🌳🦚🌷💞🌻🍁🌻💞🌷🦚🌳

🏵️💐🌞শ্রীকৃষ্ণের স্বরূপ🌞💐🏵️

🌳🦚🌷💞🌻🍁🌻💞🌷🦚🌳

বিশেষ পোষ্ট

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’গুরু - বৈষ্ণব  - ভগবান তিনিহেঁ স্মরণ ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে হয় বিঘ্ন বিনাশন ।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ । I’’

 

‘’যৎকীর্ত্তনংযৎস্মরণংযদীক্ষণং 
যদ্বন্দনংযচ্ছ্রবনংযদর্হণম্ । 
লোকস্যসদ্যোবিধুনোতিকল্মষং 
তস্মৈসুভদ্রশ্রবসেনমোনমঃ ।।  (ভাগবত - ২/৪/১৫)

অর্থাৎ,- আমি সেই সর্বমঙ্গলময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে সশ্রদ্ধ প্রণাম নিবেদন করি; যাঁর যশগাথা কীর্ত্তন, স্মরণ, দর্শন, বন্দন, শ্রবণ ও পূজনের ফলে সমস্ত পাপরাশি অচিরেই ধৌত হয়। 

 

বৈদিক সনাতন ধর্মশাস্ত্র ব্রহ্মসংহিতার পঞ্চম অধ্যায়ের প্রথম শ্লোকে প্রজাপতি শ্রীব্রহ্মা বলেছেন,-

ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণ, সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ ।

অনাদিরঃ আদি গোবিন্দ, সর্বকারণঃ কারণম্ ।।

অর্থাৎ,- শ্রীকৃষ্ণ, যিনি গোবিন্দ নামেও পরিচিত, তিনি হচ্ছেন পরম ঈশ্বর। তাঁর রূপ সচ্চিদানন্দময়, অর্থাৎ সৎ, চিৎ ও আনন্দ বা কর্মময়, জ্ঞানময় ও আনন্দময়। তিনি হচ্ছেন সব কিছুর পরম উৎস। তাঁর কোনো উৎস নেই, কেনোনা তিনি হচ্ছেন সর্ব কারণের পরম কারণ।"

 

পৃথিবীতে মানব জাতির আদি পিতা ব্রহ্মাসহ সব মহাজন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর জ্ঞানে ভজনা করেছেন। তাঁকে সব কারণের পরম কারণ জেনেই মানব মুক্তির জন্য তাঁকে আরাধনার কথা বলে গেছেন। মহাশূন্যে দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান সব গ্রহ, নক্ষত্র এবং কোটি কোটি ব্রহ্মাণ্ড তার থেকে সৃষ্টি এবং এ সবের স্থিতি ও প্রলয়ও তাঁর মধ্যেই সাধিত হয়। অমলপুরাণ শ্রীমদ্ভাগবতে প্রথম স্কন্ধের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ২৮ ও ২৯ নং শ্লোকে বলা হয়েছে, "সমস্ত বৈদিক শাস্ত্রে জ্ঞানের পরম উদ্দেশ্য হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তাঁর প্রীতির জন্যই সকল প্রকার যজ্ঞ, তপস্যা ও বৈদিক কর্ম্ম করতে হয়। তিনিই হচ্ছেন জীবনের পরম উদ্দেশ্য।"

 

‘’বাসুদেবপরা বেদা বাসুদেবপরা মখাঃ  ।

বাসুদেবপরা যোগা বাসুদেবপরা ক্রিয়াঃ !!

বাসুদেবপরং জ্ঞানং বাসুদেবপরং তপঃ ৷

বাসুদেবপরো ধর্ম্মো বাসুদেবপরা গতিঃ ৷৷ ২৮ ৷৷’’

অর্থাৎ,- কৰ্ম্মজ্ঞানভক্তিকাগুাত্মক বেদচতুষ্টয় বাসুদেব তাৎপর্য্যবিশিষ্ট, বেদোক্ত নিখিল যজ্ঞসমূহ যজ্ঞেশ্বর বিষ্ণুতাৎপর্য্যবিশিষ্ট, যোগশাস্ত্রসমূহ যোগেশ্বরেশ্বর বিষ্ণুতাৎপর্য্যময় এবং যোগশাস্ত্রোক্ত অনুষ্ঠান সমূহও বিষ্ণুভক্তি তাৎপর্য্যময় ৷ এই প্রকার জ্ঞান শাস্ত্র বাসুদেবকেই লক্ষ্য করে, জ্ঞানবৈরাগ্য হরিভক্তি তাৎপর্যময়, দানব্রতাদিবিষয়ক ধৰ্ম্মশাস্ত্র হরিভক্তিকে উদ্দেশ করে, স্বর্গাদি-লোকলাভজনিত অনিত্য সুখ পরিত্যাগ করিয়া হরিভক্তিরূপ নিত্যানন্দকেই লক্ষ্য করে ।।২৮।।

