💐 পক্ষবর্দ্ধিনী মহাদ্বাদশী💐
🌷শুভ দ্বাদশী💐💐শুভ দ্বাদশী🌷
হরেকৃষ্ণ, আজ
বিশেষ শুভদা তিথি। আজ ২৫ চৈত্র ৮ এপ্রিল ইং রোজ - বৃহস্পতিবার পক্ষবর্দ্ধিনী মহাদ্বাদশী I
(পারণ – পরদিন পূর্ব্বাহ্ন ০৯/৩৫ মিঃ মধ্যে দ্বাদশীর পারণ)
আপনি নিজে দ্বাদশী ব্রত পালন করুন ও অন্যকে পালনে উৎসাহিত করুন।
গৌড়িয় বৈষ্ণব সম্প্রদায় কেন দশমী সংযুক্ত একাদশী পালন করে না এবং দ্বাদশী সংযুক্ত একাদশী পালন করে ?
বিদ্ধাএকাদশী
অনেক সময় অন্যান্য পঞ্জিকাগুলোতে ‘গোস্বামীমতে পরাহে’ কথাটি লেখা থাকে। বৈষ্ণবগণ সেক্ষেত্রে পরদিন একাদশী ব্রত পালন করে থাকেন। এক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় যে, পরদিন নামেমাত্র একাদশী তিথি থাকে কিংবা নাও থাকতে পারে। এ বিষয়টি নিয়ে অনেকে সন্দেহের
মধ্যে থাকেন। নিন্মোক্ত আলোচনায় তা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে শ্রীশ্রীহরিভক্তিবিলাসধৃত, গরুড়পুরাণ ও শিবরহস্য বচনে বলা হচ্ছে,-
উদয়াৎ প্রাক্ যদা বিপ্র মুহূর্তদ্বয় সংযুতা ।
সম্পূর্ণৈকাদশী নাম তত্রৈবাপসেদগৃহী ।। (হ.ভ.বি ১২/১২১)
অর্থাৎ,- ‘’হে দ্বিজ! সূর্যোদয়ের পূর্বে দুই মুহূর্ত (৪৮x২=৯৬ মিনিট) একাদশী থাকলে তাকে সম্পূর্ণা একাদশী বলে। এ দিনেই উপবাস করা বিধেয়।‘’
ভবিষ্যপুরাণ বলা হয়েছে,-
‘’অরুণোদয় বেলায়াং দশমী সংযুতা যদি ।
অত্রোপোষ্যা দ্বাদশী স্যাৎ ত্রয়োদশ্যান্তু পারণম্ ।।‘’
(হ.ভ.বি ১২/১২৪)
অর্থাৎ,- ‘’অরুণোদয় সময়ে দশমীবিদ্ধা একাদশী উপস্থিত হলে দ্বাদশীতে উপবাসপূর্বক ত্রয়োদশীতে পারণ করতে হয়।‘’
একাদশীতে সূর্যোদয়ের পূর্বে বা সূর্যোদয়কালে (১ ঘণ্টা ৩৬ মিনিটের মধ্যে) যদি দশমী স্পর্শ হয়, তাকে দশমী বিদ্ধা বলে। দশমী বিদ্ধা একাদশী বাদ দিয়ে দ্বাদশী সংযুক্তা একাদশী ব্রত পালন করতে হয়। এটাই সর্বশাস্ত্রসম্মত বিধি।
বিদ্ধাএকাদশী পালনের ফল
শ্রীগরুড় পুরাণের পূর্ব্বখণ্ডে একাদশী মাহাত্ম্য প্রসঙ্গে ১২৫তম অধ্যায়ে বর্ণিত আছে,-
মান্ধাতা চক্রবর্ত্ত্যাসীদুপোষ্যৈকাদশীং নৃপঃ।
একাদশ্যাং ন ভূঞ্জীত পক্ষয়োরুভয়োরপি ॥১॥
দশম্যেকাদশীমিশ্রা গান্ধার্য্যা সমুপোষিতা।
