🌳🌴🪴🦚💐🏵️🌷🏵️💐🦚🪴🌴🌳
💐🌻🌺💞গুরু পূর্ণিমা💞🌺🌻💐
🌳🌴🪴🦚💐🏵️🌷🏵️💐🦚🪴🌴🌳
🍇বিশেষ পোষ্ট🍇
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I হরে কৃষ্ণ, আজ ২৪/০৭/২০২১ ইং রোজ – শনিবার শ্রীগুরু পূর্ণিমা।
‘’গুরু - বৈষ্ণব - ভগবান তিনিহেঁ স্মরণ ।
তিনেহেঁ
স্মরণ হইতে হয় বিঘ্ন বিনাশন ।।
অনায়াসে
হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ । I’’
গুরবে গৌরচন্দ্রায় রাধিকায়ৈ তদালয়ে ।
কৃষ্ণায় কৃষ্ণভক্তায় তদ্ভক্তায় নমো নমঃ ।।
বসুদেব - সূতং দেবং কংস - চানুর – মর্দনম
।
দেবকী - পরমানন্দং কৃষ্ণং বন্দে জগদ্গুরুম
।।
গুরুকে শ্রদ্ধা জানানোর দিন
আজ গুরু পূর্ণিমা ৷ পৃথিবীর সকল গুরুদের চরণে আমার শতকোটি প্রণাম। আজ থেকে চর্তুমাস্য ব্রত শুরু, নিয়ম সেবা আরম্ভ আধ্যাত্মিক জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং তাৎপর্য্যপূর্ণ উপলক্ষ্য গুরু পূর্ণিমা উৎসব পালিত হয়।আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিতে গুরুপূর্ণিমা পালন করা হয়। আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিতে মহাভারত প্রণেতা এবং বেদ বিভাগ কর্তা মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসদেব, জন্মগ্রহণ করেন মুনি পরাশর ও মাতা সত্যবতীর ঘরে।
মহর্ষি ব্যাসদেবের জন্মতিথি বলে এই পূর্ণিমাকে ব্যাস পূর্ণিমাও বলা হয়ে থাকে। তাই আদিগুরু হিসেবে তাঁর জন্মতিথিকে কেন্দ্র করে এই গুরুপূর্ণিমা সমাজে প্রসার লাভ করে। যদিও অপর এক মতে বলা হয় ভগবান শিব এই তিথিতেই সপ্তর্ষিকে জ্ঞান প্রদান করেন। সেই ঘটনা থেকেই কালক্রমে গুরু প্রথার সৃষ্টি হয়েছিল। তবে এই দিনটি বৌদ্ধদের কাছেও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এই পূর্ণিমাতেই ভগবান বুদ্ধদেব সর্বপ্রথম তাঁর পাঁচজন শিষ্যকে উপদেশ প্রদান করেন। এই ঘটনাকে স্মরণ করে এই গুরু পূর্ণিমা দিনটি পালন করে তারা।
তাই এই দিনটি হিন্দুদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনে তারা তাদের আধ্যাত্মিক গুরুর পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আচার্য বা শিক্ষা গুরুদের উদ্দেশ্যে পূজা ও শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করে। গুরুকে স্মরণ করেই শুরু হয় তাদের কর্মজীবনের পথচলা।ভারতীয় ঐতিহ্যে গুরুর স্থান সবার ওপরে। তাই গীতায় গুরুবন্দনাতে বলা হচ্ছে- 'ওঁ অজ্ঞানতিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জনশলাকয়া চক্ষুরীন্মিলীতং যেন তস্মৈশ্রীগুরবে নমঃ।' তিনি তাঁর জ্ঞান দিয়ে আমাদের মনের অন্ধকার দূর করেন, এর থেকে বড় প্রাপ্তি আমাদের আর কিই বা হতে পারে!
