🌲🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚🌲
🦜🌻বৈষ্ণবের বিরহ তিথি🌻🦜
🌲🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚🌲
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I হরে কৃষ্ণ, আজ বিশেষ শুভদা তিথি। আজ শ্রীল রঘুনন্দন ঠাকুরের ও শ্রীল বংশীদাস বাবাজী মহারাজের শুভ বিরহ তিথি।
💐শ্রীল রঘুনন্দন ঠাকুর💐
'প্রদ্যুম্ন তৃতীয় ব্যূহ, যিনি কৃষ্ণের প্রিয়নর্ম্মসখা হইয়া ব্রজে রাধামাধবের লীলায় সহায়তা করিয়াছিলেন তিনি এক্ষনে রঘুনন্দন হইয়াছেন। তিনি বৈদ্যকূলে আবির্ভূত হইয়াছিলেন I তিনি গৌরপার্ষদ নরহরি ঠাকুরেরর ভাইয়ের পুত্র। তাঁহার আবির্ভাব সন কাহারও মতে ১৪৩২ শকাব্দ। ইঁহার পিতার নাম শ্রীমুকুন্দ দাস, মাতার নাম অপরিজ্ঞাত। রঘুনন্দন ঠাকুরের পিতা শ্রীমুকুন্দ দাস শ্রীনরহরি সরকার ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ছিলেন। শ্রীমুকুন্দ দাস রাজবৈদ্য ছিলেন। শ্রীমুকুন্দ দাস বাদশাহের চিকিৎসা করিতে গিয়া ময়ূরের পুচ্ছের পাখা দেখিয়া মূর্চ্ছিত হইয়া পড়িয়াছিলেন। বর্দ্ধমান জেলার অন্তর্গত শ্রীখণ্ডে ইঁহার শ্রীপাট ছিল।
শ্রীল রঘুনন্দন ঠাকুর বসন্ত পঞ্চমী তিথিতে আবির্ভূত হইয়াছিলেন। রঘুনন্দনের খুল্লতাত শ্রীনরহরি সরকার ঠাকুর রঘুনন্দন ঠাকুরকে বাল্যকাল হইতে অতীব স্নেহের সহিত লালন পালন করিয়াছিলেন। শ্রীমন্মহাপ্রভু রঘুনন্দন ঠাকুরের নির্দ্দিষ্ট সেবারূপে 'শ্রীবিগ্রহসেবা'র বিধান দিয়াছিলেন।
‘’রঘুনন্দনের কার্য্য - কৃষ্ণের সেবন।
কৃষ্ণসেবা বিনা ইঁহার অন্য নাহি মন।" (চৈ. চ. ১৫।১৩১)
সংকীর্ত্তন পিতা শ্রীমন্মহাপ্রভু তাঁহার স্বীকৃতপুত্র রঘুনন্দনকেই সংকীর্ত্তন যজ্ঞের অধিবাসে মাল্যচন্দন এবং যজ্ঞশেষে পূর্ণাহুতি প্রদানে অধিকারী করিয়াছিলেন। শ্রীরঘুনন্দন ঠাকুর চাতুর্মাস্যকালে গৌড়দেশীয় ভক্তগণের সহিত পুরীতে যাইতেন। শ্রীজগন্নাথের রথাগ্রে সাত সম্প্রদায়ে যে নৃত্যকীর্ত্তন হইত, তন্মধ্যে খণ্ডবাসী ভক্তগণের সপ্তম সম্প্রদায়ের নর্ত্তক ছিলেন শ্রীল নরহরি সরকার ঠাকুর ও শ্রীরঘুনন্দন। শ্রীল নরোত্তম ঠাকুর ও শ্রীনিবাস আচার্য্য প্রভুকৃত্য খেতরি শ্রীপাটের মহোৎসবে, কাটোয়ায় দাস গদাধরের এবং শ্রীখণ্ডে শ্রীল নরহরি সরকার ঠাকুরের তিরোভাব উৎসবে শ্রীল রঘুনন্দন ঠাকুর যোগ দিয়াছিলেন। নিজপুত্র শ্রীকানাই ঠাকুরকে গৌর - গোপালচরণে সমর্পণ করিয়া শ্রীল রঘুনন্দন ঠাকুর শ্রাবণমাসের শুক্লা চতুর্থী তিথিবাসরে অপ্রকট হইলেন।
