🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳
🌻🌼শ্রীবলরামের রাসযাত্রা🌹শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস🌼🌻
🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু, গুরু,বৈষ্ণব ভক্তবৃন্দের শ্রী চরণে আমার দণ্ডবৎ প্রণাম । শ্রীশ্রীবলদেবের রাসযাত্রা ও শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস পর্বের কৃষ্ণপ্রীতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আজ চৈত্র পূর্ণিমার দিন শ্রীশ্রীবলদেবের রাসযাত্রা ও শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস। আমরা সাধারনত শ্রীকৃষ্ণের রাসযাত্রা সম্পর্কে অবগত। অগ্রহায়ণ মাসে পূর্ণিমা তিথিতে শ্রীকৃষ্ণ রাসযাত্রা করেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের বড় ভাই বলরাম ও তাঁর পত্নী রেবতী রাসযাত্রা করেন। তবে অগ্রহায়ণ মাসে না চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে। বলভদ্র বা বলরাম যিনি সংকর্ষন নামে পরিচিত। কথিত তিনি শ্রী বিষ্ণুর অষ্টম অবতার। তিনি ও তার পত্নী শ্রীমতি রেবতী চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে রাস যাত্রা করেন ও নৃত্য করেন। বলা হয়ে থাকে, বলরামের রাসযাত্রা প্রাচীন ভারতবর্ষে একটি নৃত্যকলা হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল। বর্তমান বাংলা তথা ভারতবর্ষে খুবই কম মন্দির আছে, যেখানে বলরাম ও রেবতীর উপাসনা করা হয়।
শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা কি এবং রাস উৎসবের তাৎপর্য
শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা সনাতন ধর্মালম্বীদের একটি বাৎসরিক ধর্মীয় উৎসব। কার্ত্তিক মাসের পূর্ণিমাই রাস পূর্ণিমা। রাস মূলতঃ শ্রীকৃষ্ণের ব্রজলীলার অনুকরণে বৈষ্ণবীয় ভাবধারায় অনুষ্ঠিত ধর্মীয় উৎসব। ভগবান কৃষ্ণের রসপূর্ণ অর্থাৎ তাত্ত্বিক রসের সমৃদ্ধ কথাবস্তুকে রাসযাত্রার মাধ্যমে জীবাত্মার থেকে পরমাত্মায়, দৈনন্দিন জীবনের সুখানুভূতিকে আধ্যাত্মিকতায় এবং কামপ্রবৃত্তি সমূহকে প্রেমাত্মক প্রকৃতিতে রূপ প্রদান করে অংকন করা হয়েছে।
শব্দগত অর্থ : ‘’রাসলীলা’’ শব্দটি এসেছে সংষ্কৃত শব্দ ‘রাস’ থেকে। রাস শব্দটি মানে, অনুভূতি আর লীলা মানে দৈবিক কার্য্য, এখানে কার্য্য বলতে বিশেষ প্রকারের নৃত্যের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং রাসলীলা বলতে একপ্রকার বিশেষ নৃত্য বোঝায়, যা শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীমতী রাধারানী ও গোপীবৃন্দ সহ করেছিলেন। যেখানে সম্পূর্ণ সাত্ত্বিক অনুভূতি, ভালোবাসা আর আনন্দ বিদ্যমান ছিল I এককথায়, রাস হলো, দৈবিক নৃত্য।
বাংলাদেশ সহ ভারতের উত্তরপ্রদেশের মথুরা ও বৃন্দাবনে, পশ্চিমবঙ্গের নদীয়াসহ অন্যান্য জায়গায়, ওড়িশা, আসাম ও মণিপুরে শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা উৎসব বিশেষ
ভাবে উদযাপিত হয়। এই উৎসবের অংশ হিসেবে গোপিনীবৃন্দ সহযোগে রাধা - কৃষ্ণের আরাধনা এবং অঞ্চলভেদে কথ্থক, ভারতনাট্যম, ওড়িশি, মণিপুরি প্রভৃতি ঘরানার শাস্ত্রীয় ও বিভিন্ন লোকায়ত নৃত্যসুষমায় রাসনৃত্য বিশেষ মর্যাদার অধিকারী।
রাস উৎসবের তাৎপর্য
