🌳🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚🌳

 💐শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের লীলা💐

🌳🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚🌳

বিশেষ পোষ্ট

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’গুরু - বৈষ্ণব  - ভগবান তিনিহেঁ স্মরণ ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে হয় বিঘ্ন বিনাশন ।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ । I’’

নমস্ত্রিকাল - সত্যায়জগন্নাথসুতায়চ।

স - ভৃত্যায়স -পুত্রায়স - কলত্রায়তেনমঃ।।

রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন এবং শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের শুভাবির্ভাব

(স্কন্দপুরাণের বর্ণনা অনুসারে)

🌷শ্রীজগন্নাথদেবের লীলাকথামৃত🌷 (পর্ব- ১)

সত্যযুগে, মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন মালব নামে একটি প্রদেশে শাসন করতেন। মালব প্রদেশের  রাজধানী ছিল অবন্তী। সরাসরি ব্রহ্মা থেকে আগত বংশ পরম্পরায় ইন্দ্রদ্যুম্ন ছিলেন পঁচিশতম পুত্র। তিনি ভগবান শ্রীবিষ্ণুর একজন মহান ভক্ত ছিলেন, সেজন্য সমস্ত সদ্গুণাবলী তাঁর মধ্যে বিকশিত হয়েছিল। একবার তাঁর দৈনন্দিন পূজা সমাপন করে মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন পূজারীকে অনুরোধ করলেন,- ‘’হে পুরোহিত! অনুগ্রহ করে এই ধরণীতে সেই মহাতীর্থের সন্ধান করুন, যেখানে আমি পরমব্রহ্মকে মুখোমুখি দর্শন করতে পারি’’ রাজার আদেশ অনুসারে পুরোহিত সমস্ত তীর্থযাত্রীকে রাজপ্রাসাদে সমবেত হইতে বললেন। করজোড়ে পুরোহিত সমাগত তীর্থ যাত্রীদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন,- ‘’হে তীর্থযাত্রীগণ, আপনারা কি এমন কোনো তীর্থস্থানের কথা অবগত আছেন, যেখানে আমাদের মহারাজ স্বচক্ষে ভগবানকে দর্শন করতে পারেন?”

একজন তীর্থযাত্রী সাগ্রহে উত্তর দিলেন,- ‘’পরমেশ্বর ভগবানের কৃপায় আমি এই গ্রহে প্রকটিত প্রত্যেক তীর্থ পরিদর্শন করেছি। আপনার প্রিয় রাজা কোথায় তাঁর নিজ নয়নে শ্রীভগবানের অনুপম রূপামৃত পান করতে পারবেন আমি তা বলতে পারি। ভারতবর্ষে উড্রদেশ (উড়িষ্যা) নামক একটি প্রদেশ আছে। এই প্রদেশে, দক্ষিণ সমুদ্রের তীরে বিরাজিত রয়েছে শ্রীপুরুষোত্তম ক্ষেত্র। ঐ ক্ষেত্রের একাংশে চতুর্দিকে ঘন অরণ্যানী পরিবেষ্টিত এক মহিমাময় পর্বত নীলগিরি বিদ্যমান। ঐ পর্বতের শিখরে এক সুবিশাল বটবৃক্ষ বিদ্যমান, যা কল্পবট নামে আখ্যাত। এই মহীরুহের পশ্চিমভাগে রোহিণীকুণ্ড নামে একটি সুন্দর পুষ্করিণীতে রয়েছে দিব্যস্নানের জন্য অমৃতবারি। ভগবানের কৃপা বারি-রূপে ঐ পুষ্করিণী পূর্ণ হয়েছে । এই জল মোক্ষপ্রদ; যেকোন ব্যক্তি ঐ রোহিণীকুণ্ডের দিব্য জল স্পর্শ করলে তৎক্ষণাৎ তিনি মুক্তি লাভ করেন।‘’