 

বিশ্বনাথ চক্রবর্ত্তী টিকা,- পূর্ব্বপক্ষী বলিতেছেন—বেদসমূহের মখ, যোগাদিকারত্ব যেখানে সেখানে প্রকটরূপে দৃষ্ট হয়। তাহার উত্তরে বলিতেছেন—সত্য, “যেখানে ভগবান্ জনাৰ্দ্দন আছেন, সেই স্ব-স্বরূপ লোক যে আত্মতত্ত্ব, তাহা তাঁহারা জানেন না, এইজন্য যাগাদির দ্বারা ধূম্র দৃষ্টি অতত্ত্বজ্ঞগণ বেদকে কর্ম্মপর বলিয়া থাকেন।”

ইত্যাদি শ্রীনারদের উক্তিতে মখ, যোগাদিতে বেদের তাৎপর্য্যের অভাব। “যে বেদবাণীতে আমার স্বরূপ ভূত ধৰ্ম্মই আমি ব্রহ্মকল্পাদিতে ব্রহ্মাকে বলিয়াছি।” এই শ্রীভগবানের উক্তি অনুসারে এবং “হে দেব, যে ব্যক্তির জিহ্বাগ্রে তোমার নাম বর্ত্তমান থাকে, সে শ্বপচ হইলেও এই কারণেই পূজ্য হয় I

 

ফলতঃ যে সকল পুরুষ তোমার নাম গ্রহণ করিয়া থাকেন, তাঁহারাই তপস্যা করিয়াছেন, তাঁহারাই অগ্নিতে হোম করিয়াছেন, তাঁহারাই সদাচার, তাঁহারাই বেদ অধ্যয়ন করিয়াছেন অর্থাৎ তোমার নাম-কীৰ্ত্তনেই তপস্যাদি সিদ্ধি হয়, অতএব তোমার নামসংকীর্ত্তন করিয়া পবিত্র হন” –ইত্যাদি শ্রীদেবহূতির উক্তিতে এবং “যেরূপ বৃক্ষের মূলে জলসেচনের দ্বারাই শাখা প্রশাখাদির পুষ্টি হয়” ইত্যাদি দেবর্ষি নারদের উক্তি অনুসারে বাসুদেবই সকল বেদের তাৎপৰ্য্য—ইহা অবগত হওয়া যায় । অতএব কেবল ভগবদ্ভক্তিই সর্ব্ব বেদের অর্থ ।

 

অথবা, যজ্ঞাদিতে বাসুদেবের ভুজাদি অঙ্গ বিস্তৃতিরূপ ইন্দ্রাদি দেবতার আরাধনা, উহাও বাসু দেবপরত্ব--ইহা আদি ভরত মহারাজের চরিত্রে প্রসিদ্ধ। কপিল-দেবহূতি-সংবাদে—যোগের দ্বারা ভগবানের ধ্যানাদি-পরত্ব প্রসিদ্ধ রহিয়াছে। কৰ্ম্ম সকলেরও শ্রীভগবানে সমর্পণ ব্যতীত তাহার ফলের অসিদ্ধি-হেতু, সেই কৰ্ম্মও ভগবৎপরত্ব। জ্ঞান ও তপস্যার ব্রহ্ম-পরত্বই, কর্ম্মযোগের পূর্ব্বোক্ত শ্লোক অনুসারে ধর্ম্মপদের দ্বারা পরম ধর্ম্ম শ্রবণ-কীৰ্ত্তনা দিই। গতি অর্থাৎ  সেই পরম ধর্ম্মের প্রাপ্য প্রেম, অপবর্গাদি, এতদুভয়েরও বাসুদেব-পরত্বই ৷৷২৮৷৷

 