তস্যাঃ পুত্রশতং নষ্টং তস্মাত্ত্যং পরিবর্জ্জয়েৎ ॥২॥
দশম্যেকাদশী যত্র তত্র সন্নিহিতোহসুরঃ।
দ্বাদশ্যেকাদশী যত্র তত্র সন্নিহিতো হরিঃ ॥৩॥
বহুর্বাক্যবিরোধেন সন্দেহো জায়তে যদা।
দ্বাদশী তু তদা গ্রাহ্যা ত্রয়োদশ্যান্ত পারণম্ ॥৪॥
একাদশী কলাপি স্যাদুপোষ্যা দ্বাদশী তদা ॥৫॥
একাদশী দ্বাদশী চ বিশেষেণ ত্রয়োদশী।
ত্রিমিশ্রা সা তিথিগ্রাহ্যা সর্ব্বপাপহরা শুভা ॥৬॥
একাদশীমুপোষ্যৈব দ্বাদশীমথবা দ্বিজ।
ত্রিমিশ্রাঞ্চৈব কুর্ব্বীত ন দশম্যা যুতাং কচিৎ ॥৭॥
রাত্রৌ জাগরণং কুর্ব্বন্ পুরাণশ্রবণং নৃপঃ।
গদাধরং পূজয়াশ্চ উপোষ্যৈকাদশীদ্বয়ম্।
রুক্মাঙ্গদো যযৌ মোক্ষমন্যে চৈকাদশীব্রতম্ ॥৮॥
অনুবাদ:- ব্রহ্মা বললেন,- প্রাচীনকালে মান্ধাতা নামে এক রাজা ছিলেন; তিনি একাদশীতে উপবাস করার ফলস্বরূপ সসাগরা ধরার একমাত্র অধীশ্বর হয়েছিলেন; অতএব শুক্ল ও কৃষ্ণপক্ষের একাদশীতে কেউ ভোজন করবে না। গান্ধারী দশমীসংযুক্তা একাদশীতে উপবাস করেছিলেন, এজন্য গান্ধারীর শত পুত্র বিনষ্ট হয়; অতএব দশমীযুক্তা একাদশী বর্জন করবে। তাতে কেউ উপবাস করবে না। দশমীযুক্তা একাদশীতে অসুর সন্নিহিত থাকে, দ্বাদশীযুক্ত একাদশীতে হরি সন্নিহিত থাকেন, তবে নানাবিধ শাস্ত্রের বাক্য-বিরোধ দৃষ্টে সন্দেহ উপস্থিত হলে, অর্থাৎ একদিনেই যদি দশমী একাদশী ও দ্বাদশীর যোগ হয়, তবে তখন দ্বাদশীতে উপবাস করে ত্রয়োদশীতে পারণ করবে।
যদি দ্বাদশী দিনে এক কলা মাত্র একাদশীও থাকে, তবুও দ্বাদশী দিনেই উপবাস করা কর্তব্য। যেদিন একাদশী, দ্বাদশী ও ত্রয়োদশী এই তিথিত্রয়ের মিশ্রণ হয়, সে দিনে উপবাস করলে সর্বপ্রকার পাপ নাশ হয়। যেদিন শুদ্ধ একাদশী থাকে সে দিনেই উপবাস করা কর্তব্য, কিংবা দ্বাদশীযুক্ত একাদশীতেও উপবাস করতে পারে; অথবা যদি একদিন একাদশী, দ্বাদশী ও ত্রয়োদশী এই তিথিত্রয়ের মিলন হয়, তবে উপবাস করবে, উপরন্তু কখনও দশমীযুক্তা একাদশীতে উপবাস করবে না। রাত্রি জাগরণ, পুরাণশ্রবণ ও গদাধরের অর্চনা করে একাদশীর উপবাস করবে; রুক্মাঙ্গদ রাজা এরূপ একাদশীতে উপবাস করে মোক্ষপদ পেয়েছিলেন।
ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণে বর্ণিত অষ্ট মহাদ্বাদশী:-