শ্রী শ্রী গুরু-বন্দনা।
আশ্রয় করিয়া বন্দোঁ শ্রীগুরু চরণ
।
যাহা হৈতে মিলে ভাই কৃষ্ণপ্রেমধন
।।
জীবের নিস্তার লাগি নন্দ-সুত হরি
।
ভুবনে প্রকাশ হয় গুরু-রুপ ধরি
।।
মহিমায় গুরু কৃষ্ণ এক করি জান
।
গুরু-আজ্ঞা হৃদে সব সত্য করি মান
।।
সত্য-জ্ঞানে গুরু-বাক্যে যাহার বিশ্বাস
।
অবশ্য তাহার হয় ব্রজভূমে বাস
।।
যার প্রতি গুরুদেব জন পরসন্ন
।
কোন বিঘ্নে সেহ নাহি হয় অবসন্ন
।।
কৃষ্ণ রুষ্ট হলে গুরু রাখিবারে পারে
।
গুরু রুষ্ট হলে কৃষ্ণ রাখিবারে নারে
।।
গুরু মাতা গুরু পিতা গুরু হন পতি
।
গুরু বিনা এ সংসারে নাহি আর গতি
।।
গুরুকে মনুষ্য জ্ঞান না কর কখন
।
গুরু-নিন্দা কভু কর্ণে না কর শ্রবন
।।
গুরু-নিন্দুকের মুখ কভু না হেরিবে
।
যথা হয় গুরু-নিন্দা তথা না যাইবে
।।
গুরুর বিক্রিয়া যদি দেখহ কখন
।
তথাপি অবজ্ঞা নাহি কর কদাচন
।।
গুরু-পাদপদ্মে রহে যার নিষ্ঠা ভক্তি
।
জগৎ তারিতে সেই ধরে মহাশক্তি
।।
হেন গুরু-পাদপদ্ম করহ বন্দনা
।
যাহা হৈতে ঘুচে ভাই সকল যন্ত্রণা
।।
গুরু-পাদপদ্ম নিত্য যে করে বন্দন
।
শিরে ধরি বন্দি আমি তাহার চরণ
।।
শ্রীগুরু-চরণ পদ্ম হৃদে করি আশ
।
শ্রীগুরু-বন্দনা করে এ
অধম দাস
।।
যখন আমরা গুরুদেবকে সাধারন মানুষ বলে মনে করি তখন আমাদের গুরুর চরণে অপরাধ হয়। হতে পারে গুরুদেব আমাদের মতই কথা বলেন, চলাফেরা করেন তবুও তিনি অসাধারন। ভগবান বলেছেন, '' আমি জীবের অজ্ঞান ও অন্ধকার নাশ করার জন্য, শুদ্ধভক্তি প্রদানের জন্য, আমিই গুরুরুপে তার একনিষ্ঠ ভক্তগনের আশ্রয় করে আবির্ভূত হই''। ভগবান আবার বলেছেন, ''মৎস্বরুপ'' অর্থাৎ গুরুদেব হচ্ছেন আমার প্রকাশ বিগ্রহ এবং সেই গুরুস্বরুপের মধ্যে সমস্ত দেবতা অধিষ্ঠান আছে। প্রদত্ত মন্ত্র জপ না করা এবং তার উপদেশ-নির্দেশ অনুসারে ভক্তিজীবন অনুশীলন না করাও গুরুদেবের চরনে অপরাধ।তাই আমাদের সর্ববিষয়ে গুরুদেবকে প্রথমেই শ্রদ্ধা করা উচিত।
👉 শিক্ষা ও দীক্ষা গুরুকে ভগবানের অন্তরঙ্গ সেবক হিসাবে মান্য করা।
👉 পাঠের পূর্বে এবং অর্চনের পূর্বে গুরুদেবের পুজা বা আজ্ঞা গ্রহন করা।'
👉 গুরুদেবকে সুন্দর আসন, পাদুকা, পোষাক নিবেদন করা।
👉 গুরুদেবকে দেখা মাত্র দন্ডবৎ প্রনাম করা।
👉 উচ্চস্বরে গুরুদেবের জয়ধ্বনি দেওয়া।
👉 গুরুদেবের উচ্ছিষ্ট মহাপ্রসাদ হিসেবে গ্রহন করা।
👉 গুরুদেবের আদেশকে ভগবানের আদেশ বলে তা পালন করা।
👉 গুরুদেবের বিছানায় শোয়া বা বসা উচিত নয়।
👉 গুরুদেবের আসন, পাদুকা, যানবাহন, স্নানের জল ও তার ব্যক্তিগত ব্যবহার্য দ্রব্যাদিকে সম্মান করতে হয়।
👉 গুরুদেবের চিত্রপটকে যথাযোগ্য সম্মান করা প্রতিটি শিষ্যের কর্তব্য।
👉 গুরুভক্তি ব্যতিত যে কারোর সৎকর্মও বিফলতা হয়।
