Saturday, January 2, 2021

নিত্যলীলা প্রবিষ্ট ওঁ বিষ্ণুপাদ পরিব্রাজকাচার্য্য ত্রিদণ্ডিস্বামী ১০৮ শ্রী- শ্রীমদ্ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর প্রভুপাদ I

💐তিরোভাব💐

আজ ১৮পৌষ, ৪নারায়ণ, ৩জানুয়ারী রবিবার সচ্চিদানন্দ শ্রীল ভক্তি বিনোদ ঠাকুরের সুপুত্র, পরম ভাগবতবর শ্রীল গৌরকিশোরদাস বাবাজী মহারাজের একমাত্র শিষ্য, বিশ্বব্যাপী শ্রীচৈতন্যমঠ তৎশাখা ৬৪ টি গৌড়ীয়মঠ সমূহের প্রতিষ্ঠাতা, গৌড়ীয় সিংহপুরুষ খ্যাত মহাতেজস্বী বৈষ্ণব মহাজন, গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের নবজাগরণের পথিকৃৎ, গৌড়ীয় বৈষ্ণব গগণের উজ্জ্বল নক্ষত্রমণি, সিংহগুরু, সিদ্ধান্তসার, চিন্ময় ধামে নয়ন মঞ্জরী রূপে অধিষ্ঠিত জগৎগুরু নিত্যলীলা প্রবিষ্ট ওঁ বিষ্ণুপাদ পরিব্রাজকাচার্য্য ত্রিদণ্ডিস্বামী ১০৮ শ্রী - শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর প্রভুপাদের ৮৪তম বিরহ তিথি-পূজা মহোৎসব I

🍁শ্রীদয়িত-দাস-প্রণতি-পঞ্চকম্🍁

🦚💐🌻🏵️🌺🌷🌺🏵️🌻💐🦚

ভয়ভঞ্জন-জয়শংসন-করুণায়তনয়নম্

কনকোৎপল-জনকোজ্জ্বল-রসসাগর-চয়নম্

মুখরীকৃত-ধরণীতল-হরিকীর্ত্তন-রসনম্

ক্ষিতিপাবন-ভবতারণ-পিহিতারুণ-বসনম্

শুভদোদয়-দিবসে বৃষরবিজানিজ-দয়িতম্

প্রণমামি চরণান্তিক-পরিচারক-সহিতম্ ॥১॥

অর্থাৎ,- যিনি সুবর্ণ কমল-উৎপাদনকারী (অপ্রাকৃত, উন্নত) উজ্জ্বল-রসসাগর হইতে উত্থিত (মূর্ত্তি), যাঁহার বিশাল কারুণ্যপূর্ণ লোচনযুগল (আর্ত্তগণের) ভয় নিবারণ (আশ্রিতগণের) বিজয় ঘোষণা করিতেছে, যাঁহার রসনা সমগ্র পৃথিবীকে শ্রীকৃষ্ণ-সঙ্কীর্ত্তনে (সর্ব্বদা) মুখরিত করিতেছে এবং যিনি জগৎপবিত্রকারী ভবতাপবিদূরণকারী অরুণ (কাষায়) বসন পরিধান করিয়া শোভা পাইতেছেন, শ্রীচরণানুচরগণের সহিত শ্রীবৃষভানুনন্দিনীর সেই নিজ প্রিয়জনকে তদীয় শুভ বিরহ তিথি বাসরে আমি পুনঃ পুনঃ প্রণাম করিতেছি ॥১॥

 

শরণাগত-ভজনব্রত-চিরপালন-চরণম্

সুকৃতালয়-সরলাশয়-সুজনাখিল-বরণম্

হরিসাধন-কৃতবাধন-জনশাসন-কলনম্

সচরাচর-করুণাকর-নিখিলাশিব-দলনম্

শুভদোদয়-দিবসে বৃষরবিজানিজ-দয়িতম্

প্রণমামি চরণান্তিক-পরিচারক-সহিতম্ ॥২॥

অর্থাৎ,- শরণাগত ভজনশীল ভক্তগণ নিত্যকাল যাঁহার শ্রীচরণতলে প্রতিপালিত হইতেছেন, যিনি সরলহৃদয়, সুকৃতিসম্পন্ন সমুদয় সজ্জনগণের বরেণ্য, শ্রীহরিসেবায় বিঘ্নকারিগণকে() যিনি শোধনাঙ্গীকার করিতেছেন এবং যিনি সমস্ত স্থাবর-জঙ্গমের প্রতি করুণার উৎসস্বরূপে নিখিল বিশ্বের অমঙ্গলরাশি খণ্ডন করিতেছেন, শ্রীচরণানুচরগণের সহিত শ্রীবৃষভানুনন্দিনীর সেই নিজ প্রিয়জনকে তাঁহার শুভ বিরহ তিথি বাসরে আমি (পুনঃ পুনঃ) প্রণাম করিতেছি ॥২॥