তীর্থযাত্রী নীলগিরি পর্বতের মহিমা বর্ণনা করে চললেন। ‘’ঐ কুণ্ডের পূর্বতটে পরমপুরুষ শ্রীবাসুদেবের এক বিগ্রহরূপ বিরাজিত। অতিরম্য-দর্শন এই শ্রীবিগ্রহ জ্যোতির্ময় ইন্দ্রনীলমণি দ্বারা নির্মিত। যে ব্যক্তি রোহিণীকুণ্ডের দিব্য বারিতে অবগাহন করার পর কুণ্ডতটে বিরাজিত এই শ্রীবিগ্রহকে দর্শন করেন, তিনি জড়বন্ধন হইতে মুক্তি লাভ করেন।‘’ এই বিগ্রহের পশ্চিমভাগে বিরাজিত রয়েছে ‘সবর দীপক’ নামক আশ্রম। সেখানে একটি পথ চলে গিয়েছে শ্রীবিষ্ণুর একটি মন্দিরের দিকে। সেই মন্দিরে শঙ্খ ও চক্রধারী শ্রীজগন্নাথদেব বিরাজিত।‘’ ভগবান ও তাঁর আবাসস্থানের বর্ণনা করার সময় তীর্থযাত্রীটির নয়নদ্বয় অশ্রুপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং তাঁর শরীরে দিব্য ভাবোদ্গমের লক্ষণাদি প্রকটিত হতে থাকে। তিনি বর্ণনা করতে থাকেন, “শ্রীজগন্নাথদেব কৃপাম্বুধি, কৃপার সাগর। তিনি কেবল তাঁর দর্শন দানের মাধ্যমে প্রত্যেক জীবকে উদ্ধার করে থাকেন।

ভগবান শ্রীজগন্নাথের প্রীতি সম্পাদনের জন্য আমি পুরো এক বৎসর নীলাচল ধামে অতিবাহিত করেছিলাম। পরমকৃপাময় প্রভু আমার মতো একজন মহামুর্খকেও তাঁর সেবা সম্পাদনের অনুমতি দিয়েছিলেন। তাঁর কৃপা বলে আমি অষ্টাদশ বিদ্যার সবগুলিতে সুপারদর্শী হয়ে উঠেছিলাম এবং আমার বুদ্ধি নির্ম্মল হয়ে ওঠে। দিব্য-বিদ্যা ও জ্ঞান লাভের পরম ফল-স্বরূপ আমি প্রভুর প্রতি শুদ্ধভক্তি লাভ করি। আমি এখন ভগবান শ্রীবিষ্ণুকে ব্যতীত অন্য কিছুই দর্শন করি না। মহারাজের সামনে নিপতিত হয়ে তীর্থযাত্রীটি তাকেঁ শ্রীজগন্নাথদেবকে নীলাচলে তাঁর নিবাসস্থানে দর্শন করার জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ জানান। ‘’হে মহারাজ, আপনি ভগবান শ্রীবিষ্ণুর একজন মহান ভক্ত। আপনি নিরন্তর প্রীতি ও ভক্তি সহকারে তাঁর সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। এই কারণে আমি আপনার নিকট এসেছি-কোন ধনসম্পদের প্রার্থী হয়ে নয়, কেবল সেখানে গিয়ে লক্ষ্মীপতি শ্রীজগন্নাথের আরাধনা করার জন্য আপনাকে অনুরোধ জানাতে, যিনি পুরুষোত্তম ধামে বিরাজ করছেন।‘’ এই কথা বলে তীর্থযাত্রী অন্তর্হিত হলেন।