বিবৃতি—-দৃশ্য জগতে ভিন্ন ভিন্ন বস্তুদর্শনে জীব গণ অদ্বয়জ্ঞান বাসুদেবকে ছাড়িয়া তদ্ব্যতীত অন্য উদ্দেশে চালিত হওয়ায় বাস্তব সত্যে প্রতিষ্ঠিত হন না। এই জন্যই শ্রীমদ্ভাগবত, বেদচতুষ্টয়, বৈদিক ক্রিয়া, যজ্ঞসমূহ, যোগাদি ও অপরাপর কর্ম্ম, জ্ঞান, তপস্যা, যাবতীয় ধৰ্ম্ম ও লক্ষ্যবস্তু সমস্তই বাসুদেবের উদ্দেশে অনুষ্ঠিত হয় বলেন। তবে বাসুদেবকে পরিত্যাগ করিয়া নিরীশ্বর তানুষ্ঠান অনিত্য অজ্ঞান পূষ্ট ও নিরবচ্ছিন্ন আনন্দের ব্যাঘাত কারক। জীব অদ্বয়জ্ঞানে জ্ঞানী হইলেই সমস্ত বৈচিত্র্য চিদ্‌বৈচিত্র্য পর বুঝিতে পারেন। বাসুদেবাতীত ভেদজ্ঞানই দ্বিতীয়াভিনিবেশ। উহা বাসুদেবেরই মায়া।

 

সেই মায়ায় আবরণী ও বিক্ষেপাত্মিকা বৃত্তিদ্বয় অবস্থিত। রজস্তমোগুণদ্বারা চালিত না হইয়া যদি কেহ বিশুদ্ধ সত্ত্বে অবস্থান করেন, তাহা হইলে তিনি জানিতে পারিবেন যে জীবের যাবতীয় বৃত্তি বাসুদেবপর। বিষয়মাত্রই বাসুদেব। বাসুদেবসম্বন্ধরহিত আসক্তিই মাধবের আবরণী ও বিক্ষেপাত্মিকা মায়াশক্তি । মায়াবাদতাৎপর্য্যবিশিষ্ট ব্যক্তি মায়ার কবলে পড়িয়া মায়িক নশ্বর হেয় বিচিত্রতাকে বাসুদেবের একমাত্র বৈচিত্র্য মনে করিয়া ভ্রান্ত হন ৷ গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলিয়া ছেন—

 

যেহপ্যন্যদেবতা ভক্তা যজন্তে শ্রদ্ধয়ান্বিতাঃ ।

তেঽপি মামেব কৌন্তেয় যজন্ত্যবিধিপূর্ব্বকম্ ।।

অর্থাৎ,- জীবের অস্মিতায় অবৈষ্ণবতাই মায়িক অবিদ্যা বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ৷ ভাগবত পরমহংসগণ বাসুদেবের অদ্বয়জ্ঞান হইতে ভেদ বুদ্ধি করিয়া জড়ভোগে কৰ্ম্ম বাদে বা জড়ত্যাগে জ্ঞানবাদে প্রমত্ত হন না। অভক্ত বিপথগামী কর্মী ও জ্ঞানিগণের জন্যই এই শ্লোকদ্বয়ের অবতারণা । ২৮ ॥

 

স এবেদং সসজ্জারগ্রে ভগবানাত্মমায়য়া ।

সদ্সদুপয়া চাসৌ গুণময্যাহগুলো বিভুঃ ॥ ২৯ ॥

অর্থাৎ,- এতাদৃশ পরমেশ্বর কারণোদশায়ী প্রথম পুরুষ স্বয়ং নির্গুণ হইয়াও প্রথমে কার্য্যকারণাত্মিকা  ত্রিগুণময়ী স্বীয় বহিরঙ্গাশক্তি মায়াকে ঈক্ষণ করিয়া এই বিশ্ব সৃষ্টি করিয়াছিলেন ৷৷ ২১

 

বিশ্বনাথ চক্রবর্ত্তী টিকা,- অপর, যে সকল পিতৃ, ভূত, প্রজাপতি প্রভৃতি ভজনীয়, তাহাদেরও স্রষ্টা বাসু দেবই, অতএব সেই বাসুদেবই একমাত্র সেবার যোগ্য -এইজন্য বলিতেছেন –স এব’—  অর্থাৎ তিনিই ইত্যাদি। সৎ ও অসৎরূপে এই কথার দ্বারা ভগ বান্ কার্য্য-কারণাত্মিকা মায়ার দ্বারাই এই বিশ্ব সৃষ্টি করিয়াছিলেন, নিজে কিন্তু অগুণ অর্থাৎ মায়াগুণের অতীত ৷৷ ২৯ ৷৷

 