''সেই সে পরম গুরু, সেই পিতা মাতা I
কৃষ্ণের চরনে যিনি প্রেমভক্তি দাতা''
ওঁ অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া।
চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।।
অজ্ঞানতার গভীরতম অন্ধকারে আমার জন্ম হয়েছিল এবং আমার গুরুদেব জ্ঞানের আলোকবর্তিকা দিয়ে আমার চক্ষু উন্মীলিত করেছেন। তাঁকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি।
ভগবান শ্রীবিষ্ণুর অবতার ব্যাসদেবের জন্মদিন আষাঢ়ী পূর্ণিমা বা ব্যাস পূর্ণিমাকে ‘গুরুপূর্ণিমা’ বোলা
হয় I বেদগুলির সংগ্রহ ও বিভাগ করার জন্য তাঁর আরেক নাম বেদব্যাস । পুরাণ অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন কল্পে প্রত্যেক দ্বাপর যুগে জন্মগ্রহণ করে বেদশাস্ত্র গুলির সংগ্রাহক ও বিন্যাসকারী ২৮ জন বেদব্যাস নামে পরিচিত । তাঁরা ব্রহ্মা বা বিষ্ণুর অবতার বলে কথিত হন । প্রথম দ্বাপরে ব্রহ্মা (স্বয়ম্ভূ ) বেদব্যাসরূপে , দ্বিতীয় দ্বাপরে প্রজাপতি , তৃতীয় দ্বাপরে শুক্রাচার্য্য এবং চতুর্থ দ্বাপরে বৃহষ্পতি বেদভাষ্যরূপে পরিচিত হয়েছিলেন ।
অন্যান্যরা হলেন , উশনা, সবিতা, মৃত্যু বা যম, ইন্দ্র, বশিষ্ঠ, সারস্বত, ত্রিধাম , ঋষভ বা ত্রিবিষ, সুতেজা , অন্তরীক্ষ বা ধর্ম, সুচক্ষু, ত্রয্যারুণি, ধনঞ্জয় , কৃতঞ্জয়, ভরদ্বাজ, গৌতম ,উত্তম, বাজশ্রবা, সোমমুখ্যায়ন বা তৃণাবিন্দু, ঋক্ষ বা বাল্মীকি, শক্তি, পরাশর, জাতুকর্ণ ও কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাস । হিন্দু পৌরাণিক কাহিনিতে কৃষ্ণ- দ্বৈপায়নকেই বিশেষভাবে ব্যাস বলা হয়। ব্যাসদেব পৌরাণিক মহাকাব্য মহাভারত, অষ্টাদশ মহাপুরাণ ও উপপুরাণ, বেদান্তদর্শন, ভাগবত প্রভৃতির রচয়িতা এবং বেদের বিভাগকর্তা ।
সমাজে শিক্ষক বা গুরুর স্থান কতটা গুরুত্বপূর্ণ , তা বোঝা যায় যখন ছাত্র- শিক্ষক বা গুরু-শিষ্য পরম্পরাকে সম্মানিত করতে একটি দিন উৎসর্গ করা হয় ,– সমাজ ব্যবস্থায় অন্য কোনও সম্পর্ক এতটা গুরুত্ব পায়নি। গুরু বা শিক্ষককে শ্রদ্ধা জানাতে বৈদিক যুগ থেকেই পালিত হয়ে আসছে গুরু পূর্ণিমা। শিক্ষক বা গুরু আমাদের মনের সব সংশয়‚ সন্দেহ‚ অন্ধকার‚ জিজ্ঞাসা দূর করেন । সদ্গুরু হলেন প্রকৃত পথের দিশারী , অসত্য থেকে সত্যের
পথে , তমসা থেকে জ্যোতির পথে, মৃত্যু
থেকে অমৃতের পথে চালিত করেন গুরু ।
সন্ত কবীর তাঁর দোহাতে গুরু সম্বন্ধে বলেছেন ,—
(গুরু গোবিন্দ দউ খড়ে , কাকে লাগু পায়।
বলিহারী গুরু অপনে গোবিন্দ দিয়ো বতায়।।)
যদি ঈশ্বর এবং গুরু দুজনে সামনে থাকেন‚ আগে গুরুর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করবে । কারণ তিনিই আমাদের গোবিন্দকে চেনান ।