এমন একটি দিব্যস্থান এই বসুধায় যে রয়েছে, সেই সংবাদ শ্রবণ করে মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন বিস্মিত হলেন। তিনি যা শ্রবণ করেছেন, তার দ্বারা প্রণোদিত হয়ে তিনি বললেন,- ‘’আমরা মহাসম্ভ্রম-সহকারে একজন সাধুর শ্রীমুখে রহস্যময় বিবরণ শ্রবণ করলাম। পরমপুরুষের অনুগ্রহে আমি ধর্ম্ম, অর্থ ও কাম প্রাপ্ত হয়েছি। এখন চতুর্থ পুরুষার্থ লাভ করার জন্য আমাকে সহায়তা করুন।‘’ পুরোহিত মৃদ্যুস্বরে বললেন, “হ্যাঁ, পুরুষোত্তম ক্ষেত্রে গমন করে সেখানে বাস করার অভিপ্রায়টি শুভপ্রদ।‘’  তিনি চিন্তান্বিতভাবে কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে রইলেন, তারপর বললেন,- ‘’আমি প্রথমে আমার কনিষ্ঠ ভ্রাতা বিদ্যাপতিকে নীলাচলে প্রেরণ করি; সে সেখানে আপনার এবং আপনার সহগামী অনুচর পারিষদবর্গের জন্য একটি শিবির স্থাপনের জন্য একটি উপযুক্ত স্থান নির্ধারণ করতে পারবে। নীলাচল ধাম থেকে তাঁকে সংবাদ নিয়ে প্রত্যাগমনের অনুমতি দিন’’,  রাজা পুরোহিতের প্রস্তাবে সম্মত হলেন।

🌷বিদ্যাপতির প্রভুর শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের সন্ধানে যাত্রা🌷

ব্রাহ্মণ পুরোহিত কয়েকজন বিশ্বস্তলোক-সহ তাঁর ভ্রাতা বিদ্যাপতিকে পবিত্র নীলগিরি পর্বতের সন্ধানে প্রেরণ করলেন। ব্রাহ্মণগণের আশীর্বাদ গ্রহণ করে উষাকালে এক শুভক্ষণে বিদ্যাপতি যাত্রা করলেন। রথে গমনকালে বিদ্যাপতির মন ভক্তি-ভাবান্বিত প্রত্যাশায় পূর্ণ হয়ে উঠেছিল। “আমার জন্ম সার্থক হয়েছে, আমি অনিন্দকান্তি শ্রীভগবানের মুখপদ্ম দর্শন করব, আমার সকল সঞ্চিত পাপ বিদূরিত হয়ে যাবে। আজ আমি আমার প্রভু চক্রপাণির দর্শন লাভ করব, যিনি কেবল ভজনানুরক্ত সাধক ভক্তগণের নিকট সুলভ। নীলাচল পর্বত-শিখরে তাঁর দিব্য নিবাসে বিশ্রামরত শ্রীভগবান দেহাশক্তি ও জড়বিষয়াসক্তির সুদৃঢ় বন্ধন ছেদন করতে সমর্থ, যা বদ্ধজীবকে জন্ম-মৃত্যুর শৃঙ্খলে আবদ্ধ রাখে। যাঁর প্রকৃত স্বরূপ শ্রুতি ও স্মৃতির মাধ্যমে গোচরীভূত হওয়া দুস্তর, সেই লক্ষ্মীপতি শ্রীহরির দর্শন লাভ করে আমি এই ভয়ঙ্কর জড় অস্তিত্বের মহাসাগর - ভব পারাবার অতিক্রমে সমর্থ হব।

আমি সেই ভগবান শ্রীজগন্নাথকে তাঁর নীলগিরি নিবাস-রূপে দর্শন করব। তাঁর দিব্য পবিত্র নাম হৃদয়ের সকল পাপ ও কলুষ বিধৌত করে চিত্তকে শুদ্ধ, নির্মল করে। হ্যাঁ, নির্দ্বিধায় অবিলম্বে আমি সেই পরমপুরুষ, আদিপুরুষ ভগবান বিষ্ণুর আশ্রয় গ্রহণ করব, যাঁর বিরাটদেহের রোমকূপসমূহ থেকে অগণিত ব্রহ্মাণ্ড অভিব্যক্ত হয়। তিনি সহস্রচক্ষু, সহস্র হস্তবিশিষ্ট এবং তাঁর নিঃশ্বাসের মাধ্যমে তিনি বৈদিক ধ্বনিতরঙ্গ নিঃসৃত করেন। তিনি অখিল বিশ্বজগতের নিয়ন্তা, প্রভু। বিদ্যাপতির চিত্ত-মন বিমল ভগবৎ-প্রেমে বিভাবত হয়েছিল। আসন্ন দর্শনলাভের চিন্তায় তিনি রোমাঞ্চিত হচ্ছিলেন, “ ওঃ, আমার কতই না সৌভাগ্য যে আমি আজ ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আদি কারণ ভগবান শ্রীনারায়ণকে স্বচক্ষে দর্শন করব!” তাঁর সমগ্র সত্তা ভগবৎ-দর্শন লালসায় ধ্যান নিবিষ্ট হল। বিদ্যাপতি ও তাঁর সহগামী দলটি বহু পথ অতিক্রম করলেন, কিন্তু তাঁদের কেউই কোন শান্তি বা অবসাদ অনুভব করলেন না।

