুরূন্‌ (গুরুগণকে), ঈশভক্তান্‌ (ঈশ্বরের ভক্তগণকে, শ্রীবাসাদিকে), ঈশাবতারকান্‌ (ঈশ্বরের অবতারগণকে, শ্রীঅদ্বৈতাচার্য্যাদিকে), তৎপ্রকাশান্‌ (ঈশ্বরের প্রকাশগণকে, শ্রীপাদ নিত্যানন্দাদিকে), তচ্ছক্তীঃ (ঈশ্বরের শক্তিসমূহকে, শ্রীগদাধরাদিকে), কৃষ্ণচৈতন্য-সংজ্ঞকম্‌ ঈশং চ বন্দে (ও শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য-নামক ঈশ্বরকে বন্দনা করি)।

 

অর্থাৎ,- আমি শ্রীরূপসনাতনপ্রমূখ শিক্ষাগুরু ও দীক্ষাগুরুদের বন্দনা করি। বন্দনা করি তাঁদের, – শ্রীবাস প্রভৃতি যাঁরা ঈশ্বরের ভক্ত, অদ্বৈত প্রভৃতি যাঁরা ঈশ্বরের অবতার, নিত্যানন্দ প্রভৃতি যাঁরা ঈশ্বরের প্রকাশ, গদাধর প্রভৃতি যাঁরা ঈশ্বরের শক্তি এবং বন্দনা করি শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যকে যিনি স্বয়ং ঈশ্বর।
 

শ্রীশ্রী শিক্ষাষ্টকম তৃতীয় পর্ব্ব

শ্রী সংকীর্ত্তনের  এত শক্তি তথাপিও তাহাতে জীবের রুচি হয় না, তাহা হইলেই বুঝিতে হইবে যে নামে রুচি হওয়া জীবের সুকৃতি সাপেক্ষ। তাই শ্রীমন্মহাপ্রভু বলিলেন,-

‘’নাম্নামকারি বহুধা নিজ সৰ্ব্বশক্তি-

স্তত্ৰাপিতা নিয়মিতঃ স্মরণে ন কালঃ ।

এতাদৃশী তব কৃপা ভগবন্মমাপি,

দুর্দ্দৈবমীদৃশ মিহাজনি নানুরাগঃ  I I ২ I I‘’

অর্থাৎ,- হে ভগবান ! তোমার নামই জীবের সর্ব্বমঙ্গল বিধান করেন, এইজন্য তোমার 'কৃষ্ণ', 'গোবিন্দাদি' বহুবিধ নাম তুমি বিস্তার করিয়াছ। সেই নামে তুমি স্বীয় সর্ব্বশক্তি অর্পণ করিয়াছ এবং সেই নাম স্মরণের কালাদি নিয়ম (বিধি বা বিচার ) কর নাই।  প্রভো ! জীবের পক্ষে এরূপ কৃপা করিয়া তুমি তোমার নামকে সুলভ করিয়াছ, তথাপি আমার নামাপরাধরূপ দুর্দ্দৈব এরূপ করিয়াছে যে, তোমার সুলভ নামেও আমার অনুরাগ জন্মিতে দেয় না।

 

নামের মহত্বাদির বিষয়ে পূজ্যপাদ শ্রীল কবিরাজ গোস্বামী মহাশয় বলিয়াছেন,-

‘’অনেক লোকের বাঞ্ছা অনেক প্রকার ।

কৃপাতে করিলা অনেক নামের প্রচার  I I

খাইতে শুইতে যথা তথা নাম লয় ।

দেশ কাল নিয়ম নাহি, সৰ্ব্বসিদ্ধি হয়  I I

‍‍ সৰ্ব্বশক্তি নামে দিলা করিয়া বিভাগ ।

আমার দুর্দ্দৈব নামে নাহি অনুরাগ  I I‘’      (শ্রী চৈতন্য চরিতামৃত অন্তঃ ২০ পঃ )

যাঁহার যখন যেরূপ প্রয়োজন, তিনি সেই ভাবে তখন সেই নাম বলিয়া থাকেন । কিন্তু নামের শক্তি অনন্ত । যিনি যেভাবে যে নামটাই বলুন না কেন প্রত্যেক নামটী উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গেই অন্তর মধ্যে আনন্দের তরঙ্গ উদয় হইবে ।

