🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚
🍁🌻🌷চাতুর্মাস্য ব্রত🌷🍁
🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚
বিশেষ পোষ্ট
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম। হরে কৃষ্ণ, আগামী ২০/০৭/২০২১ ইং রোজ - মঙ্গলবার চাতুর্মাস্য - ব্রতারম্ভ I
‘’গুরু - বৈষ্ণব - ভগবান তিনিহেঁ স্মরণ ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে হয় বিঘ্ন বিনাশন ।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ । I’’
নমস্ত্রিকাল - সত্যায়
জগন্নাথসুতায়চ।
স - ভৃত্যায়
স -পুত্রায়
স - কলত্রায়তে
নমঃ।।
শ্রাবণ- ভাদ্র- আশ্বিন ও কার্ত্তিক, এই চার মাস ভগবান শ্রীবিষ্ণু ক্ষীর সাগরে শ্বেতদ্বীপে অনন্ত শয্যায় নিদ্রিত হন , ভাদ্র শুক্লা একাদশীতে পার্শ্ব পরিবর্তন করেন, এবং কার্তিক শুক্লা একাদশীতে উত্থিত হন। শাস্ত্রে বছরের এই চার মাসের জন্য কিছু আচরণ বিধি এবং বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে ।
বরাহ পুরাণের মতে আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বাদশী বা পূর্ণিমায় এই ব্রতের আরম্ভ করে যথাবিধি অনুষ্ঠানে কার্ত্তিক মাসের শুক্লাদ্বাদশী অথবা পূর্ণিমায় এই ব্রতের উদযাপন হয়। আবার সনৎকুমারের মতে আষাঢ়ী শুক্লা একাদশী, পূর্ণিমা বা কর্কট সংক্রান্তিতে এই ব্রত আরম্ভ করবার বিধান আছে,-
‘’আষাঢ় শুক্লদ্বাদশ্যাং পৌর্ণমাস্যামথাপি বা ।
চাতুর্মাস্য ব্রতারম্ভং কুর্যাৎ কর্কটসংক্ৰমে ।।‘’
সুতরাং চাতুর্মাস্য ব্রতকারীরা কেউ শয়ন- একাদশী থেকে উত্থান -একাদশী পর্যন্ত, কেউ আষাঢ় মাসের গুরুপূর্ণিমা থেকে কার্তিক মাসের হৈমন্তী রাসপূর্ণিমা পর্যন্ত, আবার কেউ কর্কট সংক্রান্তি থেকে মকর সংক্রান্তি পর্যন্ত যথাবিধি ব্রত পালন করে থাকেন। তবে যে দিনটিতেই শুরু করবেন , তার চার মাস পরে ব্রত সমাপন করবেন।
ব্রত আরম্ভ করবার মন্ত্রঃ-
“চতুরো বার্ষিকান মাসান দেবস্য উত্থাপন অবধি।
ইমং করিষ্যে নিয়মং নিৰ্ব্বিঘ্নং কুরু মেহচ্যুত I I”
মৎস্য পুরাণে লিখিত আছে যে, বৎসরের চারমাস দেবগণের উত্থান পর্য্যন্ত গুড় ত্যাগ করলে মধুর স্বর, তৈলত্যাগে সুশ্রী,কটুতৈল পরিত্যাগে শত্রুনাশ, স্থালীপক্ক ভক্ষণ না করলে সম্পত্তিবৃদ্ধি ও মদ্য মাংস পরিত্যাগ করলে যোগসিদ্ধি হয়ে থাকে। এই কয়মাস একদিন অন্তর আহার করলে বিষ্ণুলোক প্রাপ্তি, নখলোম ধারণ করলে প্রতিদিন গঙ্গাস্নানের ফল, তাম্বুল পরিত্যাগে গীতশক্তি, ঘৃতত্যাগে শরীরে লাবণ্য ও স্নিগ্ধতা, ফলত্যাগে বুদ্ধি ও সন্তান লাভ হয়। ভক্তি
সহকারে ‘’নমো নারায়ণায়’’ - এই মন্ত্রটি জপ করলে উপবাসের ফল এবং বিষ্ণুবন্দনা করলে গোদানের সমান ফল লাভ হয়। ব্রত আরম্ভ করবার মন্ত্র যথা,-
‘’ইদং ব্ৰতং ময়া দেব ! গৃহীতং পুরতস্তব।
নির্বিঘ্নাং সিদ্ধিমাপ্নোতু প্রসন্নে ত্বয়ি কেশব I I
গৃহীতেহস্মিন ব্রতে দেব যদ্যপূর্ণে তহংম্রিয়ে ।