বিদ্যাপতি বহু অরণ্য, পর্বত এবং দুর্গম পথ অতিক্রম করলেন। অবশেষে একদিন সন্ধ্যাকালে তিনি মহানদীর তীরে উপনীত হলেন। বিদ্যাপতি সেখানে স্নান করে শ্রীমধুসূদনে চিত্ত নিবদ্ধ করে সান্ধ্যাহ্নিক ও পূজা সমাপন করলেন। তারপর রাত্রে বিশ্রাম গ্রহণ করলেন। পরদিন প্রত্যুষে তাঁদের রথগুলি মহানদী অতিক্রম করল এবং পুরুষোত্তম ক্ষেত্রের অভিমুখে অগ্রসর হল। বিদ্যাপতির প্রতিটি চিন্তা ভগবান শ্রীগোবিন্দের মহিমা-ভাবনায় আবর্তিত হচ্ছিল। তিনি একাম্র কাননে পৌঁছলেন (অধুনা ভুবনেশ্বর নামে পরিচিত)। তারপর একসময় ঘটনাক্রমে তিনি নীলাচল শিখরের দর্শন পেলেন। তাঁর হৃদয় উত্তেজনায় অধীর হয়ে উঠল। ঠিক যেমন তীর্থযাত্রীটি বর্ণনা করেছিলেন, সেভাবেই তিনি ওই দৃশ্যটি দেখলেন। বিদ্যাপতি সেই নীলাদ্রি-শিখরে দণ্ডায়মান মহাকায় কল্পবট লক্ষ্য করলেন, যা সকল পাপ বিদূরিত করে। ক্রমশঃ তিনি নীলাচল ক্ষেত্রের উপত্যকায় উপনীত হলেন। বিদ্যাপতি ভগবানের দর্শন-লাভের জন্য অত্যন্ত উৎকণ্ঠিত ছিলেন, কিন্তু চারপাশের বন এতই গভীর ও আঁধারময় ছিল যে তিনি পথ দেখতে পেলেন না।

🌷বিদ্যাপতি ও শবররাজ বিশ্বাবসুর সাক্ষাৎ🌷

অন্ধকারে পথ-সন্ধান থেকে নিবৃত্ত হয়ে বিদ্যাপতি ভূমিতে কুশ আসন পেতে বিশ্রাম নিতে প্রস্তুত হলেন। ইতিমধ্যেই তিনি ভগবানের পূর্ণ শরণ গ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি পরদিন ভগবানের দর্শন লাভের প্রত্যাশা করছিলেন। অকস্মাৎ তিনি নীলগিরির পশ্চিমভাগ থেকে আসা কিছু কন্ঠস্বর শুনতে পেলেন। ভেসে আসা ঐ বাক্যালাপে ভগবান সম্বন্ধেই আলোচনা হচ্ছিল। আসন থেকে উত্থিত হয়ে বিদ্যাপতি সেই আলাপচারিতার শব্দতরঙ্গ অনুসরণ করে এগিয়ে চললেন। কিছু দূরে তিনি লন্ঠন জ্বলতে দেখলেন, একটি আশ্রমে সেগুলি জ্বলছিল বলে তাঁর মনে হল। সত্যিই তাই! সেটিই সবর-দীপক আশ্রম, যার কথা তীর্থযাত্রী বর্ণনা করেছিলেন। তিনি আবেগাপ্লুত চিত্তে এগিয়ে চললেন। আশ্রমে তিনি কিছু বৈষ্ণবগণকে সমবেত দেখলেন ও তাঁদেরকে প্রণাম নিবেদন করলেন।