 

অতিলৌকিক-গতিতৌলিক-রতিকৌতুক-বপুষম্

অতিদৈবত-মতিবৈষ্ণব-যতি-বৈভব-পুরুষম্

সসনাতন-রঘুরূপক-পরমাণুগচরিতম্

সুবিচারক ইব জীবক ইতি সাধুভিরুদিতম্

শুভদোদয়-দিবসে বৃষরবিজানিজ-দয়িতম্

প্রণমামি চরণান্তিক-পরিচারক-সহিতম্ ॥৩॥

অর্থাৎ,- যিন লোকাতীত বিলাসসম্পন্ন, চিত্রকরের() বাঞ্ছা এবং কৌতুহল-পূর্ত্তিকারী (সুন্দর) (অথবা চিত্রকর রতির কৌতুকপ্রদ) শ্রীমূর্ত্তিবিশিষ্ট, দেবতা অপেক্ষা() উন্নতমতি এবং বৈষ্ণব-সন্ন্যাসীর (ত্রদণ্ডি যতির) ঐশ্বর্য্যস্বরূপ পুরুষপ্রবর, যিনি সনাতন-রূপ-রধুনাথের পরমাণুগত্যময় চরিত এবং শ্রীজীবপাদতুল্য (সুসিদ্ধান্ত-সম্পন্ন) রূপে সুবিচারক সাধুগণ কর্ত্তৃক কথিত হইয়া থাকেন, শ্রীচরণানুচরগণের সহিত শ্রীবৃষভানুনন্দিনীর সেই নিজ প্রিয়জনকে তাঁহার শুভ বিরহ তিথি-বাসরে আমি (পুনঃ পুনঃ) প্রণাম করিতেছি ॥৩॥

 

সরসীতট-সুখদোটজ-নিকটপ্রিয়ভজনম্

ললিতামুখ-ললনাকুল-পরমাদরযজনম্

ব্রজকানন-বহুমানন-কমলপ্রিয়নয়নম্

গুণমঞ্জরি-গরিমাণ্ডণহরিবাসনবয়নম্

শুভদোদয়-দিবসে বৃষরবিজানিজ-দয়িতম্

প্রণমামি চরণান্তিক-পরিচারক-সহিতম্ ॥৪॥

অর্থাৎ,- শ্রীরাধাকুণ্ডতটে স্বানন্দ-সুখদ-কুঞ্জে যিনি নিজ প্রিয়জনের ভজন-পরায়ণ, ললিতাদি ব্রজললনাগণের() পরমাদর-ভাজন, ব্রজবনে প্রসিদ্ধ কমল-মঞ্জরীর যিনি অত্যন্ত প্রিয় এবং যিনি গুণমঞ্জরীর গরিমা-গুণ দ্বারা শ্রীহরির বাসভবন নির্ম্মাণ করিতেছেন, শ্রীচরণানুচরগণের সহিত শ্রীবৃষভানুনন্দিনীর সেই নিজ প্রিয়জনকে তাঁহার শুভ বিরহ তিথি-বাসরে আমি (পুনঃ পুনঃ) প্রণাম করিতেছি ॥৪॥