ত্বন্মে ভবতু সংপূর্ণং ত্বৎপ্রসাদাৎজনাৰ্দ্দন I I’’ ( সনৎকুমার )
ব্ৰতসমাপ্তির পরে এই মন্ত্ৰটী পাঠ করতে হয়,-
‘’ইদং ব্ৰতং ময়া দেব ! কৃতং প্রীতৌ তব প্রভো।
ন্যূনং সংপূর্ণতাং যা তু ত্বৎ প্রসাদাৎ জনাৰ্দ্দন I I’’
কাঠক গৃহ্যের মতে যতির পক্ষে এই চারমাস একইস্থানে বাস করা উচিত । ( তিথিতত্ব )
ভবিষ্যপুরাণে বলা হয়েছে,-
‘’যো বিনা নিয়মং মর্ত্যো ব্রতং বা জপ্যমেব বা।
চাতুর্মাস্য নয়েন্ মূর্খো জীবন্নপি মৃতো হি সঃ I I’’
যে ব্যক্তি নিয়ম, ব্রত বা জপ ব্যতীত চাতুর্মাস্য যাপন করেন, সেই ব্যক্তি অজ্ঞ ও জীবন্মৃত , অতএব তাঁর জীবন নিষ্ফল হয় । সুতরাং সকলের পক্ষেই চাতুর্মাস্য ব্ৰত করা উচিত ।
শ্রীব্রহ্মা নারদমুনিকে বলছেন,- হে নারদ, চাতুর্মাস্য ব্রত ভক্তি সহকারে পালন করলে মানুষ পরমাগতি লাভ করার সুযোগ পাবে।
স্কন্দ পুরাণে বলা হয়েছে-
‘’শ্রাবণে বর্জয়েৎ শাকং দধি ভাদ্রপদে তথা।
দুগ্ধম্ আশ্বযুজে মাসি কার্ত্তিকে চামিষং ত্যজেৎ I
I’’
স্কন্দপুরাণের নাগরখণ্ডে লিখিত আছে যে, শ্রাবণমাসে শাক, ভাদ্রমাসে দধি , আশ্বিনমাসে দুধ ও কার্ত্তিক মাসে মাষকলাই ডাল পরিত্যাগ করা উচিত । বিশেষতঃ, কার্ত্তিক মাসে শিম, মাসকলাই , বরবটি, পটোল ও বেগুণ ভক্ষণ নিষিদ্ধ। সেই সময়ে লব্ধ রুচিকর ফলমূলাদি পরিত্যাগ করতে হবে। ( ভবিষ্যপুরাণ )
কৃষ্ণভক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ভক্তগণ চাতুর্মাস্য ব্রত পালন করে থাকেন। ব্রতের আচরণ বিধি গুলি হলো :-
কলিযুগে বদ্ধ জীবের সদ্গতি লাভের একমাত্র উপায় হরিনাম সংকীর্ত্তন। যাঁরা হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করেন না, তাঁরা শুরু করে দেবেন ,এবং যাঁরা নিয়মিত মন্ত্র জপ করেন, তাঁরা জপসংখ্যা বৃদ্ধি করবেন।
প্রতিদিন গীতা-ভাগবত শ্রবণ বা পাঠ , ভক্ত ও ভগবানের কথা আলোচনার মাধ্যমে চিত্তশুদ্ধি সাধন অবশ্য কর্তব্য । এছাড়া প্রত্যূষে স্নান ও মঙ্গল আরতিতে যোগদান , শ্রীহরি অর্চন কিংবা শ্রীহরিভক্তিমূলক অন্য কোনও সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা এবং আচারে বা প্রচারে যে কোনও সেবায় সংযুক্ত থাকা, এ সমস্তই আচরণ বিধির মধ্যে পড়ে।
এই ব্রত ফলে মন সুন্দর
হয়, শরীর ও প্রাণ সুন্দর হয়। বলা হয়, চার মাস বিষ্ণু শায়িত থাকেন। মানুষ এই ব্রত করলে
বিষ্ণুর সুখনিদ্রা হয়। বিষ্ণুর পাদপদ্ম সেবায় রতা লক্ষ্মীদেবী তখন ব্রতকারীদের প্রতি
প্রসন্না হন। তখন লক্ষ্মীর তুষ্ট দৃষ্টিপাতের ফলে ব্রতকারী লক্ষ্মীমন্ত হয়। নিয়ম শিষ্টাচার
হীন হলে বিষ্ণুর নিদ্রা বিঘ্নিত হয়। বিষ্ণুর পাদপদ্ম সেবায় রতা লক্ষ্মীদেবী তখন অনুভব
করেন যে, লোকেরা ব্রতহীন ও উচ্ছৃঙ্খল হওয়ার ফলে প্রভুর নিদ্রা বিঘ্নিত হচ্ছে। তখন লক্ষ্মীদেবী
ব্রতহীনদের প্রতি রুষ্টা হন। তাঁর রুষ্ট দৃষ্টিপাতের ফলে লোকে লক্ষ্মীছাড়া হয়। তখন
জীবনে নানা রকমের দুর্বিপাক লেগে থাকে।
‘’এবং চ কুর্বতো মাসাংশ্চতুরো যান্তি বৈ সুখম্।
