💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐

🌷বৈষ্ণবের বিরহ তিথি🌷

💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I হরে কৃষ্ণ, আজ বিশেষ শুভদা তিথি। আজ শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা। শ্রীল মুকুন্দ দত্ত ও শ্রীল শ্রীধর পণ্ডিত মহাশয়ের শুভ বিরহ তিথি পূজা।

 

কৃষ্ণলীলায় যিনি দ্বাদশ গোপালের অন্যতম কুসুমাসব গোপাল, তিনি শ্রীগৌরলীলা পুষ্টির জন্য শ্রীধর পণ্ডিতরূপে আবির্ভূত হইয়াছিলেন।

‘’খোলাবেচাতয়া খ্যাতঃ পণ্ডিতঃ শ্রীধরো দ্বিজঃ

আসীব্রজে হাস্যকরো যো নাম্না কুসুমাসবঃ।।”  (গৌঃ গঃ ১৩৩ শ্লোক)

 

শ্রীধর পণ্ডিত নবদ্বীপবাসী ছিলেন। নয়টী দ্বীপের সমষ্টি শ্রীনবদ্বীপ ধামান্তর্গত অন্তর্দ্বীপ - শ্রীমায়াপুরের শেষপ্রান্তে এবং চাঁদকাজীর সমাধির দক্ষিণ পূর্ব্বদিকে শ্রীধরের আবাসস্থান ছিল, যাহা 'শ্রীধর অঙ্গন' নামে প্রসিদ্ধ। শ্রীধর পণ্ডিতের আবাসে কদলীকানন ছিল। বর্ত্তমানে স্থূলদর্শনে সে কদলী কানন দৃষ্ট হয় না। শ্রীধর কদলী-কাননোপজীবী দরিদ্র বিপ্রের লীলা করিয়া ছিলেন। বিশ্বব্যাপী শ্রীচৈতন্য মঠ ও শ্রীগৌড়ীয় মঠ সমূহের প্রতিষ্ঠাতা নিতা লীলাপ্রবিষ্ট ওঁ বিষ্ণুপাদ ১০৮শ্রী শ্রীমদ্ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী প্রভুপাদ শ্রীধর পণ্ডিতের পূত স্মৃতি সংরক্ষণকল্পে শ্রীধর-অঙ্গন স্থানটী প্রকটিত করেন।

 

তাঁহার অপ্রকটের অব্যবহিত পরেও শ্রীধরঅঙ্গনে নিয়মিত সেবা-পূজার ব্যবস্থা ছিল। বর্ত্তমানে পারিপার্শ্বিক প্রতিকূলতায় উহা পুনঃ সংগোপিত হইতে চলিয়াছে। শ্রীনবদ্বীপধাম পরিক্রমাকালে ভক্তগণ এখনও তথায় যাইয়া শ্রীধর পণ্ডিতের উদ্দেশ্যে প্রণতি ও ভক্ত্যর্ঘ্য নিবেদন করেন। শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর-রচিত ‘শ্রীনবদ্বীপধাম-মাহাত্ম্যে' এইরূপ লিখিত আছে—তন্তুবায় গ্রামের পরে খোলাবেচা শ্রীধরের স্থান। শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু শ্রীধর-অঙ্গনে কীর্তন-বিশ্রাম করিয়াছিলেন। (শ্রীজীবগোস্বামীর প্রতি শ্রীনিত্যানন্দের উক্তি)

 

‘’তবে তন্তুবায় গ্রাম হইলেন পার।

দেখিলেন খোলাবেচা শ্রীধর আগার।।

প্রভু বলে,—এইস্থানে শ্রীগৌরাঙ্গহরি।

কীৰ্ত্তন-বিশ্রাম কৈল ভক্তে কৃপা করি’।।

এই হেতু শ্রীবিশ্রাম স্থান এই নাম।

হেথা শ্রীধরের ঘরে করহ বিশ্রাম।।''

 

