Wednesday, December 30, 2020

নিত্যলীলা প্রবিষ্ট ওঁ বিষ্ণুপাদ পরিব্রাজকাচার্য্য ত্রিদন্ডী স্বামী ১০৮ শ্রী - শ্রীমদ্ভক্তিপ্রদীপ তীর্থ গোস্বামী মহারাজ
( তিরোভাব )
আজ বিশেষ শুভদা তিথি। আজ পরম বৈষ্ণব পরম পূজ্যপাদ পরিব্রাজকাচার্য্য ত্রিদন্ডী স্বামী ১০৮ শ্রী - শ্রীমদ্ভক্তিপ্রদীপ তীর্থ গোস্বামী মহারাজের বিরহ মহোৎসব। সকল সাধু, গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I
‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’
পূর্ব্ববঙ্গে নোয়াখালি জেলার সন্দীপ হাতিয়া গ্রামে বাংলা ১২৮৩ সনে,চৈত্র মাসে পিতা শ্রীযুক্ত রজনীকান্ত বসু ও মাতা শ্রীমতী বিধুমুখী বসুর পুত্র রূপে জন্মগ্রহণ করেন I পিতা - মাতা নাম রাখেন শ্রী জগদীশ বসু I শ্রীযুক্ত রজনীকান্ত বসু মহাশয় সরকারি চাকুরী করিতেন I তিনি প্রথমে বামনাপাড়া গোস্বামীদের শিষ্য ছিলেন I পরে তাঁহারা শ্রীমদ ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের শ্রীচরণ আশ্রয় করেন I শেষে তিনি শ্রীমদ ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতীঠাকুরের কাছে বাবাজি বেশ গ্রহণ পূর্বক 'শ্রীরাধাগোবিন্দদাস বাবাজি' নাম হয় I
শ্রীযুক্ত রজনীকান্ত বসুর সুপুত্র শ্রীজগদীশ চন্দ্র বসু ক্রমে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি.এ.ডিগ্রি প্রাপ্ত হইয়া সরকারি চাকুরী শিক্ষকতার কার্য্য করিতেন I তিনি স্বপত্নীক ঐ কলিকাতাতেই থাকিতেন I শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের পরমপ্রিয়,শ্রীল প্রভুপাদের অনুগত ও অনুকম্পিত, পাশ্চাত্য প্ৰদেশে গুরু - গৌরাঙ্গবানী প্রচারকপ্রবর পরিব্রাজকাচার্য্য ত্রিদন্ডী স্বামী শ্রীমদ্ভক্তিপ্রদীপ তীর্থ গোস্বামী মহারাজ তাঁহার স্মৃতিপট হইতে শ্রীসুন্দারানন্দ বিদ্যাবিনোদ প্রভুর নিকট পত্র দ্বারা নিম্নলিখিত বৃত্তান্ত প্রদান করেন I
বাংলা ১৩১৬ সালের ১১ই চৈত্র,ইংরাজি ১৯১০,২৫ শে মার্চ্চ ফাল্গুনী পূর্ণিমার দিন আমি ধুবুলিয়া স্টেশন হইতে পদব্রজে শ্রীধাম মায়াপুর দর্শনে গমন করি সঙ্গে ত্রিপুরা রাজ্যের সভাপন্ডিত শ্রীযুক্তবৈকুণ্ঠনাথ ঘোষাল ভক্তিতত্ত্ব বাচস্পতি মহাশয়ের সঙ্গে শ্রীমন্মহাপ্রভুর জন্ম দিবসে শ্রীমায়াপুর শ্রীযোগপীঠে আসিয়া উপস্থিত হইলাম I শ্রীযুক্ত বৈকুণ্ঠনাথ ঘোষাল মহাশয় শ্রীল ভক্তিবিনোদঠাকুরের নিকট আমার পরিচয় করাইয়া দিলেন I ঠাকুর শ্রীল ভক্তিবিনোদ ও শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী প্রভুপাদ উভয়েই আমার প্রতি স্নেহ ও করুনা প্রদর্শন করিলেন I শ্রীল ভক্তিবিনোদঠাকুরের নিকট থেকে আমার হরিনাম হল I এক দিন যখন ঠাকুরের সঙ্গে আমি কলিকাতা আসিলাম তখন শ্রীল ঠাকুর একদিন শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্তসরস্বতী প্রভুকে ডাকিয়া আমার উপনয়ন সংস্কার প্রদানের ভার অর্পণ করিলেন I শ্রীল প্রভুপাদ আমাকে উপনয়ন সংস্কারে সংষ্কৃত করিলেন এবং তৎসঙ্গে ঠাকুরেরই অনুজ্ঞায় ব্রহ্মগায়ত্রী,গুরুগায়ত্রী ও গৌরাঙ্গ গায়ত্রী প্রদান করিলেন I