🏵️শ্রীল বংশীদাস বাবাজী মহারাজ🏵️
বৃন্দাবনের ৩জন বাবাজী দের মধ্যে তিনি ১জন ছিলেন শ্রীল বংশীদাস বাবাজি মহারাজ। গুরুপরম্পরা অনুযায়ী গৌরকিশোর দাস বাবাজী মহারাজের বন্ধু ছিলেন তিনি, বংশীদাস বাবাজী মহারাজের বাড়ী ছিল কিশোরগঞ্জ জেলা মজীতপুর পাকুইন্দিয়া থানা।
তিনি এমন ভজনশালী সিদ্ধপুরুষ ছিলেন যে তিনি এখানে থেকে ধ্যানের ম্যাধমে বৃন্দাবনের কুকুর তাড়িয়ে ছিলেন ও বৃন্দাবনে যখন আগুন লেগেছিল তখন তিনি ধ্যানের ম্যাধমে সেখানে জল দিয়ে আগুন নিভান, তিনি এমন ভজনশালী ছিলেন যে তিনি তার দেহের চিন্তা করতেন না তিনি সিদ্ধ পুরুষ সারাক্ষণ তার মুখে কৃষ্ণ নাম ছিল ও তার প্রিয় ইষ্ট দেবতা ছিল শ্রীশ্রী গৌরনিতাই, একদিন তিনি নৌকায় বসে জপ করছিলেন। এক হাতে কৃষ্ণ নাম আরেক হাতে তিনি কাপড়ের মধ্যে চাল রেখে জলে চুবিয়ে জপ করতে থাকেন। জপ করা শেষ হলে সেই চাল কাঁচামরিচ ও একটু লবণ দিয়ে গৌরনিতাইকে তিনি ভোগ দেন।
গৌরনিতাই বললেন "ও বাবা প্রতিদিন এমন খেতে ভাললাগে না একটু ত ভালমন্দ খেতে দাও" তখন বংশীদাস বাবাজী বললেন "আমি পারব না খেলে খাও, না খেলে না খাও আমাকে সারাদিন ভজন করতে হয়।" যখন বংশীদাস বাবাজী মহারাজ বাইরে বের হয়ে গেলেন, অপরদিক থেকে শুনছেন যে, গৌরনিতাই খাচ্ছে না তারা বেশী কথা বলছেন, তখন তিনি তার ভজন কুটির থেকে বাশের কঞ্চি এনে বললেন, "দেখ তোমরা খাবে নাকি খাবে না? এখন বলো?" তখন গৌরনিতাই হাতে লাঠি দেখে বলে "ও বাবা খাচ্ছি খাচ্ছি আমাদেরকে মের না।" একদিন গৌরনিতাই বললেন "ও বাবা আমাদেরকে স্নান করাবে না?" তখন বাবাজী মহারাজ বলে "আমি পারব না, তোমরা নিজে গিয়ে স্নান করে এস।" সেইথেকে গৌরনিতাই বাবাজী মহারাজের ভজন কুটিরের পাশে পুকুর ছিল সেখানে প্রতিদিন স্নান করে আসতেন।
একদিন বাবাজী মহারাজ তার গোপালকে পুকুরে নামিয়ে গলায় দড়ি বেঁধে ভাসমান অবস্থায় গোপালকে পুকুরে ছেড়ে দেন আর গোপাল সাঁতার কাটতে কাটতে দূরে চলে গেল তখন বাবাজী মহারাজ রেগে বললেন, "কি রে এখনো আসছিস না ঠাণ্ডা লেগে যাবে তো।" গোপাল মাঝ পুকুরে এসে অভিনয় করতে থাকে "ও বাবা আমি ডুবে যাচ্ছি, তখন বাবাজী মহারাজ একটা কঞ্চি এনে বললেন "তুই আসবি নাকি আসবি না?" তখন গোপাল ভয়ে ওঠে আসে। তিনি এমনি সিদ্ধপুরুষ ছিলেন যে ভগবান তার ভক্তিতে বাধা পড়তে বাধ্য হন। ভক্তের হাতে লাটাইয়ের ঘুড়ি আর সেই লাটাইয়ের ঘুড়ি হলো ভগবান তাই ভগবান বলেছেন যে "ভক্ত আমাকে যেভাবে
