Sunday, August 8, 2021

💐🏵️💞🌺��🌺💞🏵️💐

🌷বৈষ্ণবের বিরহ তিথি🌷

💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I হরে কৃষ্ণ, আজ বিশেষ শুভদা তিথি। আজ পরম বৈষ্ণব শ্রীল শ্রীমদ্ভক্তি রক্ষক শ্রীধরদেব গোস্বামী মহারাজের শুভ বিরহ তিথি পূজা।

সচ্চিদানন্দবিগ্রহ পরমঈশ্বর কৃষ্ণকে যিনি ''মধুর পরম সত্য'' বলে বর্ণনা করেছেন, সেই ''রসো বৈ সঃ'' মধুর সত্যেরই গীতিকার ছিলেন শ্রীমদ্ভক্তি রক্ষক শ্রীধরদেব গোস্বামী মহারাজ। তাঁর মুখপদ্ম - নিঃসৃত হরিকথামৃত - ভাষণ, অতি অলৌকিক প্রজ্ঞান প্রতিভা, অমূল্য রচনাবলী, দিব্য মহাভাগবতীয় চরিত্রে বিচিত্র রাগমাধুরীতে রচিত হয়েছে আনন্দলীলা ভগবানের অনুপম অখিল রসামৃতরূপ। যে সকল শ্রদ্ধালু ভাগ্যবান সুমেধাগণ এই শ্রীরূপানুগ আচার্য্যশ্রেষ্ঠের হরিকথামৃত শ্রবণে শ্রুতিকে আনন্দিত করেছেন, রচনাসম্ভার পাঠ করে হৃদয়কে তৃপ্ত করেছেন তাঁহারই জানেন কি স্বাদু, রূপানুগ ভক্তিসিদ্ধান্ত পূর্ণ গভীর ভাব - অনুভূতিময় সেই প্রকার।

শ্রীমদ্ভক্তি রক্ষক শ্রীধরদেব গোস্বামী মহারাজ বর্দ্ধমান জেলার কালনা মহকুমার অন্তর্গত কাটোয়া লাইনে পাটুলী রেল স্টেশনের নিকটবর্ত্তী হাঁপানিয়া গ্রামে ১৩০২ বঙ্গাব্দে, ইং ১৮৯৫ খৃষ্টাব্দে, ২৬শে আশ্বিন শনিবার দিবসে, পণ্ডিতপ্রবর শ্রীযুক্ত উপেন্দ্রচন্দ্র ভট্টাচার্য্য বিদ্যারত্ন মহোদয়কে পিতৃরূপে শ্রীমতী গৌরীদেবীকে মাতৃরূপে বরণ করে শ্রীল বীরচন্দ্র প্রভুর আবির্ভাব তিথিতে শুভক্ষণে প্রকটলীলা আবিষ্কার করেছিলেন। মাতাপিতা উভয়েই স্বধর্মনিষ্ঠ ভগবৎ পরায়ণ স্বজন ছিলেন। এই পুত্ররত্নের নাম রেখেছিলেন 'শ্রীরামেন্দ্রসুন্দর ভট্টাচার্য্য।' তিনি ছাত্রজীবনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি.. পাশ করে আইন পড়বার সময়ে মহাত্মাগান্ধীজীর আহ্বানে অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেন। পরে ১৯২৩ সাল, হইতে পরমারাধ্য শ্রীশ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী প্রভুপাদের কৃপাকর্ষণে ১নং উল্টাডিঙ্গী জংশন রোডস্থ গৌড়ীয়মঠে এসে তাঁর শ্রীমুখে হরিকথা শ্রবণের সৌভাগ্য বরণ করে মনুষ্য জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য অনুধাবন করেন।