বিমলোৎসবমমলোৎকল-পুরুষোত্তম-জননম্

পতিতোদ্ধৃতি-করুণাস্তৃতি-কৃতনূতন-পুলিনম্

মথুরাপুর-পরুষোত্তম-সমগৌরপুরটনম্

হতিকামক-হরিধামক-হরিনামক-রটনম্

শুভদোদয়-দিবসে বৃষরবিজানিজ-দয়িতম্

প্রণমামি চরণান্তিক-পরিচারক-সহিতম্ ॥৫॥

অর্থাৎ,- যিনি বিমলানন্দ স্বরূপ বা বিমলাদেবীর প্রসন্নতা বা উল্লাসস্বরূপ, পবিত্র উৎকলে পরুষোত্তমক্ষেত্রে জন্মলীলা প্রকাশ এবং নূতন পুলিন বা নবদ্বীপে নিজ পতিতোদ্ধার (প্রেম-প্রদানরূপ) করুণাবিস্তার-লীলা প্রদর্শন করিয়াছেন, যিনি ব্রজধাম পুরুষোত্তমধামসদৃশ গৌরধাম (শ্রীমায়াপুর নবদ্বীপ) পরিভ্রমণ করিয়া ব্রজকাম, বৈকুন্ঠধাম কৃষ্ণনাম নিরন্তর প্রচার করিতেছেন, শ্রীচরণানুচরগণের সহিত শ্রীবৃষভানুনন্দিনীর সেই নিজ প্রিয়জনকে তাঁহার শুভ বিরহ তিথি - বাসরে আমি (পুনঃ পুনঃ) প্রণাম করিতেছি ॥৫॥

 

শ্রীমদ্ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুরের অন্তিম আশীর্বাদ বাণী

সমগ্র বিশ্বব্যাপী শ্রীমধ্বগৌড়ীয় সম্প্রদায়ের একমাত্র আচার্য্য ভাস্কর জগদ্গুরু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর অপ্রকট লীলা আবিষ্কারের কয়েক দিবস পূর্বে ২৩শে ডিসেম্বর (১৯৩৬ সাল) প্ৰাতঃকালে সকল মঠবাসী ভক্তগণ এবং আগত সমবেত ভক্ত শ্রদ্ধালু জনের নিকট কলিকাতা বাগবাজারস্থিত শ্রীগৌড়ীয়মঠের নাট্যমন্দিরে অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী উপদেশ বাণী কীর্ত্তন করেন,-''আমি বহু লোককে উদ্বেগ দিয়াছি,অকৈতব সত্য কথা বলিতে বাধ্য হইয়াছি বলিয়া, নিস্কপটে হরি ভজন করিতে বলিয়াছি বলিয়া অনেক লোক হয়ত আমাকে শত্রুও মনে করিয়াছেন । অন্যাভিলাষ কপটতা ছাড়িয়া নিস্কপটে কৃষ্ণসেবায় উন্মুক্ত হইবার জন্য আমি অনেক লোককে নানা প্রকার উদ্বেগ দিয়াছি একথা তাঁহারা কোনও না কোনও দিন বুঝিতে পারিবেন। আজ না হইলে শতবর্ষ পরেও আমার এই নিঃস্বার্থপূর্ণ কথা গুলির প্রয়োজনীয়তা মানুষ একদিন বুঝিতে পারিবেন।

সকলে রূপ - রঘুনাথের কথা পরমোৎসাহের সহিত প্রচার করিবেন শ্রীরূপানুগগণের পাদপদ্ম ধূলি হওয়াই আমাদের চরম আকাঙ্ক্ষার বিষয়। আপনারা সকলেই এক অদ্বয় জ্ঞানের অপ্রাকৃত ইন্দ্রিয় তৃপ্তির উদ্দেশ্যে আশ্রয় বিগ্রহের আনুগত্যে মিলিয়া মিশিয়া থাকিবেন। রোদ্র থাকিতে ধান শুকাইলেন না; পরে বুঝিবেন সকলেই কেবলমাত্র হরিভজনের উদ্দেশ্যে এই দুই দিনের অনিত্য সংসারে কোনরূপে জীবন নির্বাহ করিয়া চলিবেন। এমন সুন্দর দেব - ব্রহ্মাদিরও দুর্ল্লভ মানব জীবন ভগবান দান করিয়াছেন, কেবল মাত্র তাঁহারই আরাধনা সেবা করিবার জন্য।সেই স্বয়ং ভগবান ব্রজেন্দ্রনন্দন শ্রীকৃষ্ণ তদ্হ্লাদিনীস্বরূপা বৃষভানুনন্দিনী শ্রীমতিরাধারানীর অপ্রাকৃত চিদলীলার ইচ্ছাপূর্ত্তির কথা চিন্তা করিয়া শত বিপদ,শত গঞ্জনা,শত লাঞ্ছনা সত্ত্বেও হরি ভজন ছাড়িবেন না।অধিকাংশ লোক অকৈতব কৃষ্ণসেবার কথা শ্রবণ করিতেছে না দেখিয়া নিরুৎসাহিত হইবেন না।