ভক্তগণ বিদ্যাপতিকে সমাদরে স্বাগত জানালেন। সেখানে তিনি বিশ্বাবসু নামে একজন শবরের সাক্ষাৎ পেলেন, যিনি ভগবান শ্রীবিষ্ণুর পূজা সমাপনান্তে কয়েক মুহূর্ত পূর্বে আশ্রমে ফিরেছেন। ভগবানের প্রসাদ গ্রহণের ফলে তাঁর দেহ সুন্দর, শোভিত দেখাচ্ছিল এবং তাঁর থেকে সুন্দর এক দিব্য সুগন্ধ নিঃসৃত হচ্ছিল। তাঁকে দর্শন করে বিদ্যাপতি অত্যন্ত প্রীত হলেন এবং তৎক্ষণাৎ তিনি তাঁকে একজন মহাবৈষ্ণব রূপে অবগত হলেন। তিনি উপলব্ধি করলেন যে এই পূজারীই হচ্ছেন মুখ্য ব্যক্তি যাঁর কাছ থেকে ভগবানের অবস্থিতির সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।

শবর বিশ্বাবসু বিদ্যাপতির মনোভাব বুঝতে পারলেন। বাহু দ্বারা তাঁকে কোমলভাবে আলিঙ্গন করে বিশ্বাবসু বললেন,- ‘’হে ব্রাহ্মণ! কেন আপনি এই বনে আগমন  করেছেন? নিশ্চিতভাবেই আপনি দেখেছেন যে পথঘাট অত্যন্ত দুর্গম, তীক্ষ্ণ কন্টকাদি ও ক্ষুরধার পাথরে পূর্ণ। এমন পথে হাঁটতে নিশ্চয়ই আপনার অত্যন্ত অসুবিধা হয়েছে, আপনি অবশ্যই পরিশ্রান্ত হয়েছেন। আসুন, এখানে কিছুক্ষণ উপবেশন করুন এবং বিশ্রাম গ্রহণ করুন।" বিশ্বাবসু তাঁর পাদপ্রক্ষালন করার জন্য জল সংগ্রহ করে আনলেন এবং তাঁকে উপবেশনের আসন দান করলেন। তারপর বিশ্বাবসু ব্রাহ্মণ বিদ্যাপতির জন্য কিছু প্রসাদ প্রস্তুত করতে শুরু করলেন। কিন্তু বিদ্যাপতির একমাত্র উৎকন্ঠা ছিল ভগবানের দর্শন লাভ। "আমি কোনো ফল বা রান্না করা আহার্য চাই না। অনুগ্রহ করে আমার সেই অভিলাষ পূর্ণ করুন, যে জন্য আমি এসেছি।"

বিদ্যাপতি তাঁর আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। "আমি মালবদেশের রাজার সেবক, রাজ-পুরোহিতের একজন প্রতিনিধি। রাজার আদেশে আমি ভগবান শ্রীবিষ্ণুর দর্শন লাভের জন্য এখানে এসেছি। রাজা উপবাস করছেন, আমি ভগবানের শ্রীবিগ্রহের সংবাদ নিয়ে গেলেই কেবল তিনি সেই উপবাসব্রত ভঙ্গ করবেন। অতত্রব একমুহূর্তও অপচয় করবার মতো সময় নেই। সেজন্য দয়া করে আমি যাতে অবিলম্বে ভগবানের দর্শন লাভ করতে পারি তাঁর ব্যবস্থা করুন।" বিদ্যাপতি ব্যাকুলচিত্তে শবররাজের প্রত্যুত্তরের প্রত্যাশায় দাঁড়িয়ে রইলেন। ক্রমশ…..

আগামী পর্বে থাকছে---

♦বিদ্যাপতি নীলমাধবের দর্শন লাভ করলেন♦

💞জয় পতিতপাবন শ্রীজগন্নাথদেবের জয়💞