 

শাস্ত্র বলেন,-

‘’ঋগ্বেদোহথ যজুৰ্ব্বেদো সাম বেদোপ্যথৰ্ব্বনঃ I

অধীতাস্তেন যেনোক্তং হরিরিত্যক্ষর দ্বয়ং I I‘’

অর্থাৎ,- "হরি" এই দুইটী অক্ষর উচ্চারণ দ্বারা ঋক্, যজু, সাম ও অথর্ব এই চতুৰ্ব্বেদ অধ্যয়নের ফল লাভ হইয়া থাকে। ইহার প্রমাণ পরম ভক্ত প্ৰহ্লাদের চরিত্র। সুতরাং শ্রীভগবান যে জীবের প্রতি করুণা করিয়া তাহার নামে সমস্ত শক্তি প্রদান করিয়াছেন তাহাতে আর সন্দেহ নাই । চিন্তামণি যেমন অচিরেই চিন্তিত পদার্থ প্রদান করে এই নামচিন্তামণিও সেইরূপ চিন্তিতা- চিন্তিত সৰ্ব্বতত্ত্ব প্রদান করিয়া থাকে তাই শাস্ত্রে বলেন, ‘’নামচিন্তামণিঃ’’  তাহা হইলেই সকলের বিশেষতঃ যাগ-যজ্ঞ তপস্যানভিজ্ঞ এই ঘোর কলিহত জীবের পক্ষে কেবল মাত্র নাম করাই শ্রেষ্ঠ সাধন । তবে আমরা পারি কি? কোনও মহাত্মার মুখে শুনিয়া ছিলাম মরণোন্মুখ পিতাকে পুত্র বলিয়াছিলেন,- "বাবা ! হরে কৃষ্ণ বলুন" কিন্তু বাবা বলিলেন,- ‘’আঃ গোল কর কেন, আমি অত কথা বলতে পারিনা , আমায় একটু জল দাও খাব ৷’’

 

বন্ধুগণ । আমাদেরও ঠিক ঐদশা হইয়াছে । আমরাও দিবারাত্র নানাবিধ বিষয় চর্চা লইয়া খুব আলোচনা করিতে পারি কিন্তু ভগবানের নাম গ্রহণের সময়েই যত যন্ত্রণা, যত অলসতা । মনিবের সকল বোঝাই গাধা বহন করিতে পারে। কিন্তু একটি সামান্য ভাতের কাটির ভার যেমন সহ্য করিতে পারেনা , আমরাও তেমনি আবোল তাবোল অনেক বলিতে পারি কিন্তু গুরুদত্ত বীজমন্ত্র জপ করিতে বসিলেই আমাদের বড় কষ্ট বোধ হয়। যখন তখন হেলায় শ্রদ্ধায় যেমন করিয়াই হউক নাম করিতে হইবে কিন্তু আমাদের ভাগ্যে তাহাই বা ঘটে কি ? তাহার উপর আবার দুৰ্দ্দৈব। এই দুর্দ্দৈব শব্দে নামাপরাধ বলিয়া মহাজনগণ কেহ কেহ ব্যাখ্যা করিয়া বলিয়াছেন যে, নামাপরাধ পরিহার পূৰ্ব্বক নাম করিতে করিতেই ক্রমে নামে রুচি আসিবে । নামাপরাধ সম্বন্ধে শ্রী হরিভক্তি বিলাস, শ্ৰীভক্তি রসামৃত সিন্ধু প্রভৃতি গ্রন্থে বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা আছে , গ্রন্থ বাহুল্য ভয়ে তাহা উদ্ধৃত করিলাম না ।

 

এক্ষণে,-

“যেরূপে লইলে নাম প্রেম উপজয় ।

তাহার লক্ষণ শুন স্বরূপ রামরায় । I”

এই বলিয়া প্রভু বলিলেন,-

“তৃণাদপি সুনীচেন তবোরিব সহিষ্ণুনা ।

অমানিনা মানদেন কীর্তনীয়ঃ সদা হরিঃ ॥৩॥”

