Monday, April 5, 2021

🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚

🌷পাপমোচনী একাদশী🌷

🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

হরে কৃষ্ণ, আগামী ০৮/০৪/২০২১ ইং রোজ - বৃহস্পতিবার পাপমোচনী  একাদশী I

(পারণ - পরদিন পূর্ব্বাহ্ন ০৯। ৩৫ মিঃ মধ্যে একাদশীর পারণ)

আপনি নিজে একাদশী ব্রত পালন করুন অন্যকে পালনে উৎসাহিত করুন।

একাদশী ব্রত পালনের নিয়ম:-

সামর্থ্য অনুযায়ী দশমী তে একাহার, একাদশী তে নিরাহার, দ্বাদশীতে একাহার। এতে অসমর্থ হলে শুধু একাদশীতে অনাহার। যদি এতেও অসমর্থ হয়, একাদশী তে পঞ্চশস্য বর্জনীয়, ফলমূল কিছু সব্জি গ্রহণের বিধান আছে। যেমন,- গোল আলু, মিষ্টি আলু, কুমড়ো, চাল কুমড়ো, বাদাম তেল/সূর্য্যমুখী তেল/ঘি দিয়ে রান্না করে ভগবানকে উৎসর্গ  করে আহার করা যেতে পারে। এছাড়া দুধ, কলা, আপেল, আনারস, পেঁপে, পেয়ারা, শসা, নারিকেল, মিষ্টি আলু ইত্যাদি ফল আহার করা যাবে। একাদশীর পারণের সময় পঞ্জিকা তে দেওয়া থাকে, এর মাঝে ভগবান কে অন্ন নিবেদন করে উপবাস ভঙ্গ করতে হবে। নতুবা একাদশীর ফল লাভ হয়না।

বর্জনীয় পঞ্চ শস্য:-

ধান জাতীয় খাদ্য:- ভাত, খিচুড়ি, মুড়ি, চিঁড়া, খই, সুজি, চালের গুঁড়ো, চালের পিঠে, পায়েস।

গম জাতীয় খাদ্য:- আটা, ময়দা, সুজি, রুটি, বিস্কুট, কেক, নুডলস।

যব বা ভুট্টা জাতীয় খাদ্য:- ছাতু, খই, রুটি

ডাল জাতীয় খাদ্য:- মুগ, মশুর, মটর, মাসকলাই, ছোলা, অড়হর, বরবটি, শিম, বুট।

সরিষা, তিলের তেল। ( সয়াবিন এর কথা বিতর্কিত) I চা, বিড়ি, সিগারেট,পান, যেকোনো নেশা জাতীয় দ্রব্য বর্জনীয়। একাদশী তে সহবাস সম্পূর্ণ বর্জন। আমিষ ( পিঁয়াজ, রসুন, ডিম, মাছ, মাংস ) ভক্ষন নিষেধ।

একাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য :-

এই ব্রত করলে যে শুধু নিজের পুণ্য লাভ হয় তা নয়, একাদশী পালন কর্ত্তার ( যদি মৃত) পিতা মাতারও স্বর্গ প্রাপ্তি হয়। একাদশীতে নিজে অন্ন ভোজন করলে এবং অপরকে অন্ন ভোজন করালেও নরকগামি হতে হয়। একাদশীর দিন শুধু উপবাস নয়, সারাদিন সংযম, সৎ চিন্তা, কৃষ্ণ নাম জপ, পূজা গীতা পাঠ অবশ্য কর্তব্য।

বিঃদ্রঃ নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতিও দৃষ্টি রাখা বাঞ্চনীয়:-

একাদশী ব্রতের আগের দিন রাত ১২টার আগেই অন্ন ভোজন সম্পন্ন করে নিলে সর্বোত্তম। ঘুমানোর আগেই দাঁত ব্রাশ করে দাঁত মুখগহ্বরে লেগে থাকা সব অন্ন পরিষ্কার করে নেওয়া সর্বোত্তম সকালে উঠে শুধু মুখ কুলি এবং স্নান করতে হয়। একাদশীতে সব্জি কাটার সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন কোথাও কেটে না যায়। একাদশীতে রক্তক্ষরণ বর্জনীয়। দাঁত ব্রাশ করার সময় অনেকের রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে। তাই একাদশীর আগের দিন রাতেই দাঁত ভালভাবে ব্রাশ করে নেওয়াই সর্বোত্তম।