নিজ ভজন নিজ সর্বস্ব কৃষ্ণকথা শ্রবণ কীর্ত্তন কখনও ছাড়িবেন না।তৃণাদপি সুনীচ তরুর ন্যায় সহিষ্ণু হইয়া সর্বক্ষণ হরিকীর্ত্তন করিবেন। আমাদের এই জরদগবতুল্য দেহটাকে আমরা স্বপার্ষদ শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর 'সংকীর্ত্তনযজ্ঞে' আহুতি দিবার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করিতেছি।আমরা কোনও প্রকার কর্ম্মবীরত্ব,জ্ঞানবীরত্ব, ধর্ম্মবীরত্বের অভিলাষই নহি,কিন্তু জন্মে জন্মে শ্রীরূপ প্রভুর পাদপদ্মের ধূলিই আমাদের স্বরূপ - আমাদের সর্বস্ব।শ্রীভক্তিবিনোদ ধারা কখনও রুদ্ধ হইবে না।আপনারা আরও অধিকতর উৎসাহের সহিত ভক্তিবিনোদের মনোহভীষ্ট প্রচারে ব্রতী হইবেন। আমাদের মধ্যে বহু যোগ্য কৃতী ব্যক্তি আছেন।আমাদের অন্য কোনও আকাঙ্ক্ষা নাই,আমাদের একমাত্র কথা এই,---

‘’আদদান স্তৃনং দন্তৈরিদং যাচে পুনঃ পুন।

শ্রীমদরূপ পদাম্ভোজ ধূলিঃ স্যাং জন্ম জন্মনি।।‘’


আমাদের নিত্য জীবন কি হইবে,এখানে থাকাকালেই তাহার পরিচয় লাভ করা আবশ্যক।এখানে যতরকম ধরনের আকর্ষণ বিকর্ষণের বস্তু আছে,-যাহা আমরা চাই চাই না,এই উভয় প্রকারেই মীমাংসা হওয়া আবশ্যক।শ্রীকৃষ্ণ পাদপদ্ম হইতে আমরা যতটা তফাৎ হইব,ততটাই এখানকার আকর্ষণ বিকর্ষণের অতীত হইয়া অপ্রাকৃত নামাকৃষ্ট হইলেই কৃষ্ণসেবা রসের কথা বুঝিতে পারা যায়।কৃষ্ণের কথা বড়ই বিষ্ময় জনক জটিল।দ্বন্দ্বাতীত হইয়া সেই নিত্য প্রয়োজনের রাজ্যে প্রবেশই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য বা প্রয়োজন। শ্রীল প্রভুপাদ কৃষ্ণভাবনা প্রচারের উদ্দেশ্যে মাইক্রোফোন, টেলিফোন, টেপ রেকর্ডার, কম্পিউটার, এরোপ্ল্যান সহ আরো অনেককিছুকে নিয়োজিত করেছিলেন। প্রভুপাদ এমনকি বলেছিলেন যে, যদি প্রয়োজন হয় কৃষ্ণভাবনা বিস্তৃত করার জন্য আমরা পারমানবিক বোমা পর্যন্ত ব্যবহার করতে প্রস্তুত

শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর, মহাপ্রভুর সংকীর্ত্তন আন্দোলনের প্রকৃত উদ্দেশ্যটি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন এবং অত্যন্ত যথাযথভাবে শ্রীল প্রভুপাদ সেটিকে বহন করেছিলেন এবং সারাবিশ্বে তা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ‘’১৯৩৭ সালের ১লা জানুয়ারী প্রাতঃ /২৫ মিঃ শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর শ্রীগৌর গদাধর, শ্রীশ্রীলরাধাগোবিন্দের নিশান্ত লীলায় প্রবেশ করিলেন I’

বৈষ্ণব কে ?

(প্রভুপাদ শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর বিরচিত)

দুষ্ট মন ! তুমি কিসের বৈষ্ণব ?

প্রতিষ্ঠার তরে    নির্জ্জনের ঘরে

তব হরিনাম কেবল কৈতব ॥১॥

 

জড়ের প্রতিষ্ঠা             শূকরের বিষ্ঠা

জান না কি তাহা মায়ার বৈভব

কনক কামিনী    দিবস যামিনী

ভারিয়া কি কাজ  অনিত্য সে সব ॥২॥

 

তোমার কনক ভোগের জনক

কনকের দ্বারে সেবহ মাধব

কামিনীর কাম নহে তব ধাম

তাহার মালিক কেবল যাদব ॥৩॥

 

প্রতিষ্ঠাশা তরু  জড়মায়ামরু

না পেল রাবণ যুঝিয়া রাঘব

বৈষ্ণব প্রতিষ্ঠা তাতে কর নিষ্ঠা

তাহা না ভজিলে লভিবে রৌরব ॥৪॥

 