পদ্মপুরাণে (৫২/১০৩-১০৫) শারদরাস ও বাসন্তীরাসের উল্লেখ পাওয়া যায়। ব্ৰহ্মবৈবর্তপুরাণে (ব্রহ্মখণ্ড, পঞ্চম অধ্যায়) বাসন্তীরাস এবং শ্ৰীমদ্ভাগবত ও বিষ্ণুপুরাণে (৫/১৩/১৪-৬১) শুধুমাত্র শারদরাসের বর্ণনা আছে। হরিবংশে ও ভাসের বালচরিতে উল্লেখ আছে যে, কৃষ্ণ গোপিনীদের সঙ্গে হল্লীশনৃত্য করেছিলেন। হল্লীশনৃত্য যদি তালযুক্ত ও বিবিধ গতিভেদে বৈচিত্র্যপূর্ণ হয় তবে তাঁকে “রাস” নামে অভিহিত করা হয়। বিষ্ণুপুরাণের মতে, কৃষ্ণ রাস অনুষ্ঠান করেছিলেন গোপরমণীদের সঙ্গে।
শ্ৰীধর স্বামী বলেছেন, বহু নৰ্তকীযুক্ত নৃত্য বিশেষের নাম রাস,-
‘’রাসো নাম বহু নৰ্ত্তকীযুক্তে নৃত্যবিশেষঃ।‘’
শ্ৰীমদ্ভাগবতের অন্যতম টিকাকার বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেছেন,-
‘’নৃত্যগীতচুম্বনালিঙ্গনদীনাং রসানাং সমূহো রাসস্তন্ময়ী যা ক্রীড়া বা রাসক্রীড়া ‘’।
শ্ৰীমদ্ভাগবতের মতে, কৃষ্ণ যোগমায়াকে সমীপে গ্রহণ করেই রাস অনুষ্ঠান করেছিলেন। বস্ত্রহরণের দিন গোপিনীদের কাছে কৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, পরবর্ত্তী পূর্ণিমা তিথিতে তিনি রাসলীলা করবেন।
‘’যখন করেন হরি বস্ত্ৰহরণ
।
গোপীদের কাছে তিনি করিলেন পণ
।।
আগামী পূর্ণিমাকালে তাঁহাদের সনে
।
করবেন রাসলীলা পুণ্য বৃন্দাবনে
।।‘’
শ্রীকৃষ্ণের সুমধুর বংশীধ্বনিতে মুগ্ধ হয়ে গোপিনীবৃন্দ নিজ নিজ কর্ত্তব্য কর্ম বিসর্জ্জন দিয়ে সংসারের সকল মায়া মোহ বন্ধন পরিত্যাগ করে বৃন্দাবনে বংশীবটে শ্রীরাসমণ্ডলে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং শ্রীকৃষ্ণের চরণে নিজেদেরকে সমর্পণ করেছিলেন।
প্রথমে শ্রীকৃষ্ণ গোপিনীদের স্ব-গৃহে ফিরে যেতে তাড়না করেন; বলেন, তাঁদের সংসার - ধর্ম পালন করা উচিত। কিন্তু গোপিনীরা নিজেদের মতে দৃঢ় ছিলেন। ভগবান ভক্তের অধীন। শ্রীকৃষ্ণ গোপিনীদের দৃঢ়ভক্তি দেখে তাঁদের মনোকামনা পূরণার্থে রাসলীলা আরম্ভ করেন । কিন্তু যখনই শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের অধীন বলে ভেবে গোপিনীদের মন গর্ব - অহংকারে পূর্ণ হল, তখনই শ্রীকৃষ্ণ গোপিনীদের মধ্য থেকে শ্রীরাধাকে নীয়ে অন্তর্ধান হয়ে গেলেন, তখন গোপিনীবৃন্দ নিজেদের ভুল বুঝতে পারলেন।
ভগবানকে ‘একমাত্র আমার’ বলে ভেবে অহংকারের ফলে শ্রীকৃষ্ণকে তাঁরা হারিয়ে ফেলেছিলেন। যেহেতু শ্রীকৃষ্ণ ত্রিজগতের পতি, তাই তাঁকে কোনো মায়া - বন্ধনে বেঁধে রাখা যায় না। তখন গোপিনীবৃন্দ একাগ্রচিত্তে শ্রীকৃষ্ণের স্তুতি(গোপী গীত) করতে শুরু করেন। ভক্তের ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান গোপিনীদের মানব জীবনের পরমার্থ বুঝিয়ে দিয়ে তাঁদের অন্তর পরিশুদ্ধ করেন। গোপিনীদের ইচ্ছাকে তিনি সম্মান জানিয়ে ‘যতজন গোপিনী, ততজন কৃষ্ণ’ হয়ে গোপিনীদের মনের অভিলাষ পূর্ণ করেছিলেন আর গোপীবৃন্দও জাগতিক ক্লেশ থেকে মুক্তি লাভ করেছিলেন
। এইভাবে জগতে রাসোৎসবের প্রচলন ঘটে
।
হরি হে দয়াল মোর জয় রাধানাথ ।
বার বার এইবার লহ নিজ সাথ ।।
বহু যোনি ভ্রমি' নাথ, লইনু শরণ ।
নিজগুণে কৃপা কর অধমতারণ ।।
জগত - কারণ তুমি জগত - জীবন ।
তোমা ছাড়া কা'র ন'হি, হে রাধারমণ ।।
ভুবনমঙ্গল তুমি ভুবনের পতি ।
তুমি উপেক্ষিলে নাথ কি হইবে গতি ।।
ভাবিয়া দেখিনু এই জগত - মাঝারে ।
তোমা বিনা কেহ নাহি এ দাসে উদ্ধারে ।।
হে আমার প্রাণোধন কৃষ্ণ তুমি আমাদের হৃদয়ে ভক্তির ভাব জাগিয়ে দাও। সবাই একমনে তন্ময় হয়ে শ্রীহরিনাম জপ করুন,-
‘’হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে
।।‘’
🍁🌷🍁জয় শ্রীবলদেবরেবতী জয়🍁🌷🍁 জয় শ্রীরাধেকৃষ্ণ🍁🌷🍁
No comments:
Post a Comment