উক্ত ধামমাহাত্ম্য-গ্রন্থে শ্রীধরের কলাবাগানের নিকটে একটি সরোবরের কথা উল্লিখিত আছে। সরোবরটীরও বাহ্য দর্শন বর্ত্তমানে লুপ্ত হইয়াছে। পার্থিব ধন ঐশ্বর্য্যলাভ প্রকৃত ভগবৎকৃপার নিদর্শন নহে। ভগবৎপ্রেম ধনে ধনী যিনি, তিনি যথার্থতঃ ভগবৎকৃপাপ্রাপ্ত। শ্রীমন্মহাপ্রভু তাঁহার নিজ পার্ষদ শ্রীধরের দ্বারা এই শিক্ষা প্রদান করিয়াছেন—বিষ্ণুভক্ত নিৰ্ব্বির্ষয়ী হন।

 

দেবদেবীর ভক্তে প্রায়শঃই বাহ্য সাংসারিক উন্নতি পরিদৃষ্ট হয়। শ্রীমন্মহাপ্রভু শ্রীধরের দ্বারা লোকশিক্ষার জন্য শ্রীধরের গৃহে যাইয়া তাহার দারিদ্য দুঃখের কারণ জিজ্ঞাসা করিলেন। লক্ষ্মীকান্তের সেবা করিয়াও শ্রীধরের অন্ন বস্ত্রের অভাব ও মলিনগৃহ, পক্ষান্তরে চণ্ডী বিষহরির পূজা করিয়া সাধারণ লোকের কত সাংসারিক বস্তুর প্রাচুর্য্য । তদুত্তরে শ্রীধর বলিলেন রাজা রাজপ্রাসাদে বাস করিয়া উৎকৃষ্ট দ্রব্য ভোজন করিয়া যেরূপভাবে কাল কাটাইতেছেন, পক্ষিগণ বৃক্ষোপরি নীড়ে বাস করিয়া নানাস্থান হইতে আহার সংগ্রহ ও ভোজন করিয়া একইভাবে কাল অতিবাহিত করিতেছে। ইহাতে রাজা ও পক্ষীর মধ্যে বিষয়-সুখভোগে কোন পার্থক্য নাই। শ্রীমন্মহাপ্রভু শ্রীধরকে বলিলেন— “বাহ্যতঃ তুমি দারিদ্র্যের লীলা করিলেও তুমি প্রকৃত ধনী। বৈষ্ণব যে সৰ্ব্বোত্তম সর্ব্বৈশ্বর্য্যের অধিকারী ও সকল বস্তুর মালিক, তাহা আমি অচিরেই সমগ্র মূর্খ অনভিজ্ঞ জগতের নিকট ব্যক্ত করিব।

 

ধন-সম্পদ-অট্টালিকা সর্ব্বপ্রকার পার্থিব বিষয়সুখ হইতে বঞ্চিত ব্যক্তিকে আমরা সাধারণতঃ দরিদ্র, ভাগ্যহীন বলি। ঐসব বিষয়ে প্রাচুর্য্য যাহার আছে, তাহাকে ধনী ও ভাগ্যবান্ বলা হয়। দরিদ্র ও ধনীর তাত্ত্বিক অর্থ অন্য প্রকার। আনন্দের জন্যই ধন উপার্জ্জন করা হয়, দুঃখের জন্য নহে। সেই আনন্দই প্রকৃত ধন। পরব্রহ্ম শ্রীকৃষ্ণ পরমানন্দস্বরূপ। শ্রীকৃষ্ণে প্রীতিযুক্ত ব্যক্তিই ধনী, তদ্বিমুখ ব্যক্তিই দরিদ্র—ইহাই ধনী ও দরিদ্রের তাত্ত্বিক অর্থ। উদাহরণস্বরূপ—কৃষ্ণভক্ত বিদুর দারিদ্রের লীলা করিলেও কৃষ্ণপ্রেমধনে তিনি ধনী ছিলেন। পক্ষান্তরে মহারাজ দুর্য্যোধন অতুল ঐশ্বর্য্যের অধিকারী হইয়াও কৃষ্ণবিমুখতা হেতু দরিদ্র ছিলেন। স্বয়ং ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু তাঁহার প্রিয় পার্ষদ দারিদ্র্যের লীলাকারী খোলাবেচা শ্রীধরের দ্বারা ‘প্রকৃত ধনী ও ভাগ্যবান্ কে’, তাহা জগদ্বাসীকে জানাইলেন। ভগবান্ ভক্তির দ্বারাই বশীভূত হন, অন্য কিছুর দ্বারা হন না। ‘ভক্ত্যাহমেকয়া গ্ৰাহ্যঃ শ্রদ্ধয়াত্মা প্রিয়ঃ সতাম্।