শ্রীল ঠাকুর মহাশয় সর্বক্ষণ বলিতেন ''কখনও অসৎসঙ্গ করিবেন না - প্রজল্প করিবেন না I শ্রী উপদেশামৃতের ''উৎসাহানিমিষছায়াত'' শ্লোকটি সর্বদা স্মরণ রাখিবেন I সর্বদা সাধু সঙ্গে উচ্চে:স্বরে হরিনাম করিবেন I ইংরাজী ১৯১৪ হইতে ১৯১৭ সাল পর্য্ন্ত আমি কার্য্য - ব্যপদেশে অন্যত্র অবস্থান করিলেও প্রতি বৎসরই শ্রীমন্মহাপ্রভুর জন্মউৎসব উপলক্ষে শ্রীধামমায়াপুর শ্রীশ্রীলপ্রভুপাদের শ্রীচরণ দর্শন ও হরিকথা শ্রবণের জন্য আগমন করিতাম I আমার শাস্ত্রানুশীলন ও সাধু গুরু সেবা প্রভৃতি দেখিয়া শ্রীল প্রভুপাদ হইতে আমি 'ভক্তিপ্রদীপ' নামে পরিচিত হইলাম I শ্রীল প্রভুপাদের 'ভক্তিশাস্ত্র এবং সম্প্রদায় বৈভাবাচার্য্য' পরীক্ষায় বিদ্যাবিনোদ ভক্তিশাস্ত্রী সম্প্রদায় বৈভাবাচার্য্য পদবিও লাভ করিলাম I
ইংরাজী ১৯১৯ সালে,শ্রীকৃষ্ণের ইচ্ছায় পত্নীর স্বধাম প্রাপ্তি হওয়ায় চিরকালের মত সংসার বন্ধন হইতে পরিত্রাণ লাভ করিয়া শ্রীলপ্রভুপাদ ও বৈষ্ণবগণের আনুগত্যে পরিব্রাজক বানপ্রস্থ বেসে শ্রীগৌড়মণ্ডলের বিভিন্ন স্থানে শ্রীচৈতন্যবাণী কীর্ত্তনের জন্য আদেশ প্রাপ্ত হইলাম I শ্রীজগদীশবাবু – বিদ্যাবিনোদ ভক্তিপ্রদীপ মহাশয় আমাকে কায়মনোবাক্যে চিরদিনের জন্য শ্রীশ্রীহরি - গুরু -বৈষ্ণব সেবায় দণ্ডিত করিবার জন্য ১৯২০ সালের ১লা নভেম্বর শ্রীলপ্রভুপাদ কৃপাপূর্ব্বক শ্রীধাম মায়াপুর শ্রীচৈতন্যমঠে আমাকে ত্রিদণ্ডসন্ন্যাস প্রদান করিলেন I পরমারাধ্য শ্রীলপ্রভুপাদের আজ্ঞায় কতিপয় ব্রহ্মচারীসহ পূর্ব্ববঙ্গে ঢাকা নগরীতে প্রচার কার্য্যে গমন করে নানাস্থানে শ্রীচৈতন্যভাগবত ও শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত পাঠ,কীর্ত্তন ও ব্যাখ্যা,পরলোকগত লালমোহন শাহ শঙ্খনিধি মহাশয়ের ঠাকুর বাড়ীতে আমার শ্রীমাধবগৌড়ীয়মঠ প্রতিষ্ঠা ও গিরিমহারাজ প্রভৃতি শুদ্ধভক্ত গনের সহিত সম্মেলন হইয়াছিল I
শ্রীল মহারাজের শরণাগত শিষ্য ও সেবকদের প্রতি স্নেহ ছিল সহস্র পিতৃ - মাতৃ স্নেহ সম I তিনি বলিতেন প্রথমে সাধু গুরু বৈষ্ণব সেবা সঙ্গে সঙ্গে ভগবদ গ্রন্থ অনুশীলন ও কথা শ্রবণাদি করিতে হইবে I সেবা করিবার সঙ্গে সঙ্গে হরিকথা শ্রবণ করিতে হইবে I তিনি হাতে ধরিয়া সকলকে সেবা শিক্ষা দিতেন I ইংরাজী ১৯৫৮ সন,শ্রীপুরুষোত্তমধাম,পবিত্র অগ্রহায়ন মাস, ও পবিত্র পূর্ণিমা তিথিতে শ্রীল মহারাজ শ্রীচৈতন্যভাগবত শ্রবণ করিতে করিতে যোগাসনে বসিয়া শ্রীমন্মহাপ্রভুর নিত্য মহাসংকীর্ত্তন রাসস্থলীতে প্রবেশ করিলেন I গৌড়ীয় বৈষ্ণব জগতে একটি মহারত্ন অন্তর্হিত হইলেন I
ঠাকুর বৈষ্ণবগণ, করি এই নিবেদন,
মো বড় অধম দুরাচার ।
দারুণ - সংসার - নিধি, তাহে ডুবাইল বিধি,
কেশে ধরি' মোরে কর পার ।।
বিধি বড় বলবান, না শুনে ধরম - জ্ঞান,
সদাই করম - পাশে বান্ধে ।
না দেখি তারণ লেশ, যত দেখি সব ক্লেশ,
অনাথ, কাতরে তেঁই কান্দে ।।
কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, অভিমান সহ,
আপন আপন স্থানে টানে ।
ঐছন আমার মন, ফিরে যেন অন্ধজন,
সুপথ - বিপথ নাহি জানে ।।
না লইনু সৎ মত, অসতে মজিল চিত,
তুয়া পায়ে না করিনু আশ ।
নরোত্তমদাসে কয়, দেখি' শুনি' লাগে ভয়,
তরাইয়া লহ নিজ পাশ ।।

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...