একাদশী ব্রত প্রসঙ্গে আটটি মহাদ্বাদশী ব্রত সম্পর্কেও আমাদের বিশেষভাবে জানা প্রয়োজন। ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণে শ্রীসূত-শৌনক সংবাদে অষ্ট মহাদ্বাদশীর কথা বলা হয়েছে,-
উন্মীলনী ব্যঞ্জুলী ত্রিস্পৃশা পক্ষবর্দ্ধিনী।
জয়া বিজয়া চৈব জয়ন্তী পাপনাশিনী ॥
দ্বাদশ্যোহষ্টৌ মহাপুণ্যাঃ সর্ব্বপাপহরা দ্বিজ।
তিথিযোগেন জায়ন্তে চতস্ররশ্চাপরাস্তথা।
নক্ষত্রযোগাচ্চ বলাৎ পাপং প্রশময়ন্তি তাঃ ॥ (হঃ ভঃ বিঃ ১৩/১০৬-১০৭)
হে ব্রাহ্মণ! উন্মীলনী, ব্যঞ্জুলী, ত্রিস্পৃশা, পক্ষবর্দ্ধিনী, জয়া, বিজয়া, জয়ন্তী ও পাপনাশিনী- এই আটটি দ্বাদশী পরম পবিত্রা ও সর্বপাপহারিনী। এর মধ্যে চারটি দ্বাদশী তিথিযোগে এবং অবশিষ্ট চারটি নক্ষত্রযোগে আবির্ভূত হয়। এ সকল দ্বাদশী সর্বপাপ বিনাশ করে।
ধর্মস্বরূপ সাক্ষাৎ শ্রীহরি একাদশী রূপে বিরাজ করেন । ব্যঞ্জুলী ও উন্মীলনী ব্রত তাঁর শরীরের মতো বলা হয়। পদ্মপুরাণ ও মার্কণ্ডেয় পুরাণে বলা হয়েছে যে, যারা এই দ্বাদশী ব্রতের অনুষ্ঠান করে না, দেহান্তে তারা যমপুরীতে বাস করে। তাই আত্মকল্যাণ লাভের জন্য প্রত্যেকের কর্তব্য একাদশী তথা মহাদ্বাদশী তিথিগুলি যত্নসহকারে পালন করা উচিত । এর ফলে অবাঞ্ছিত দুঃখ-দুর্দশা থেকে পরিত্রাণ ও আত্যন্তিক মঙ্গল লাভ হয়। এছাড়াও হরিভক্তিবিলাসে শ্রাবণ দ্বাদশী এবং গোবিন্দ দ্বাদশী নামে আরও দুইটি দ্বাদশী ব্রতের উল্লেখ রয়েছে।
🦚🌹💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🌹🦚
🌳🌴পক্ষবর্দ্ধিনী মহাদ্বাদশী🌴🌳
🦚🌹💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🌹🦚
অমাবস্যা কিংবা পূর্ণিমা সম্পূর্ণ হয়ে প্রতিপদে কিছুমাত্র থাকলে তার পূর্বের দ্বাদশী তিথির নাম ‘’পক্ষবর্দ্ধিনী’’ । এই অবস্থায় একাদশীর দিন উপবাস না করে দ্বাদশীতেই উপবাস করতে হয়। অনন্ত কলুষ বিনাশকারী এই দ্বাদশী পরিত্যাগকারীকে ১৪ ইন্দ্রপাত (১৪জন ইন্দ্র রাজত্ব কাল পর্য্যন্ত ) নরকে বাস করতে হয়। যে মাসে পক্ষবর্ধিনী হয়, শ্রীহরির সেই মাসের নাম অনুসারে তাকে ভক্তিসহকারে পূজা করতে হয়।
"সংসারার্ণবপোতায় পাপকক্ষামহানল ।
