🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚

🦜শ্রীশ্রীগৌর লীলামৃত🦜

🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚

শ্রীশ্রীগুরুগৌরাঙ্গজয়তঃ

সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌরভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্তকোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ । I’’

 

নমস্ত্রিকাল - সত্যায়জগন্নাথসুতায়চ।

স - ভৃত্যায়স -পুত্রায়স - কলত্রায়তেনমঃ।।

শ্রীল জগদানন্দ পণ্ডিত তাঁর ''প্রেম বিবর্ত্ত'' গ্রন্থে শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর একটি লীলার বর্ণনা করেছেন । নবদ্বীপে গোদ্রুমের গাদীগাছা গ্রামে এই লীলাটি হয়েছিল। শ্রীল জগদানন্দের স্ব- মুখে এভাবে বিবৃত হয়েছে,- ''একদিন শচীমাতা স্নেহের সাথে আমাকে শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর আহারের অবশিষ্টাংশ দিয়েছিলেন। সেই প্রসাদ গ্রহণ করে আমি অমৃতের স্বাদ অনুভব করলাম এবং শ্রীগৌরাঙ্গ প্রভুর প্রসাদ লাভ করে নিজেকে গৌরবান্বিত বোধ করলাম । আমি কি কখনো সেই ঐশ্বরিক প্রসাদ আবার পেতে পারি?'' সেই দিন আমি শ্রীগৌর, নিত্যানন্দ ও তাঁদের সহযোগীদের সাথে গঙ্গার তীরের দিকে অগ্রসর হলাম। আমরা গাদিগাছা গ্রামে পৌঁছলে ভক্তরা হরিনাম সংকীর্ত্তন আরম্ভ করলেন ।

গোবিন্দ মৃদঙ্গ বাজাচ্ছিলেন এবং বাসুদেব ঘোষ প্রমুখেরা হরিনাম কীর্ত্তন করছিলেন । গদাধর পণ্ডিত ও বক্রেশ্বর পণ্ডিত উভয়েই নৃত্য করছিলেন। হরিনামের উচ্চ-ধ্বনিতে চারিদিক প্লাবিত  হচ্ছিল এবং চারিদিক থেকে উলুধ্বনি ভেসে আসছিল। প্রত্যেকেই গৌর-প্রেমে মত্ত হয়ে গিয়েছিলেন। আমি যদিও নৃত্যগীতে পারদর্শী ছিলামনা,- ‘’সেদিন আমিও উদ্দাম নৃত্য করছিলাম, প্রকৃতপক্ষে সেদিন আমার মধ্যে শ্রীগৌরাঙ্গের আবেশ ঘটেছিল, এবং তিনিই আমার মধ্যে প্রবেশ করে আমাকে নাচিয়েছিলেন । সুর ও তালজ্ঞান সম্বন্ধে কোন ধারণা না থাকা সত্ত্বেও আমি নাচছিলাম ও উচ্চৈঃস্বরে চিৎকার করছিলাম।''

‘’গাদিগাছা গ্রামে পৌঁছে আমরা গোপপল্লীতে এলাম । গৌরচন্দ্র বললেন,- হে কৃষ্ণভক্তগণ ! আজ আমরা এই হ্রদের তীরে হাঁটবো এবং গাছের নিচে নিদ্রা যাবো । এই বটগাছের নিচে অনেক ধেনু ও বৎস চরে বেড়াচ্ছে । আজ আমরা গোপেদের সাথে কৃষ্ণলীলার অভিনয় করব। গোপপল্লীর গোয়ালারা আমাদের আহারের জন্য অনেক দুধ, দই ও মাখন নিয়ে উপস্থিত হলেন ।'' আহার গ্রহণ করার ফলে আমাদের পথ চলার ক্লান্তি দূর হল। সেখানে নৃসিংহানন্দ, প্রদ্যুম্ন মিশ্র ও পুরুষোত্তম এসে আমাদের সাথে যোগ দিলেন। মৃদঙ্গের শব্দে সংকীর্ত্তন দেখতে ও শুনতে গোপেরা ঘরবাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন । হরিনামের শব্দে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে উঠল ।‘’