ঈশোপনিষদের আবাহন অংশে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে বলা হয়েছে,- "তিনি সম্পূর্ণভাবেই পূর্ণ এবং তাঁর থেকে উদ্ভূত সকল কিছুই সর্বতো ভাবে পূর্ণ। যেহেতু শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমপূর্ণ, তাই তাঁর থেকে অসংখ্য অখণ্ড ও পূর্ণ সত্তা বিনির্গত হলেও তিনি পূর্ণ রূপেই অবশিষ্ট থাকেন। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,-

অহং সর্বস্য প্রভবো মত্তঃ সর্বং প্রবর্ততে।

ইতি মত্বা ভজন্তে মাং বুধা ভাবসমন্বিতাঃ।।  গীতা (১০ / ৮ )

অর্থাৎ,- আমি জড় ও চেতন জগতের সব কিছুর উৎস। সব কিছু আমার থেকেই প্রবর্তিত হয়। সেই সত্ত্ব অবগত হয়ে পন্ডিতগণ শুদ্ধ ভক্তি সহকারে আমার ভজনা করেন।

 

চৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থে শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য  মহাপ্রভু বলেছেন,-

‘’একলে ঈশ্বর কৃষ্ণ আর সব ভৃত্য।''

একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন পরম ঈশ্বর। শ্রীমদ্ভগবদগীতায় অজুর্নও বলেছেন,-

পরং ব্রহ্ম পরং ধাম পবিত্রং পরমং ভবান্।

পুরুষং শাশ্বতং দিব্যমাদিদেবমজং বিভুম্।।  গীতা (১০ / ১২)

অর্থাৎ,- অর্জুন বললেন- তুমি পরম ব্রহ্ম, পরম ধাম, পরম পবিত্র ও পরম পুরুষ। তুমি নিত্য, দিব্য, আদি দেব, অজ ও বিভু।

 

সনাতন বৈদিক গ্রন্থের সর্বত্রই ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে একমাত্র উপাস্য বলা হয়েছে এবং মুক্তির জন্য তাঁর শ্রীপাদপদ্মের ধ্যান করার নির্দ্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও সমস্ত বৈদিক ও পৌরাণিক শাস্ত্রগ্রন্থ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে অজ অর্থাৎ জন্মরহিত বলে উল্লেখ করেছেন, সেখানে ভগবানের জন্মতিথি উৎসবের বিষয়টি অনেকের কাছেই সংশয়ের মনে হইতে পারে। আসলে সনাতন ধর্মের আরেকটি পরিচয় হলো এটি যুগ ধর্ম। যুগে যুগে ভগবান জীবের কল্যাণের জন্য, মুক্তির জন্য এ পৃথিবীতে বিভিন্ন রূপে  আসেন।

 

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার চতুর্থ অধ্যায়ে ভগবান নিজেই এরূপ আবির্ভাব সম্পর্কে বলেছেন, "যখনই ধর্মের গ্লানি বা অধঃপতন হয় এবং অধর্মের অভ্যুত্থান হয়, তখন আমি নিজেকে প্রকাশ করে অবতীর্ণ হই। সাধুদের পরিত্রাণ করার জন্য, দুষ্কৃতকারীদের বিনাশ করার জন্য এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।" গীতা (৪/৭ -৮)

 

বস্তুত একজন মানুষের জন্মের মতো ভগবানের জন্মপ্রক্রিয়া এক নয়। যদিও ভগবান সাধারণ মানুষের মতো রূপ ধারণ করে মানুষের মাঝেই অবস্থান করেন। ভগবানের এরূপ আবির্ভাবের কারণ বর্ণনাতেই তাঁর ভগবত্তা প্রকাশ পেয়ে থাকে। ভগবান নিজেই বলেছেন যে, ধর্মের গ্লানি হলে এবং অধর্ম বেড়ে গেলে সাধু-সজ্জন ব্যক্তিরা যখন অধর্মের দ্বারা নির্যাতিত হন তখন তাদের রক্ষার জন্য, দুষ্টদের বিনাশ করে ধৰ্ম প্রতিষ্ঠার জন্য ভগবান চিন্ময় ধাম হইতে এই পৃথিবীতে অবরতণ করেন। যাঁকে আমরা অবতার বলি।

 

