🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚

🌷🍁শ্রীশ্রী শিক্ষাষ্টকম🍁🌷

🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚

খুব গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট 

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’নমস্ত্রিকাল - সত্যায় জগন্নাথ সুতায় চ।

স - ভৃত্যায় স -পুত্রায় স - কলত্রায় তে নমঃ।।‘’

 

শ্রীশ্রী শিক্ষাষ্টকম চতুর্থ পর্ব্ব

এই ভাবে কখনও বা বহির্মুখ মায়ামুগ্ধ জীবের দুর্দশা দেখিয়া তাহারা কাঁদিয়া উঠেন, আবার কখনও বা ভাবিতে থাকেন, হায়, নাথ ! কবে জগতের সকল জীব তোমার নামামৃত পানে কৃতাৰ্থ হইবে ? এই ভাব প্রাণে উদয় হইলে জীবের যে অবস্থা লাভ হয় জগৎগুরু প্রেমের ঠাকুর শ্ৰীগৌরাঙ্গ সুন্দর আমার নিজ কৃত শ্লোকের দ্বারা তাহাই ব্যক্ত করিয়া বলিতেছেন ,—

“ন ধনং ন জনং ন সুন্দরীং

কবিতাং বা জগদীশ কাময়ে ।

মম জন্মনি জন্মনীশ্বরে

ভবতাদ্ভক্তিরহৈতুকী ত্বয়ি ॥৪৷”

অর্থাৎ হে জগদীশ । আমি তোমার নিকট ধন প্রার্থনা করিনা, পরিজন চাইনা, সুন্দরী ভাৰ্য্যাও কামনা করিনা, এমন মনোহারিণী কবিত্ব শক্তিও প্রার্থনা করিনা , কিন্তু জন্মে জন্মে যেন তোমার পাদপদ্মে আমার অহৈতুকী ভক্তি থাকে ইহাই প্রার্থনা ৷  

 

নামের এমনই মহিমা, নামের এমনই অদ্ভুত শক্তি যে, নাম করিতে করিতে ভাবের স্রোত আসিয়া সাধককে কোথায় কিভাবে ভাসাইয়া লইয়া যায় তাহা স্থির করা কঠিন, প্রথমতঃ হয়তে সাধক কোন কামনা হৃদয়ে লইয়া নাম করিতে থাকে কিন্তু নাম  করিতে করিতে প্রেমোদয় হইলে তখন সে কিছুই আর চায় না । তখন কেবল সেই প্রেমানন্দ- ঘন শ্রীগোবিন্দের বংশী- বিলাসময়ী বদন চন্দ্রমা নিরীক্ষণের জন্যই প্রাণ ব্যাকুল হইয়া থাকে। তখন কেবল “দয়াময়, প্রাণ গোবিন্দ একবার দেখা দাও " ইত্যাদি ভাবে প্রার্থনা করিতে থাকে ।

“ধন জন নাহি মাগোঁ কবিতা সুন্দরী।

শুদ্ধ ভক্তি দেহ মোরে কৃষ্ণ কৃপা করি।”

 

এইভাবে প্রার্থনা করিতে করিতে ক্রমে যখন দাস্য ভাব প্রাণে জাগরূক হইতে থাকে তখন সাধক কিভাবে প্রার্থনা করেন তাহা দেখাইয়া বলিতেছেন –

“অয়ি নন্দতনুজ কিঙ্করং

পতিতং মাং বিষমে ভবাম্বুধৌ ।

কৃপয়া তব পাদ - পঙ্কজ

স্থিতধূলিসদৃশং বিচিন্তয় ॥৫৷”

অর্থাৎ হে নন্দনন্দন শ্ৰীগোবিন্দ ! ভীষণ তরঙ্গময় সংসার সাগরে নিপতিত হইয়া আমি নিরন্তর কষ্ট পাইতেছি তুমি কৃপা করিয়া তোমার এই দাসকে তোমার শ্ৰীচরণ কমল স্থিত ধূলি কণার ন্যায় গ্রহণ করিয়া কৃতাৰ্থ কর।