শ্রীলভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের তিনি খুবই মনোযোগের সহিত শ্রবণ করতেন। অনতিবিলম্বেই ১৯২৬ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি এই শ্রীগৌড়ীয়মঠ প্রতিষ্ঠানে একান্তভাবে যোগদান করে শ্রীশ্রীল প্রভুপাদের বিশেষ স্নেহ ভাজন হন এবং বৈশাখমাসে তাঁর নিকট হরিনাম মহামন্ত্র ২৩শে শ্রাবণ পাঞ্চরাত্রিক বিধানানুযায়ী মন্ত্রদীক্ষা লাভ করেন। তাঁর দীক্ষার নাম রাখা হয়েছিল 'শ্রীপাদ রামানন্দ দাস ব্রহ্মচারী।শ্রীলপ্রভুপাদ সাধন ভজনে তাঁর ঐকান্তিক নিষ্ঠা, শ্রীগুরু বৈষ্ণব সেবায় নিস্কপট অনুরাগ এবং তদীয় (প্রভুপাদের) চিন্তাধারা অনুসরণে স্বচ্ছাস্ত্র -সিদ্ধান্ত পরিবেশন কার্য্যে বিশেষ নৈপুণ্য লক্ষ্য করে তাঁকে শীঘ্রই অর্থাৎ ''১৯৩০ সালে ত্রিদণ্ডসন্ন্যাসবেষ প্রদান করেন। তাঁর সন্ন্যাসের নাম রাখলেন ''ত্রিদণ্ডিভিক্ষু শ্রীমদ্ভক্তিরক্ষক শ্রীধর।''

শ্রীমদ্ভক্তি রক্ষক শ্রীধরদেব গোস্বামী মহারাজ তাঁর গৃহ ত্যাগ করে মিশনে যখন যোগ দিলেন তাঁর গুরুদেব শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর তখন ভীষণ খুশি হয়ে গীতার শ্লোক উচ্চারণ করেছিলেন।

যদ্ যদাচরতি শ্রেষ্ঠস্তত্তদেবেতরো জনঃ।

যৎ প্রমাণং কুরুতে লোকস্তদনুবর্ততে।। (গীতা /২১)

অর্থাৎ,- শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি যেভাবে আচরণ করেন, সাধারণ মানুষেরা তার অনুকরণ করে। তিনি যা প্রমাণ বলে স্বীকার করেন, সমগ্র পৃথিবী তারেই অনুসরণ করে। তিনি তাঁর হৃদয়ে আনন্দ ব্যক্ত করে বলেছিলেন,- ''শ্রীধর মহারাজের মত কোন শিক্ষিত ব্যক্তি শ্রীচৈতন্যমহাপ্রভুর মিশনে অংশ গ্রহণ করছেন এর চেয়ে আর সুখকর কি হইতে পারে।

পরম পূজ্যপাদ শ্রীমদ্ভক্তি রক্ষক শ্রীধরদেব গোস্বামী মহারাজ পঠদ্দশায় ইংরেজী ভাষা শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃত ভাষায় বিশেষ ভাবে কৃতবিদ্য হয়েছিলেন। প্রথিতনামা পণ্ডিতবংশে জন্ম তাঁর, অতি অল্প বয়সেই সংস্কৃত ভাষায় কবিতাদি রচনায় তাঁর স্বতঃস্ফূর্ত্ত মেধা পরিলিক্ষিত হতো, পরমারাধ্য শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের শ্রীচরণাশ্রয়ে তাঁর সেই স্বতঃসিদ্ধ ভগবদত্ত শক্তি আরো বিকশিত হইতে লাগলো। একবার শ্রীল মহারাজ যখন বিহারে গিবিডি গিয়েছিলেন, সেখানে ব্যারিষ্টারদের লাইব্রেরীতে ভাষণ দিয়েছিলেন। ভাষণের পর এক ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন এবং কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আমরা মনে করতাম ''আমাদের পূর্বপুরুষেরা সব বোকা ছিলেন, আমরা যখন সভ্য হয়ে উঠেছি বৃটিশদের সংস্পর্শে এসে। কিন্তু আজকে মহারাজ ! আপনার বক্তব্য শুনে আমরা বোধ করছি আমরা কত মহান ছিলাম, কত নিচে গেছি আমাদের পূর্বপুরুষরা কত কত মহান ছিলেন, আমরা কত নোংরা আবর্জ্জনাস্তুপে পড়ে গেছি !''