দ্বাপর যুগে অত্যাচারী রাজা কংস, জরাসন্ধ ও শিশুপালদের মতো অত্যাচারীদের হাত থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্য এবং ধর্ম্ম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথির রোহিণী নক্ষত্রে বসুদেব ও দেবকীর পুত্ররূপে কংসের কারাগারে আবির্ভূত হন। মানবতা প্রতিষ্ঠার জন্য অন্যায় ও অন্যায়কারীকে প্রতিহত করে ন্যায়-সত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। অধর্ম্মের মূল উৎপাটন করে ধর্ম্মের বিজয় পতাকা উড়িয়েছেন তিনি। অত্যাচারী ও শোষকদের বিরুদ্ধে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের যুদ্ধ যুগে যুগে মানুষকে ন্যায়ের পথে সত্য-সুন্দরের প্রতিষ্ঠার জন্য অনুপ্রাণিত করে। ধর্ম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে শান্তি স্থাপন, সত্যের সন্ধানে সবার নবজাগরণ ভগবানের অপার করুণার দান।

 

অত্যাচারী রাজা, অসুর ও দৈত্যদের বিনাশ করে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শাসক শ্রেণীকে ন্যায় ও সত্যের পথে থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। আবার সত্যবাদী-ধার্মিক রাজাদের পুরস্কৃত করে প্রজা পালনে তাদের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসাও করেছেন। জীবশিক্ষার জন্য ভগবানের এ পৃথিবীতে আগমন। আসুরিক ভাবাপন্ন মানুষের কাছে তিনি মৃত্যু স্বরূপ, আবার ভক্তের কাছে তিনি সৎ-চিৎ-আনন্দময় অপার করুণার সাগর। যুগে যুগে লীলা বিলাস করার জন্যই শ্রীভগবানের এ ভাবে পৃথিবীতে আগমন।

 

পরমেশ্বর হয়েও তিনি কখনও কখনও ভক্তির দ্বারা বাঁধা পড়েন ভক্তের কাছে, কখনও কাল হয়ে মৃত্যু দণ্ড দেন পাপী-অত্যাচারীকে। দ্বাপরযুগে ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পরমেশ্বর হয়েও অর্জুনের রথের চালক বা সারথী হয়েছেন। আবার লোকশিক্ষার জন্য দ্বারকার রাজা হয়ে আদর্শ প্রজাপালক শাসকের কর্তব্য ও করণীয় শিক্ষা দিয়েছেন।

 

সত্য প্রতিষ্ঠায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বজ্রের মতো কঠোর যেমন, তেমন ভক্তের প্রীতিময় ভালোবাসায় ফুলের মতো কোমল। এ পূর্ণ আত্মা, এ মহাত্মার অপার করুণা লাভের জন্য শতসহস্র বছর সাধু, সন্ন্যাসী, যোগীরা আরাধনা করার পরও ব্যর্থ হইতে পারে। অথচ প্রেমপূর্ণ ভক্তির দ্বারা ভগবান ভক্তের অনুগত.হয়ে পড়েন। এভাবেই ভগবান আমাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য যুগে যুগে পৃথিবীতে অবতরণ করে পাপীদের উদ্ধার করে মানবমুক্তির পথ প্রদর্শন করেছেন। এ জন্যই তিনি মুক্তিদাতা।

 

প্রাণ গোবিন্দ শ্রীবাসুদেবের শ্রীচরণে প্রার্থনা করি, যেন আজকের অশান্তিময় এ পৃথিবী পুনরায় শান্তিময় হয়ে ওঠে, সব অন্যায়-অত্যাচার যেনো তাঁর করুণায় দূর হয়। সৎ শক্তির জাগরণে জগৎবাসী যেন মুক্তির পথ খুঁজে নিতে পারে। হৃদয়ের ভীরুতা কেটে আত্মশক্তিতে বলিয়ান হয়ে অন্যায়কে যেন প্রতিহত করে ন্যায় ও সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে পারি পৃথিবীর সর্বত্র। এ পুণ্য লগ্নে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে এই হোক আমাদের সবার প্রার্থনা।

 

পরমকরুনাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী আর সকল বৈষ্ণব ভক্ত পার্ষদদের শ্রীচরণে আমাদের করুণ প্রার্থনা, সবার মঙ্গলময়, কল্যাণময়, ভক্তিময়, মুক্তিময়, শান্তিময়, সুন্দরময় এবং আনন্দময় করে রাখুন নিরন্তর।

‘’হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ  কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে !

হরে রাম হরে রাম  রাম রাম হরে হরে ! !’’

💞জয় ভক্তবৎসল শ্রীভগবানের জয়💐জয় সকল ভক্তবৃন্দের জয়💞