একাদশীতে চলমান একাদশীর মাহাত্ম্য ভগবদ্ভক্তের শ্রীমুখ হতে শ্রবণ অথবা সম্ভব না হলে নিজেই ভক্তিসহকারে পাঠ করতে হয়। যারা একাদশীতে একাদশী প্রসাদ রান্না করেন তাদের পাঁচ ফোড়ন ব্যবহারে সতর্ক থাকা উচিত। কারণ পাঁচফোড়নে সরিষা তিল থাকতে পারে যা বর্জনীয়। একাদশীতে শরীরে প্রসাধনী ব্যবহার নিষিদ্ধ। তেল (শরীরে মাথায়), সুগন্ধী, সাবান, শেম্পু ইত্যাদি বর্জনীয়। সকল প্রকার ক্ষৌরকর্ম (শেভ করা এবং চুল নখ কাটা) নিষিদ্ধ ।

চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নামপাপমোচনী গরুড়পুরাণে যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণ সংবাদে এই তিথির মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে। যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণকে বললেন,- হে জনার্দন ! চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম মাহাত্ম্য কৃপা করে আমাকে বলুন। শ্রীকৃষ্ণ বললেন,- হে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির ! আপনি ধর্মবিষয়ক প্রশ্ন করেছেন। এই একাদশী সকল সুখের আধার,অষ্ট সিদ্ধি আর নয় নিধি প্রদানকারী, পিশাচ যোনি থেকে মুক্তি প্রদানকারী পরম মঙ্গলময়। সমস্ত পাপ থেকে নিস্তার বা মোচন করে বলে এই পবিত্র একাদশী তিথিপাপমোচনীনামে প্রসিদ্ধ। রাজা মান্ধাতা একবার লোমশ মুনিকে এই কথা জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তার বর্ণিত সেই বিচিএ উপাখ্যানটি আপনার কাছে বলছি। আপনি মনোযোগ দিয়ে তা শ্রবণ করুন।

প্রাচীনকালে ধনের পতি কুবেরেরচৈত্ররথ' নামক অতি মনোরম পুষ্প উদ্যান ছিল। মুনিগণ এই মনোরম পুষ্প উদ্যানে বহু বছর ধরে তপস্যা করতেন। সেই খানে মেধাবী নামে এক ঋষিকুমারকে মঞ্জুঘোষা নামে এক সুন্দরী অপ্সরা বশীভূত করতে চাইল। কিন্তু ঋষির অভিশাপের ভয়ে সে আশ্রমের এক ক্রোস দূরে অবস্থান করতে লাগল। সেই অপ্সরা নিজের ঘরে বীণা বাজিয়ে মধুর স্বরে গান গাইত মেধাবী ঋষি পিতা চ্যবন ঋষির আশ্রমে বাস করতেন। এক দিন মঞ্জুঘোষা মেধাবী মুনিকে দেখে কামবাণে পীড়িতা হয়ে পড়ে। মঞ্জুঘোষার উনার প্রতি কামাসক্ত হয়ে পড়ার ফলে ঋষি মেধাবীও অপ্সরার অনুপম সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হন। তখন সেই অপ্সরা মুনিকে নানা হাব - ভাব কটাক্ষ দ্বারা বশীভূত করে। ক্রমে কামপরবশ মুনি সাধন - ভজন বিসর্জন দিয়ে তার আরাধ্য দেব বিস্মৃত হন।

এইভাবে অপ্সরার সাথে কামক্রীড়ায় মুনির বহু বছর অতিক্রান্ত হল।মুনিকে আচার-ভ্রষ্ট দেখে সেই অপ্সরা দেবলোকে ফিরে যেতে মনস্থ করল।একদিন মঞ্জুঘোষা মেধাবী মুনিকে বলতে লাগল,- হে প্রভু, এখন আমাকে নিজ গৃহে(দেব লোকে) ফিরে যাবার অনুমতি প্রধান করুন। কিন্তুু কামাসক্ত মেধাবী বললেন,- হে সুন্দরী ! তুমি তো এখন সন্ধ্যাকালে আমার কাছে এসেছ, প্রাতঃকাল পর্যন্ত আমার কাছে থেকে যাও। মুনির কথা শুনে অভিশাপের ভয়ে সেই অপ্সরা আরও কয়েক বছর তার সাথে বাস করল। এইভাবে বহুবছর (৫৫ বছর মাস দিন)অতিবাহিত হল।দীর্ঘকাল অপ্সরা সহবাসে থাকলেও মেধাবীর কাছে তা অর্ধরাত্রি বলে মনে হল।মঞ্জুঘোষা পুনরায় নিজস্থানে গমনের প্রার্থনা জানালে মুনি বললেন,- এখন প্রাতঃকাল, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি সন্ধ্যাবন্দনা না সমাপ্ত করি, ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি এখানে থাক।