ভক্তিঃ পুনাতি মন্নিষ্ঠা স্বপাকানপি সম্ভবাৎ।।'—ভাঃ ১১। ১৪। ২১

 

‘’পত্রং পুষ্পং ফলং তোয়ং যো মে ভক্ত্যা প্রযচ্ছতি।

তদহং ভক্ত্যুপহৃতমস্নামি মি প্রযতাত্মনঃ।।‘’ — গীতা ৬। ২৯

অর্থাৎ,- ভক্তিপূর্বক প্রদত্ত পত্র পুষ্প ফল জলও ভগবান্ গ্রহণ করেন, খান। অভক্তের প্রদত্ত দ্রব্য  তিনি গ্রহণ করেন না।

''ভক্তের দ্রব্য প্রভু কাড়ি কাড়ি খায়।

অভক্তের দ্রব্য পানে উলটি না চায়।।''

শ্রীকৃষ্ণ অভক্ত দুৰ্য্যোধনের প্রদত্ত বহু মূল্যবান সুস্বাদু দ্রব্য পরিত্যাগ করিয়া ভক্তপ্রবর বিদুরের ও বিদুর পত্নীর প্রদত্ত তুচ্ছদ্রব্যও গ্রহণ করিয়াছিলেন।

 

স্বয়ং ভগবান্ শ্রীমন্মহাপ্রভুর ভক্ত শ্রীধরের  দ্রব্য লইয়া কাড়াকাড়ি, এক অদ্ভূত বিচিত্র রসময়ীলীলা। মহাপ্রভুর বিদ্যাবিলাসকালে শ্রীধর কলা মোচা থোড় প্রভৃতি বিক্রয় করিয়া জীবন যাপন করিতেন। বিক্রয়ের দ্বারা যে সামান্য অর্থ প্রাপ্তি হইত, তাহার অর্ধেক দ্বারা গঙ্গাপূজা এবং অর্ধেকের দ্বারা কোনও প্রকারে জীবন রক্ষা করিতেন। তিনি যুধিষ্ঠিরের ন্যায় মহা সত্যবাদী ছিলেন, দ্রব্যের যথার্থ মূল্যই বলিতেন। নবদ্বীপে সকলেই ইহা জানিতেন। কিন্তু মহাপ্রভু শ্রীধরের নিকট আসিয়া শ্রীধরের কথিত মূল্যের অর্দ্ধেক দিয়া থোড়, কলা, মোচা খোলা তাঁহার নিকট হইতে লইবার জন্য টানাটানি, কাড়াকাড়ি করিয়া প্রতিদিন চারিদণ্ড ধরিয়া ঝগড়া করিতেন।

 

“প্রতিদিন চারিদণ্ড কলহ করিয়া।

তবে সে কিনয়ে দ্রব্য অৰ্দ্ধমূল্য দিয়া।।

সত্যবাদী শ্রীধর যথার্থ মূল্য বলে।

অর্দ্ধমূল্য দিয়া প্রভু নিজ হস্তে তোলে।।

উঠিয়া শ্রীধর দাস করে কাড়াকাড়ি।

এইমত শ্রীধর - ঠাকুরের হুড়াহুড়ি।।  - চৈঃ ভাঃ ম ৯। ১৬৩-১৬৫

 

শ্রীধরের সঙ্গে কলহ করিলেও তাহাকে ক্রুদ্ধ হইতে না দেখিয়া গৌর সুন্দর তাঁহার সকলদ্রব্য কাড়িয়া লইতেন। বাহ্য দর্শনে ঘটনা এইরূপ মনে হইলেও প্রকৃত প্রস্তাবে গৌরসুন্দরের সৌমমূর্ত্তি দেখিয়া তাঁহার দ্বারা বলপূর্ব্বক দ্রব্যাদি হৃত হইলেও শ্রীধর ক্রুদ্ধ হইতেন না। শ্রীধর মহাপ্রভুর শ্রীমূর্ত্তি দেখিয়া মুগ্ধ ও আনন্দসাগরে নিমজ্জিত হইতেন। মহাপ্রভুও তাঁহার সহিত কলহকালে পরম সন্তোষে গালি দিতেন এবং ভঙ্গী করিয়া নিজতত্ত্ব ব্যক্ত করিয়া এইরূপ বলিতেন,-