 

শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে এই ভাবেরই অতি সুন্দর ব্যাখ্যা দেখিতে পাই, যথা

“তব নিত্য দাস মুঞি তোমা পাসরিয়া। 

পড়িয়াছি ভবার্ণবে মাযা়বদ্ধ হঞা ৷।

কৃপা করি কর মোরে পদধূলি সম ।

তোমার সেবক করো তোমার সেবন।।''

পরম দয়াল শ্ৰীগৌরাঙ্গ দেব কিরূপ ভাবে জীবকে ধীরে ধীরে সাধন পথে অগ্রসর হইবার উপদেশ দিতেছেন দেখুন,-

প্রথম শ্লোকে নাম সংকীৰ্ত্তনের প্রয়োজন বলিয়া, নামকীৰ্ত্তনে কি হয়, তাহা বলিলেন, পরে দ্বিতীয় শ্লোকের দ্বারা সংকীৰ্ত্তনে যে রুচি হওয়া প্রয়োজন তাহা বুঝাইলেন। তারপর সেই রুচি- যুক্ত- চিত্তে নামগ্রহণ করিতে করিতে জীব কি ভাবে নাম গ্রহণে অধিকারী হয় তাহা তৃতীয় শ্লোকে বর্ণনা করিয়া, নাম গ্রহণের ফলে যে ক্রমেই সংসারের অনিত্যতা উপলব্ধি হয় এবং তখন যে সাধক প্রাণের আবেগে ধন জন বাহ্যিক বিষয়ের সুখ শান্তি কিছু চায়না তাহা দেখাইয়া চতুর্থ শ্লোক প্রকাশ করিলেন।

 

তারপর "আমি আর কিছুই চাই না আমাকে তোমার ভাবে মাতাইয়া রাখ, প্রাণে ভক্তি দাও" এই ভাবে প্রার্থনা করিতে করিতে নিজকে নিতান্ত অসহায় দুৰ্ব্বল বোধ করিয়াই শ্ৰীভগবানের পাদপদ্মে স্মরণ লইয়া এই পঞ্চম শ্লোক বর্ণিলেন । শিক্ষার যেমন ক্রমোন্নতি আছে, সাধনেরও তদ্রুপ ক্রমোন্নতি পরিলক্ষিত হয় । ক্রমে ক্রমে প্রপন্ন ভাব আসিয়া যখন হৃদয় অধিকার করে তখন সাধকের প্রাণে সাধ্য পদার্থে সম্ভ্রমের উদয় দেখিতে পাওয়া যায় । এই ভাবের সঙ্গে সঙ্গেই সেবাভিলাষ প্রাণে জাগিয়া উঠে । তখন "অয়ি নন্দতনুজ,’’ ইত্যাদি ভাবে কাঁদিয়া কাঁদিয়া সেই গোবিন্দ চরণে লোটাইয়া পড়িবার বাসনা হয় । তাঁহার সেবা করিবার বাসনা প্রাণে জাগিলেই আমি ছোট, তিনি বড়, আমি দাস তিনি প্রভু এই ভাবটি প্রাণে আসে । ইহাকেই শাস্ত্র দাস্যরতি বলিয়াছেন।

 

প্রেম রাজ্যের ভাব, প্রেম রাজ্যের চাল চলন সকলই এক নূতন ধরণের । কখন কোন সূত্র ধরিয়া যে কোন ভাবের উদয় হয়, তাহা কিছু বুঝিতে পারা যায় না। দাস্যভাব লাভ করিয়া ভক্ত ভগবানের সেবা করিয়া ধন্য হইতে থাকে তবু যেন কেন মনে হয় "আমি অধম, আমার প্রাণ গলিল না” ইত্যাদি । এই ভাব আসিলে ভক্তের কি অবস্থা হয় তাহাই ব্যক্ত করিয়া বলিয়াছেন,-

“নয়নং গলদশ্রুধারয়া বদনং গদগদরুদ্ধয়া গিরা ।

পুলকৈর্নিচিতং বপুঃ কদা তব নামগ্রহণে ভবিষ্যতি ॥৬৷”