হরিজনদ্বেষ     প্রতিষ্ঠাশাক্লেশ

কর কেন তবে তাহার গৌরব

বৈষ্ণবের পাছে           প্রতিষ্ঠাশা আছে

তা' কভু নহে অনিত্য বৈভব ॥৫॥

 

সে হরি সম্বন্ধ  শূন্য-মায়াগন্ধ

তাহা কভু নহে  জড়ের কৈতব

প্রতিষ্ঠা চণ্ডালী নির্জ্জনতা জালি

উভয়ে জানিহ মায়িক রৌরব ॥৬॥

 

কীর্ত্তন ছাড়িব  প্রতিষ্ঠা মাখিব

কি কাজ ঢুঁড়িয়া তাদৃশগৌরব

মাধবেন্দ্রপুরী   ভাব-ঘরে চুরি

না করিল কভু সদাই জানব ॥৭॥

 

তোমার প্রতিষ্ঠা            শূকরের বিষ্ঠা

তার সহ সম কভু না মানব

মৎসরতা বশে তুমি জড়রসে

'জেছ ছাড়িয়া কীর্ত্তনসৌষ্ঠব ॥৮॥

 

তাই দুষ্ট মন     নির্জ্জন ভজন

প্রচারিছ ছলে কুযোগী-বৈভব

প্রভু সনাতনে  পরম যতনে

শিক্ষা দিল যাহা চিন্ত সেই সব ॥৯॥

 

সেই দুটি কথা  ভুল' না সর্ব্বথা

উচ্চৈঃস্বরে কর হরিনাম-রব

ফল্গু, আর যুক্ত,        বদ্ধ আর মুক্ত

কভু না ভাবিহ 'একাকার' সব ॥১০॥

 

কনক-কামিনী প্রতিষ্ঠা-বাঘিনী

ছাড়িয়াছে যারে, সেই ' বৈষ্ণব

সেই অনাসক্ত সেই শুদ্ধ ভক্ত

সংসার তথা পায় পরাভব ॥১১॥

 

যথাযোগ্য ভোগ          নাহি তথা রোগ

অনাসক্ত সেই, কি আর কহব

আসক্তি রহিত সম্বন্ধ সহিত

বিষয় সমূহ সকলি মাধব ॥১২॥

 

সে যুক্ত-বৈরাগ্য          তাহা ' সৌভাগ্য

তাহাই জড়েতে হরির বৈভব

কীর্ত্তনে যাহার প্রতিষ্ঠা সম্ভার

তাহার সম্পত্তি কেবল কৈতব ॥১৩॥

 

বিষয়-মুমুক্ষু    ভোগের বুভুক্ষু

দু'য়ে ত্যজ মন, দুই অবৈষ্ণব

কৃষ্ণের সম্বন্ধ  অপ্রাকৃত স্কন্ধ

কভু নহে তাহা জড়ের সম্ভব ॥১৪॥

 

মায়াবাদী জন  কৃষ্ণেতর মন

মুক্ত অভিমানে সে নিন্দে বৈষ্ণব

বৈষ্ণবের দাস  তব ভক্তি আশ

কেন  ডাকিছ নির্জ্জন আহব ॥১৫॥

 

যে ফল্গু বৈরাগী        কহে নিজে ত্যাগী

সে না পারে কভু হইতে বৈষ্ণব

হরিপদ ছাড়িনির্জ্জনতা বাড়ি

লভিয়া কি ফল, ফল্গু সে বৈভব ॥১৬॥

 

রাধা-দাস্যে রহি           ছাড় ভোগ অহি

প্রতিষ্ঠাশা নহে কীর্ত্তন গৌরব

রাধা নিত্যজন  তাহা ছাড়ি মন

কেন বা নির্জ্জন ভজন কৈতব ॥১৭॥

 

ব্রজবাসীগণ     প্রচারক ধন

প্রতিষ্ঠা ভিক্ষুক তারা নহে সব

প্রাণ আছে তার            সে হেতু প্রচার

প্রতিষ্ঠাশাহীন কৃষ্ণগাথা সব ॥১৮॥

 

শ্রীদয়িতদাস    কীর্ত্তনেতে আশ

কর উচ্চৈঃস্বরে হরিনামরব

কীর্ত্তন প্রভাবে স্মরণ হইবে

সে কালে ভজন নির্জ্জন সম্ভব ॥১৯॥

No comments:

Post a Comment

🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚 🌳🌷 মোহিনী একাদশী 🌷🌳 🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚 শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ সকল সাধু , গুরু , বৈষ্ণব ও গৌর...