“প্রত্যহ গঙ্গারে দ্রব্য দেহ'ত কিনিয়া।

আমারে বা কিছু দিলে মূল্যেতে ছাড়িয়া।।

যে গঙ্গা পূজহ তুমি আমি তার পিতা।

সত্য সত্য তোমারে কহিল এই কথা।।”  -চৈঃ ভাঃ ম ৯। ১৭৮-১৭৯

 

শ্রীধর পরিশেষে মহাপ্রভুকে বিনামূল্যেই প্রত্যহ থোড় কলা মোচা দিবেন এইরূপ মহাপ্রভুর সহিত রফা করিয়া লইলেন। তদবধি মহাপ্রভু শ্রীধরের খোলায় পরম তৃপ্তির সহিত অন্ন গ্রহণ করিতে লাগিলেন।

“প্রভু বলে,—‘ভাল ভাল, আর নাহি দায়।’

শ্রীধরের খোলে প্রভু প্রত্যহ অন্ন খায়।।

ভক্তের পদার্থ প্রভু হেনমতে খায়।

কোটী হৈলেও অভক্তের উলটি’ না চায়।।” -চৈঃ ভাঃ ম ৯। ১৮৪-১৮৫

 

শ্রীবাস-অঙ্গনে মহাপ্রভু যেকালে বিষ্ণুখট্টায় উপবেশন করতঃ সাতপ্রহর পর্যস্ত মহাপ্রকাশলীলা এবং ভক্তগণকে নিজ ঐশ্বর্য্যরূপ প্রদর্শনের জন্য বিষ্ণুর সকল অবতারের রূপসমূহ প্রকট করিয়াছিলেন, তৎকালে ভক্তগণের দ্বারা শ্রীধরকে আনয়নপূর্ব্বক তাঁহাকে নিজ ঐশ্বর্য্যরূপ প্রদর্শন করিয়া কৃতার্থ করিয়াছিলেন। শ্রীধর নিজালয়ে সমস্ত রাত্রি বিনিদ্র থাকিয়া উচ্চৈঃস্বরে হরিনাম করিতেন, তাহাতে ভক্তগণ সুখী হইলেও অভক্তগণ নিদ্রার ব্যাঘাত হেতু নানাপ্রকার কটুবাক্যের দ্বারা ভর্ৎসনা করিত। মহাপ্রভুর আজ্ঞাক্রমে ভক্তগণ শ্রীধরকে আনিবার জন্য তাঁহার গৃহাভিমুখে যাইবার কালে অর্দ্ধপথে শ্রীধরের উচ্চারিত হরিধ্বনি শুনিয়া তাঁহার গৃহে উপস্থিত হইয়াছিলেন। শ্রীধর শ্রীবাসাঙ্গনে মহাপ্রভুর অপূর্ব্ব ঐশ্বর্য্যমূক্তি দর্শন করিয়া মূর্চ্ছিত হইয়া পড়িলেন, মহাপ্রভুর বাক্যে পুনঃ চৈতন্য পাইয়া মহাপ্রভুর কৃপাশক্তি সঞ্চারিত শক্তিতে অপূর্ব্ব স্তব করিলেন। মহাপ্রভু স্তবে সন্তুষ্ট হইয়া অষ্টসিদ্ধি রূপ বর দিতে চাহিলে শ্রীধর তাহা না লইয়া মহাপ্রভুর পাদপদ্ম-সেবাই প্রার্থনা করিলেন।

 

‘’ 'মাগ মাগ' পুনঃ পুনঃ বলে বিশ্বম্ভর।

শ্রীধর বলয়ে—“প্রভু, দেহ' এই বর।।

যে ব্রাহ্মণ কাড়ি' নিল মোর খোলাপাত।

সে ব্রাহ্মণ হউক মোর জন্ম জন্ম নাথ।।

যে ব্রাহ্মণ মোর সঙ্গে করিল কোন্দল।

মোর প্রভু হউক তাঁর চরণযুগল।।‘’    -চৈঃ ভাঃ ম ৯। ২২৩-২২৫

 