( গুরু বিন জ্ঞান ন উপজৈ, গুরু বিন মিলৈ ন মোষ।
গুরু বিন লখৈ ন সত্যকো, গুরু বিন মিটৈ ন দোষ।।)
গুরু বিনা জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়, গুরু বিনা মোহমুক্তি ঘটে না । সত্য
অসত্যের জ্ঞান দিয়ে তিনি মোক্ষরূপী মার্গ দর্শন করান।
(গুরু পারস কো অন্তরো, জানত হ্যাঁয় সব সন্ত।
বো লোহা কাঞ্চন করে, যে করি দেয় মহন্ত।।)
জ্ঞানী ব্যক্তিরা পরশমণি ও গুরুর মধ্যেকার পার্থক্য জানেন। পরশপাথর লোহাকে সোনা বানাতে পারে, কিন্তু গুরু শিষ্যকে নিজের মত মহান তৈরী করেন।
গুরুকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের এই তিথির আদর্শ শ্লোক হল:—
" গুরুর্ব্রহ্মা গুরুর্বিষ্ণু‚ গুরুর্দেবো মহেশ্বরঃ ।
গুরুরেব পরং ব্রহ্মম তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ ‘'।।
গুরুই সৃষ্টিকর্তা, গুরুই পালনকর্তা, গুরুই ধ্বংসকর্তা, গুরুই সেই পরমব্রহ্ম, আমি সেই পরমগুরুকে নমস্কার করি।
(১)
শ্রী গুরু চরণ পদ্ম, কেবল ভকতি সদ্ম
বন্দোঁ মুঞি সাবধান মতে I
যাঁহার প্রসাদে ভাই, এ ভব তরিয়া যাই
কৃষ্ণ প্রাপ্তি হোয় যাঁহা হৈতে
II
(২)
গুরুমুখ পদ্ম বাক্য, চিত্তেতে করিয়াঐক্য
আর না কোরিহো মনে আশা I
শ্রীগুরু চরণে রতি, এই সে উত্তম গতি,
যে প্রসাদে পূরে সর্ব্ব আশা II
(৩)
চক্ষুদান দিলা যেই, জন্মে - জন্মে প্রভু সেই,
দিব্যজ্ঞান হৃদে প্রকাশিত
I
প্রেম ভক্তি যাঁহা হৈতে, অবিদ্যা - বিনাশ যাতে,
বেদে গায় যাঁহার চরিত II
(৪)
শ্রীগুরু করুণাসিন্ধু, অধম জনার বন্ধু,
লোকনাথ লোকের জীবন I
হা হা প্রভু! কর দয়া, দেহো মোরে পদছায়া,
এবে যশঃ ঘুষুক ত্রি-ভুবন II
(৫)
বৈষ্ণব চরণরেণু, ভূষণ করিয়া তনু,
যাহা হৈতে অনুভব হয় I
মার্জন হয় ভজন, সাধু সঙ্গে অনুক্ষণ,
অজ্ঞান অবিদ্যা পরাজয় II
(৬)
জয় সনাতন রূপ, প্রেম ভক্তি রস কূপ,
যুগল উজ্জ্বল-ময় তনু I
যাহার প্রসাদে লোক, পাসরিল সব শোক,
প্রকট-কলপ-তরু জনু II
(৭)
প্রেমভক্তি রীতি যোতো, নিজ গ্রন্থে সুবেকত,
লিখিয়াছেন দুই মহাশয়
I
যাহার শ্রবণ হৈতে, প্রেমানন্দে ভাসে চিত্ত,
যুগল মধুর রসাশ্রয় II
(৮)
যুগলকিশোর প্রেম, লক্ষবাণ যেন হেম,
হেন ধন প্রকাশিল যারা I
জয় রূপ-সনাতন, দেহো মোরে প্রেম-ধন,
সে রতন মোরে গলে হারা II
(৯)
ভাগবত শাস্ত্রমর্ম্ম, নব বিধা ভক্তিধর্ম্ম,
সদাই করিব সুসেবন I
অন্য দেবাশ্রয় নাই, তোমারে কহিল ভাই,
এই ভক্তি পরমভজন II
(১০)
সাধু শাস্ত্র গুরুবাক্য, হৃদয়ে করি য়া ঐক্য,
সতত ভাসিব প্রেম মাঝে I
কর্ম্মী জ্ঞানী ভক্তিহীন, ইহাকে করিব ভিন্ন,
নরোত্তম এই তত্ত্ব গাজে II
🍁🌾🍁জয় পতিত - পাবন পরম করুণাময় শ্রীল গুরুদেবের জয়🍁🌾🍁
No comments:
Post a Comment