সেই গ্রামে ভীম গোপ নামে একজন খুবই শান্ত ও ভদ্র প্রকৃতির ব্যক্তি ছিলেন । তিনি এগিয়ে এসে শ্রীগৌরাঙ্গকে বললেন,- ‘’দয়া করে আমার একটি নিবেদন শুনুন। আমার মা শ্যামা গোয়ালিনী হলেন গঙ্গানগরের সাধু গোয়ালার মেয়ে । তিনি শচী মাতা কে  সর্বদা মা রূপে সেবা ভক্তি করেন । সেই সম্পর্কে আপনি আমার কাকা হন । যদি কৃপা করে সংকীর্ত্তনের দল নিয়ে এই অধম গরীবের ঘরে চরণধূলি দেন তবে কৃতার্থ হই । আমার মা আপনাদের জন্য দই, দুধ, ছানা, ও মাখন — এসব নিয়ে অপেক্ষা করছেন ।‘’ ভীম গোপের প্রেমপূর্ণ আমন্ত্রণ গ্রহণ করে গৌরহরি সদলে তাঁর ঘরে এলেন । শ্যামা গোয়ালিনী উলুধ্বনি করে সকলকে বরণ করলেন এবং তাঁদের গোয়াল ঘরে সকলের বসার ব্যবস্থা করলেন। শ্যামা জিজ্ঞেস করলেন,- পণ্ডিত দাদা ! মা কেমন আছেন? মহাপ্রভু বললেন,- কুশলেই আছেন।

শ্যামা গোয়ালিনী কলাপাতা ও আহার্য্য দ্রব্য এনে সামনে রাখলে, নিমাই ভক্তদের সেগুলি কলাপাতাতে পরিবেশন করলেন । প্রসাদ অন্তে তাঁরা আবার হ্রদের তীরে ফিরে গেলেন। সবাই ধীরে ধীরে নিম্নস্বরে হরিনাম কীর্ত্তন করছিলেন। এমন সময়ে রামদাস গোপ এসে বললেন,- ''প্রভু ! এই হ্রদে খুব ভয়ঙ্কর একটি কুমির বাস করে । সেইজন্য আমাদের গরুগুলি এই হ্রদের জলপান করতে পারে না। জলপান করতে না পেরে তারা তৃষ্ণায় হাম্বারব করতে থাকে ।'' গৌরচন্দ্র এই কথা শুনে সকলকে উচ্চস্বরে হরিনাম সংকীর্ত্তন করতে বললেন । জোরে জোরে হরিধ্বনি শুনে কুমীরটি এতটা আকৃষ্ট হয়েছিল যে, সেটি হ্রদ থেকে বেরিয়ে এসে শ্রী গৌরাঙ্গের পাদপদ্ম স্পর্শ করল।  

অবিলম্বে কুমীরটি একটি দেবশিশুর দেহপ্রাপ্ত হল । সেই দেবশিশুটি  শ্রীগৌরাঙ্গের অনেক স্তব ও স্তুতি করার পর তাঁর দুর্দশার কাহিনীটি বর্ণনা করলেন । তিনি বললেন,- ''হে আমার পালনকর্তা! দুর্বাসা মুনির অভিশাপের কারণে কুমীরের দেহপ্রাপ্ত হয়ে আমি এই হ্রদে বাস করছিলাম। সকলেই আমাকে দেখে ভীত হত । একবার, দুর্বাসা মুনি কাম্যবনে নিদ্রা যাচ্ছিলেন। আমার দুষ্ট প্রকৃতির কারণে আমি তাঁর জটা কেটে দিয়েছিলাম । ঋষি আমার উপর খুব রাগান্বিত হয়ে অভিশাপ দিলেন,- ''হে দুরাচারী ! তুমি কুমীরের দেহ প্রাপ্ত হয়ে চার যুগ ধরে নিজের কর্মফল ভোগ কর । এই অভিশাপ শুনে আমি কাঁদতে লাগলাম এবং মুনিকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আমি কিভাবে এই অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারি?’