অর্থাৎ প্রভো ! তোমার নাম কীৰ্ত্তন করিতে করিতে কবে আমার নেত্ৰ দিয়া বারিধারা বিগলিত হইবে । নাম গুণ বলিতে বলিতে কবে আমার বচন রূদ্ধ হইয়া আসিবে , আর অনিত্য এই দেহ কবেইবা তোমার নামগুণ শ্রবণে পুলকিত হইয়া উঠিবে অর্থাৎ তোমার নামে কবে আমার প্রেমের সঞ্চার হইবে প্রেম বিনা জীবন ব্যর্থ বলিয়া বোধ হইতেছে ।

 

“প্রেমধন বিনা ব্যর্থ দরিদ্র জীবন I

‘দাস’ করি বেতন মোরে দেহ প্রেমধন I I”

সাধক নাম কীৰ্ত্তনের দ্বারা উক্ত প্রকার ভাব লাভ করিয়া আরাধ্য দেবের দর্শন স্পর্শনাদি দ্বারা নানাভাবে সেবানন্দে বিভোর থাকেন, কিন্তু সময় সময় অদর্শন হেতু যে ভাব হয় তাহা উক্ত করিয়াই শ্ৰীমন্মহাপ্রভু বলিতেছেন,-

“যুগায়িতং নিমেষেণ চক্ষুষা প্রাবৃষায়িতম। 

শূন্যায়িতং জগৎ সৰ্ব্বং গোবিন্দ- বিরহেণ মে।। ৭৷।”

সাধক বিরহ জ্বালা সহ্য করিতে পারে না, বিরহ উপস্থিত হইলে ক্ষণকাল তাঁহার নিকট যুগবৎ প্রতীয়মান হয়, নয়ন হইতে শ্রাবণের ধারার ন্যায় অবিরত বারি বর্ষণ হইতে থাকে । তখন তাহার নিকট বাহ্যিক জগতের ঐশ্বর্য্য সুখ সম্পদ সকলই শূন্য বলিয়া বোধ হয় । কবিরাজ গোস্বামী বলিয়াছেন—

"উদ্বেগে দিবস না যায়, ‘ক্ষণ’ হইল ‘যুগসম’ ।

বর্ষার মেঘ প্রায় অশ্রু বর্ষে দু’নয়ন ॥  

গোবিন্দ - বিরহে শূন্য হৈল ত্রিভুবন ।

তুষানলে পোড়ে, যেন না যায় জীবন ।। ”

ক্রমশঃ…

 

বড় সুখের খবর গাই।

সুরভি-কুঞ্জেতে নামের হাট খুলেছে খোদ নিতাই।।

বড় মজার কথা তায়।

শ্রদ্ধা-মূল্যে শুদ্ধ-নাম সেই হাটেতে বিকায়।।

যত ভক্ত-বৃন্দ বসি’।

অধিকারী দেখে’ নাম বেচ্ছে দর কষি’।।

যদি নাম কিনবে ভাই।

আমার সঙ্গে চল মহাজনের কাছে য়াই।।

তুমি কিনবে কৃষ্ণ-নাম।

দস্তুরি লইব আমি, পূর্ণ হবে কাম।।

বড় দয়াল নিত্যানন্দ।

শ্রদ্ধা-মাত্র ল’য়ে দেন পরম আনন্দ।।

একবার দেখলে চক্ষে জল।

'গৌর’ বলে’ নিতাই দেন সকল সম্বল।।

দেন শুদ্ধ কৃষ্ণ-শিক্ষা।

জাতি, ধন, বিদ্যাবল না করে অপেক্ষা।।

অমনি ছাড়ে মায়াজাল।

গৃহে থাক, বনে থাক, না থাকে জঞ্জাল।।

আর নাইকো কলির ভয়।

আচণ্ডালে দেন নাম নিতাই দয়াময়।।

 

ভক্তিবিনোদ ডাকি’ কয়।

নিতাই-চাঁদের চরণ বিনা আর নাহি আশ্রয়।।