অপর একটি ঘটনা:- একটা সভায় শিক্ষিত পণ্ডিত ব্যক্তি সভাপতি হয়েছেন, সম্ভবত কোন এক মিঃ বসাক, শ্রীল মহারাজের বক্তৃতার পর মন্তব্য করলেন,- ''আমরা এতদিন জানতাম বৈষ্ণবধৰ্ম হিন্দুধর্মেরই একটা অংশ বা শাখা আজ জানলাম বৈষ্ণবধৰ্ম, জৈবধৰ্ম অথবা আত্মারই ধৰ্ম,- আর সবকিছু সেই ধর্মেরই অংশমাত্র। শ্রীল মহারাজের শাস্ত্রাদিতে গভীর জ্ঞান এবং গূঢ়ার্থ নির্ণয়ে সুনিপূণতা দেখে তাঁর গুরুদেব শ্রীল প্রভুপাদ তাঁকে 'শাস্ত্রনিপূণ শ্রীধর মহারাজ' বলে অভিহিত করেছেন। অপর দিকে কোন এক প্রসঙ্গে তাঁর গুরুপাদপদ্ম তাঁকে 'নিবেদিতাত্মা' বলে জানিয়েছিলেন।

শ্রীলপ্রভুপাদ তাঁর প্রকটকালে শ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধরমহারাজ রচিত শ্লোক বিশেষতঃ 'শ্রীমদ্ভক্তিবিনোদ - বিরহদশকম' স্তোত্রটি পাঠ করে তাঁর প্রতি অত্যন্ত প্রসন্ন হয়েছিলেন। তিনি শ্রীপাদ শ্রৌতিমহারাজকে বলেছিলেন, ''এই কবিতা এত সুন্দর যে, এটা এর দ্বারা লেখা নয়, শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর নিজেই লিখেছেন এবং ওর মাধ্যমে সেটা বেরিয়ে এসেছে। এটা খুবই প্রসংশনীয়'' একবার শ্রীযুক্ত অপ্রাকৃত প্রভুকে বলিয়াছিলেন ''আমি খুব সন্তুষ্ট হয়েছি আমি যা বলতে এসেছিলাম তা আমার পরেও থাকবে। এই শ্লোকে সিদ্ধান্ত দেখতে পাচ্ছি।''


''শ্রীগৌরানুমতং স্বরূপবিদিতং রূপাগ্রজেনাদৃতং

রূপাদ্যৈঃ পরিবেশিতং রঘুগণৈরাস্বাদিতং সেবিতম্।

জীবাদ্যৈরভিরক্ষিতং শুক-শিব-ব্রহ্মাদি-সম্মানিতং

শ্রীরাধাপদসেবনামৃতমহো তদ্দাতুমীশো ভবান্।।''

শ্রীগৌরন্দ্রের অনুজ্ঞালব্ধ শ্রীস্বরূপ দামোদর যাহার মর্ম্মজ্ঞ, শ্রীসনাতন গোস্বামী যাহার আদরকারী, শ্রীরূপপ্রমুখ রসতত্ত্বাচার্য্যগণ যাহা পরিবেশন করিতেছেন, শ্রীরঘুনাথদাস গোস্বামী প্রমুখ যাহা আস্বাদন সমৃদ্ধ করিতেছেন, শ্রীজীবপ্রভু প্রভৃতি যাহার রক্ষণাবেক্ষণ করিতেছেন এবং শ্রীশুক, দেবাদিদেব মহাদেব লোকপিতামহ ব্রহ্মা প্রভৃতি যাহা (দূর হইতে) সম্মান করিতেছেন অহো সেই শ্রীরাধাপদপরিচর্য্যা-রসামৃত, তাহাও দান করিতে আপনি সমর্থ।