আমার প্রতি দয়া পরবশ হয়ে মুনি আমাকে বললেন,- ‘’হে দেবশিশু ! যখন শ্রী নন্দনন্দন শ্রীকৃষ্ণ নবদ্বীপধামে শ্রীগৌরহরি রূপে অবতীর্ণ হবেন, তখন তাঁর সংকীর্ত্তন শুনে এই অভিশাপ থেকে তুমি মুক্তি পাবে। তারপর দিব্যদেহ ফিরে পেয়ে তুমি স্বর্গে ফিরে যাবে’।'' অতঃপর সেই দেবশিশু শ্রীগৌরহরির স্তুতিবাদ করে বললেন,- হে শচীসুত! আপনি জয়যুক্ত হোন । আপনি সমস্ত পতিত আত্মার উদ্ধার কর্তা । এই কলিযুগে আপনার কৃপা ভিন্ন দীন দরিদ্র এবং পতিত মানুষদের অন্য কোন আশ্রয় নেই। চতুর্দশ লোকের সমস্ত জীবগণ আপনার সুকৃতির জয় ঘোষণা করছে । আমার মত একজন পতিতকে আপনি উদ্ধার করেছেন ।

সকল ধামের শ্রেষ্ঠ হচ্ছে এই নবদ্বীপ ধাম, যেখানে কলি-পাবনকারী রূপে আপনি অবতীর্ণ হয়েছেন । হরিনাম সংকীর্ত্তন দান করে সকল পাপী ও তাপী জীবেদের আপনি তাদের পাপ হতে মুক্ত করতে এসেছেন । প্রণাম আপনাকে । এখন আমাকে স্বস্থানে ফিরে যেতে অনুমতি দান করুন । এই কথা বলে দেবশিশুটি যথাস্থানে গমন করলেন । সেদিন থেকে সেই হ্রদটি  ‘’গৌরদহ’’ নামে পরিচিত হল এবং এটি কালিয়া-দহের মত প্রসিদ্ধ লাভ করল । এরপর ভক্তগণ আবার সংকীর্ত্তন  শুরু করলেন এবং মধ্যাহ্নের পর মহাপ্রভুসহ সকল ভক্তরা মায়াপুরে ফিরে গেলেন।

যে কেউ মহাপ্রভুর এই লীলাটি শ্রবণ করেন, তিনি তৎক্ষণাৎ ব্রহ্মশাপ থেকে মুক্ত হন । যিনি এই হ্রদ দর্শন করেন এবং তার জল স্পর্শ করেন তিনি সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হন এবং শ্রীকৃষ্ণের প্রেমভক্তি প্রাপ্ত হন ।

 

কে আনিলো রে কোথায় ছিল রে

মধু মাখা হরি নাম,

কে আনিলো রে কোথায় ছিলো রে

মধু মাখা হরি নাম।

নদীয়া নগরে শচী মাতার ঘরে,

নদীয়া নগরে শচীমাতার ঘরে

উদয় হলো নিমাই চাঁদ...

কে আনিলো রে কোথায় ছিলো রে

মধু মাখা হরি নাম।

 

হরি নাম ভজ নাম জপো নাম করো সার,

হরি নামে ভাসাও তরী হয়ে যাবে পার।

হরি নামে মাতোয়ারা ও..

হরি নামে মাতোয়ারা সারা ব্রজ ধাম।

কে আনিলো রে কোথায় ছিলো রে

মধু মাখা হরি নাম।

 

যত পাপী তাপী তরে গেল এই হরি নামে,

মুখে বলো হরি নাম শ্রবন করো কানে।

হরি নামে আছে সুধা ও..

হরি নামে আছে সুধা অমৃত সমান।

কে আনিলো রে কোথায় ছিল রে

মধু মাখা হরি নাম।

 

বিজয় ধীবর বলছে হরি নাম ছাড়া গতি নাই

প্রেমানন্দে বাহু তোলে হরি বলো ভাই।

হরি নামের জলে ডুব দিলে ও..

হরি নামের জলে ডুব দিলে জুড়ায় মন প্রাণ।

কে আনিলো রে কোথায় ছিল রে

মধু মাখা হরি নাম।

🏵️জয় গৌর🏵️জয় নিতাই🏵️জয় গৌর🏵️জয় নিতাই🏵️