অন্যথা প্রভবেদ্ দুঃখম্ অনাবৃষ্টিশ্চ জায়তে I I’’
এভাবে চার মাস ব্রত পালন করলে সুখে জীবন
যাপন হয়, অন্যথায় দুঃখের প্রভাব বৃদ্ধি হয়, অনাবৃষ্টি ও অন্যান্য দুর্বিপাক লেগে থাকে।
গৌড়ীয় বৈষ্ণব জীবনে চাতুর্মাস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গদেশের বৈষ্ণবগণ রথযাত্রার পূর্বেই সদলবলে পুরীধাম পৌঁছে যেতেন। সেখানে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সাথে সংকীর্ত্তন রঙ্গে তাঁরা রথযাত্রা উদযাপন করতেন। আর রথযাত্রার পর সেখানে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সানিধ্যে থেকে এ চারটি মাস অতিবাহিত করতেন।
‘’চারিমাস রহিলা সবে মহাপ্রভু -সঙ্গে।
জগন্নাথের নানা যাত্রা দেখে মহারঙ্গে I I’’ (চৈ.চ. মধ্য ১৫/১৬)
এ চারটি মাস জগন্নাথের নানারকমের উৎসবে তারা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সঙ্গে অংশগ্রহণ করতেন।
“এইমত রাসযাত্রা, আর দীপাবলী।
উত্থান -দ্বাদশী যাত্রা দেখিলা সকলি I I
তবে মহাপ্রভু সব ভক্তে বোলাইল।
‘গৌড়দেশে যাহ সবে’ বিদায় করিল I I’’ (চৈ.চ. মধ্য ১৫/৩৬-৩৯)
উত্থান একাদশীর পর রাসপূর্ণিমায় চাতুর্মাস্য সমাপন পূর্বক তাঁরা স্ব স্ব গৃহে ফিরে আসতেন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পরমগুরু শ্রীপাদ মাধবেন্দ্র পুরী মহাশয়ও বৃন্দাবন যাবার পথে রেমুণায় গ্রীষ্মকালে চন্দনযাত্রা উৎসব প্রবর্তন করে নীলাচল প্রত্যাবর্তন করেন এবং সেখানেই চাতুর্মাস্য পালন করেন।
‘’গ্রীষ্মকাল অন্তে পুনঃ নীলাচলে গেলা।
নীলাচলে চাতুর্মাস্য আনন্দে রহিলা I I’’ (চৈ.চ. মধ্য ৪/১৬৯)
উন্নততর জীবন অথবা স্বর্গারোহণ করবার জন্য চান্দ্রায়ণ, চাতুর্মাস্য আদি স্বেচ্ছামূলক তপশ্চর্যার বিধান আছে । এ সমস্ত পন্থায় বিশেষ বিশেষ বিধি- নিষেধের মাধ্যমে জীবনযাত্রাকে পরিচালিত করার জন্য কঠোর ব্রত পালন করতে হয়। এভাবেই সাংসারিক সুখ পরিত্যাগ করাকে বলা হয় তপোময় যজ্ঞ।
সার্বিক ব্রতনিয়ম থাকা সত্ত্বেও ব্যক্তিগত কিছু কিছু ব্রতসংকল্প করে থাকেন কোনও কোনও ব্রতকারী। সেই আচরণগুলিও শাস্ত্রসম্মতঃ-
🙏যেমনঃ👉 ১) সারাদিনে একবার মাত্র হবিষ্যান্ন গ্রহণ করা।
👉২) বিছানা না পাতিয়ে মাটিতে ঘুমানো।
👉৩) থালা-বাটি ব্যবহার না করে। কলাপাতা বা পদ্মপাতা ব্যবহার করা।
👉৪) শরীরে তেল না মাখা।
👉 ৫) নখ, চুল না কাটা।
👉৬) মৌন থাকা।
👉কেউ কেউ লবণ খান না, কেউ কেউ মিষ্টি জিনিস খান
না, কেউ কেউ দুধজাতীয় কোনও খাবার গ্রহণ করেন না। কেউ কেউ মাটিতে মুখ দিয়ে খাবার গ্রহণ করেন।
👉আমাদের দেশে অনেকেই আমিষপ্রিয়, নেশাপ্রিয় মানুষ রয়েছেন। সেক্ষেত্রে বলা হয়েছে, যদি কেউ চাতুর্মাস্যে(এইচার মাস) মদ ও মাছ-মাংস বর্জন করতে পারে, তবে সে এক সুন্দর যোগী হতে পারবে, ও তেজস্বী ব্যক্তিত্ব হতে পারবে।🙏
💐
জয় শ্রীহরি 🏵️💐 জয় শ্রীহরি
🏵️💐 জয় শ্রীহরি
💐
No comments:
Post a Comment