মুনির কথা শুনে ঈষৎ হেসে মঞ্জুঘোষা তাকে বলল,- ''হে মুনিবর! আমার সহবাসে আপনার যে কত বৎসর অতিবাহিত হয়েছে, তা এক বার বিচার করে দেখুন।এই কথা শুনে মুনি স্থির হয়ে চিন্তা করে দেখলেন যে তাঁর ৫৬ বৎসর অতিবাহিত হয়ে গেছে।'' মুনি তখন মঞ্জুঘোষার প্রতি ক্রোধ পরবশ হয়ে বললেন,- রে পাপীষ্ঠে, দুরাচারিণী, তপস্যার ক্ষয়কারিনী,তোমাকে ধিক্ ! তুমি পিশাচী হও,এই শাপ দিলেন। মেধাবীর শাপে অপ্সরার শরীর বিরূপ প্রাপ্ত হল। তখন সে অবনতমস্তকে মুনির কাছে শাপ - মোচনের উপায় জিজ্ঞাসা করল। মেধাবী বললেন,- হে সুন্দরী, চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া পাপমোচনী একাদশী,সর্বপাপ ক্ষয়কারিনী। সেই ব্রত পালনে তোমার পিশাচত্ব দূর হবে।

এই উপদেশ দেওয়ার পর পিতার আশ্রমে ফিরে গিয়ে মেধাবী বলেলেন,- হে পিতা! এক অপ্সরার সঙ্গদোষে আমি মহাপাপ করেছি, এর প্রায়শ্চিত্ত কি? তা কৃপা করে আমায় বলুন। উত্তরে চ্যবন মুনি বললেন,- চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া পাপমোচনী একাদশী ব্রতের প্রভাবে তোমার পাপ দূর হবে। পিতার উপদেশ শুনে মেধাবী সেই ব্রত ভক্তিভরে পালন করল।তার সমস্ত পাপ দূর হল।পুনরায় তিনি তপস্যার ফল লাভ করলেন। মঞ্জুঘোষাও ব্রত পালনের ফলে পিশাচত্ব থেকে মুক্ত হয়ে দিব্য দেহে স্বর্গে গমন করল। হে মহারাজ ! যারা এই পাপমোচনী একাদশী পালন করেন, তাদের পূর্বকৃত সমস্ত পাপই ক্ষয় হয়।এই ব্রতকথা পাঠ শ্রবণে সহস্র গো-দানের ফল লাভ হয়।

★★★সবাইকে অনুরোধ রইল অবশ্যই মনে রাখবেন যে, একাদশী ব্রত বা কোন উপবাস মানেই কিন্তু শুধু না খেয়ে থাকা নয়,বরং শুদ্ধ/পবিত্র দেহ,মন নিয়ে ব্রত/উপবাস রেখে নিরন্তর "ভগবানের নাম জপ" হরিকথা শ্রবণ, কীর্ত্তন,গীতাপাঠ করে "ভগবান কে প্রসন্ন/খুশি করাই ব্রত/উপবাসের মূল উদ্দেশ্য"★★★

‘’একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব ।

প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব ।।‘’

এই মন্ত্র পাঠ করে নির্দিষ্ট সময়ের আগে পারণ করতে হয়।

গীতার মাহাত্ম্যে উল্লেখ আছে

‘’যোহধীতে বিষ্ণুপর্বাহে গীতাং শ্রীহরিবাসরে ।

স্বপন জাগ্রৎ চলন তিষ্ঠন শত্রুভির্ন হীয়তে ।।‘’

অর্থাৎ শ্রীবিষ্ণুর উৎসবের দিনে, একাদশী জন্মাষ্টমীতে যিনি গীতা পাঠ করেন , তিনি চলুন বা দাড়িয়ে থাকুন, ঘুমিয়ে বা জেগে থাকুন,(যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন) শত্রু কখনো তার কোন ক্ষতি করতে পারেনা।

 

ভজহুঁ রে মন, শ্রীনন্দনন্দনঅভয় চরণারবিন্দ রে

দুর্লভ মানব-, জনম সৎসঙ্গে, তরহ ভব সিন্ধু রে ।।

শীত - আতপবাত - বরিষণ দিন যামিনী জাগি' রে

বিফলে সেবিনু কৃপণ দুরজন চপল সুখ - লব লাগি' রে ।।

ধন, যৌবন, পুত্র পরিজন ইথে কি আছে পরতীতি রে

কমলদল - জল, জীবন টলমল ভজহুঁ হরিপদ নিতি রে ।।

শ্রবণ, কীর্ত্তন, স্মরণ, বন্দন, পাদসেবন, দাস্যরে

পূজন, সখীজন, আত্মনিবেদন গোবিন্দ দাস অভিলাষ রে ।।

জয় শ্রীকৃষ্ণের জয়জয় শ্রীএকাদশী মহাব্রতের জয়


 

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...