শ্রীল মহারাজ রচিত শ্রীশ্রীপ্রভুপাদপ্রণতিঃ, শ্রীশ্রীপ্রভুপাদপদ্মস্তবকঃ, শ্রীদয়িতদাস প্রণতি পঞ্চকম শ্রীশ্রীদয়িতদাস দশকম,- এই কয়েকটি স্তোত্রে তাঁর শ্রীগুরুপাদপদ্মে যে কি প্রকার উর্জ্জিতা বা প্রবলা অনুরাগময়ী ভক্তি বিরাজিত, তা সহজেই বোধগম্য হয়। আমাদের অত্যন্ত আনন্দের বিষয় পূজ্যপাদ শ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর মহারাজের শ্রীমুখ - নিঃসৃত শুদ্ধভক্তিসিদ্ধান্ত বাণীশ্রবণে আকৃষ্ট হয়ে পাশ্চাত্ত্যের বহু সারগ্রাহীসজ্জন শ্রীধামনবদ্বীপস্থ শ্রীচৈতন্যসারস্বতমঠে আগমন করে শ্রীল মহারাজের শ্রীচরণাশ্রয়ের সৌভাগ্য প্রাপ্ত হয়েছেন এবং তাঁর অর্দ্ধশায়িত বা শায়িত অবস্থায় ইংরাজী - ভাষায় বাণী টেপরেকর্ড করে পরে তা গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেছেন।

শ্রীলমহারাজ একস্থানে অবস্থান করেই 'পৃথিবীতে আছে যত নগরাদি গ্রাম। সর্ব্বত্র প্রচার হইবে মোর নাম।।' শ্রীমন্মহাপ্রভুর এই শ্রীমুখবাণীর অত্যদ্ভুত সার্থকতা সম্পাদন করে গেলেন। ভারতের শ্রীচৈতন্যসারস্বতমঠ (নবদ্বীপ), শ্রীচৈতন্যসারস্বতআশ্রম (হাঁপানিয়াবর্দ্ধমান), শ্রীচৈতন্যসারস্বত কৃষ্ণানুশীলনসংঘ (পুরী - স্বর্গদ্বার, দমদমপার্ক কৈখালি) এই কয়েকটি স্থানে প্রচারকেন্দ্র স্থাপিত হয়ে শ্রীচৈতন্যবাণীর প্রচার কার্য্য চলছে। পরমারাধ্য শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতীপ্রভুপাদ তাঁর অপ্রকট কালের পূর্ব্বদিবসে পূজ্যপাদ শ্রীধরমহারাজের শ্রীমুখে শ্রীলনরোত্তম ঠাকুর মহাশয় - কীর্ত্তিত - 'শ্রীরূপমঞ্জরীপদ, সেই মোর সম্পদ, সেই মোর ভজন পূজন' ইত্যাদি গীতিটি শ্রবণ করতে চেয়ে তাঁর প্রতি যে করুণা প্রকাশ করে গেছেন I

পূজ্যপাদ মহারাজ পরমারাধ্য প্রভুপাদের সেই কৃপাশীর্বাদ মস্তকে ধারণ করে তাঁর অপ্রকটকালের শেষমূহুর্ত্ত পর্য্যন্ত শ্রীস্বরূপ - রূপানুগবর প্রভুপাদের মনোভীষ্ট পুরণার্থ আপ্রাণ যত্ন করে গেছেন। শ্রীল মহারাজ সামান্যতম অসুস্থলীলা করিয়া ১৩৯৫ বঙ্গাব্দ, ২৭শে শ্রাবণ, (১৯৮৮, ১২ই আগষ্ট) শুক্রবার অমাবস্যা তিথিতে ভোর -৪৮ মিঃ, নিজ প্রতিষ্ঠিত শ্রীধামনবদ্বীপ শ্রীচৈতন্যসারস্বতমঠে সমস্ত জগৎ বাসীকে বিরহ সাগরে নিমজ্জিত করিয়া স্বীয় নিত্যারাধ্য শ্রীল গুরুদেবের শ্রীচরণে শুভ বিজয় করলেন।

জয় শ্রীশ্রীমদ্ভক্তিরক্ষক শ্রীধরদেব গোস্বামী মহারাজ কি জয়




 

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...