অর্থাৎ,- যে ব্যক্তি তৃণ অপেক্ষাও নীচ, তৃণের উপর পদাঘাত করিলে তৃণও পুনৰ্ব্বার উঁচু হইয়া উঠে কিন্তু নাম- কীৰ্ত্তনকারী তাহাও করিবে না, কেহ কিছু বলিলে নত হইয়া থাকিবে। আর বৃক্ষের ন্যায় সহিষ্ণুতা অবলম্বন করিবে অর্থাৎ বৃক্ষ যেমন নিজ অঙ্গ ছেদন কারীকেও সুমিষ্টফল ও সুশীতল ছায়াদানে পরাম্মুখ হয়না । নাম- কীৰ্ত্তনকারীও সেইরূপ  ক্ষমাশীল ও বৃক্ষের ন্যায় শীত, ঘর্ম্ম, বর্ষা সহ্য করিয়া অযাচক বৃত্তি অবলম্বন করিবে, বৃক্ষের অযাচক বৃত্তি, যথা— জলাভাবে শুকাইয়া যায় তবু কাহারও নিকট একবিন্দু জল প্রার্থনা করে না !

 

নিরপরাধযুক্ত হইয়া নামগ্রহণ করিতে করিতে ক্ৰমান্বয়ে যখন জীবের সেই ভাগ্য উদয় হইতে থাকে তখন বিষয়- বিরক্তি- জনিত দৈন্যভাব, মিথ্যা অভিমানের অভাব, সৰ্ব্বজীবে শ্রীকৃষ্ণ অধিষ্ঠান জানিয়া দয়া এবং যথাযোগ্য সম্মাননা প্রভৃতির সহিত জীব যে নিত্যই শ্ৰীকৃষ্ণ- কিঙ্কর, নিরন্তর তাহার তুষ্টির জন্যই যে যাহা কিছু কৰ্ম্ম সম্পাদন করা হয়, এই তত্ত্ব উপলব্ধি করিয়া আনন্দ -চিদঘন মূর্ত্তি শ্ৰীগোবিন্দের ভাবে বিভোর থাকেন । এই স্থলে আমরা পূজ্যপাদ কবিরাজ গোস্বামী মহাশয়ের ভাষায় উপরোক্ত শ্লোকের কথা বলি,-

“তৃণ হৈতে নীচ হৈয়া সদা লবে নাম।

আপনি নিরভিমানী অন্যে দিবে মান  I I

তরু সম সহিষ্ণুতা বৈষ্ণব করিবে ।

তাড়ণ ভর্ৎসনে কারে কিছু না বলিবে ।।

কাটিলেহ তরু যেন কিছু না বোলয় ।

শুখাইয়া মরে তবু পানি না মাগয়  I I

যেই যে মাগয় তারে দেয় আপন ধন ।  

ঘৰ্ম্ম বৃষ্টি সহে, আনের করয়ে রক্ষণ ।।

এই মত বৈষ্ণব কারে কিছু না বলিবে ।

অযাচিত বৃত্তি সদা শাক ফল খাবে ।।

সদা নাম লবে যথা লাভেতে সন্তোষ ।

এইত আচার করে ভক্তি ধৰ্ম্ম পোষ  I I

উত্তম হৈয়া বৈষ্ণব হবে নিরভিমান ।

জীবে সন্মান দিবে যানি কৃষ্ণ অধিষ্ঠান  I I

প্রভুর আজ্ঞায় কর এই শ্লোক আচরণ ।

অবশ্য পাইবে তবে শ্ৰীকৃষ্ণ চরণ "

 

মুখে বলা খুব সহজ কিন্তু কাৰ্য্যে প্রতিফলিত করা বড়ই কঠিন ব্যাপার । কোন ভক্তকবি প্রাণের আবেগে বলিয়াছিলেন —

"বৈষ্ণব হইতে মনে ছিল বড় সাধ ।

(কিন্তু) তৃণাদপি শ্লোকেতে প'ড়ে গেল বাধ  I I”

এইভাবে নাম করিতে করিতে যখন সাধক বুঝিতে পারেন যে, সেই জগত- জীবন দীনবন্ধুর শ্ৰীচরণ আশ্রয় ভিন্ন আর অন্য উপায় নাই তখন তিনি করজোড়ে প্রেমময়ের উদ্দেশে বলিতে থাকেন ー

“নাথ যোনি সহস্ৰেষু যেষু যেষু ব্রহ্মাম্যহম্।

তেষু তেষ্বচলাভক্তি রচ্যূতস্তু সদা ত্বয়ি ॥”

ক্রমশঃ…