‘’ধন নাহি, জন নাহি, নাহিক পাণ্ডিত্য।

কে চিনিবে এ সকল চৈতন্যের ভৃত্য।।

কি করিবে বিদ্যা, ধন, রূপ, যশ, কুলে।

অহঙ্কার বাড়ি' সব পড়য়ে নির্মূলে।।

কলা মূলা বেচিয়া শ্রীধর পাইলা যাহা।

কোটিকল্পে কোটীশ্বর না দেখিবা তাহা।।”  -চৈঃ ভাঃ ম ৯। ২৩৩-২৩৫

 

‘’আধ্যাক্ষিক-জ্ঞানে অর্থাৎ বাহ্য পরিচয়ে বৈষ্ণবের স্বরূপ চিহ্নিত করা  অসম্ভব। অধিক ধন থাকিলেই যে তাহার অধিক বৈষ্ণবতা হইবে, এরূপ নহে। বহু লোক সংগ্রহ করিতে পারিলেই যে তিনি অধিক বৈষ্ণব হইবেন, এরূপ নহে। শাস্ত্রাদিতে অধিক পাণ্ডিত্য থাকিলেই যে তিনি বিষ্ণুভক্ত হইবেন, এরূপও নহে। শ্রীচৈতন্যের দাসগণের অধিক ধনের পরিচয় না থাকিতে পারে, অধিক লোক সংগ্রহের পরিচয় না থাকিতে পারে, অধিক তর্কবিতর্কাত্মক পাণ্ডিত্যের অধিকার না থাকিতে পারে, কিন্তু সেই সকল বিষয়ে তাঁহারা কেন উদাসীন, তাহা বুঝিবার অধিকার সাধারণের নাই। শ্রীচৈতন্য-সেবাকেই তাহারা ধন, জন পাণ্ডিত্যাপেক্ষা বহুমানন করেন; সুতরাং তাঁহাদের গৌরব, মহিমা ও শ্রেষ্ঠতা লোকনয়নের গোচরীভূত হইবার সম্ভাবনা নাই।‘’

 

‘’বৈষ্ণব চিনিতে পারে কাহার শকতি।

আছয়ে সকল সিদ্ধি, দেখয়ে দুর্গতি।।

খোলা বেচা শ্রীধর তাহার এই সাক্ষী।

ভক্তিমাত্র নিল অষ্টসিদ্ধিকে উপেক্ষি।।

যত দেখ বৈষ্ণবের ব্যবহার দুঃখ।

নিশ্চয় জানিহ সেই পরানন্দ সুখ।।

বিষয় মদান্ধ সব কিছুই না জানে।

বিদ্যামদে ধনমদে বৈষ্ণব না চিনে।।‘’   -চৈঃ ভাঃ ম ৯। ২৩৮-২৪১

 

শ্রীমন্মহাপ্রভু চাঁদকাজী-উদ্ধার-লীলান্তে যখন সংকীর্ত্তন ও নৃত্য করিতে করিতে শঙ্খবণিক নগর ও তন্তুবায় পল্লী অতিক্রম করতঃ শ্রীধর-অঙ্গনে গিয়া পৌঁছিলেন, তখন শ্রীধরের গৃহের জলপূর্ণ জীর্ণ লৌহপাত্র উত্তোলন করিয়া পরম তৃপ্তি সহকারে জলপান করিয়াছিলেন। ভাঙ্গা জলপাত্রে মহাপ্রভুকে জলপান করিতে দেখিয়া শ্রীধর উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করতঃ মূর্ছিত হইয়া পড়ি লেন। ভক্তের জলপানে ভক্তি লাভ হয়, ইহা শ্রীমন্মহাপ্রভু স্বয়ং আচরণ করিয়া শিক্ষা দিলেন। ভক্তের জীর্ণ লৌহপাত্রের জল—ভগবানের নিকট অমৃতসম ও পরমাদরণীয়। পক্ষান্তরে অভক্ত দাম্ভিকের রত্নপাত্রে প্রদত্ত জলও ভগবৎ কর্তৃক উপেক্ষিত।
জয় পতিতপাবন মহাপ্রভুর জয়!   জয় গৌর ভক্তবৃন্দের জয় !!