নাচায় আমি সেইভাবে নাচি।"
শ্রীশ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর তার ভজন কুটিরে যখন যেতেন তখন তার শিষ্যদেরকে তিনি নিয়ে যেতেন না, কারণ বংশীদাস বাবাজি মহারাজকে দেখে তার শিষ্যরা বিচার করতে
লাগবে যে, তিনি কেমন ধরণের বৈষ্ণব যে লম্বা চুল-দাঁড়ি আছে, গলায় মালা নেই, স্নান ও করে না, আচার বিচার নেই, আবার কখনো তার গায়ে কাপড় থাকত না। ভজন করতে করতে তিনি নিজের চিন্তা করত না যে তার গায়ে কাপড় আছে কিনা তা দেখে শিষ্যরা ভাবতে পারে এটা কেমন ধরণের বৈষ্ণব। এমন দৃশ্য দেখে শিষ্যদের মনে চিন্তা জাগতে পারে তখনি শিষ্যরা বৈষ্ণবপরাধ ও ধাম অপরাধ করবে। ধামে এসে ভক্তের আচরণ দেখে বিচার করতে থাকবে, তাই তিনি একা যেতেন কারণ ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর তিনিও ভজনে সিদ্ধপুরুষ ছিলেন, আর যখন তিনি তার ভজনকুটিরে প্রবেশ করতেন, তখন বংশীদাস বাবাজী মহারাজ ঘরের ভিতর থেকে দেখে বলতেন "মঞ্জুরী আসছে মঞ্জুরী আসছে।"
মাঝে মাঝে ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর তার আশ্রমে বাজার পাঠাতেন শিষ্যদেরকে দিয়ে, তখন শিষ্যদেরকে বলতেন যে "তোমরা কেউ তার গৃহে প্রবেশ করবে না, মন্দিরে এক কোনায় বাজার রেখে চলে আসবে।" কারণ বাবাজী মহারাজকে দেখে শিষ্যদের মনে আচার বিচার জাগতে পারে তাই সামনে যেতে নিষেধ করতেন। শ্রীল বংশীদাস বাবাজি সম্পর্কে জনশ্রুতি আছে যে, তিনি ছিলেন অসম্ভব অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী এক সিদ্ধ মহাপুরুষ। বিভিন্ন গ্রন্থে তাঁর সম্পর্কে আরো জানা যায়, তিনি ছিলেন লীলা পুরোষত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রেমানন্দসাগরে সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত এক মহামানব। যিনি অবিচ্ছেদ্য বন্ধু ও সঙ্গীরূপে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে তাঁর সাথে সর্বত্র নিয়ে যেতেন এবং তিনি শ্রী বিগ্রহের সাথে কথা বলতেন, যা তিনি ভিন্ন অন্য কেউ শুনতেন না।
🌷কে জাবি কে জাবি ভাই ভবসিন্ধু – পার ।🌻
🏵️ধন্য কলিযুগের চৈতন্য – অবতার ।।💐
🌷আমার গৌরাঙ্গের ঘাটে অদান - খেয়া বয় ।🌻
🏵️জড়, অন্ধ, আতুর অবধি পার হয় ।।💐
🌷হরিনামের নৌকাখানি শ্রীগুরু – কাণ্ডারী ।🌻
🏵️সংকীর্ত্তন - কেরোয়াল দু' বাহু পসারি ।।💐
🌷সব জীব হইল পার প্রেমের বাতাসে ।🌻
🏵️পড়িয়া রহিল লোচন আপনার দোষে ।।💐
No comments:
Post a Comment