নরকাগ্নিপ্রশমন জন্মমৃত্যুজরাপহ ।।
মামুদ্ধর জগন্নাথ পতিতং ভবসাহরে ।
গৃহার্ণার্ঘ্যং ময়া দত্তং পদ্মনাভ নমোহস্তু তে ।।''
অর্থাৎ,- ''হে জগন্নাথ! আপনি এই সংসার সমুদ্রের নৌকাস্বরূপ পাপরূপ তৃণের জন্য মহা অনল, নরক অগ্নির প্রশমনকারী, জন্ম-মৃত্যু-জরা-ব্যাধির মোচনকারী। তাই ভবসাগরে পতিত আমাকে আপনি কৃপা করে উদ্ধার করুন। হে পদ্মনাভ ! আমার নিবেদিত এই অর্ঘ্য গ্রহণ করুন। আপনাকে আমি প্রণাম জানাই।'' এভাবে শ্রীহরিকে অর্ঘ্য নিবেদন করে ঘৃতপক্ব নৈবেদ্য (ঘি দিয়ে বানানো ) ও সুস্বাদু ফলমূল অর্পণ করতে হয়। নিজ সামর্থ মতো যত্ন সহকারে শ্রীহরির গুণকীর্ত্তন ও রাত্রিজাগরণে এই ব্রত পালন করতে হয়। এ ব্রত পালনে দশ হাজার অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ হয়ে থাকে।
★★★সবাইকে
অনুরোধ রইল অবশ্যই মনেরাখবেন যে, একাদশী ব্রত বা কোন উপবাস মানেই কিন্তু শুধু না খেয়ে থাকানয়, বরং শুদ্ধ/পবিত্র দেহ, মন নিয়েব্রত/উপবাস রেখে
নিরন্তর "ভগবানের নাম জপ" হরিকথাশ্রবণ, কীর্ত্তন, গীতাপাঠ করে "ভগবান কে প্রসন্ন/খুশিকরাই
ব্রত/উপবাসের
মূলউদ্দেশ্য"★★★
‘’দ্বাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ
নাথ জ্ঞানদৃষ্টি প্রদোভব।।‘’
এইমন্ত্র
পাঠ করে নির্দিষ্ট সময়ের আগে পারণ করতে হয় । গীতার মাহাত্ম্যে উল্লেখ আছে…
‘’যোহধীতে বিষ্ণুপর্বাহে গীতাং শ্রীহরিবাসরে।
স্বপনজাগ্রৎ
চলনতিষ্ঠ ন শত্রুভির্নসহীয়তে।।‘’
অর্থাৎ শ্রীবিষ্ণুর উৎসবের দিনে, একাদশী, দ্বাদশী ও জন্মাষ্টমীতে যিনি গীতাপাঠ করেন , তিনি চলুন বা দাড়িয়ে থাকুন, ঘুমিয়ে বা জেগেথাকুন, (যেঅবস্থাতেই থাকুন না কেন) শত্রু কখনো তার কোন ক্ষতি করতে পারে না।
গায় গোরা মধুর স্বরে ।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ।।
গৃহে থাক, বনে থাক, সদা 'হরি' ব'লে ডাক,
সুখে দুঃখে ভুল না'ক।
বদনে হরিনাম কর রে ।।
মায়াজালে বদ্ধ হ'য়ে, আছ মিছে কাজ ল'য়ে,
এখনও চেতন পে'য়ে।
রাধা - মাধব নাম বল রে ।।
জীবন হইল শেষ, না ভজিলে হৃষীকেশ ।
ভক্তিবিনোদ - (এই) উপদেশ,
এক বার নামরসে মাতরে ।।
গায় গোরা মধুর স্বরে ……..।

No comments:
Post a Comment